‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’র শুটিং কত দিন পর্যন্ত চলবে? ঢাকায় ফিরবেন কবে?
জয়া আহসান : দুই সপ্তাহ ধরে ‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’র শুটিং করছি। এখন শেষের দিকে। এই ছবির শুটিং শেষ হলেও আপাতত ঢাকায় ফেরা হচ্ছে না। কারণ, এরপর ‘ডিয়ার মা’ ছবির প্রচারণায় ব্যস্ত হতে হবে, যা এরই মধ্যে শুরুও হয়েছে।
প্রথম আলো :
দেশে একই সময়ে আপনার দুটি ছবি ‘তাণ্ডব’ ও ‘উৎসব’ মুক্তি পেয়েছে, তা–ও ঈদের মতো বড় উৎসবে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে দুটি ভিন্ন ঘরানার সিনেমায় আপনি অভিনয় করেছেন। দুই চরিত্রের কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জয়া আহসান : দুটি ছবির গল্পের কাঠামোই তো আলাদা। তবে শুটিং কাছাকাছি সময়ে হয়েছে, ওভার লেপও করেছে। ‘তাণ্ডব’-এ তো ভালোই, অনেক দিন পর একটা বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় কাজ করলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। চরিত্রে ঢোকার ক্ষেত্রে একদমই সমস্যা হয়নি। ‘উৎসব’—তানিম নূর আমাকে অনুরোধ করেছিল। বলেছিল, ‘আপা, এটা করতে হবে আপনাকে।’ ওর অনুরোধে কোনো কিছু না ভেবে রাজি হওয়া। যেহেতু এত দিন পর ছবি করছে, অনেকেই থাকবে, আমিও কোনো একভাবে থাকব। আমার প্রথম সিনেমা ‘ফিরে এসো বেহুলা’র পরিচালক কিন্তু তানিম। ও যখন দ্বিতীয় ছবি করছে, সেটাই আমাদের সবার জন্য খুশির খবর ছিল। সবাই সবার মতো করে সাপোর্ট করেছিল। কারণ, সে পরীক্ষিত পরিচালক, ভালো কাজ করে। আমার মনে হয় যে এত দিন পর এত ভালো একটা গল্প, ক্রিসমাস ক্যারলের এই গল্পটা কমবেশি সবাই জানি। যেহেতু সেই গল্পটার অ্যাপ্রোচে বানাচ্ছে, আমিও হ্যাঁ বলেছি। তবে ‘উৎসব’ এতটা ভালো করবে, কেউ ভাবতে পারিনি। ভেবেছি ভালো হবে; কিন্তু দর্শক এটাকে যেভাবে গ্রহণ করেছে, প্রমাণ করে দিয়েছে, দর্শকের ওপর আমাদের ভরসা হারানো ঠিক না।
এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘ডিয়ার মা’ ছবিটি নিয়ে ভারতীয় দর্শকের প্রত্যাশা কেমন বলে মনে করেন?
জয়া আহসান : ভীষণ রকম প্রত্যাশা। টিজার দেখে সবাই তো পাগল হয়ে গেছে। আগামী ৩ জুলাই ট্রেলার আসবে।
প্রথম আলো :
কলকাতায় ‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’ ছবির শুটিং করছেন। এই ছবিতে আপনি কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করছেন?
জয়া আহসান : সেই একই চরিত্র। আজও ‘অর্ধাঙ্গিনী’ তো অনেক বেশি আলোচনায় আছে। কারণ, ‘অর্ধাঙ্গিনী’ তো ব্লকবাস্টার ছিল। প্রচণ্ড সফল ছিল, সেটারই সিকুয়েল এই ছবি। আশা করি এটিও ভালো চলবে। শুটিং করেও খুব ভালো লাগছে।
প্রথম আলো :
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ—দুই জায়গায় দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন। সিনেমাশিল্পে কী কী পার্থক্য ও মিল খুঁজে পান?
জয়া আহসান : পার্থক্য কিছুই পাই না। যারাই ছবি বানায়, প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ নিয়ে, ভালোবেসে বানায়। দর্শকের জন্য বানায়। আর আমি বলব যে বাংলাদেশের ছবির জায়গাটা এখন দিন দিন আরও ভালো হচ্ছে।
প্রথম আলো :
কোন ধরনের চিন্তা থেকে এমনটা বলছেন?
