এ বছরে আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা জানতে চাই…
সামিরা খান মাহি: এটা তো ভাই আমার জন্য কঠিন প্রশ্ন। এবারের পরিকল্পনাটা হচ্ছে, ক্যারিয়ারে ভালো কাজ যুক্ত করতে চাই। নাটক তো বরাবরই করছি; কিন্তু এ বছর আমি চাই, একটা-দুটো ভালো ওটিটি করি। সিনেমাটা তো স্বপ্ন; ওটা হলে হবে, না হলে নেই। এ ছাড়া বেছে নাটক করার চেষ্টা করছি। এটার একটা কারণ আছে। অনেক কিছুতে আমার অনেক দুর্বলতা আছে। কয়েকটা ক্লাস করা উচিত। ভোকাল প্র্যাকটিস করা উচিত। ভালো করে নাচটাও শেখা উচিত। শুটিংয়ের পাশাপাশি এই শিক্ষাগুলো নিতে চাই।
প্রথম আলো :
এমন কেউ কি আছেন, যিনি আপনার এসব দুর্বলতা ধরিয়ে দেন?
সামিরা খান মাহি: আমারটা ওভাবে কেউ ধরিয়ে দেয় না। নিজের কাজ যখন নিজে দেখতে পাই, তখন মনে হয়, আচ্ছা ওখানে একটু এ রকম হলে বেটার হতো। অথবা সিনিয়রদের যেকোনো কাজ দেখি, তখন মনে হয়, তাঁরা যেহেতু এত ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেদের অভিনয় দক্ষতার উন্নতি করেছেন, সেগুলো তো আমারও করা উচিত। যেহেতু আমি কখনো কোনো (অভিনয়ের) ক্লাস করে আসিনি। নাটকের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়ে যাত্রা শুরু করেছি। সেখান থেকে মনে হয়, একটু এডুকেশন থাকলে আরও বেটার হয়। তাহলে হয়তো বিবেচনা করতে পারব, কোনটা ভালো বা খারাপ কাজ!
অগ্রজরা কি অনুজদের সাহায্য করেন?
সামিরা খান মাহি: আমি নিজেকে আনলাকি বলব। কারণ, অভিনেত্রীদের সঙ্গে দেখাই হয় না। আগে বড় বড় ধারাবাহিক হতো। সব সিনিয়র তারকা শিল্পী একসঙ্গে কাজ করতেন। এখন হয়তো বছরে একবার কোনো অ্যাওয়ার্ড শোতে দেখা হয়, যেখানে সেভাবে কথা বলার সুযোগ হয় না। পুরুষ অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখি; কিন্তু ফিমেল-ফিমেলের মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। সিনিয়ররা দৃশ্যগুলো কীভাবে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন, কেমন অভিনয় করেন, চরিত্রগুলো কীভাবে ফুটিয়ে তোলেন, সেটা দেখার সুযোগ একদমই হয় না। তবে যখনই কোনো সিনিয়র অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয়, তখন তাঁকে খুব অবজার্ভ করি। চেষ্টা করি শেখার।
প্রথম আলো :
মাহির টার্নিং পয়েন্ট?
সামিরা খান মাহি: আমি মনে করি, যে সময়টায় ‘গার্লস স্কোয়াড’, ‘হাঙর’ করেছিলাম, তখন আরও কয়েকটি নাটকে খুবই ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করেছি। এরপর থেকে দর্শক আমাকে সিরিয়াসলি নেওয়া শুরু করেছেন।
আপনি যেমন কম সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, আপনার সমসাময়িক অন্যরাও পাচ্ছেন। আজকাল জনপ্রিয়তা পাওয়া কি সহজ হয়ে গেছে?
সামিরা খান মাহি: একটা সময় সবাই টেলিভিশনে নাটক দেখতেন। এখন তো ইউটিউবে নাটক দেখেন। তাই অনেক শিল্পী আসবেন। এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের মধ্য থেকে দর্শক ভালো লাগার অভিনয়শিল্পীকে গ্রহণ করবেন। আগে অনেক অপশন ছিল না। তা ছাড়া মেহজাবীন আপুদের সময়ে বেশির ভাগ শিল্পী প্রতিযোগিতা থেকে আসতেন। এখন ভালো কাজের মাধ্যমে আসছেন। তবে এটা বলব, আগের থেকে জনপ্রিয়তা একটু ইজি; কিন্তু জনপ্রিয়তা পেলেই হয় না, টিকিয়ে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যে সময়ে শুরু করলাম, তখন আরও ২০ জনের মতো এসেছিলেন। সবাই তো আর ক্লিক করলেন না। এ ক্ষেত্রে এটাও বলা যায়, দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া এতটাও সোজা নয়। বিশেষ করে ভালোবাসা পাওয়াটা ভেরি ডিফিকাল্ট।
প্রথম আলো :
দর্শকের পছন্দের গল্পে অভিনয় করতে গিয়ে নিজের পছন্দ জলাঞ্জলি দিয়েছেন?
