আমি একটু স্টুপিড, গাধামার্কা— তাই বুঝতে সময় লেগে গেছে : ওমর সানী

ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবি। গত শুক্রবার দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই নায়ক অভিনীত ‘ডেডবডি’ ছবিটি। এদিকে আজ ৬ মে এই তারকার জন্মদিন। এদিন সকালে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুর কাদের

প্রথম আলো :

সানী ভাই, শুভ জন্মদিন।

ওমর সানী: ধন্যবাদ। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, তিনি এখনো সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

প্রথম আলো :

আপনি কি বাসায়?

ওমর সানী: আরে না, আমি এখন রাস্তায়। সাভার ইপিজেড থেকে ঢাকার বাসার দিকে ফিরছি।

প্রথম আলো :

সকাল সকাল ওখানে কী কাজে গেলেন?

ওমর সানী: এখানে রেস্টুরেন্ট চালু করছি। চাপওয়ালার আরেকটা শাখা চালু করছি। ওটারই তদারকির জন্য আসছি। চার হাজার বর্গফুট নিয়ে এই রেস্টুরেন্ট চালু করছি। দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি সবার জন্য চালু হয়ে যাবে।

ওমর সানী
ছবি : শিল্পীর ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

বিয়ের পর এবারই কি প্রথম জন্মদিন, যেদিন আপনার স্ত্রী চিত্রনায়িকা মৌসুমী পাশে নেই?

ওমর সানী: একদমই তা-ই। তাই খালি খালি লাগছে। তবে আমার জন্মদিন তো সেদিন থেকেই খালি খালি হয়ে যায়, যেদিন আমার আম্মা মারা যান। ২০০০ সালের এই মাসের ২৩ তারিখেই আম্মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। এর পর থেকে এই দিনে ভাষাহীন থাকি। কিছুই ভালো লাগে না। বিবর্ণ থাকি। আমি চাইও না দিনটা উদ্‌যাপনের। তারপরও একবার অনেক বড় পরিসরে জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হয়। সেবার ববিতা আপা, সুচন্দা আপা, চম্পাসহ অনেকেই এসেছিলেন। সোহান ভাইও এসেছিলেন। এটা আমার হার্টে রিং পরানোর পরপরই। এরপর আর কখনো হয়নি। আমি পণ করেছি, যত দিন বাঁচি আর দাওয়াতের ধারেকাছেও যাব না। নিজেও কাউকে অযথা দাওয়াত দেব না।

প্রথম আলো :

কেন, খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণে এনেছেন?

ওমর সানী: না, আমি আসলে চাই না। আমি দেখেছি, রাজ্জাক আংকেল, ফারুক সাহেব, জসিম সাহেব, আলমগীর সাহেব—তাঁদের পরের প্রজন্মে আমি ও মৌসুমী সবচেয়ে বেশি পার্টি দিয়েছি। নব্বই দশকে চলচ্চিত্রে যাঁরাই কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাওয়াতের পার্টি মনে হয় আমি আর মৌসুমীই করেছি। এখন আর চাই না। দরকারও নেই মনে করছি।

ঢাকাই সিনেমার সাফল্যময় দশক নব্বইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল নায়ক ওমর সানী বহু দর্শকনন্দিত সিনেমায় কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তাঁর জন্ম ১৯৬৯ সালের ৬ মে, বরিশালে। পরিবারের উৎসাহ আর বাবার অনুপ্রেরণায় রুপালি দুনিয়ায় পথচলা শুরু করেন সানী। দারাশিকো পরিচালিত ‘সুজন সখী’ সিনেমায় প্রথম কাজ করেন।
ওমর সানী–মৌসুমী
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলো :

কেন দরকার নেই?

ওমর সানী: ওই যে, মান্না ভাইয়ের কথাটাই সঠিক। ফিল্মের মানুষ কোনো দিন আপন হয় না। এটা উপলব্ধি হতে হতে আমার একটু সময় লেগে গেছে তো, তাই আমি চাই না। চার-পাঁচ বছর আগে মান্না ভাইয়ের কথাটা আমাকে ভালোই নাড়া দেয়। কিন্তু আমি একটু স্টুপিড তো, গাধামার্কা—তাই বুঝতে বুঝতে সময় লেগে গেছে বেশি। এখন এই কথা আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করছি। আমাকে অবশ্য মৌসুমী অনেক আগে থেকেই বলছে, ‘খামাখাই এসব করো। মনে রেখো, কেউ কারও না।’ এসব করে সত্যিই বলতে কোনো লাভ নেই, এখন বুঝছি। প্রচুর টাকা ব্যয় করেছি। আমি আর চাইও না কেউ আমাকে দাওয়াত দিক। আসলে যতই এদিক-সেদিক থাকি না কেন, দিন শেষে পরিবারই সবচেয়ে বেশি আপন। তাই পরিবারে মগ্ন আছি। এর বাইরেও আরেকটা পণ করেছি।

প্রথম আলো :

কী সেই পণ?