জয়া আহসান : অনেক রকমের স্থবিরতা, অস্থিরতা, পটভূমি পাল্টানোর কারণে—দেশের সব জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা সিনেমা করি, তারা কিন্তু ভয় পাইনি। ছবির কাজগুলো করে গেছি। আমরা ছবি মুক্তি দিয়ে গেছি এবং দর্শকও আমাদের সাপোর্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে, একটা দেশের সংস্কৃতির জন্য সিনেমা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দর্শককে এই কারণে ধন্যবাদ জানাই। আমি আমাদের যেসব সহকর্মী এবং চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষ আছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই—পটভূমি বদল, নানা রকম উত্থান-পতন, শিল্পীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন, কিন্তু দিনের শেষে সবাই মিলেমিশে কাজ করে বুঝিয়ে দিয়েছে, যে আমরাই কিন্তু আমাদের সেক্টরে ঠিক আছি। আর কোনো সেক্টর এগিয়েছে বা পিছিয়েছে কি না, সেসবে যাব না। আমাদের ফিল্ম সেক্টর কিন্তু টুক টুক করে, হাঁটি হাঁটি পা করে এগিয়েই যাচ্ছে।
আপনি তো বিশ্ব সিনেমার খোঁজখবর রাখেন, দুই দেশে সমানতালে কাজও করছেন। আপনার অভিজ্ঞতায় কি মনে হয়, আমাদের দেশে গল্প বলার ক্ষেত্রে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ, যা অনেকে অনেক সময় বলে থাকেন?
জয়া আহসান : সিনেমা দেখাতে আমাদের তো নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছেই। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিভিন্ন দেশেই আছে—এটা দেখানো যাবে না, এটা করা যাবে না, এভাবে করা যাবে না। কিন্তু আমার মনে হয়, বাধা থাকলেও সেসব দেশে শিল্পীরা শিল্পকর্ম দিয়ে প্রতিবাদ করে, বিপ্লব করে, তারা কিন্তু তাদের মতো করে একটা উপায় বা পথ বের করে নেয়। যে কারণে আমরা নানা ধরনের সিনেমায় কাজ করি। আমরা শিল্পাঙ্গনের মানুষেরা প্রতিবাদ, বিপ্লব, সবই আমাদের কাজ, শিল্পকর্ম দিয়ে—করে যাচ্ছি। তা না হলে ইরানের মতো একটা জায়গায় তো ছবি করাই যেত না। ইরানের ছবিতে তো চারদিক থেকে অনেক প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু তারা ঠিকই নিজেদের একটা উপায় বের করে নিয়েছে। নইলে তারা এত অসাধারণ সব গল্প কীভাবে বলে! আমার তো মনে হয়, ইরানি ছবির মতো এত সমাদৃত ছবি, পৃথিবীতে খুব কমই আছে। তাই বলব, পৃথিবীর সব জায়গায় বাধা আছে, আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাব—যতটুকু সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে, তা মাথায় রেখেই।
প্রথম আলো :
আপনি যখন কোনো প্রকল্পে সম্পৃক্ত হন, তখন আপনার কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়—চিত্রনাট্য, নির্মাতা, নাকি সহশিল্পী?
জয়া আহসান : আমার কাছে নির্মাতা, গল্প এবং আমার চরিত্র। গল্পের জন্য আমার চরিত্র কতটুকু প্রভাব ফেলবে তা দেখে আমি বিচার করি, আমার গল্প হাতে নেওয়া, যে কারণেই হয়তো আমি ‘তাণ্ডব’ করেছি।
প্রথম আলো :
আপনার জীবনে এমন কি ঘটেছে, কখনো কোনো চরিত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন, কারণ সেটি আপনার বিশ্বাসের সঙ্গে যায়নি?
