শাকিবের বিকল্প আরও চার-পাঁচজন থাকতে হবে: কাজী মারুফ

২০১৫ সাল থেকে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন কাজী মারুফ। প্রায় দুই বছর পর ৭ জুলাই দেশে ফিরেছেন একসময়ের ঢাকাই ছবির এই নায়ক। চলতি মাসেই আবার ফিরে যাবেন। গত শনিবার দেশীয় সিনেমাসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
কাজী মারুফ। ফেসবুক থেকে

প্রশ্ন :

অনেক দিন পর দেশে এসেছেন। বেড়ানোর জন্য নাকি অন্য উদ্দেশ্যও আছে?

বেড়ানোর ব্যাপারটা তো আছেই। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে বসে ‘গ্রিন কার্ড’ নামে একটি ছবি প্রযোজনা করেছি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আমার বাবা কাজী হায়াৎ। সহযোগী ছিলেন রওশন আরা নিপা। ছবির সব কাজ শেষ। টুকটাক কোনো সংশোধনী লাগে কি না, সে জন্য বাবার সঙ্গে বসে ছবিটি দেখা। এরপর সেন্সরে জমা দেওয়া হবে। এ ছাড়া চলতি বছর সরকারের অনুদানের একটি ছবি পেয়েছি। এ জন্য মন্ত্রণালয়ে কিছু দাপ্তরিক কাজও ছিল।

প্রশ্ন :

ঈদের কয়েকটি ছবি নিয়ে আলোচনা চলছে। দেখেছেন?

দেখব না মানে, অবশ্যই দেখেছি। আমি সিনেমার মানুষ, সিনেমা করা যেমন আমার নেশা, দেখাও নেশা। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও ‘প্রিয়তমা’ দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে। দেখে মনে হলো, সিনেমা সেই আগের আদলেই তৈরি হচ্ছে। তবে নির্মাণশৈলী ও কারিগরি দিক অনেক উন্নত হয়েছে। বাকি ছবিগুলোও দেখার ইচ্ছা আছে। ব্যস্ততার মধ্যে যদি সময় করতে না পারি, তাহলে নিউইয়র্কে গিয়ে দেখব। সেখানে সুড়ঙ্গ চলছে। অনেক দিন পর বাংলাদেশে সিনেমা নিয়ে বেশ মাতামাতি হচ্ছে। টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময়ে এটি চাট্টিখানি কথা নয়।
এমন চিত্র অনেক দিন বাংলা সিনেমায় দেখিনি। গত বছর ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ছবিতে এমন পরিস্থিতির কথা যুক্তরাষ্ট্রে বসে শুনেছি। ওখানেও প্রবাসীদের মধ্যে ছবিগুলোর জয়জয়কার ছিল। এবার দেশে এসে যে চিত্র দেখছি, তাতে সিনেমা নিয়ে নতুন করে আশাবাদী। তা ছাড়া দেশে মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা বেড়েছে। আরও বাড়লে ভালো পেশাদার প্রযোজক আসবে। সিনেমা বাড়বে, ব্যবসা হবে। তখন আর দেশের বাইরে থেকে সিনেমা আমদানি করা লাগবে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমি নিজেও অভিনয়ে আবার নিয়মিত হব, সিনেমাও প্রযোজনা করব।

প্রশ্ন :

সিনেমা ছেড়ে চলে গেছেন কেন?

২০১৫ সালের পর আমি দেশে সিনেমা করিনি। ওই সময় আমার ‘ছিন্নমূল’ ছবিটি মুক্তি দিতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম। জাজ মাল্টিমিডিয়ার মনোপলির শিকার হয়েছিলাম। তা ছাড়া তখন বাংলা সিনেমা একটা অস্থির অবস্থার মধ্যে পড়েছিল। ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত আমার ছবিগুলো খুব ভালো গেছে। শেষ দিকের ‘ইভটিজিং’, ‘সর্বনাশা ইয়াবা’ মোটামুটি গেছে। কিন্তু ‘গার্মেন্টস শ্রমিক জিন্দাবাদ’ বা ‘ছিন্নমূল’ ভালো চলেনি। এসব কারণে কিছুটা ক্ষোভেই অভিনয় ছেড়ে চলে গেছি।

কাজী মারুফ। ফেসবুক থেকে

প্রশ্ন :

বর্তমান চিত্র দেখে কী মনে হচ্ছে, সুদিন ফিরবে?

