‘প্রেমের ব্যাপারে আমার আসলে খিটমিটানি আছে’

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ওয়েবফিল্ম ‘কুহেলিকা’। এতে অভিনয় করেছেন নাজিয়া হক অর্ষা। ঈদে টেলিভিশনে প্রচারিত ‘ঘুম’ নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। গত রোববার কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি : অর্ষার সৌজন্যে

প্রশ্ন :

‘সাহস’, ‘জাহান’ এরপর ‘কুহেলিকা’—পরপর ওয়েবে বেশ কয়েকটি কাজে আপনাকে একটু ডার্ক ঘরানার চরিত্রে দেখা গেছে। চরিত্রগুলোর অনেকগুলো স্তর আছে।

‘সাহস’, ‘জাহান’, ‘কুহেলিকা’ আসলে এগুলো সব ডার্ক ঘরানার গল্প নয়। ‘সাহস’-এ নীলা তো সাধারণ সাবলীল মেয়ে। তার সঙ্গে একটা দুর্ঘটনা ঘটে, যেটাকে কেন্দ্র করে তার জীবনে বেশ কিছু ঘটনাও ঘটে। এটা একটা পুরো আলাদা জনরা। নীলাকে পুরো ডার্ক বলব না। সে খুবই উচ্ছল একটা মানুষ, প্রতিমুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারত। কিন্তু দুর্ঘটনার পর জীবনের যে ঘটনাপ্রবাহ, স্বাভাবিক গতিবিধি স্থির হয়ে যায় সেটা ‘সাহস’-এর জার্নি। ‘জাহান’ আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। পোস্টট্রমাটিক সিনড্রোমে ভোগা রোগীদের নিয়ে বলা একটা গল্প। আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম, এ রকম একটা গল্পে অভিনয় করতে, যদি সুযোগ হয় বা ব্যাটে–বলে মিলে যায়। ‘জাহান’ আমার জন্য তেমনই একটা গল্প। গল্পটাতে আমি তেমন পরিশ্রমও করেছি। ‘জাহান’ সেই জায়গা ছুঁতেও পেরেছে। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, প্রথমে শুটিং করা হয়েছিল ‘সাহস’, এরপর ‘কুহেলিকা’, সবশেষে ‘জাহান’। মুক্তির সময়টা এদিক–ওদিক হয়ে যাওয়ায় এ রকম হয়েছে। কোনোটার সঙ্গে কিন্তু কোনোটার সম্পর্ক নেই। আমি সব সময় যে কথা বলেছি, শিল্পীকে স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করতে হয়। মানে, আমি সব সময় ডার্ক জনরার কাজ করব, তেমনটা নয়। শিল্পীদের স্বাধীন ও সাবলীল থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের গল্প বাছাই করি, যে জায়গায় আমার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারব। স্বভাবতই যে ধরনের গল্পগুলো একটু ভিন্ন ধাঁচের, সেগুলো সেমিডার্ক হয়, সাইকোথ্রিলার, পোস্টট্রমাটিকের গল্প হয়।

প্রশ্ন :

একটিতে প্রশংসিত হওয়ার কারণেই কি পরেরগুলোর প্রস্তাব এসেছে? নাকি আপনি এ ধরনের চরিত্রেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য?

প্রশংসা এসেছে বলেই যে একই ধাঁচের গল্প বাছাই করছি, বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। শুরু থেকে যেসব গল্প আমার ভালো লাগে, যেখানে আমি নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারব, সেগুলো বাছাই করি। প্রশ্নটা দেখেশুনে হলো, এভাবেও ভাবা যায়, একই রকম জনরার গল্প বাছাই করা বা ডার্ক জনরা বেছে নেওয়া—আমি আসলে ভাবিইনি কখনো।

নাজিয়া হক অর্ষা

প্রশ্ন :

গেল ঈদুল ফিতরে আপনার ‘ঘুম’ নাটকটি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। দুটি ভিন্ন টাইমলাইনের গল্প নিয়ে নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?

