জানতাম, বিয়ের পর স্বামীর বয়স নিয়ে কথা উঠবে: পূর্ণিমা

গত ২৭ মে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। স্বামী আশফাকুর রহমান ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বিয়ের ২ মাস পর ২১ জুলাই সন্ধ্যায় চিত্রনায়িকা নিজেই বিয়ের খবরটি জানান সবাইকে। দুজনের পরিচয়, বিয়ে, দেরি করে বিয়ের খবর জানানোসহ এ–সংক্রান্ত নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

পূর্ণিমা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

কেমন আছেন? নতুন সংসার কেমন চলছে?

সবকিছু মিলে ভালো আছি। সংসারও ভালো যাচ্ছে। আপাতত আমি মায়ের বাসায় আছি।

প্রশ্ন :

আপনার এখন নতুন জীবন। নিজের কাছে একটু অন্য রকম লাগছে কি?

বিয়ে করেছি, কিছুটা তো অন্য রকম লাগবেই। নতুন করে সবকিছু ভাবতে হচ্ছে, গোছাতে হচ্ছে। তবে আমি বলব না যে আমার সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে বা মানিয়ে নিচ্ছি। বিয়ের পর মনে হচ্ছিল, সবকিছুই প্রস্তুত ছিল। আর সবাই ব্যাপারটাকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন। নতুন বউ হিসেবে হয়তো আমি নতুন। কিন্তু আমাদের দুজনের আন্তরিকতা আর বোঝাপড়ার জায়গা দেখে মনে হয়েছে, বিষয়টি গোছানোই ছিল, সবাই সব জানত।

প্রশ্ন :

কাজের সূত্রে আপনাদের পরিচয়। কিন্তু দুজন যে বিয়ে করে সংসারী হবেন, সেই ভাবনা কখন এল?

আমাদের দুজনের পরিচয় অনেক দিনের। রবিন দীর্ঘদিন ধরে একটি কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে আসছেন। আমি বিনোদন অঙ্গনের মানুষ। সেই সুবাদে তাদের পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য দেশের নানা প্রান্তে আমরা অনেকেই একসঙ্গে যাওয়া–আসা করেছি। এভাবেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। কাজের সুবাদেই নিজেদের বোঝাপড়ার জায়গাটা তৈরি হয় একসময়। এরপর এক বছর আগে সিদ্ধান্ত নিই, আমরা একসঙ্গে থাকতে পারি। তবে আমাদের বিয়েটা আরও পরে করার কথা ছিল।

প্রশ্ন :

কখন?

আগামী ডিসেম্বর মাসে। কারণ, মনে হয়েছিল আরেকটু নিজেরা নিজেদের দেখি, বুঝি ও জানি। এ জন্য একটু প্রস্তুতি নিয়ে বিয়ে করার কথা ছিল, কিন্তু পারিবারিক চাপে তা হলো না।

বিয়েতে দুই পরিবারের সবাই অনেক খুশি জানিয়ে পূর্ণিমা বলেন, ‘দুই পরিবারের ইচ্ছাতেই তো বিয়েটা হলো, সবাই খুশি। আমার মেয়েসহ সবাইকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন গ্রহণ করে নিয়েছেন, খুবই আদর করছেন। আমার মা–ও সবাইকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন।’

প্রশ্ন :

স্বামীর কোন বিষয়টি দেখে আপনার ভালো লেগেছে?

তাঁর ব্যবহার, আন্তরিকতা, অনেক যত্নশীল—এসব বিষয় বেশি ভালো লাগে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আমার মেয়ের প্রতি তাঁর আবেগ বেশি, যা আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে। একটা মেয়ে যখন বাচ্চাসহ আবার বিয়ে করে, তখন মেয়েটি তাঁর সঙ্গে কী হবে, সেটা নিয়ে ভাবে না। তাঁর বাচ্চার সঙ্গে স্বামীর ব্যবহার কেমন হবে, সেটা নিয়েই চিন্তা করে বেশি। আমিও সেই চিন্তাই করেছি। কিন্তু তাঁকে দেখেছি, আমার চেয়ে আমার বাচ্চাকে বেশি আগলে রাখে, বাচ্চা নিয়ে তাঁর এক্সাইটমেন্ট বেশি, যা আমাকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। বাচ্চাকে খুব আদর করেন। তা ছাড়া আমার শ্বশুর-শাশুড়িসহ বাসার সবাই বাচ্চা ভালোবাসেন।

প্রশ্ন :

কখন মনে হয়েছিল, বিয়েটা করে ফেলি!

