৪ শতাধিক সিনেমার সংগীত পরিচালক ইমন সাহা ১১ প্রশ্নে জানালেন সিনেমা পরিচালনার গল্প

চলচ্চিত্রের বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক সত্য সাহার ছেলে ইমন সাহাও নিয়মিত চলচ্চিত্রের গানের সুর করছেন, আবহসংগীতের কাজও করছেন। ১৯৯৮ সালে গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত ‘পরাধীন’ দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্রের গানের সুর-সংগীত পরিচালনা শুরু। ২৭ বছরে চার শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। এবারই প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’ নামের সেই ছবিটি ৭ নভেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির পর ছবি নির্মাণের নেপথ্যের গল্পসহ ইমন সাহা জানালেন আগামীর পরিকল্পনা, শুনলেন মনজুর কাদের

প্রথম আলো:

চার শতাধিক সিনেমার সুরকার ও সংগীত পরিচালক থেকে সিনেমার পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ—এর পেছনে কী ছিল অনুপ্রেরণা, সেই গল্পটা যদি বলতেন?

ইমন সাহা : অনুপ্রেরণা বলতে, আমার জন্মই তো সিনেমা পরিবারে। বাবা সত্য সাহা সিনেমার সুরকার, সংগীত পরিচালক ও প্রযোজক; মা রমলা সাহাও প্রযোজক। আমার খালু, ছোট মামা, বড় মামা—সবাই চলচ্চিত্রের। জীবনে আমিও চলচ্চিত্রের বাইরে কিছুই ভাবতে পারিনি। চিকিৎসক হব বা প্রকৌশলী হব, এমনটাও ভাবনায় ছিল না। সব সময় ভেবেছি সিনেমা–সম্পর্কিত কিছু করব। যদিও আমি ছোটবেলায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করতাম, গান শিখতাম; কিন্তু কেন জানি বড় হয়ে অভিনয়শিল্পী ও গানের শিল্পী হওয়ার ব্যাপারটা আমাকে টানেনি। সব সময় মাথায় কাজ করত, আমি সিনেমার পরিচালক হব। যদিও সংগীতই আমার পেশা হয়েছে, দীর্ঘ ২৭ বছর পেশাদারভাবে সিনেমায় কাজ করেছি। তবে নির্দিষ্ট করে বললে, কেউ আমাকে অনুপ্রাণিত করেনি। দেশ–বিদেশের বিখ্যাত সব পরিচালকের কাজ আমাকে সব সময় ভাবাত, অনুপ্রাণিত করত।

ইমন সাহা
ছবি : ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

যত দূর জানি ‘সাইলেন্স’ শুরুতে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা হিসেবে নির্মাণ শুরু করেছিলেন, পূর্ণদৈর্ঘ্যে রূপান্তর কী ভেবে করলেন?

ইমন সাহা : এক্সটেনডেড স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানাব, এমন পরিকল্পনা নিয়ে কাজে নেমেছিলাম। ‘সাইলেন্স’ দেশের বাইরের বাজার যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের কথা ভেবে বানিয়েছি—যে কারণে সিনেমার নাম ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’। বাইরের দেশের দর্শক–শ্রোতারা যাতে এ বিষয়ের সঙ্গে সহজে একাত্ম হতে পারে। কিন্তু প্রথম দিকে শুটিংয়ের একটা পর্যায়ে যখন সবাই বলল যে ছবিটা ভালো হয়েছে, তখন ভাবলাম, পূর্ণদৈর্ঘ্য করার সুযোগও আছে। আমরা কিন্তু এমনিতে চিত্রনাট্যে কিছু বিষয় এড়িয়ে যাই, দর্শকও সেভাবে প্রস্তুত থাকে। শর্টফিল্মে ডিটেইলিং অনেক সময় থাকে না। তাই চিত্রনাট্যে বিস্তারিত কথা বলার সুযোগ ছিল। এদিকে দেশের যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সিনেমার দর্শককে আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম এবং বেশ কিছু ভালো ছবির কারণে সেসব দর্শক ফেরত এসেছে। আবার নতুন করে ছবি দেখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে—সে কারণে এই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রথম আলো:

সিনেমাকে আপনি গল্পকারের চোখে দেখেন নাকি সংগীতকারের চোখে?

