কেউ কেউ বলেছেন, ‘আপনি আমাদের মাসুদ রানা’

‘মাসুদ রানা’ সিরিজের উপন্যাস ‘ধ্বংস পাহাড়’ অবলম্বনে নির্মিত এ‘মআর-নাইন: ডু অর ডাই’ সিনেমার ইংরেজি সংস্করণ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলিউড নির্মাতা আসিফ আকবরের পরিচালনায় সিনেমাটিতে ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ বি এম সুমন। এই সিনেমা ও অন্য নানা প্রসঙ্গে গত শনিবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে বিনোদন
এবিএম সুমন। ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

মুক্তির পর প্রচারে গিয়ে দর্শক-প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?

দর্শক-প্রতিক্রিয়া ভালো। প্রিমিয়ার থেকে শুরু করে মুক্তির প্রথম দিন তিনটি শোয়ে উপস্থিত ছিলাম বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে। শোগুলো হাউসফুল ছিল। হল থেকে বেরিয়ে অনেক দর্শক কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। তাঁরা কাজের প্রশংসা করেছেন। যাঁদের সঙ্গে গল্পের ‘মাসুদ রানা’র পরিচয় আছে, ছবিটি দেখে তাঁদের কেউ কেউ আমাকে বলেছেন, ‘আপনি ছবিটিতে পারফেক্ট মাসুদ রানা, আমাদের মাসুদ রানা।’ সবচেয়ে বড় প্রশংসা পেয়েছি মাসুদ রানার জনক কাজী আনোয়ার হোসেনের নাতির কাছ থেকে। তার বয়স ১৫ কি ১৬ হবে। নামটা ভুলে গেলাম। ছবিটি দেখে বের হয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘খুব খারাপ লাগছে, দাদা বেঁচে থাকা অবস্থায় তাঁর মাসুদ রানাকে দেখে যেতে পারলেন না।’ সে আরও বলল, ‘তুমিই আজ থেকে আমার মাসুদ রানা।’ কাজটি করতে গিয়ে যত কষ্ট হয়েছে, এ কথা শুনে আমার সব কষ্ট চলে গেছে। ওই দিন কাজী আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং ছেলের বউও সিনেমাটি দেখতে এসেছিলেন।

এবিএম সুমন। ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

আপনাকে ‘মাসুদ রানা’ নির্বাচন করেছিলেন লেখক নিজেই। লেখকের সেই বিশ্বাসের জায়গা থেকে চরিত্রটি কতটুকু তুলে আনতে পেরেছেন বলে মনে করেন?

প্রস্তুতির দিনগুলো থেকে শুটিং চলাকালীন মানসিকভাবে আমি ‘মাসুদ রানা’ হিসেবেই ছিলাম। যত দিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি, কোনো দিনই মনে হয়নি, আমি রানা ছাড়া অন্য কিছু। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, শুটিংয়ের সময় তারাও বুঝতে পেরেছিল, ঠিকমতো স্পাই চরিত্রটি এগিয়ে নিতে পেরেছি। নিজের কথা নিজে বলা মুশকিল। আমি শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ‘মাসুদ রানা’র জনক নিজেই চরিত্রটি আমাকে হাতে তুলে দিয়েছিলেন, ফলে আমার মধ্যে চরিত্রটি নিয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

ছবিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পীরাও কাজ করেছেন। তাঁরা কি ‘মাসুদ রানা’ সম্পর্কে অবগত ছিলেন?

ভারত থেকে সাক্ষী প্রধান, অমি ভিদ্দিয়া, হলিউডের ফ্র্যাঙ্ক গ্রিলো, নিকো ফস্টার, মাইকেল জাই হোয়াইটসহ বেশ কয়েকজন অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে হলিউডের শিল্পীরা জানতেন চরিত্রটি সম্পর্কে। তাঁদের ‘জেমস বন্ড’ আছে। আর ‘মাসুদ রানা’কে দক্ষিণ এশিয়ার ‘বন্ড’ চরিত্র মনে করেছেন তাঁরা। তাঁদের ভালো লেগেছে, জেমস বন্ডের মতো একটি স্টোরি পাচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়া থেকে।

এবিএম সুমন। ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

‘মাসুদ রানা’ কয়েক প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়। সে হিসেবে ছবিটির আরও আলোচনায় আসার সুযোগ ছিল কি না?

মুক্তির খুব কাছাকাছি সময়ে এসে প্রচার শুরু করেছি আমরা। আরও আগে থেকে প্রচারটা দরকার ছিল। ছবিটি নিয়ে সাড়া পড়ে যাওয়ার যে ব্যাপার, সেটি হয়নি। মনে হচ্ছে, আস্তে আস্তে সেটা হবে। আমাদের আরেকটি ধারণা ছিল, যেহেতু এটি মানুষের কাছের চরিত্র, ছবিটি দেখে মানুষের মুখ থেকে মুখে ছড়াবে। এরই মধ্যে সেটা শুরু হয়ে গেছে।

প্রশ্ন :

বাংলা সংস্করণ মুক্তি না পাওয়ার কারণে কি ছবির আলোচনা একটু ধীরগতিতে হচ্ছে?

বাংলায় মুক্তি পেলে ভালো হতো। আমার নিজের পরিবারও বাংলা ভার্সনে মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ, দিন শেষে তো আমরা বাঙালি। মাতৃভাষা বাংলা। ‘মাসুদ রানা’ চরিত্রটিও বাংলাদেশি। ফলে মানুষের কানেকশনের জায়গাও বেশি। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাটা আনা গেলে ভালো হতো। সেটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে ছবিটি বাংলা ও ইংরেজি দুই সংস্করণে চলবে। আশা করছি, বাংলা সংস্করণ আসার পর ছবিটি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

এবিএম সুমন। ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

পর্দায় রানা হবেন, কখনো ভেবেছিলেন?

নব্বইয়ের দিকে আমি ‘মাসুদ রানা’ পড়ি। প্রথম পড়েছিলাম ‘স্বর্ণমৃগ’, এরপর ‘ধ্বংস পাহাড়’। সে সময় চরিত্রটি নিয়ে নিজের মধ্যে উন্মাদনা কাজ করত। কিন্তু চরিত্রটিতে অভিনয় করব, কখনোই ভাবিনি। তবে সিনেমায় আসার পর মাসুদ রানা চরিত্রটি করার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। সেই সুযোগ আসবে, জানতাম না।