‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ সিনেমায় কীভাবে যুক্ত হলেন?
পূজা ক্রুজ : ২০১৮ সালে লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা দশে ছিলাম। মোস্ট কনফিডেন্ট খেতাম জিতেছিলাম। এরপর আজরা মাহমুদের তত্ত্বাবধানে র্যাম্প মডেলিং শুরু করি। সিনেমায় অভিনয় করব বলে নাটকে কাজ করিনি। ছোটবেলা থেকে নাচতাম, গান গাইতাম। সানী সানোয়ার ভাইয়ের বিলাপ সিরিজ দিয়ে অভিনয় শুরু। এরপর দামাল-এ অভিনয় করি। একদিন শুনলাম এশা মার্ডার ছবির এশা চরিত্রের জন্য কয়েকজনের অডিশন নেওয়া হয়েছিল। কাউকে পছন্দ হয়নি। এরপর আমাকে ডাকা হলো। অডিশন দিলাম, এক মাস পর জানানো হলো, নির্বাচিত হয়েছি।
কীভাবে চরিত্রটির প্রস্তুতি নিয়েছেন?
পূজা ক্রুজ : আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। (আজমেরী হক) বাঁধন আপু ও আমাকে পরিচালক সানী ভাই কর্মশালা করিয়েছেন। প্রতিটি বিষয় হাতে ধরে ধরে শিখিয়েছেন। আমরা দু-তিন মাস অন ক্যামেরা মহড়া দিয়েছি। তাই শুটিংয়ের সময় কোনো সমস্যা হয়নি। সিনেমায় অভিনয় শুরুর আগে ২০২৩ সালে আমি প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং অ্যান্ড ডিজাইনে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিই। সেটাই ছিল আমার প্রথম থিয়েটারের অভিজ্ঞতা। ওই সময় প্রাচ্যনাটের নাটক মলুয়াতে কেন্দ্রীয় মলুয়া চরিত্রে অভিনয় করি। এটা আমার অভিনয়ের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বাড়িয়েছিল।
প্রথম আলো :
আপনার অভিনয়ের প্রথম অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
পূজা ক্রুজ : আমরা ময়মনসিংহে শুটিং করেছি। সময়টা ছিল শীতের। এশা চরিত্রে আমি, যেহেতু মার্ডার হয়, শীতের সেই সময়ে কস্টিউম ও রক্তের ব্যাপারগুলো নিয়ে অভিনয় করা কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু বেশ উপভোগ করেছি।
এ সিনেমায় বাঁধনও অভিনয় করেছেন। তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
পূজা ক্রুজ : বাঁধন আপুর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। তিনি তো আমাদের সিনিয়র। তাঁদের দেখেই তো লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর ইচ্ছা জেগেছে। এরপর শুটিং করতে গিয়ে মনে হয়েছে, ঘরের মানুষ। আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। দুই দিন আগেও একটা ইন্টারভিউয়ে তিনি বলেছেন, আমি এশা চরিত্রটা খুব ভালো করেছি।
প্রথম আলো :
ছোটবেলায় কি কখনো ভাবতেন, সিনেমার নায়িকা হবেন?
পূজা ক্রুজ : ছোটবেলা থেকেই সিনেমার নায়িকা হতে চাইতাম। নাচ-গান ছোটবেলা থেকেই করতাম। আমার বাবা তবলা বাজাতেন, মা খুব ভালো নাচতেন। বাবার সরকারি চাকরিসূত্রে আমাদের ছোটবেলা কেটেছে টঙ্গীতে, সেখানকার নজরুল একাডেমিতে গানের তালিম নিতাম। স্বপ্ন যেহেতু নায়িকা হওয়ার ছিল, তাই এসব ভালোভাবে শিখেছি। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সিনেমায় কাজ শুরু করি। আগেও কাজের প্রস্তাব এসেছিল, কিন্তু বাসা থেকে শুধু একটাই চাওয়া ছিল, যা করার গ্র্যাজুয়েশন শেষে যেন করি। আমার ফ্যাশন সেন্স, হাঁটাচলা এটা দেখে বন্ধুরাও সব সময় বলত, তুই নায়িকা হবি। নাচতাম খুব ভালো। এমনও হয়েছে, স্কুল ও একাডেমিতে যখন নাচতাম, সবাই আমার নাচের জন্য অপেক্ষা করত। শিক্ষকেরাও তাই ইচ্ছা করে আমার নাচ সবার শেষে রাখত, যাতে সবাই অপেক্ষা করে। এমনও হতো, আগের দিন স্কুলে যে গানে আমি নাচতাম, পরদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মানুষ সেই গানটা গাইত। ছোটবেলা থেকেই তাই নায়িকা নায়িকা ফিল হতো।
প্রথম আলো :
নাটকে কাজ না করে সরাসরি সিনেমায় কাজ করার সিদ্ধান্ত কেন?
