অনেকে জানেই না আমি বরিশালের মেয়ে...

অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী অভিনীত ‘হৃদয়ের এককোণে’, ‘তোমাদের গল্প’, ‘মন দিওয়ানা’ ঈদ নাটকগুলো এখনো ইউটিউবে ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে। ফেসবুকে ঘুরেফিরে আসছে তাঁর অভিনীত নাটকের ছোট ছোট ভিডিও। সব মিলে এবারের ঈদটাই তাঁর কাছে বিশেষ। নাটকের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়সহ নানা প্রসঙ্গে ‘বিনোদন’–এর মুখোমুখি তটিনী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুরুল আলম

প্রথম আলো:

শুনলাম অনেক দিন পর বরিশালে ঈদ কাটালেন। কেমন কাটল?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : এখন পর্যন্ত ভালো গেছে। বরিশালে ছয় বছর পরে ঈদ করলাম। অনেক দিন পরে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। কিছু নাটক দেখার সুযোগ হলো। সব মিলিয়ে ভালো সময় গেছে।

প্রথম আলো :

ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে তো প্রায় সবই আপনার নাটক?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : হা হা। আমিও তো তাই দেখছি। আলহামদুলিল্লাহ। দর্শক আমার কাজ পছন্দ করেছেন, কথা বলছেন। কাজের দিক থেকে ঈদটা আরও ভালো গেছে। দোয়া করবেন, এটা যেন ধরে রাখতে পারি।

তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

দর্শকদের প্রত্যাশা কি বেড়ে গেল?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : হ্যাঁ, সেটা বুঝতে পারছি। এখন আমার কোরবানির ঈদের কাজ নিয়ে ভয় লাগছে। কারণ, এবারের প্রতিটি কনটেন্ট এত পছন্দ করেছেন দর্শক, এত ভালো ফিডব্যাক পাওয়ার কারণে প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যায়। আবার এটা ধরে রাখাটাও কঠিন। সব সময় তো একই মানের ভালো কাজের চিত্রনাট্য হাতে আসে না। চেষ্টা করছি এর মধ্যে থেকেই সেরা কাজগুলো বাছাই করতে।

প্রথম আলো :

ঈদে আপনার পছন্দের চরিত্র ছিল কোনটা?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : দর্শকেরা ‘তোমাদের গল্প’, ‘মন দিওয়ানা’, ‘হৃদয়ের এককোণে’, ‘প্রেম ভাই’ কাজগুলোর প্রশংসা করছেন। একেকটা একেক ধরনের কাজ। সব কটির চিত্রনাট্য পছন্দের জন্যই করা। তবে দর্শকপ্রিয়তার কথা যদি বলি, তাহলে মোস্তফা কামাল রাজ ভাইয়ের ‘তোমাদের গল্প’ নাটকটি দর্শক বেশি পছন্দ করেছেন। পারিবারিক গল্পের নাটক। এটার শুটিং করার সময়ে মনেই হয়নি চরিত্রগুলো আমার আপন চাচা বা ভাই না। তখন মনে হয়েছিল, হিট না হলেও এই কনটেন্ট দর্শক পছন্দ করবেন। এখানে আমার চরিত্রের নাম ছিল শালু। সুহাসিনীর পরে শালুর প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে। চরিত্রটি দিয়ে দর্শক আমাকে বেশি পছন্দ করছেন। এই চরিত্রটি মনে রাখার মতো। এর আগে ‘পথে হলো দেরি’ কনটেন্টটি জনপ্রিয়তা পেলেও সেই চরিত্রটি দর্শকদের মনে এতটা জায়গা পায়নি। বুঝতে পারছি, শালুকে পছন্দ করছেন দর্শক।

তানজিম সাইয়ারা তটিনী
ছবি: তানজিম সাইয়ারা তটিনীর সৌজন্যে
প্রথম আলো:

আগামী ঈদে কেমন গল্প পছন্দের তালিকায় রাখতে চান?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : আমার তো এখনো ইমার্জিং ক্যারিয়ার। বলব না আমি এখনো স্ট্যাবলিশ কোনো আর্টিস্ট। হয়তো কম সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছি, এ জন্য দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞতা। কিন্তু শিল্পী হিসেবে এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি। আমার কাছে এটাই মনে হয়, সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করতে চাই। দর্শক যেন বলতে না পারেন আমি একই ধরনের চরিত্রে বারবার কাজ করি। কিছুদিন আগেও আমাকে শুনতে হয়েছে একই ধরনের কনটেন্ট অনেক করি। সেই জায়গা থেকে এবার ঈদে বের হওয়ার চেষ্টা করেছি। সবই আলাদা গল্প ও চরিত্র। সেটা ঈদের কাজ দেখলেই দর্শক বুঝতে পারবেন। এই কাজগুলো আমাকে সাহস দিয়েছে।

প্রথম আলো :

তাহলে যাঁরা আপনার সমালোচনা করেন, তাঁদের আপনি গুরুত্ব দিতে চান?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : সমালোচনা থাকবেই। একটা মানুষ আলোচনায় থাকলেই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হবে। এখন ১০ জনের মধ্যে ৫ জন ভালো, বাকিরা মন্দ বলবেন—এটাই স্বাভাবিক। এমনটা হলেই মনে হয় আমি ঠিকঠাক কাজটা করছি। সমালোচনা না হলে মনে হয় মিথ্যা বলছে। কারণ, সবাই প্রশংসা করবে এটা হতে পারে না।

তানজিম সাইয়ারা তটিনী
ছবি : কবির হোসেন
প্রথম আলো:

নিজের কাজ দেখে নিজেকে কোথায় দাঁড় করান?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : নিজের কাজ দেখলে মনে হয় অনেক জায়গায় আরও ভালো করা যেত। পরবর্তী কাজগুলোতে যেন ভুল না হয়, সেটা ভুল থেকে শিক্ষা নিই। আবার কোথাও দর্শকদের কোনো অংশ পছন্দ না হলে সেটা আমি খুঁটিয়ে দেখি। পরে যেন উন্নতি করা যায়। নিজের ভুল যেন ধরতে না পারি, সেই চেষ্টা করি।

প্রথম আলো :

তৌসিফ মাহবুবের সঙ্গে আপনাকে জুটি হিসেবে খুবই কম দেখা যায়, অথচ এবার ঈদে আপনাদের বেশির ভাগ নাটকই ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে...