এক বছর আগে সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের পছন্দের ব্যাপারটা দুই পরিবার জানার পর বিয়েটা হয়ে গেল। গত রোজার মধ্যেই দুই পরিবার আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। দুই পরিবারের দুই বোনকে প্রথমে আমরা জানাই। এরপর তাঁরা পরিবারের কর্তাদের জানান। রোজার মধ্যে আমাদের দুজনের দুজনার বাসায় যাওয়া–আসা হয়। এরপর দুই পরিবার থেকে বলা হলো, ‘দেরি কোরো না, বিয়ে করে ফেলো।’ ১৫-২০ দিনের প্রস্তুতিতে বিয়েটা হয়েছে।

দিলারা হানিফ পূর্ণিমা

প্রশ্ন :

দুই মাস দেরি করে বিয়ে খবর জানালেন কেন?

আমার আম্মা হাসপাতালে ছিলেন। তা ছাড়া ভাইরাস জ্বরে দুই পরিবারের সবাই আক্রান্ত ছিল। সবকিছু মিলিয়ে বলার মতো পর্যায়ে ছিল না। তা ছাড়া বিয়ের সময় দুই পরিবারের অনেক আত্মীয়স্বজনকে জানানো হয়নি। এ কারণে একটু প্রস্তুত নিয়ে খবরটি আগামী ডিসেম্বর মাসে জানানোর কথা ভাবা হচ্ছিল।

প্রশ্ন :

কবে, কোন সময় মন দেওয়া–নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল?

মন দেওয়া–নেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা মনে নেই। এ সব কি আর মনে থাকে? কাজ করতে গিয়ে দেখা, পরিচয়, তারপর কথাবার্তা। ওখান থেকেই ভালো লাগা। শেষ। আর কিছু বলব না।

বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে পূর্ণিমা

প্রশ্ন :

আপনি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেন। আপনার স্বামী ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দুই ভুবনের দুজন। সামনের দিনগুলো অনেকটাই মানিয়ে চলতে হবে কি?

আমি তাঁর কাজ দেখেছি। তাঁর সম্পর্কে আমার জানা আছে। সুতরাং জেনেবুঝেই তো আমরা বিয়ে করেছি। আমি আউটডোরে শুটিংয়ে থাকছি, তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিসে থাকছেন। এসব বিষয় আমাদের দুজনের একে অপরের জানা। ফলে মানিয়ে চলার কিছু নেই এখানে।

পূর্ণিমা

প্রশ্ন :

আপনার স্বামী যে বয়সে ছোট, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাজন নানা কথাও বলছেন। কীভাবে দেখছেন?

এ বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি ছিলাম আমি। জানতাম, বিয়ের পর স্বামীর বয়স নিয়ে কথা উঠবে। যাঁরা এসব লেখেন, না লিখতে পারলে ভালো থাকবেন না তাঁরা। না লিখতে পারলে তাঁদের মন খিটখিট করবে। আমাকে দুই–তিনটা গালি দিতে না পারলে উল্টা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করবেন তাঁরা। আমাকে নিয়ে এভাবে গালাগালি করে যদি তাঁদের শান্তি লাগে, আমি খুশি। আমার ছবি নিয়ে পোস্ট করে দু-চারটা গালি দিক, আমার কোনো সমস্যা নেই। তবু তাঁরা শান্তিতে থাক, সুখে থাক, সুস্থ থাক। তাঁদের জন্য আমাদের দুজনের পক্ষ থেকে শুভকামনা। এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাই না।

পূর্ণিমা

প্রশ্ন :

হানিমুনে কবে যাচ্ছেন?

যাব, তবে এখনই নয়। আম্মা তো এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। বাসায় আছেন। এই অবস্থায় এখনই কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি না। সবকিছু স্বাভাবিক হলে সময় করে আশপাশের কোনো দেশে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। সেটা থাইল্যান্ড হতে পারে।