প্রথম আলো :
আপনার বেশির ভাগ নাটকই ট্রেন্ডিংয়ে থাকে।
শায়লা সাথী: আমি তো দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়ার আশায় কাজ করি (হাসি)। কেউ প্রশংসা করলে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হই, মনে হয় দর্শক আমার কাজ দেখছেন, ভালো কাজের উৎসাহ পাই।
প্রথম আলো :
বর্তমানে ট্রেন্ডিংয়ে থাকা দুই নাটক কোনো কারণে কি আপনার কাছে বিশেষ?
শায়লা সাথী: বিশেষ করে বলব ‘মাটির মেয়ে’র কথা। নাটকটি আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা। এটি আমিসহ প্রত্যেক মেয়ের গল্প বলে। গল্পে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে। কারণ, আমাদের এখানে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য প্রত্যেক নারীকে সংগ্রাম করতে হয়। সমাজ ও পরিবারের নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। সমাজের মেয়েদের জার্নির গল্প আরও বেশি তুলে ধরতে চাই। যে কারণে আমি নারীকেন্দ্রিক গল্পে বেশি অভিনয় করি।
প্রথম আলো :
নারী হিসেবে আপনার সংগ্রাম কেমন ছিল?
শায়লা সাথী: নাটকের গল্পের মতোই নারী হিসেবে আমাকে নানান বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। আমি যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিষয়ে পড়াশোনা করি তখন থেকেই এক শ্রেণির মানুষ নানা কথা বলতে শুরু করে। নাট্যকলায় পড়ে কী করব, মেয়েদের জন্য এ আবার কেমন বিষয়। পরে যখন অভিনয় শুরু করি, তখনো পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমার পরিবারের কেউ চায়নি আমি অভিনয় করি। এমনও হয়েছে, একসময় প্রায় দেড় মাস মা-বাবা আমার সঙ্গে কথাই বলেনি।
প্রথম আলো :
রাজি করালেন কীভাবে?
শায়লা সাথী: অনেকের অনেক কথা আমাদের শুনে বড় হতে হয়। দেখবেন একটি পরিবারের মেয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। আমি অভিনয়ে আসার পরে অনেকেই হয়তো বলেছেন, মেয়েটাকে অভিনয়ে দিয়ো না। অভিনয় নিয়ে নেতিবাচক অনেক কিছু বলেছেন। কিন্তু শৈশব থেকে সাংস্কৃতিক পরিবেশ আমার ভালো লাগত। যে কারণে একসময় নিজের ইচ্ছাতেই নাম লেখাই। পরে যত দিন যেতে থাকে, পরিবারের লোকেরা দেখে আমার মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। অভিনয় করেও আমি সাথী সাথীই আছি। নেতিবাচক তো নয়ই বরং পজিটিভ অনেক কিছু আমার মধ্যে ছিল। ক্রমেই তারা বুঝতে পেরেছে খারাপ কিছু করছি না। এখন তারা আমার ভক্ত।
প্রথম আলো :
নাটক দেখে মা-বাবা এখন কী বলেন?
শায়লা সাথী: এখন আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক মা ও বাবা। ‘মাটির মেয়ে’ নাটক দেখে প্রথমে তারাই সমালোচনা করেছে। তাদের একটাই কথা, সমাজের মানুষের কাজে লাগবে এমন কোনো গল্পে কাজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এমন গল্পে কাজ করতে হবে, সেটা যেন পরিবার নিয়ে দেখা যায়। গল্পে যেন অশ্লীল কিছু না থাকে। আমি সে চেষ্টাই করে যাই।
প্রথম আলো :
আপনাকে শুধু এক ঘরানার শিল্পীদের সঙ্গে দেখা যায় কেন?
শায়লা সাথী: আমি তো সব শিল্পীর সঙ্গেই অভিনয় করতে চাই। কিন্তু আমার শুরুটা প্রাঙ্ক কিং নামের একটি গ্রুপের সঙ্গে। তারা ছিল ইউটিউবকেন্দ্রিক। আমাকে ইউটিউবার বলে ছোট করা হতো। শুনেছি, নাটকের মূলধারার যাঁরা, তাঁরা অনেকেই আমাকে পছন্দ করেন না। এটা আমার শুরুতে খারাপ লাগত। কিন্তু এখন মনে হয়, আমার যদি যোগ্যতা থাকে, একসময় সবার সঙ্গে কাজ হবে। মাঝে এক বছরের বেশি সময় চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তেমন কাজ করা হয়নি। বেশির ভাগ চিত্রনাট্যেই দেখলাম জোর করে হাসানোর চেষ্টা করা হয়। কথা বলতে হয় উচ্চ স্বরে। ট্রেন্ডিংয়ে থাকতে ভাঁড়ামি গল্পে কেন কাজ করব। আমি হয়তো সেখানে মানানসই নই। যে কারণে নিজের মতো করে কাজ করি।
প্রথম আলো :
নারীকেন্দ্রিক গল্পে কাজের অনুপ্রেরণা কীভাবে পেয়েছেন?