ওমর সানী: ঢাকায় না থাকার পণ। ঢাকাতে এখন সেভাবে এমনিও থাকি না। বসুন্ধরায় যদিও বাসা আছে, তারপর থাকা হয় না বেশি সময়। আমি একটু লোকালয়ে চলে যেতে চাই। এখন গ্রাম বেশি টানে। ঢাকায় যানজটে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এক ঘণ্টার কাজে কোথাও যেতে চাইলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায়ও তা শেষ হয় না। ঢাকার মধ্যে তো একটা কাজ শেষে করে আরেকটা প্রায়ই অসম্ভব। তাই এখন গ্রামের দিকেই আছি। এখন তো আমি একা মানুষও, মৌসুমী ও আমার ছেলে-মেয়ে দেশের বাইরে থাকে। চাইলে বসুন্ধরায় থাকতে পারি, গাড়ি যেহেতু আছে, যেকোনো জায়গায় যেতে পারি। তারপরও আমি এখন গ্রামীণ পরিবেশে থাকি। আমার তো সাভার ডিওএইচএস এলাকায় বাসা আছে। বিবর্ণ ঢাকা শহরে আর ভালো লাগে না। টানে না।

এরপর বিভিন্ন টানাপোড়েনে মাঝপথে চলচ্চিত্রের কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও আশা ছাড়েননি আত্মবিশ্বাসী এই নায়ক। ফিরে এসে টানা কাজ করে গেছেন। উপহার দিয়েছেন একের পর এক হিট সিনেমা। তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘চাঁদের আলো’, ‘প্রেম প্রতিশোধ’, ‘মহৎ’, ‘প্রেমগীত’, ‘আখেরি হামলা’, ‘হারানো প্রেম’, ‘চাঁদের হাসি’, ‘দোলা’, ‘আত্ম অহংকার’, ‘কুলি’, ‘অধিকার চাই’, ‘রঙিন নয়ণমনি’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, ‘গরীবের রানী’, ‘চালবাজ’, ‘সুখের স্বর্গ’, ‘বাপের টাকা’, ‘প্রেমের অহংকার’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’, ‘কে অপরাধী’, ‘মধু মিলন’, ‘তুমি সুন্দর’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘আমি তুমি সে’, ‘পাগল তোর জন্য রে’, ‘আজব প্রেম’ ইত্যাদি।
ওমর সানী
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলো :

আপনার কাছে জন্মদিনটা কেমন মনে হয়?

ওমর সানী: জন্মদিন এলে মৃত্যুদিনের কথা মনে হয়। ফরীদি ভাই যেমন বলেছিলেন, ‘মৃত্যু খুবই স্নিগ্ধ একটা ব্যাপার। পবিত্র।’ আমার এ-ও মনে হয়, জন্মদিন মানেই মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাওয়া। আল্লাহপাক আমাকে জন্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। প্রতিনিয়ত আমি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি।

একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমীর প্রেমে জড়ান এই অভিনেতা। এরপর ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। এখন শোবিজের অন্যতম সফল জুটি তাঁরা। এই দম্পতির সংসারে এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তান রয়েছেন।

প্রথম আলো :

‘ডেডবডি’ তো মুক্তি পেল। নতুন আর কোনো ছবিতে অভিনয় করছেন?

ওমর সানী: ভালো চরিত্র পেলে অবশ্যই করব। কিন্তু কাজ পাওয়ার জন্য সন্ধ্যার সময় কারও দালালি-চামচামি করতে পারব না। এসবে ভালো কাজ হয়ও না। তবে এসব আমার মধ্যে কখনো ছিলও না। আমি মনে করি, আমার মধ্যে যদি যোগ্যতা থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাকে নিয়ে পরিচালকেরা কাজ করবেনই।