ইমন সাহা : গল্পকে নির্মাতার চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। তবে সংগীতও সমান্তরালে এগিয়ে যেতে থাকে; শুধু সংগীত না, চিত্রনাট্য, সংলাপ, অভিনয়, পোশাক–পরিচ্ছদ, সেট, লোকেশনও। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিল্পী—কোন চরিত্রে কে অভিনয় করবে। সংগীতে যেহেতু আমার দক্ষতা, তাই আমার এই ছবিতে সংগীত যেভাবে প্রাধান্য পেয়েছে, সেটা অন্যান্য সিনেমার ক্ষেত্রেও পাবে—তা আবহসংগীতের ক্ষেত্রে হোক, গানের ক্ষেত্রে হোক। এটাকে আমি খুব সুন্দরভাবে রিলেট করতে পারি।

বাবা সত্য সাহা ও মা রমলা সাহার সঙ্গে ইমন সাহা
ছবি : ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

আপনার পরিচালিত প্রথম সিনেমার বিষয়বস্তু সংগীতবিষয়ক, নিজে সংগীতের মানুষ বলেই কি এমনটা ভেবেছেন?

ইমন সাহা : হয়তো নিজের অজান্তে এটা হয়ে গেছে। সংগীতের মানুষ বলেই হয়তো সংগীতবিষয়ক একটি বিষয় বেছে নিয়েছি। কথার কথা, আমি যদি ফাইটার হতাম, যেমন আমাদের চিত্রনায়ক রুবেল, তিনি যতগুলো ছবি পরিচালনা করেছেন, সবই অ্যাকশনধর্মী। আমার মনে হয়, যে কারোরই পেশা তাঁর নির্মাণের ওপর প্রভাব ফেলে।

ইমন সাহা
ছবি : ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

সিনেমায় অভিনয়ের শিল্পী নির্বাচনের বিষয়টি কীভাবে ঠিক করেছেন, কাজ শেষে মনে হয়েছে, আপনি যা চেয়েছিলেন তার পুরোটা পেয়েছেন?

ইমন সাহা : অভিনয়শিল্পী নির্বাচনের বিষয়ে আমি খুব সাবধানী ছিলাম। সময় নিয়েই করেছি। আমি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতাম। বড় হয়ে আমি যখন এ আর রাহমানের কেএম মিউজিক কলেজে পড়তাম, তখনো আমাদের থিয়েটার ক্লাস হতো। সবাইকে অবশ্যই মিউজিক্যাল থিয়েটারে পারফর্ম করতে হতো। গান গেয়ে অভিনয় করতে হতো। অভিনয়ের অভ্যাসটা কিন্তু তাই আমার মধ্যে সব সময় ছিল। কয়েক বছর আগেও যখন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ফুল সেল ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি, তখন থিয়েটারের কাজে অংশ নিয়েছি। অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আমার তাই সব সময়। এটা কাউকে জানাইনি কখনো, জানানোর প্রয়োজনও মনে করিনি। অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয় আদায় করা বা বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাই আমি বেশ কমফোর্টেবল ছিলাম। অভিনয়শিল্পীরা সেটে অবাক হয়েছে, কীভাবে আমি সেটে এটা করতে পেরেছি। যাঁরা কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন—নীলা (নীলাঞ্জনা), সাইমন, দিনার (ইন্তেখাব) ভাই, পাভেল (আজাদ আবুল কালাম) ভাইসহ সবার অভিনয়ের ব্যাপারে আমি অত্যন্ত খুশি। ছোট চরিত্রে সিয়াম নাসির তো দুর্দান্ত করেছে। আর নীলার তো জবাবই হয় না। তার চরিত্রে চারটা-পাঁচটা স্তর; কিন্তু কী দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। সাবলীল ও সুন্দর করে করেছে।

‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’র পোস্টার থেকে
ছবি : ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

সংগীত পরিচালনা থেকে সিনেমা পরিচালনায় এসে কোন কোন দিকে বেশি নজর দিতে হয়েছে?