‘ঘুম’–এর গল্পটা খুবই ভিন্ন রকম। যেহেতু টেলিভিশনের প্রোডাকশন, তাই বড় ক্যানভাসে দেখানোর সুযোগ ছিল না। যতটুকু পাণ্ডুলিপিতে ছিল, আমার কাছে ভালো লেগেছিল। দুটো সময়ের প্রেক্ষাপট এবং মানুষের স্মৃতির মধ্যে যে ঝামেলা তৈরি হয়; যখন প্রচণ্ড বেদনা বা তীব্র একাকিত্ব থেকে মানুষ কল্পনার রাজ্য তৈরি করতে থাকে,  সেখান থেকে মানুষ টাইম ট্রাভেল করতে থাকে। সাধারণত এ ধরনের কনটেন্ট বিদেশি সিনেমায় দেখেছি। একই সময়ে টাইম লুপের মধ্যে বা প্যারালাল ইউনিভার্সের মধ্যে ঘুরছে, পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকে এত সহজভাবে দেখানো গল্প আগে আমি বাংলাদেশে দেখিনি। ফলে গল্পটা আমার পছন্দ হয়। এটা করতে গিয়ে এবং এই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতেও আরাম লেগেছে। তাঁর সঙ্গে আগে কাজ করা হয়নি। কিন্তু মনে হয়েছে, তিনি পরিষ্কার ধারণা রাখেন—কীভাবে করতে চান, গল্পটা কীভাবে দেখাতে চান। আমি দেখলাম, গল্পটা অনেকেরই ভালো লেগেছে। আমার জন্যও এটা আনন্দের বিষয়।

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

গত দুই বছরে আপনার অভিনীত ‘সাবরিনা’, ‘নন্দিনী’, ‘তানিয়া’, ‘নীলা’, ‘জাহান’ চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোন চরিত্রটি এখনো আপনার বেশি মনে পড়ে?  আপনার সঙ্গে কার বেশি মিল বলে মনে করেন?

আমার আসলে সব কটি চরিত্রই পছন্দের। পছন্দের বলেই তো আমি আসলে কাজটা করতে চেয়েছি। প্রতিটি চরিত্রই আমাকে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রেখেছে। সাবরিনা আমাকে এক রকম চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। কারণ, এই চরিত্রের পাশের বাড়ির যেসব মানুষকে আমি দেখেছি—এই যেমন আমার মা–বোন, খালা–ফুফুর মধ্যে যে ছাপ আছে, সেটা সাবরিনার মধ্যে আছে। একদম সাধারণ উপস্থাপনের মধ্যে কিছু একটা অসাধারণ করে ফেলাই সবচেয়ে বড় কাজ, যেটা সাবরিনা করে ফেলেছে। নন্দিনী আবার একটা মেয়ে যে ক্যারিয়ারিস্টিক হতে পারত। কিন্তু স্বামীর নির্যাতন বা নিজের ভেতরকার অনুভূতিগুলো বলতে না পারায় শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদী হয়ে ওঠা, এটা আরেক রকমের একটা প্রক্রিয়া। তানিয়া আমার কাছে খুবই হ্যাপেনিং কারণ ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ ছবিতে তানিয়ার উপস্থিতি খুবই অল্প সময়ের। কিন্তু পুরো শুটিং আমি বেশ উপভোগ করেছি। এই চরিত্র নিয়ে আমি চাপই নিইনি। চরিত্রটা তালে তালে করে গিয়েছি। কারণ, সব তরুণের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা, ওরা কীভাবে কাজ করে, ওরা কীভাবে ফূর্তি করে শুধু এটাই মনে রেখে কাজটা করতে চেয়েছি। তাই তানিয়া চরিত্রটি খুবই আরামদায়ক ছিল। নীলা আর সাবরিনা প্রায় কাছাকাছি জনরার, কিন্তু একটু পার্থক্য আছে। কারণ, সাবরিনা অনেক শান্ত, অনেক ম্যাচিউর। অন্যদিকে নীলা অনেক পাগলাটে। এমনিতে ওদের ঘটনাটা কাছাকাছি। আবার এদের মধ্যে পার্থক্যও আছে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল জাহান—কারণ মেন্টাল ডিজঅর্ডার বা পোস্টট্রমাটিক উপসর্গের রোগীর চরিত্রে রূপদান করা, মনস্তাত্ত্বিকভাবে উপস্থাপনা করাটা আসলে অনেক কষ্টসাধ্য। মোটা দাগে যাতে আবার মনে না হয়, আমি পাগল। আবার এটাও না মনে হয়, আমি অনেক বেশি সুস্থ। তাই প্রতিটি চরিত্রই আমার ভীষণ পছন্দের। প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে আমার ভয়ংকর সুন্দর জার্নি আছে। তাই আমি বলব, সময়-অসময়ে কেউ যখন কাজ নিয়ে আবার নতুন করে লেখেন, তখনই আমার চরিত্রগুলোর কথা মনে পড়ে। কিছুদিন আগে কেউ যেমন জাহান নিয়ে লিখেছিলেন। তার আগে একজনকে দেখলাম, তানিয়াকে নিয়ে লিখেছেন। যখনই আলোচনা হয় বা কেউ সামনে এসে বলেন, ‘আপনার এই কাজ দেখে ভালো লাগছে,’  তখনই আমার ভেতর শান্তি কাজ করে। ভাবতে থাকি, আচ্ছা বেশ, আমি হয়তো চরিত্রের প্রতি কিছুটা সুবিচার করতে পেরেছি।