পূজা ক্রুজ : নাটকে যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁরা বেশ ভালো। দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে এতটাই দক্ষ হয়ে ওঠেন, আলাদা করে প্রস্তুতির কোনো প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সিনেমার বিষয়টা অন্য রকম। টিভি নাটকে কাজ করতে গেলে সময় কেটে যেত। তাই সময় নষ্ট করতে চাইনি।
পড়াশোনা করেছেন কোথায়?
পূজা ক্রুজ : টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ স্কুল থেকে এসএসসি এবং হলি ক্রস কলেজে এইচএসসি। এরপর ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করি।
প্রথম আলো :
আপনার প্রিয় অভিনেতা বা অভিনেত্রী কে? কাদের অভিনয়ে আপনি অনুপ্রাণিত?
পূজা ক্রুজ : বলিউডের সিনেমা বেশি দেখা হয়। কারিনা কাপুর খান ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে খুব ভালো লাগে। তাঁরা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন।
প্রথম আলো :
চলচ্চিত্রে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
পূজা ক্রুজ : পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে চাই, নাচে–গানে ভরপুর ও মারামারির সিনেমা যাকে বলে। আমার কেন জানি মনে হয়, নিজের প্রতিভা এখনো দেখাতে পারিনি।
রুপালি পর্দায় পা রাখার পর ব্যক্তিজীবনে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি?
পূজা ক্রুজ : ব্যস্ততা বেড়েছে শুধু, এর বাইরে আর তেমন কিছু নয়। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন প্রায়ই বলে, কেন আমি আরও কিছু করছি না। আমার আরও ব্যস্ত হওয়া উচিত।
প্রথম আলো :
‘এশা মার্ডার’ বাস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এশার সঙ্গে আপনার কতটা মিল?
পূজা ক্রুজ : এটা পুরোপুরি আমার বিপরীতধর্মী চরিত্র। আমি একটু চঞ্চল প্রকৃতির। আড্ডাবাজি ও হইহুল্লোড় পছন্দ করি। এশা হচ্ছে চুপচাপ, বোকাসোকা টাইপ। একটা দিকে মিল অবশ্য আছে—স্পষ্টবাদী ও সহজ–সরল।
প্রথম আলো :
অভিনয়ের বাইরে কী করতে ভালোবাসেন?
পূজা ক্রুজ : ঘুরতে ও কেনাকাটা করতে ভালোবাসি। খেতে পছন্দ করি। নিজে রান্না করে যেমন খাই, তেমনি অন্যদের খাওয়াতেও পছন্দ করি। বাসায় সবাই বলে, আমার রান্না করা সবই মজার। তবে গরুর মাংস ও ডিমের দোপেয়াজি খুব ভালো পারি বলে মনে হয়।
প্রথম আলো :
অভিনেত্রী না হলে কী হতেন?
পূজা ক্রুজ : এটাই ইচ্ছা ছিল, অন্য কিছু ভাবিনি। আমার এমনও হয়েছিল, একটা চাকরি শুরু করেছিলাম, দামাল-এ অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে তা ছেড়ে দিই। আমরা তিন বোন, সবার বড় আমি। ছোট দুই বোন আমাকে খুব সাপোর্ট করে, আব্বু-আম্মুও অভিনয়ে খুব উৎসাহ দেন।