জয়া আহসান : এ রকম অসংখ্যবার ঘটেছে। অসংখ্য।
অভিনয়জীবনের বাইরে আপনার প্রেম, ভালোবাসা, এমনকি বিয়ে নিয়ে ভক্তদের কৌতূহল অনেক। আপনি এসব নিয়ে কথা বলতে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
জয়া আহসান : অস্বাচ্ছন্দ্যের কিছু নেই। আমার চেয়ে তো দেখি দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের আগ্রহ অনেক বেশি। এটা থাকবেই, এটাই স্বাভাবিক। কেউ কাউকে ভালোবাসলে এটা ঘটে। দর্শকেরা আমাকে ভালোবাসে বলেই হয়তো তারা এ বিষয়েও সচেতন, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত জীবন—সবকিছু নিয়ে। তবে আমার ব্যক্তিগত জায়গা তো আমারই, তা আমি কখনো খোলাসা করব না আসলে...অন্তত গণমাধ্যমের সামনে বলব না, সম্পর্কে আছি কি নেই। বিয়ে করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি নেই। (হাসি)
প্রথম আলো :
ভক্তদের একটা অংশ মনে করে, আপনি ইচ্ছা করেই ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখেন—এটা কি সচেতন সিদ্ধান্ত?
জয়া আহসান : একদমই আমার সচেতন সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি, রিলেশনশিপ, ব্যক্তিগত বিষয় যত বেশি লোকের জানাজানি হবে—তত বেশি সম্পর্ক নষ্ট হয়, এটা আমার বিশ্বাস।
প্রথম আলো :
দীর্ঘ সময় আপনি সিঙ্গেল। একা থাকাকে আপনি কীভাবে দেখেন—এটা কি একধরনের স্বাধীনতা, নাকি কখনো একাকিত্ববোধও হয়?
জয়া আহসান : একা আছি এটা আপনিও বলতে পারেন না, দর্শকও বলতে পারে না, (হাসি) একা আছি কি না এটা একমাত্র আমিই বলতে পারব।
প্রথম আলো :
তাহলে একা আছেন কি না, তা কি বলা যাবে?
জয়া আহসান : এটার উত্তর আমি দেব না, একা আছি কি নেই। কিন্তু দর্শক জয়া আহসানের যে ইমেজটা দেখে, তাতে তো ভালো লাগে। কারণ, এ ইমেজটাই তো আমি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। সেটাই আছে। আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গায় অনুপ্রবেশ করতে দিতে চাই না আসলে। ব্যক্তিগত তো আসলে ব্যক্তিগত। ওটা আমার কাজের জীবনে কোনো উপকারে আসবে না। তাহলে কেন আমি তা খামোখা প্রকাশ করব? আমি শুধু কাজ দিয়ে দর্শকের খুব আগ্রহের জায়গায় রয়েছি। কাজ দিয়ে যারা আগ্রহের জায়গা নেই, কাজ নিয়ে যারা ইনসিকিউরড তারাই নিজেদের ব্যক্তিগত জীবন, সংগ্রাম বিক্রি করে—সেগুলো আমার পছন্দ নয়। আমরা সেটা করার প্রয়োজন হয়নি।
ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ না পেলে সেই অনুভূতির ওজন আরও বাড়ে—আপনার জীবনে এমন কোনো অনুভবের স্মৃতি আছে?
জয়া আহসান : দারুণ একটা বিষয় বললেন তো, তবে আমার সেটা হয়নি। আমাকে নিয়ে দর্শক বা মানুষজনের আছে—তা আমি টের পাই। আমার এমনটা হয়নি যে কাউকে ভালোবাসার কথা বলতে পারিনি। কিন্তু আমাকে নিয়ে যে আছে, তা আমি টের পাই। আমার চারপাশে যেমন আছে, তেমনি অনুরাগীদের মধ্যেও এমনটা টের পেয়েছি। কারণ, ভালোবাসার আগুন জ্বললে সেই তাপ বা আঁচটা তো আমার গায়ে আসবেই।
প্রথম আলো :
ভক্তদের কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব নিশ্চয় পেয়েছেন অনেক। কিন্তু কখনো কি এমন হয়েছে, আপনি নিজেই কারও প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন, অথচ সেটা ব্যক্ত করতে পারেননি?