এখনই বলা মুশকিল। গত বছর ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ ছবির পর মাঝে প্রায় এক বছর ওই রকম ছবি আসেনি। আবার এক বছর পর এসেছে। এখন খালি যদি ঈদ উৎসবেই ছবি চলে, তাহলে তো হবে না। সারা বছরই ছয়-সাতটি ছবি ভালো হতে হবে, দর্শকসমৃদ্ধ হতে হবে। তা না হলে বছরের বেশির ভাগ সময় হল চলবে না। বাকি হলগুলোও একসময় আর টিকে থাকবে না। সেটি নিয়ে ভাবা এখন জরুরি।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

সারা বছর ভালো ছবি আসে না কেন?

কারণ, এখন নির্ভরযোগ্য শিল্পী নেই, ভালো পরিচালক নেই, প্রযোজক নেই। ওই এক শাকিব খান বছরে কয়টা ছবি দেবেন। এখন কিছু তরুণ নির্মাতা ভালো সিনেমা বানাচ্ছেন। কিন্তু সংখ্যায় তো বেশি নয়। তাঁদের এগিয়ে নিতে পৃষ্ঠপোষকতাও লাগবে। মৌসুমি নয়, পেশাদার প্রযোজক লাগবে। আমার কথাই যদি বলি, এখন আমার মতো হিরো দেখান, আমার বিকল্প আছে কি? আমারও দর্শক ছিল, সেই দর্শক কই এখন? বলিউড, হলিউডে দেখেন না কত বিকল্প তারকা, পরিচালক, বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। যার কারণে সেখানে সারা বছরই হিট সিনেমা পাবেন। সুতরাং আমাদের এখানে শাকিবের বিকল্প আরও চার-পাঁচজন থাকতে হবে। তা না হলে আমাদের সিনেমা সমৃদ্ধ হতে পারবে না। দেখা যাবে, ওই ঈদেই মানুষ সিনেমা দেখছেন, সারা বছর হল ফাঁকা।

কাজী মারুফ। ফেসবুক থেকে

প্রশ্ন :

এর জন্য দায়ী কে?

ইন্ডাস্ট্রির সবাই দায়ী। আগে তো অনেক বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল, ভালো ভালো অনেক নির্মাতা ছিল, অনেক অভিনয়শিল্পী ছিল। সবাই এর জন্য দায়ী। আমাদের সিনেমা কিন্তু এক দিন, দুই দিনে খারাপ হয়নি। সময় নিয়েই এটি হয়েছে। যখন এর পতন শুরু হলো, তখন কেউই এই শিল্পকে বাঁচাতে চেষ্টা করেনি। ফলে পতন আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। সবাই নিজের স্বার্থের কথা ভাবতে গিয়ে জায়গাটাকে শেষ করেছে। অনেকে বলেন দর্শক আসে না। আরে, দর্শক আসবে কেন, টাকা দিয়ে সিনেমা দেখতে এসে ভালো বসার জায়গা নেই, ভালো গল্প, ভালো শিল্পী, ভালো নির্মাতার সিনেমা নেই। তাহলে কেন তাঁরা আসবেন? এসবের জন্য আমরা সিনেমার মানুষই দায়ী। বলে লাভ নেই, ওপর দিকে থুতু ছিটালে নিজেদের মুখেই পড়বে।

প্রশ্ন :

অনেক সময় দেখা যায়, ছবি মুক্তির পর নিজের পছন্দের নায়ককে এগিয়ে রাখতে ভক্তদের মধ্যে কথার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ এমন পর্যায়ে যায়, কখনো কখনো নায়কদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও বিদ্বেষ ছড়ান ভক্তরা। কী বলবেন?

এটি ভক্তদের ভালো প্র্যাকটিস নয়। আপনার একজন নায়ক পছন্দ হতেই পারে, তাই বলে অন্যের পছন্দের নায়ককে খোঁচা দেবেন, আজেবাজে কথা বলে ছোট করবেন, এটা ঠিক নয়। সবার ভালো কাজকে ভালো বলুন, মন্দটাকে মন্দ বলুন। ইদানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন নায়কের ভক্তদের মধ্যে যে যুদ্ধ হচ্ছে, তাতে করে সিনেমার ক্ষতি হয়, সাধারণ দর্শক ছি ছি করে। তবে আমার কাছে মনে হয়, এর সঙ্গে নায়কদের সত্যিকারের ভক্তরা কম জড়িত। বেশির ভাগই ভুয়া ভক্তের খেলা, ভুয়া আইডির কাদা ছোড়াছুড়ি।

কাজী মারুফ। ফেসবুক থেকে