প্রথম আলো :
বেশ শব্দ শোনা যাচ্ছে, কোথায় আপনি?
জুনায়েদ বোগদাদী: আমি এখন শুটিংয়ে। চারপাশে কোলাহল।
প্রথম আলো :
কিসের শুটিং?
জুনায়েদ বোগদাদী: নাটকের। সামনে ভালোবাসা দিবস ও ঈদ। যে কারণে কাজের চাপ খুব বেশি। এমন অবস্থা, দম ফেলার সময় পাচ্ছি না।
প্রথম আলো :
এখন দম ফেলার সময় আছে তো?
জুনায়েদ বোগদাদী: সত্য বলতে কি (হাসি), শুটিং থামিয়ে কথা বলছি। সান চলে যাচ্ছে তো, সবাই অপেক্ষা করছে। আমি গেলেই শুটিং শুরু হবে। আমি জাস্ট সিনটা শেষ করেই আপনাকে ফোন দিচ্ছি।
(৫০ মিনিট পর)
প্রথম আলো :
এখনো ব্যস্ত?
জুনায়েদ বোগদাদী: বললাম না ভাই, কখনো কখনো দম ফেলার সময় থাকে না। পাঁচ মিনিট বের করে যে ফোন দেব, সেই সময়ও হয়ে উঠছিল না। আর এখন শীতের দিন, এমনিতেই ডে লাইট কম পাওয়া যায়। সান একদমই চোখের পলকে চলে যায়। দিনে চার–পাঁচ ঘণ্টাও সময় পাই না। যে কারণে খুব গতিতে শুটিং করতে হয়। এভাবে যতটা সময় পাওয়া যায় কথা বলি। প্রয়োজনে বিরতিতে আবার কথা বলা যাবে।
প্রথম আলো :
বছরের প্রায় সব সময়ই অভিনয়শিল্পীরা এ কথা বলেন, ‘সান চলে যাচ্ছে। দম ফেলার সময় থাকে না।’ এ সময় আলাদা তাড়াহুড়ার কারণ কী?
জুনায়েদ বোগদাদী: হ্যাঁ, খুব তাড়া থাকে। শীতে এটা সবাইকেই ফেস করতে হয়। দেখা যায়, একটি নাটকে ২০ থেকে ২৪টি দৃশ্য থাকে। এক দিনে ১২–১৩টি দৃশ্যের শুটিং করা কঠিন। এখন নাটকে আলাদা করে গানের জন্য শুটিং করতে হয়। সেখানে আলাদা করে সময় দিতে হয়। এখানে লাইট করতে হয়, মেকআপের বিষয় আছে। শিল্পীদের লোকেশনে পৌঁছানোর বিষয় আছে। সব মিলিয়েই দুপুরের পর চাপ তৈরি হয়।
প্রথম আলো :
পরিকল্পনা করে সঠিক সময়ে শুটিং করে কি এ সমস্যার সমাধান করা যায় না?
জুনায়েদ বোগদাদী: আগে শুটিং শুরু করে আগে শেষ করব, বিষয়টা কিন্তু সেটা নয়। মূলত আমরা শুটিংয়ের জন্য অনেক সময় পাই না। আগে শুটিং শুরু করেও এক দিনে ১২–১৩টি সিন শুটিং করা নট আ জোক। কারণ, বিষয়টা আর্লি শুটিং শুরু করে সমাধান করা যাবে, এটা মনে হয় না।
প্রথম আলো :
তাহলে কোনো উপায় নেই?
জুনায়েদ বোগদাদী: উপায় তো আছেই। এটা নিয়ে সবাইকে বসতে হবে। এর সঙ্গে বাজেট জড়িত। দুই দিনের কাজ তিন দিনে বা তিন দিনের কাজ চার দিনে অথবা দুই দিনের কাজটাই কীভাবে সময়ে শুরু করে শেষ করা যায়, সেটার যথাযথ পরিকল্পনা থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে তো অনেক কিছুই সে অর্থে সম্ভব হয় না। তবে এখন অনেকেই চেষ্টা করেছে শুটিংয়ে চাপ কমাতে। আমরা যেমন দুটি ক্যামেরা দিয়ে শুটিং করছি। চাপ কমানোর এটাও একটা সমাধান।
প্রথম আলো :
শীতের রোদে শুটিং কতটা উপভোগ করেন?