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : (ফারহান আহমেদ) জোভান বা (ইয়াশ) রোহানের সঙ্গে তুলনামূলক বেশি কাজ করি। তৌসিফ ভাইয়ের সঙ্গে আমার কম কাজ করা হয়। এবার দুটি কনটেন্টই দর্শক গ্রহণ করেছে। আগেও দেখেছি কম কাজ করলেও তৌসিফ ভাইয়ের সঙ্গে দর্শক আমাদের কনটেন্ট গ্রহণ করেছে, জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এবার দর্শক পছন্দ করার পরে মনে হচ্ছে, আমরা যেন আরও ভালো কাজ দিতে পারি।

তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ফেসুবক থেকে
প্রথম আলো:

জুটি হিসেবে ইয়াশ রোহানের সঙ্গে আপনাকে সবচেয়ে বেশি দেখেছেন দর্শক।

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : ইয়াশ আর আমার জুটির আলাদা দর্শক ছিল। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। দর্শক সব সময়ই আমাদের দেখেছে, সেখানে অন্যদের সঙ্গে কাজ করাটি চ্যালেঞ্জ ছিল। চেয়েছিলাম ইয়াশের সঙ্গে দর্শক যতটা পছন্দ করেন, ততটাই যেন অন্যদের সঙ্গেও করেন। আমি অ্যাক্টর বেজ আর্টিস্ট হতে চাই না, যে আরেকজনের জন্য আমাকে দর্শকেরা পছন্দ করুক। আমি চাই আমার জন্য দর্শক আমাকে পছন্দ করুক। সেটা আমি যে চরিত্রই করি আর যে শিল্পীর সঙ্গেই অভিনয় করি না কেন, শিল্পী হিসেবে নিজের একটা ইন্ডিভিজুয়ালিটি থাকতে হবে। এটাই প্রত্যেক শিল্পীর চাওয়া উচিত।

প্রথম আলো:

সহকর্মীদের মধ্যে আপনাকে নিয়ে কোনো কানাঘুষা কখনো শুনেছেন?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : না। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে প্রায় সবার সঙ্গেই দেখা হয়েছে, সেখানে সবার সঙ্গে বেশির ভাগ শুধু কুশল বিনিময় হয়েছে। যে কারণে এ ধরনের টপিক নিয়ে কথা ওঠেইনি।

তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

ঈদে অন্যদের কোনো নাটক দেখেছেন?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : খুব বেশি কাজ এবার আমার দেখা হয়নি। ছয় বছর পরে ঈদও করেছি বরিশালে। পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। বেশ ব্যস্ততার মধ্যেও গেছে ঈদের সময়। আমার কাজ কিছু দেখেছি।

প্রথম আলো:

এবার নিজ বাড়িতে গেলেন নতুন পরিচয়ে—এখন আপনি অভিনেত্রী। কী ধরনের পরিবর্তন চোখে পড়েছে?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : ছয় বছর আগে আমি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজই করিনি। হঠাৎ আমার অভিনয়ে আসা। ২০ সালের দিকে আমার জার্নি শুরু। সেই জায়গা থেকে এবারের ঈদে অনেক পার্থক্য ছিল। নিজের এলাকার মানুষের সঙ্গে কাজ নিয়ে কথা বলেছি। তাঁরা আমার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন। আমাকে আলাদা একটি চোখে দেখেন। বুঝতে পারি, আমার কাছে তাঁদের প্রত্যাশা বেশি। তাঁদের কথা শুনে এটাই মনে হলো, বরিশালের হয়ে আমি আমার দর্শকদের কিছু দিতে পেরেছি।

তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ছবি: ফেসবুক
প্রথম আলো:

অবশ্যই ভক্তরা এসেছিলেন দেখা করতে?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : আমি আসলে খুব একটা জানিয়ে যাইনি। পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কেটেছে। এরপরও ঘুরতে বের হলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরা বলেন, ‘আপা, আপনার কাজ দেখেছি। ভালো লাগে।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেকে জানেনই না আমি বরিশালের মেয়ে।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

সিনেমা নিয়েও অনেক আলোচনা হচ্ছে। সিনেমায় আপনাকে নিয়ে আলোচনা হোক চান?

তানজিম সাইয়ারা তটিনী : সিনেমা নিয়ে আপাতত প্ল্যানিং নেই। ভালো গল্প–চরিত্র পেলে দেখা যাবে। আমার চাওয়া ভালো চরিত্রে নাম লেখানো। গল্পে আমি কী করছি সেটার আলাদা গুরুত্ব থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমি খুব বাছবিচার করি। দর্শক যেন আমাকে আলাদাভাবে পছন্দ করেন, সেটা চাই। সিনেমা তো আরও বড় ক্যানভাস। সিনেমাতে দর্শক পছন্দ করবেন, সেটাই চাইব। তেমন চরিত্র পেলে সিনেমা করতে চাই।