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

মোস্তাফিজুর নুর ইমরানের সঙ্গে পরপর কয়েকটি কাজ করেছেন। আপনারা প্রেম করছেন, এমন কথাও কেউ কেউ বলছেন। এ বিষয়ে আপনার নিজের কিছু বলার আছে কি না!

প্রশ্নটা আমার মজার লেগেছে। আমরা একসঙ্গে বেশ কয়েকটা কাজ করেছি। আমি তাঁকে আদর্শ মানি। তাঁর সঙ্গে কাজ করে মজাও আছে। বন্ধুত্ব আছে। এটা এ রকম নয় যে প্রেমটেম হাবিজাবি! প্রেমের ব্যাপারে আমার আসলে খিটমিটানি আছে। আমি বন্ধুত্বটা খুব উপভোগ করি। আমার এ ধরনের বন্ধুত্ব বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে কমবেশি হয়ে আছে। যেমন ইয়াশ রোশানের সঙ্গে আমার একরকম বন্ধুত্ব, খায়রুল বাসারের সঙ্গে আরেক রকম বন্ধুত্ব। এটা লোকে বলতে থাকে, কেন জানি না। যা–ই হোক, আমি এটা নিয়ে তেমন কিছুই বলতে চাই না। আমি চাই, সহকর্মীরা যারা একসঙ্গে কাজ করছি, কাজ যদি প্রশংসিত হয়, সেই সম্মান থাকুক। ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ আমি পছন্দ করি না।

প্রশ্ন :

আজ (রোববার) কী শুটিং করছেন? সামনে নতুন কী কী কাজ আসছে?

লস্কর নিয়াজ নামের এক পরিচালকের কাজ করছি। গল্পটার নাম ‘আকাঙ্ক্ষা’। স্বামী-স্ত্রীর যাপিত জীবন ও তাঁর মধ্যে ছোট ছোট সংকট, খুবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর সামনে কী কাজ আসছে, সেটা সারপ্রাইজ থাকুক। এখনই বলব না। ফার্স্টলুক বা ট্রেলারের মাধ্যমে যেন সবাই জানতে পারেন।