‘দর্শক ছবিটি দেখে আমাদের গালি দেবেন’

২৬ আগস্ট সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমা আশীর্বাদ মুক্তির কথা। এর আগেই ছবির নায়ক-নায়িকা মাহিয়া মাহি ও জিয়াউল রোশান ছবির প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন। প্রযোজকের সংবাদ সম্মেলনের এক সপ্তাহের মাথায় মাহি-রোশানরাও গত বৃহস্পতিবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এসব বিষয়সহ সিনেমায় তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মাহিয়া মাহি

মাহিয়া মাহি

প্রশ্ন :

শুটিং শেষ হয়েছে বেশ আগে। কোনো কথা শোনা যায়নি। মুক্তির তারিখ ঘোষণা করার সময় এসে প্রযোজক আপনার ও নায়কের ওপর রাগ ঝাড়লেন কেন?

সত্যি কথা বলতে, আমরা কিন্তু একবারও বুঝতে পারিনি তিনি আমাদের নিয়ে এভাবে বলবেন। বলার তো কথা ছিল আমাদের। কারণ, আমরা এত ঝামেলা সহ্য করে শুটিং করেছি। মানসম্মানের ভয়ে এ ব্যাপারে আমরা টুঁ শব্দও করিনি। কিন্তু তিনি যে হুট করে আমাদের নিয়ে এভাবে বানোয়াট কথা বলবেন, বুঝিনি।

প্রশ্ন :

এর কারণ কী হতে পারে? কী মনে হয়?

ভেবেচিন্তে মনে হয়েছে, নিজের প্রচারের কারণে হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে ছবির নায়ক-নায়িকা অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘নায়ক–নায়িকার প্রচার করার জন্য তো সিনেমায় বিনিয়োগ করিনি।’ তাহলে বুঝতেই পারছেন, নিজের প্রচারের জন্যই এটি করেছেন। কারণ, আমরা থাকলে তো ক্যামেরা আমাদের বেশি গুরুত্ব দিত। তা ছাড়া আমি আর রোশান যেদিন চুক্তি করি, তখন তিনি কড়াভাবে বলেছিলেন, তাঁর ছবি ছাড়া ফেসবুকে যেন আমরা কোনো ছবি আপলোড না করি। এই ছবিতে নায়িকা অপু বিশ্বাস চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর প্রযোজক ছাড়া শুধু নিজের ছবি আপলোড করেছিলেন বলে তাঁকে ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাহলে বোঝেন অবস্থা।

মাহিয়া মাহি

প্রশ্ন :

আপনার বিরুদ্ধে প্রযোজক অভিযোগ করেছেন, শুটিংয়ে আপনার কুকুরের দেখভাল করার জন্য সহকারীকে পারিশ্রমিক দিতে হয়েছে, আপনার কারণে প্রোডাকশন বয়কে পরিবর্তন করাসহ নানা কথা।

বিশ্বাস করেন, সবই মিথ্যা। কারণ যে প্রযোজক শিল্পী-কলাকুশলীদেরই ঠিকমতো পারিশ্রমিক দেননি, কুকুর দেখার জন্য আমার সহকারীকে টাকা দেবেন কীভাবে? এটা পুরোটাই হাস্যকর। গত বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে আমার সঙ্গে উপস্থিত কয়েকজন কলাকুশলী ঠিকমতো পারিশ্রমিক না পাওয়ার কথা বলেছেন। উপস্থিত পরিচালকও বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেদিনের ভিডিও ফুটেজে তা পাবেন।

মাহিয়া মাহি
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রশ্ন :

২৬ আগস্ট মুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে ‘আশীর্বাদ’। এত কিছুর পর ছবির প্রচারে কি থাকছেন?

আমি তো চাই ছবিটি মুক্তি না পাক। এভাবে মুক্তি দিলে গোঁজামিলে ভরা একটা ছবি মুক্তি দেওয়া হবে। কারণ, ছবিটির এখনো একটি রোমান্টিক গান বাকি আছে। পরে শুনেছি, সেটি নাকি শুটিংয়ের আমার আর রোশানের বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করে গানটি বানানো হয়েছে। এভাবে ছবিটি মুক্তি দিলে দর্শকেরা ছি ছি করবেন। একটি সিনেমা ১০–১৫ দিন শুটিং হয়েছে। তাহলে ভাবুন কী হয়েছে সেটি। জোড়াতালি দিয়ে ছবিটির শুটিং শেষ করেছেন প্রযোজক। প্রযোজকের তো কোনো সমস্যা নেই। তিনি তো অনুদানের দেওয়া টাকা থেকে লাভ করে ফেলেছেন। এখন ছবির কী হলো না হলো তা তাঁর দেখার নেই। সমস্যা হবে আমাদের শিল্পীদের। কারণ, দর্শক ছবিটি দেখতে বসে আমাদের গালি দেবেন।

মাহিয়া মাহি

প্রশ্ন :

এভাবে ছবিটি নির্মাণ করার কারণ কী মনে হয়?

সোজা হিসাব, লাভ করার জন্য। এটি সরকারের ৬০ লাখ টাকা অনুদানের ছবি। তিনি মনে করেছেন, কম বাজেটে কোনোমতো একটা ছবি বানিয়ে বাকি টাকা লাভ করবেন। তা–ই করেছেন তিনি। কাজ করে বুঝেছি, ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা এই ছবিতে খরচ হয়েছে। যদিও পরিচালকের হিসাব ১৮ লাখ। এরই মধ্যে এই প্রযোজক ২০ লাখ টাকায় ছবির ডিজিটাল স্বত্ব বিক্রি করেছেন। ১০ লাখ স্পনসর নিয়েছেন। প্রযোজকের লাভ আর লাভ।

প্রশ্ন :

আপনি ও রোশান নাকি শুটিং লোকেশন থেকে চলে আসতে চেয়েছিলেন?

হ্যাঁ। শুটিংয়ের প্রথম দিন থেকেই প্রযোজক নিজেই পরিচালকের কাজে নাক গলাচ্ছিলেন। আরও অনেক সমস্যা। মাঝেমধ্যে খুব অসুবিধা হতো। কয়েকবার লোকেশন থেকে চলে আসতে চেয়েছি। শুধুই পরিচালকের অনুরোধে থেকেছি।

রোশান ও মাহিয়া মাহি
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার সর্বশেষ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘জান্নাত’। ২০১৮ সালে এটি মুক্তি পায়। আগামী ৭ অক্টোবর আরও একটি ছবি ‘যাও পাখি বলো তারে’ মুক্তি পাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর প্রেক্ষাগৃহে আসছে আপনার ছবি। কেমন লাগছে?

যাও পাখি বলো তারে একটি গ্রামীণ পটভূমির ছবি। এটিও পরিচালনা করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। আমার বিশ্বাস, ঠিকমতো প্রচার–প্রচারণা করে দর্শকদের জানাতে পারলে ভালো সাড়া পাব এই ছবি থেকে। এফডিসিতে আয়োজন করে পরিচালকসহ আমরা সবাই সিনেমাটি দেখেছি। সিনেমা দেখতে বসে আমরা সবাই কেঁদেছি। দারুণ একটি কাজ হয়েছে এটি। এখন প্রচার–প্রচারণা করে দর্শকদের জানাতে হবে। তাহলেই সিনেমাটি থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি।