এই খবরে আমি বিব্রত

‘জীবন আমার বোন’ সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত এখন খায়রুল বাসার। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘বনলতা সেন’সহ দুটি সিনেমা। ক্যারিয়ার ও সাম্প্রতিক সময়ের নানা প্রসঙ্গে মনজুরুল আলমের মুখোমুখি হলেন এ অভিনেতা

প্রথম আলো:

শনিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার ‘অপেশাদারত্ব’ নিয়ে কথা হচ্ছে।

খায়রুল বাসার : আমার ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত এমন কোনো রেকর্ড নেই। কেউ আমার পেশাদারত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, এ আমার ধারণার মধ্যেই ছিল না। মিটিং ডে–পরবর্তী তৃতীয় দিন আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি, আমার জটিলতা সম্পর্কেও বিস্তর বলেছি। শুটিং হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। আর মিটিং করেছি গত তিন দিন আগে এবং এই তিন দিনের ভেতর শিডিউল জটিলতায় কাজটি করতে না পারার সিদ্ধান্ত জানানো অপেশাদারত্ব নয়। আমাকে উনাদের কনফার্মেশন মানি পাঠিয়েছিলেন, তা আন্তরিকতা এবং গুরুত্ব হিসেবেই নিয়েছিলাম। আমার সিদ্ধান্ত এই ছিল যে আমি পারছি না এবং আপনাদের কনফার্মেশন মানি ফেরত নিন। এটা খুবই সিম্পল ব্যাপার। এমন নয় যে পরশু শুটিং, আজ বলছি আমি থাকছি না। উনাদের সঙ্গে মৌখিক সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তিপত্র হয়নি বা কিছুই ফাইনাল হয়নি। এখন শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় একটা কল রিসিভ করতে পারিনি বলেই আমার দীর্ঘদিনের অর্জন পেশাদারি নাই হয়ে গেল? কী আশ্চর্য!

খায়রুল বাসার। খালেদ সরকার

প্রথম আলো :

ঘটনা সম্পর্কে একটু বলবেন?

খায়রুল বাসার : কলকাতা থেকে আমার শুটিং সেটে একটি টিম দেখা করতে আসে। তারা জানায়, ‘ভালোবাসার মরশুম’ নামের একটি সিনেমায় আমাকেই দরকার। আমাকে গল্প শোনায়। সব শুনে তাদের জানাই, সেপ্টেম্বরে আমার শিডিউল দেওয়া আছে। আমাকে একটু সময় দিতে হবে। কিন্তু তারা আমাকে সিনেমাটিতে চায়। ২২ জুলাই প্রথম পরিচয়। তখনই তারা সব ফাইনাল করে যেতে চায়। তাদের মধ্যে অনেক তাড়াহুড়া লক্ষ করি। বারবার তাদের শিডিউল জটিলতার কথা বলি। একটা উপায় বের করে শিডিউলটা ম্যানেজ করে নিয়ে কথা হয়। ১০ দিন সময়ও চাই। এরপরও তারা আমাকে অ্যাগ্রিমেন্ট ছাড়াই পারিশ্রমিকের চার ভাগের এক ভাগ টাকা দিয়ে দেয়। এদিকে সিনেমাটি নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে খবরও হতে থাকে। পরে আমি শিডিউল ম্যানেজ করতে পারিনি। তাদের অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার কথা বলি। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য উনাদের কাছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চাই, যা এখনো উনারা আমাকে পাঠাননি । আমি মনে করি, বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছিল।

খায়রুল বাসার। ছবি: ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

তাহলে অগ্রিম পারিশ্রমিক নিয়ে ফোন ধরছেন না, এমনটা কীভাবে ছড়াল?

খায়রুল বাসার : আমাদের মিটিং হয়েছে ২২ জুলাই। হঠাৎ মিটিংয়ের তিন দিন পরে গতকাল শুক্রবার দেখি নিউজ হয়েছে। তখন আমি দ্রুত শিডিউল জটিলতা অবসানের পথ খুঁজতে থাকি। কিন্তু আমার কোনো উপায় বের করতে পারি না। যে কারণে আমি সরে দাঁড়ানোর কথা ভাবি। তাদের উচিত ছিল আমাকে একটু সময় দিয়ে সিনেমাটির ঘোষণা করা। যাহোক, সবকিছু আন্তরিকতার সঙ্গে হচ্ছিল। যেহেতু করতে পারছি না, সেহেতু আমি টাকা ফেরত দেব। এর মধ্যে পরিচালক একবার আমাকে ফোন দিয়েছেন। আমি শুটিংয়ে থাকায় ধরতে পারিনি। পরে তাঁকে টেক্সট পাঠিয়েছি। এদিকে দেখি আমাকে নিয়ে নিউজ, টাকা নিয়ে নাকি আমি অপেশাদারি আচরণ করছি; ফোন নাকি ধরছি না, টাকা নাকি দিচ্ছি না। এ খবরে আমি বিব্রত হই। এমন ঘটনা আমার ক্যারিয়ারে কখনো ঘটেনি। আমি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেছি। এরপর এসব নিয়ে উনাকে প্রশ্ন করতে বা জানতে চাওয়ার কোনো আগ্রহবোধ করিনি। আমি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের আমার ফেসবুক প্রোফাইল এবং পেজে পোস্ট করে সবকিছু স্পষ্ট করেছি।

খায়রুল বাসার। অভিনেতার ফেসবুক থেকে

প্রথম আলো :

এখন ব্যস্ততা কী নিয়ে?

খায়রুল বাসার : অনুদানের সিনেমা ‘জীবন আমার বোন’–এর টানা শুটিং করছি। এটি পরিচালনা করছেন এনায়েত করিম। আমার সহশিল্পী শার্লিন ফারজানা, (আজাদ আবুল কামাল) পাভেল ভাই, প্রান্ত দস্তগীরসহ অনেকেই রয়েছেন।

প্রথম আলো :

আপনাকে বেশির ভাগ সিনেমার পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায়

খায়রুল বাসার : আসলে আমি সিনেমায় অভিনয় করতে ভালোবাসি। গল্প, চরিত্র, প্রেক্ষাপট আমার কাছে প্রাধান্য পায়। চরিত্র পছন্দ হলে ছাড়তে চাই না। শুরু থেকে সেভাবেই কাজ করেছি। এবারের গল্পের প্রেক্ষাপট একাত্তরের যুদ্ধ–পূর্ববর্তী দেশের কিছু মানুষের ভাবনা, সংগ্রাম। ওই সময়ে বৈষম্য, নির্যাতন থেকে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ নিজস্ব চিন্তায় বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু যুদ্ধে তারাও প্রভাবিত। সংগ্রাম থেকে পালানো যায় না। থিমটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে সেই সময়টা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এ গল্পে মূল চরিত্রে অভিনয় করছি।

খায়রুল বাসার। অভিনেতার ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো অভিমান আছে?

খায়রুল বাসার : ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ ওয়েব ফিল্ম নিয়ে দেশে তুমুল আলোচনা হয়। গল্পটি তরুণ থেকে প্রবীণ সবাই পছন্দ করেন। শুধু এই গল্পই নয়, ‘পুনর্জন্ম’, ‘নিখোঁজ’সহ আরও অনেক কাজ দর্শক পছন্দ করেছেন। এরপরও আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে তরুণদের ভালো কাজের সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়। যেখানে যৌবনে দাপিয়ে অভিনয় করার বয়স, সেখানে মেধা নিয়ে বসে থাকতে হয়। ভালো কাজের সুযোগ এখানে খুব কমই পান তরুণেরা। আজ ভারতের ‘সাইয়ারা’ সিনেমার তরুণের দিকে তাকান, প্রথম সিনেমা দিয়ে তাঁরা ঠিকই ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেবেন। তাঁকে নিয়ে অনেকেই ভাববেন। আমাদের মেধাবীদের প্রশংসা করছেন কিন্তু মেধাকে মূল্যায়ন করছেন না। এই প্রশংসা দিয়ে জীবন চলে না। তাঁদের নিয়ে যথাযথ কোনো প্ল্যান, কোনো প্লাটফর্মেই হয়নি, হচ্ছেও না। এভাবে মেধাবীরা ছিটকে পড়েন। সবাই স্বপ্ন নিয়ে এসে বঞ্চিত হন।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

কীভাবে বঞ্চিত হন, বলবেন?

খায়রুল বাসার : খুব কম শিল্পীই রয়েছেন, শুধু নাটক করার জন্য এখানে আসেন। বেশির ভাগ চান বড় পরিসরে কাজ করতে। যখন পারেন না, তখন জীবিকার প্রয়োজনে দিনের পর দিন একই রকম গল্প, চরিত্রে, ভাঁড়ামির কাজ করতে থাকেন। এটা কি তাঁর দোষ? এটা না হলে অনেক অভিনয়শিল্পীকে বেকার বসে থাকতে হবে। ভালো কাজের অপেক্ষায় থেকে থেকে আমাদের মতো শিল্পীদের ছিটকে পড়তে হবে। আর যখন কেউ ছিটকে পড়বেন, দুই দিন পরে তাঁকেও সমালোচনা করবেন। বলে বসবেন, সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেল। তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলবেন। শিল্পীদের তৈরি করতে হয়। এখন যৌবনে ডাকছেন না, তাহলে কি বয়স্ক হলে ডাকবেন? ১৮ বছর বয়সে কেন তরুণেরা ডাক পাবেন না, নিয়মিত ভালো কাজ করতে পারবেন না। ১৮ বছর বয়স থেকে শাকিব খান অভিনয় করে যাচ্ছেন। ভালো ভালো সুযোগ তাঁকে আরও আগেই অনেক বেশি উজ্জ্বল করতে পারত। এরপরও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাঁকে অনন্য করে তুলেছে। এমন সুযোগ আরও অনেকেরই পাওয়ার কথা নয়? একটা ইন্ডাস্ট্রির কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্ব আছে। শিল্পীদের হতাশ নয়, মেক করতে হয়। এ ব্যাপারে সচেতন হলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ক্রমাগতই এগিয়ে যাবে।