ইমন সাহা : পরিচালকের সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়। চিত্রনাট্য, সংলাপ, সংগীত পরিচালনা—সবই আমার করা। ‘সাইলেন্স’ ছবির কাজ করতে গিয়ে আমার মধ্যে দ্বৈতসত্তা কাজ করেছে—মনে হয়েছে পরিচালক ইমন সাহা সংগীত পরিচালক ইমন সাহার সঙ্গে কাজ করছে। এমনকি পরিচালক ইমন সাহার সঙ্গে সংগীত পরিচালক ইমন সাহার কনফ্লিক্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারগুলো ইন্টারেস্টিং ছিল, আমার জন্য একেবারে নতুন অভিজ্ঞতাও।

বাবা সত্য সাহার সঙ্গে ইমন সাহা
ছবি : ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

আপনার বাবা সত্য সাহা জীবিত থাকলে নতুন এই পরিচয়ে পথচলায় কী বলতেন বলে মনে করেন?

ইমন সাহা : বাবা বেঁচে থাকলে খুবই খুশি হতেন। সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন এ কারণে, সংগীতকে বিষয়বস্তু করে ছবি বানানোতে। বাবার নিজেরও খুব ইচ্ছা ছিল, আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে একটা মিউজিক্যাল ফিল্ম বানাবেন, ফোক ধাঁচের ‘গুনাইবিবি’ করেছিলেনও। কিন্তু তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল আধুনিক ধাঁচের একটা মিউজিক্যাল ফিল্ম বানাবেন, জানি না বাবার মাথার মধ্যে কী ছিল। ছবিটি পরিচালনা করতে গিয়ে সংগীত পরিচালক সত্য সাহার অনুপস্থিতি বারবার অনুভব করেছি। বাবা যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে প্রতিটি গান করতেন, আবহসংগীতও করতেন। তাঁর সংগীতে হয়তো অন্য একটা মাত্রা যোগ করত। যদিও আমার কাজ যারাই দেখেছে, প্রশংসা করছে—তারপরও সত্য সাহা ব্যাপারই তো আলাদা।

মা রমলা সাহার সঙ্গে ইমন সাহা
ছবি : ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

সত্য সাহার উত্তরাধিকার আপনার জন্য কতটা আশীর্বাদের আর কতটা চাপের?

ইমন সাহা : যেকোনো স্টার কিডের চাপ বেশি, যদি তারা বাবা-মায়ের পেশায় আসে। এই চাপটা অনেক বেশি। আমরা যদি ভারতের দিকে তাকাই—অভিষেক বচ্চন এত ভালো একজন অভিনয়শিল্পী; কিন্তু আজীবন তাঁকে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তুলনা করা হবে। হয়তো এ কারণেই কিনা জানি না, শাহরুখ খানের ছেলে অভিনয়ে না এসে পরিচালনায় এসেছে। আরিয়ান খানকে একটা সাক্ষাৎকারে বলতেও শুনেছি—আমি কোনো দিন বাবাকে (শাহরুখ খান) ছাড়িয়ে যেতে পারব না। এই চাপটা সব সময় থাকবে। সত্যি বলতে, মাঝেমধ্যে এটা হতাশার হয়ে যায়। আবার মানুষ যখন বলে, আপনি আপনার বাবার ধারা ধরে রেখেছেন, বাবার নামটা বাঁচিয়ে রেখেছেন, সেটাও অনেক আনন্দের হয়।

‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’ সিনেমার দৃশ্যে সাইমন সাদিক ও নীলাঞ্জনা নীলা
ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

‘সাইলেন্স’–এর পর কি আরও সিনেমা বানাবেন?