শায়লা সাথী: আমি শৈশব থেকে অনেক স্বপ্ন দেখতাম। সেই স্বপ্নের পথে অনেক বাধা পেতাম। সেই বাধা উতরাতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। এখনো আমি সেটাই করি। নিজের বাধা থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়েছি। পাঁচ বছর আগে যদি আমি এই চেষ্টা না করতাম তাহলে আমিও শুরুতেই থেমে যেতাম। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবী যুদ্ধক্ষেত্র, বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মুহূর্ত সংগ্রাম করে যেতে হবে। যে কারণে সাধারণ নারীদের গল্প আমাকে টানতে থাকে। সেই গল্পগুলোতে দর্শক আমাকে পছন্দ করছেন। এখন আমি প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। অনেক ভালোবাসা পেতে আমি পছন্দ করি। এ জন্য নিজ নিজ জায়গায় সবাইকে বাধা ডিঙিয়ে চেষ্টা করে যেতে হবে।
প্রথম আলো :
অভিনয়ে আসা কীভাবে?
শায়লা সাথী: তখন ২০১৯ সাল। সবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তখন ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই পার্থিব সজীব অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। আমার অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল। সে রকম কিছু ভিডিও তখন ফেসবুকে পোস্ট করতাম। পরে স্বল্পদৈর্ঘ্য দিয়ে নাম লেখাই।
প্রথম আলো :
ভবিষ্যতে সময়ের আলোচিত কোনো অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে আপনাকে দেখা যাবে?
শায়লা সাথী: এখন চেষ্টা করছি। যাঁরা নিয়মিত শুটিং করছেন তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। সম্ভব বা সুযোগ হলে করব। আমার পক্ষ থেকে না নেই। অনেকেই বলেন আমি প্রাঙ্কিংয়ের আর্টিস্ট। যেটাকে মেইন স্ট্রিম নাটক থেকে আলাদা করে দেখা হয়। মনে হয় একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। হয়তো ছোট একটা জায়গা থেকে আমার শুরুটা হয়েছে। কিন্তু আমার মেধাকে কেন মূল্যায়ন করা হবে না? যে কারণে নিজের মতো করেই রিয়েলিস্টিক, রোমান্টিক, পছন্দমতো গল্পগুলোতে কাজ করতে চাই। এখানে কে আমার সঙ্গে কাজ করছে না, সেটা দেখার বিষয় নয়। কিন্তু কেউ ডাকলে, গল্প পছন্দ হলে অবশ্যই সবার সঙ্গে অভিনয় করতে চাই। আমার জায়গা থেকে সেই কনফিডেন্স আছে।
আমার মনোবল ভেঙে দেবে, এমন কোনো কিছুকে আশপাশে আসতে দিই না। তবে অনেক সময় খুব কাছের মানুষ হলে তাঁদের এড়ানো কঠিন হয়ে যায়।
প্রথম আলো :
যখন দেখেন কেউ আপনার কাজ পছন্দ করছেন না, তখন কী করেন?
শায়লা সাথী: আমি সব সময় পজিটিভভাবে সব চিন্তা করি। সেখানে আমাকে কেউ পছন্দ না–ও করতে পারে। এখানে যাঁরা পছন্দ করছেন তাঁদের দিকে আমার ফোকাস থাকে। যাঁরা পছন্দ করেন না তাঁদের এড়িয়ে চলি। আমি নিজের মধ্যে নেতিবাচক কিছুকে জায়গা দিতে চাই না। আমার মনোবল ভেঙে দেবে, এমন কোনো কিছুকে আশপাশে আসতে দিই না। তবে অনেক সময় খুব কাছের মানুষ হলে তাঁদের এড়ানো কঠিন হয়ে যায়। তারপরও তাঁদের সঙ্গে এমনভাবে থাকার চেষ্টা করি যেন তাঁরা আমার প্রশংসা করেন। যে কারণে নিজেকে বদলাতে পছন্দ করি। বলতে পারেন এটা একধরনের জেদ।
প্রথম আলো :
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শায়লা সাথী: ভালো একজন অভিনয়শিল্পী হতে চাই। সিনিয়র সবার সঙ্গে অভিনয় করতে চাই। আরও বেশি শিখতে চাই। নারীদের হয়ে কথা বলতে চাই। বড় পর্দায় দর্শক আমাকে দেখে হাততালি দিচ্ছেন—সেই জায়গায় নিজেকে দেখতে চাই।
প্রথম আলো :
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলবেন...
শায়লা সাথী: আমি বিয়ে করিনি। আসলে বিয়ে একসময় করতেই হবে। তবে লাইফ পার্টনার কেমন হবে সেটা ভাবতে অনেক সময় ভয় পাই। তবে এগুলো নিয়ে আসলে আপাতত ভাবতে চাই না। এখন কাজ নিয়েই থাকতে চাই।