যৌনকর্মী ভেবে কয়েকজন এসে আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন: নিপুণ

‘বীরত্ব’ দিয়ে প্রায় চার বছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে চিত্রনায়িকা নিপুণের নতুন ছবি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের শুরু থেকেই নানা আলোচনা–সমালোচনার মধ্য দিয়ে গেছেন এই অভিনেত্রী। অভিযোগ আছে, সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদটি আদালতে ঝুলে থাকলেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রসঙ্গসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী।

নিপুণছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘বীরত্ব’ ছবিতে যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মুক্তির পর আপনি হলে হলে ঘুরেছেন। চরিত্রটি কীভাবে নিয়েছেন দর্শকেরা?

চরিত্রটি আমার জন্য নতুন। ছবিটি দেখে দর্শক আমার প্রশংসা করেছেন। এ–ও বলেছেন, আমি নাকি চরিত্রটির সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছি। অনেক হলেই গিয়েছি, শো শেষে দর্শকের সামনাসামনি হয়েছি। দর্শকের কাছ থেকে এমন সব প্রতিক্রিয়া পেয়েছি আমি, একজন অভিনেত্রী হিসেবে এটাই তো সার্থকতা।

প্রশ্ন :

চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?

চরিত্রটির নাম লুৎফা। শুটিংয়ের পরিবেশই এগিয়ে দিয়েছে চরিত্রটিকে। কারণ, গোয়ালন্দ যৌনপল্লিতে গিয়ে শুটিং করেছি। টানা ১০ দিন শুটিং হয়েছে সেখানে। শুটিংয়ের জন্য সারা দিন যৌনপল্লিতে থাকা হতো। সত্যিকারের যৌনকর্মীদের রুমেই আমার অংশের শুটিং হয়েছে। একদিনের মজার কথা বলি, অনেক দূর থেকে ক্যামেরা ধরা। আমি যৌনপল্লিতে ঘোরাফেরা করছি। আমাকে কেউ চিনতে পারেনি। সত্যি সত্যি যৌনকর্মী ভেবে কয়েকজন এসে আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। পরে যখন তাঁরা জানতে পারেন, এটি শুটিং, খুব লজ্জা পেয়েছিলেন। এই ছবির মুক্তির পর অনেক কাজের প্রস্তাব আসছে।

প্রশ্ন :

কেমন সেটি?

‘বীরত্ব’ ছবির মুক্তির পর চারটি চিত্রনাট্য হাতে এসেছে। গল্পগুলো খুব ভালো। সেগুলো পড়ছি। আমার চরিত্রগুলো বেশ শক্তিশালী, চ্যালেঞ্জিং। কাজের সুযোগ আছে। এর মধ্যে একটি চিত্রনাট্য মোটামুটি চূড়ান্ত করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে জানাতে পারব।

নিপুণ

প্রশ্ন :

২০১৮ সালে ‘ধূসর কুয়াশা’ মুক্তির পর চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে যান। প্রায় চার বছর পর ‘বীরত্ব’ মুক্তি পেল। চলচ্চিত্রে আবার নিয়মিত হবেন কি?

ব্যবসা শুরু করার পর সিনেমা থেকে একটু দূরে ছিলাম। আমার মূল জায়গাই তো সিনেমা। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিয়ে কাজ করছি, সিনেমাসংশ্লিষ্ট সব অনুষ্ঠানেই যোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। এখন ভালো ভালো চিত্রনাট্য হাতে আসছে, চরিত্র আসছে। সুতরাং নিয়মিত তো হয়েই গেছি। এখন নায়ক-নায়িকার চেয়ে গল্পভিত্তিক, চরিত্রভিত্তিক সিনেমা বেশি হচ্ছে। এতে করে শুধু আমি নই, যেসব গুণী শিল্পী বসে আছেন, যাঁদের ভালো কাজের ক্ষুধা আছে, তাঁদের সুবিধা হচ্ছে। তাঁরা নতুন করে কাজে ফিরছেন।

প্রশ্ন :

শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে শিল্পীদের মধ্যে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছিল, এখনো কি সেই অবস্থা আছে?