ইমন সাহা : যেহেতু শুরু করে দিলাম, তাহলে সামনেও পরিচালনা করব, প্রযোজনা করারও ইচ্ছা আছে। কিন্তু যা–ই করি, ভেবেচিন্তে করব। আজও একটা হল ভিজিটে এসেছি, দেখলাম আমার মায়ের একটা বিশাল বন্ধু গ্রুপ, যাঁরা সবাই ষাট বছর পেরিয়েছেন, তাঁরা ‘সাইলেন্স’ দেখতে এসেছেন। ছবি দেখা শেষে তাঁরা কী পর্যায়ের প্রশংসা করেছেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। তবে এটা মোটেও আমি তাঁদের সহকর্মী বা বন্ধুর সন্তান বলে নয়। ওখানে দেখলাম জার্মানি থেকে এসেছেন এমন দম্পতিও ছবি দেখছেন। তাঁরা বললেন, পরিবারকে নিয়ে দেখার মতো সিনেমা। সুন্দর বার্তাও আছে। বাস্তবভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটাও ঠিক, সব ছবি যে মূলধারার বাণিজ্যিক ধাঁচের হবে, তা নয়। এই ধাঁচের ছবিও অনেক দরকার। তা না হলে দর্শকের মধ্যে একঘেয়েমি তৈরি হয়। শুধু অ্যাকশন-রোমান্টিক নয়—এর বাইরে হরর, কমেডি, সায়েন্স ফিকশন, মিউজিক্যাল ছবিও হতে পারে।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গে ইমন সাহা
ছবি : ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

কত বছর বয়সে এবং কত সালে জীবনে প্রথম সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেন? আপনার সুরে গানটি কে গেয়েছিলেন?

ইমন সাহা : ১৯৯৮ সালে প্রথম চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করি। ছবির নাম ‘পরাধীন’, পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার আঙ্কেল। এই ছবির একটি গান আমার বাবা সত্য সাহা করেছিলেন। তখন আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছি। চারটা গানের সুর-সংগীত করি। ছবির আবহসংগীতও করি। তখন আসলে স্টক মিউজিক দিয়ে আবহসংগীত কোনোমতে হতো। যদিও আমি ওটাকে কোনো দিন সমর্থন করিনি, সে কারণে আবহসংগীতের বিষয়টি নিয়ে বেশ ভালোভাবে ভাবতে থাকি। নীরব যুদ্ধও করেছি বলতে পারেন। এখন মনে হয়, কিছুটা হলেও সফল হতে পেরেছি। এখন কিন্তু আমাদের দেশের সিনেমার আবহসংগীত নিয়েও মানুষ কথা বলে। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে আমাদের দেশে আবহসংগীত নিয়ে কেউ কথা বলত না। একটা সময় এসে যখন কয়েকটা ছবিতে আমার করা আবহসংগীত প্রশংসিত হলো, তখন সবাই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করল, ছবির আবহসংগীত নতুন করে করতে হবে, স্টক মিউজিক দিয়ে হবে না। আমি প্রথম পূর্ণাঙ্গ আবহসংগীত পরিচালনা করি মোহাম্মদ হোসেন জেমী পরিচালিত ‘রাজধানী’ ছবির।

ইমন সাহা
ছবি : ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

সবশেষে জানতে চাই, দেশে-বিদেশে আপনার প্রিয় সিনেমার পরিচালক কারা?

ইমন সাহা : অনেকেই আছেন। তারপরও যদি বলি, বাংলাদেশে সব সময় প্রিয় পরিচালক দিলীপ বিশ্বাস, তিনি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায়ও সফল। আমার দৃষ্টিতে তিনি এক ও অদ্বিতীয়। আর্ট ঘরানার ছবির মধ্যে সুভাষ দত্ত আমার প্রিয়। এরপর আছেন মোরশেদুল ইসলাম, মুরাদ পারভেজ, অমিতাভ রেজা, রায়হান রাফী। দেশের বাইরে যদি ভারতের কথা বলি সত্যজিৎ রায়, সঞ্জয় লীলা বানসালি, এস এস রাজামৌলি প্রিয় পরিচালক। এর বাইরে যদি বলি মার্টিন স্করসেসে, কুয়েন্টিন টারান্টিনো, ক্রিস্টোফার নোলান আর জেমস ক্যামেরন ও স্টিভেন স্পিলবার্গ তো বেশির ভাগেরই প্রিয়।