সামিরা খান মাহি: আমার ক্ষেত্রে বলব—ঝগড়াঝাটি, চিল্লাচিল্লি আছে এমন নাটক অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। সেই জায়গা থেকে দর্শক ওটাই চান। কিন্তু আমি তো ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হতে চাই। সব ধরনের অভিনয় করব। তবে দর্শক একরকম নিয়েই নেন। তো ওটার বাইরে চলে গেলে ভিউয়ে ঝামেলা হয়। যদিও মাঝেমধে৵ ভিউ ম্যাটার করে না, যখন আপনি অনেক ভালো কাজ করেন। আমরা যদি ভালো কিছু দিই, তাহলে অডিয়েন্সের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে। এখন একই জিনিস যদি দিতেই থাকি, যেটা তাঁরা পছন্দ করেন, তখন তো উপলব্ধি পরিবর্তন হলো না। এখানে মাঝেমধে৵ আমার মন খারাপ হয়।
কাউকে প্রতিযোগী মনে করেন?
সামিরা খান মাহি: না। আমার কাছে মনে হয়, তাঁরা সবাই নিজস্বতা নিয়ে এসেছেন। যেমন আমার এটা বিশেষ দক্ষতা আছে, যেমন সিলেটি ভাষায় কথা বলতে পারি, যেটা দর্শক পছন্দ করেন। অনেকে আমাকে ভার্সেটাইল অভিনেত্রী বলেন। কেউ কেউ বলেন, তোমাকে বড়লোক (ধনী) চরিত্র দিলে ভালো করে করতে পারো। গ্রামের চরিত্র দিলেও ভালো করো। সুতরাং আমি কাউকে আমার প্রতিযোগী মনে করি না। কাউকে এমনটা মনে করলে হিংসার বিষয়টা চলে আসবে। আমি তো চাই সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে।
প্রথম আলো :
আপনাকে কেউ প্রতিযোগী মনে করেন বলে মনে হয়?
সামিরা খান মাহি: আমার মনে হয় না। আমি একদম পানির মতো। যেই পাত্রে রাখবেন, সেই পাত্রের আকারই ধারণ করব। সেই জায়গা থেকে আমি সবার সঙ্গে নাইস। আমি কখনো কারও সঙ্গে খারাপ হতেই পারব না।
প্রথম আলো :
সমসাময়িক কাদের অভিনয় ভালো লাগে?
সামিরা খান মাহি: আমার ঠিক এক বছর পরেই এসেছেন তটিনী, সাদিয়া আয়মান; ওঁরা খুব ভালো করছেন। সবার কাজ দেখি। আর সিনিয়রদের কথা তো বাদই দিলাম। তাঁদের কাজ তো দেখতেই হবে।
আপনি নাকি নিলয় আলমগীরের সঙ্গে বেশি কাজ করেন?
সামিরা খান মাহি: না এটা একটা ভুল কথা। এটা সবাই বলেন। গত বছর নিলয়ের সঙ্গে মাত্র চার-পাঁচটা প্রজেক্ট হয়েছে। তাঁর সঙ্গে হিমির অনেক বেশি প্রজেক্ট হয়; কিন্তু আমাদের নাটকগুলোর ক্লিপস অনেক বেশি ভাইরাল হয়, যেটা মানুষ মনে রাখেন।
প্রথম আলো :
কোন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করাটা বেশি উপভোগ করেন?
সামিরা খান মাহি: কারও সঙ্গে কাজ করতে খারাপ লাগে না। এখন আমার একটা বেশি কাজ হচ্ছে খায়রুল বাসারের সঙ্গে। নিলয়ের সঙ্গে এখন একটু কম হচ্ছে। মুশফিক ফারহানের সঙ্গে কম হচ্ছে। ইয়াশ রোহান, ইরফান সাজ্জাদ, আরশ খান—মোটামুটি সবার সঙ্গেই কাজ করছি।
প্রথম আলো :
সিনেমাকে স্বপ্নের জায়গা বললেন। কোন ধারার সিনেমায় আগ্রহ?
সামিরা খান মাহি: ‘হাওয়া’ দেখার পর সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা জেগেছে। আমি যদি কখনো সিনেমায় অভিনয় করি, তাহলে প্রথম সিনেমাটাই যেন এ রকম ধরনের গল্প হয়। অনেক সুন্দর আর গ্ল্যামার লাগতে হবে, এটা আমি চাই না। ক্যারেক্টারটা প্লে করে আসতে চাই। যেটা আমরা ‘হাওয়া’য় দেখেছি। ওখানে কিন্তু তুষিকে অনেক সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে, এমন না; কিন্তু চরিত্রটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।