‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির পর অনেক ফোন পেয়েছি
ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘সুড়ঙ্গ’ ছবিতে অল্প সময়ের উপস্থিতিতেই নজর কেড়েছেন মনির আহমেদ। বিনোদন অঙ্গনে শাকিল নামেই তিনি পরিচিত বেশি। সিনেমা, নিজের ক্যারিয়ারসহ নানা প্রসঙ্গে গত সোমবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’
প্রশ্ন :
এবারের ঈদটা অন্য রকম গেল...
হ্যাঁ। ‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির পর অনেক ফোন পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে যারা চেনে, ফোন করে প্রশংসা করেছে, তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ছবিটি ভালো হয়েছে, এটাই আসল কথা। এমন একটা ভালো ছবির সঙ্গে থাকতে পেরেছি, এটা আমারও সৌভাগ্য।
প্রশ্ন :
‘সুড়ঙ্গ’র সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
(পরিচালক রায়হান) রাফী আমাকে প্রথম ডেকে বলে, ‘আপনার অভিনীত “উধাও” সিনেমা দেখে আমি মুগ্ধ।’ এটা ছিল বড় পাওয়া—কোনো যোগাযোগ ছাড়া আমার কাজ দেখে ও ডেকেছে। এরপর ওর সঙ্গে বিঞ্জে মুক্তি পাওয়া ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’ করেছিলাম।
প্রশ্ন :
ছবিতে আপনার অভিনীত ড্রাইভার চরিত্রটির তো বেশ কয়েকটি স্তর আছে। অভিনয়ের জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
আমি শুটিংয়ের আগে এক-দুই মাস অন্য কোনো কাজ করিনি, ওজন কমিয়েছি। আইটেম গানের জন্য ১৫-১৬ দিন নাচ অনুশীলন করেছি। আমি পারফেকশনিস্ট মানুষ, চরিত্রের প্রয়োজনে নিজের সন্তুষ্টির জন্য যা যা প্রস্তুতি নেওয়ার, নিয়েছি।
প্রশ্ন :
‘সুড়ঙ্গ’, ‘উধাও’ ছাড়া আর কী কী সিনেমা করেছেন?
‘উধাও’ দিয়ে শুরু করেছিলাম, ‘সুড়ঙ্গ’ ২৫তম সিনেমা। এর মধ্যে ‘ও আমার দেশের মাটি’, ‘মাটির প্রজার দেশে’, এফডিসিকেন্দ্রিক ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘রাগী’—অনেক সিনেমা করেছি।
প্রশ্ন :
আপনি তো তাহলে সব ঘরানার সিনেমাতেই আছেন...
আমি সৌভাগ্যবান। যারা বিদেশ থেকে সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করে এসেছে, তাদের সঙ্গে কাজ করেছি; যারা নাটক থেকে চলচ্চিত্র পরিচালনায় এসেছে, তাদের সিনেমাও করেছি। আবার শাহ আলম কিরণ, জাকির হোসেন রাজু, শাহাদাৎ হোসেন লিটন—পুরোপুরি এফডিসি ঘরানার নির্মাতাদেরও ছবি করেছি।
প্রশ্ন :
এক দশক ধরে ২৫ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু আপনার সেভাবে পরিচিতি নেই। কেন?
এটা আমার ব্যর্থতা বলতে পারেন। এখন তো আসলে নিজের ঢোল নিজেকেই পেটাতে হয়। আমি অন্তর্মুখী ধরনের মানুষ, কীভাবে নিজের প্রচার করতে হয় জানি না। আমরা একটু পুরোনো মানুষ তো...নব্বইয়ের দশকে থিয়েটার করে বড় হয়েছি। তখন একটা কথা প্রচলিত ছিল, যদি ভালো কাজ করো তাহলে এমনিতেই তোমাকে খুঁজে নেবে। আমি এখনো সেটাই মেনে চলি।
প্রশ্ন :
আপনার অভিনয়ের গল্পটা জানতে চাই...
আমি পেশাদার অভিনেতাই হতে চেয়েছি। ১৯৯০ সালে ঢাকায় আসি পড়াশোনা করতে, তখন থেকেই থিয়েটার করতাম। মঞ্চে আমার বড় অর্জন যদি বলেন তো ‘ব্র্যান্ড’ নাটকের কথা বলতে হয়। একবার (নরওয়েজীয় নাট্যকার হেনরিক) ইবসেনের জন্মবার্ষিকীতে সারা দুনিয়ায় একটা প্রতিযোগিতার মতো হয়, নরওয়ের দূতাবাস এতে অর্থায়ন করে। পাঁচটি দেশ থেকে ব্র্যান্ড চরিত্রে অভিনয় করা সেরা পাঁচ অভিনেতাকে বেছে নেওয়া হয়, তাঁদের ছবি নরওয়ের ইবসেন জাদুঘরে টাঙানো আছে। ওই পাঁচজনের আমি একজন। শুরুতে ঢাকা পদাতিকের সঙ্গে ছিলাম, পরে (শহীদুল আলম) সাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে একটা দল করতাম। এরপর সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারে ছিলাম। পরে নিজের একটা দল করি দশরূপক। কিন্তু এখন অন্য কাজের চাপে মঞ্চে সেভাবে কাজ করা হচ্ছে না।
প্রশ্ন :
ঈদের সিনেমাগুলো নিয়ে এবার বেশ আলোচনা হয়েছে, দেশের ওটিটিতেও নানা ধরনের কাজ হচ্ছে। এখনকার গল্প, নির্মাণ নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
একটা জিনিস বুঝে গেছি, আগে যে ধরনের সিনেমা হতো, সে ধরনের কাজ দিয়ে কিছু করা যাবে না। নতুন প্রজন্ম সারা দুনিয়ার কনটেন্ট দেখে। সুখবর হচ্ছে, এখন মানুষ কনটেন্টকে ভালোবাসতে শিখেছে। অভিনয় দেখতে চাইছে। যে কারণে আমাদের নাসির (উদ্দিন খান) হুট করে পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছে। এখন অভিনেতাদের সময়, পরিচালকদের সময়, গল্প বলার সময়। কারণ, গল্পই এখন সবচেয়ে বড় তারকা। এখন দেখার বিষয়, নতুন প্রজন্মের পরিচালকেরা এই সময়ের সদ্ব্যবহার কীভাবে করে।
প্রশ্ন :
সামনে আর কী কাজ আসছে?
চলতি বছরের নভেম্বরেই পিকলু চৌধুরীর ‘দাওয়াল’ সিনেমা আসবে। এ ছাড়া বছরের শেষ দিকে আরেকটি সিনেমা আসতে পারে।