কিছুটা তো আছেই। এখনো সবাইকে একসঙ্গে পাচ্ছি না। এত বছরের এই সমস্যা এক দিনে তো শেষ হবে না। তবে হয়তো একসময় হবে। যখন সবাই দেখবেন, একসঙ্গে থাকার কারণে ইন্ডাস্ট্রির লাভ হচ্ছে, তখন বাকিরাও এক জায়গায় আসবেন।
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের রায় এখনো আদালতে ঝুলে আছে। কিন্তু আপনি সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, কার্যক্রমও চালাচ্ছেন।

শিল্পী সমিতির চেয়ারে নিপুণ

প্রশ্ন :

এমনকি পদবির নেমপ্লেটও তৈরি করেছেন। কতটুকু যুক্তিসংগত?

আমি আমার আইনজীবীর অনুমতি নিয়েই জায়গাটিতে বসেছি। তাঁরা আইনের বিষয়টি ভালো জানেন। জেনেবুঝেই হয়তো আমাকে এই অনুমতি দিয়েছেন। আমার পক্ষে মহামান্য আদালতের যে রায় আছে, সেই অনুযায়ী আমি এই পদে বসেছি। আর যদি বিষয়টি অবমাননা করে পদে বসতাম, তাহলে এত দিনে নিশ্চয়ই আদালত আমাকে সতর্ক করতেন, ব্যবস্থা নিতেন। আমার প্রতিপক্ষ কিন্তু এ ব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগও করেছিলেন। আমি যদি এখানে অনিয়ম করে বসি, আমারও তো অসম্মান এটি। সুতরাং আমি নিয়মের মধ্যে থেকে এখানে বসে কাজ করছি।

প্রশ্ন :

আবার কেউ কেউ বলেন, নির্বাচন ও নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে উচ্চপর্যায়ের এক প্রভাবশালীর প্রভাব ব্যবহার করেছেন আপনি। কী বলবেন?

তাহলে তো নির্বাচন ও নির্বাচন–পরবর্তী অনেক কিছুর জন্যই আমাকে এত এত ফাইট করতে হতো না, কষ্ট করতে হতো না। এ ধরনের  প্রভাবশালীর ক্ষমতা যদি আমি ব্যবহারই করতাম, নির্বাচনের আগেই অনেক কিছু করতে পারতাম। আপনারা নির্বাচনের দিন মাঠে দেখেছেন, আমি কী কষ্ট করেছি। ভোটের দিন একটি পক্ষের চক্রান্তে আমাদের প্যানেলের খাবার ও পানি পর্যন্ত এফডিসিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একটা পর্যায়ে খাওয়ার পানিটা পর্যন্ত পাচ্ছিলাম না। যত রকমের মানসিক অত্যাচার আছে, আমার ওপর সবই করা হয়েছে। নির্বাচনের পর আদালতে দৌড়াদৌড়িতে কম কষ্ট হয়নি।

নিপুণ ও ইমন ‘বীরত্ব’ সিনেমার একটি দৃশ্যে
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৭(খ)–তে বলা আছে, কার্যকরী পরিষদের কোনো সদস্য বিনা নোটিশে তিন সভায় অনুপস্থিত থাকলে কার্যকরী পরিষদ তাঁর সদস্যপদ বাতির করতে পারবে। এ পর্যন্ত পাঁচটি সভা হয়েছে। কিন্তু অনেকে একবারও উপস্থিত হননি। গঠনতন্ত্র মানা হলো না কেন?

উপস্থিত যাঁরা হননি, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিল্পী আছে। আমাদের সভাপতি কাঞ্চন ভাইয়ের কথা, তাঁদের অনেকেই একটা সময় কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে সিনেমায় পর্দা ভাগাভাগি করেছেন। তাঁদের প্রতি সেই সম্মান দিতে চেয়েছেন তিনি। এ কারণে পদ বাতিল করা হয়নি। আরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক। তবে সামনে ডিসেম্বরে সমিতির এজিএম হবে। তার আগে যদি এ সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে এজিএমে বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা হবে। তাঁদের পদ বাতিল হয়ে যেতে পারে।