জয়া আহসান : আমার সেটা হয়নি, আসলেই হয়নি। হলে আমি অবশ্যই বলতাম। আমি কারও প্রতি আকৃষ্ট হলে, সেও আমার প্রতি হয়েছে। মিউচুয়ালি হয়েছে। বললাম না, আগুন জ্বললে তাপটা আমিও টের পাই, ওই মানুষটাও পায়।
প্রথম আলো :
এই জীবনে এই আগুন কতবার জ্বলেছে, সে হিসাব কি আছে?
জয়া আহসান : (হাসি), না...ওই সব হিসাব থাক...এটা তো বহু মানুষের আমার প্রতি আছে...অনেক মানুষ আকৃষ্ট হয়, টের পাই। কিন্তু সবগুলোকে তো এন্টারটেইন করা যাবে না। সবার ভালো লাগা, ভালোবাসাকে তো এন্টারটেইন করা যাবে না, তাই না। তাতে জটিলতা বাড়বে। আমি তো শান্তিপ্রিয় মানুষ। নিশ্চয় আমার জীবনযাপন দেখে সবাই তা টের পায়।
দোষ-গুণ মিলিয়েই মানুষ। আপনি নিজের কোন গুণটা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন আর কোন দোষটার জন্য অনুশোচনায় ভোগেন?
জয়া আহসান : আমার ধৈর্য আছে, এটা জেনে ভালোই লাগে। এই ধৈর্য আমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। আরেকটা জিনিস মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি, তা হচ্ছে বেহিসাবি। হিসাবের অঙ্কটা আমার মোটেও ভালো না, তা জীবনের অঙ্কেও, পড়াশোনার অঙ্কেও। হিসাব মেলানোতে আমি মোটেও ভালো না। এটা নিয়ে আক্ষেপও নেই। আমি হিসাবে ভালো না, এটা আমার আশপাশের সবাইও বলে।
প্রথম আলো :
সাধারণত মানুষের স্বভাবেই থাকে নিজের থেকে ভিন্ন চরিত্রের প্রতি আকর্ষণ। ব্যক্তিগত জীবনে, আপনার জন্য বিপরীতধর্মী মানুষদের কোন বৈশিষ্ট্যগুলো বেশি গুরুত্ব বহন করে?
জয়া আহসান : ছেলেদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে মেধার সৌন্দর্য আমার ভালো লাগে। শুধু পুরুষ নয়, নারী-পুরুষ সবারই বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাপারই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে। আমার কাছে বাইরের সৌন্দর্যের চেয়ে সেটাই বড় সৌন্দর্য।
এবার জন্মদিন প্রসঙ্গ, এ দিনটি নিয়ে আপনার কোনো আলাদা পরিকল্পনা থাকে? নাকি এটাও অন্য দিনের মতোই কাটে?
জয়া আহসান : আমি শুটিং করব। ‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’র অনেক কঠিন দৃশ্যের শুটিং আছে, আমি এখন সেসব দৃশ্য মুখস্থ করব। কালকের জন্য প্রস্তুত হব। আবার ‘ডিয়ার মা’ ছবির প্রচারণা আছে, সেখানে যাব। ভালো লাগে অনেক ফোন আসে, টেক্সট আসে—মনে হয় যে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার একটা কারণ আছে। কেউ কেউ আমাকে হয়তো কেয়ার করে, আমার খুব অবাক লাগে। এমনিতে জন্মদিন নিয়ে ছোটবেলা থেকে খুব বাড়াবাড়ি করি না। আমার কাছে এটা অন্য যেকোনো দিনের মতো। তারপরও অনেক কিছু হয়ে যায়। তবে হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর তো আরও করি না।
প্রথম আলো :
পেছন ফিরে তাকালে, এখনকার জয়া যদি শুরুর দিকের জয়ার সঙ্গে দেখা করতেন, কী বলতেন?
জয়া আহসান : আমি একটু জড়িয়ে ধরতাম, বলতাম, ওয়েল ডান। আমার ছোটবেলার মানুষটাকে পিঠ চাপড়ে বলতাম, তুমি তোমার ধৈর্য দেখিয়েছ, হার মানোনি, তুমি হার না মানা যোদ্ধা।