জুনায়েদ বোগদাদী: শীতের রোদটা বাড়তি পাওয়া, এটা একটা সুবিধা। সফট লাইট, সূর্যের আলোর মধ্যেই শুটিং করা যায়। এই আলোটা ফ্রেমে ভিন্ন একটা মাত্রা যোগ করে। দেখা যায়, নাটকের শুটিং সিনেম্যাটিক হয়। এই হেমন্তের রোদ, আবহাওয়া, শীত বছরের অন্য সময়ে খুব মিস করি।
প্রথম আলো :
আপনার ফেসবুক পোস্টে প্রায়ই দেখা যায় ভক্তরা মন্তব্য করেছেন, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’র মতো গল্পে দেখতে চান...
জুনায়েদ বোগদাদী: এখন কিন্তু ওটিটিতে সেরা কাজগুলো এমনিতেই কম হচ্ছে। তারপর আমাদের দেশে নানা রকম প্রতিকূলতা থাকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে। আমরা অনেক সময় নানা রকম দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে যাই। এগুলো ইন্ডাস্ট্রিতে প্রভাব ফেলে। আমি মনে করি, এখনো আমাদের ইন্ডাস্ট্রি পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। কোনো ধরনের প্রতিকূলতা দেখা গেলেই তার প্রভাব পড়ে ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেক সময় শুটিং বন্ধ হয়ে যায়, কখনো বিনিয়োগ।
প্রথম আলো :
বিনিয়োগ হচ্ছে বলেই তো শুটিং করছেন...
জুনায়েদ বোগদাদী: কমবেশি হচ্ছে। যা চাইছি, সেটা কি করতে পারছি? বা খুব বেশি ওটিটির কাজ কি হচ্ছে? প্রথমত, দর্শকদের মতো আমি নিজেও নেটওয়ার্কের বাইরে, ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ টাইপের কাজ করতে চাই। এমন কাজ কম হলে আমার কী করার আছে। দ্বিতীয়ত, এখন প্রতিযোগিতা বেড়েছে, নতুন নতুন মুখ এসেছে। নতুনদের অবশ্যই আসা উচিত। তাদের সেই জায়গাটা দিতে চাই। এর মধ্য দিয়ে আমিও চেষ্টা করছি আরও ভালো কাজ কীভাবে করা যায়। অবশ্যই চাই ভালো কাজ দিয়ে দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে।
প্রথম আলো :
শোনা যায়, অনেক অভিনয়শিল্পীই শুটিংয়ের আগে পরিচালকদের সহশিল্পী কে হবেন, সেটা বলে দেন। আপনাকে নিয়ে এমন অভিযোগ কেউ করতে পারবে?
জুনায়েদ বোগদাদী: এমন অভিযোগ কেউ করতে পারবে না। এটা তো আমার কাজই নয়। এটা তো ডিরেক্টরের ব্যাপার। তিনি তাঁর ভাবনায় যাঁকে ভাবছেন, যাঁকে দরকার তাঁকেই নেবেন। তাঁরও তো গল্প নিয়ে একটা ভিশন থাকে। এটা পরিচালকের ব্যক্তিগত বিষয়। সেখানে আমি মনে করি না শিল্পী হিসেবে খুব বেশি কিছু বলার আছে। চিত্রনাট্য পেলে গল্পটা বুঝে নিই। আর যাঁরা গল্পে আছেন, তাঁদের সঙ্গে মিলে গল্পকে কীভাবে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করি।
প্রথম আলো :
সম্প্রতি প্রচারিত হয়েছে ‘বাবাও মানুষ’। ইউটিউবে দর্শকের মন্তব্য পড়েছেন?
জুনায়েদ বোগদাদী: ‘বাবাও মানুষ’ নাটকে একজন বাবার সংগ্রামের গল্প বলা হয়েছে। নাটকটি দর্শকেরা গ্রহণ করেছেন। ভালো ভালো মন্তব্য সে কথাই বলে। চেষ্টা করি ভিন্ন ঘরানার নাটকে নাম লেখানোর। কিন্তু পছন্দের গল্প তো সচরাচর পাই না।
প্রথম আলো :
এখন ব্যস্ততা কী নিয়ে?
জুনায়েদ বোগদাদী: ভালোবাসা দিবস ও ঈদনাটকের গল্প নিয়ে টানা কাজ করছি। এ সময়ের কাজগুলো নিয়ে দর্শকদের আলাদা আগ্রহ থাকে। সে কারণে ভালো গল্প প্রাধান্য দিচ্ছি। ওটিটির কাজ নিয়েও কথা হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়। সময় হলেই সব জানাব। আপাতত এখন আর কথা বলার সময় হচ্ছে না। আমাকে শুটিংয়ে ডাকছে, লাইট–ক্যামেরা রেডি। সিনটা শেষ করে আবার কথা বলতে পারব।