‘এ জন্যই বলছিলাম, আমি একটু মাটিতে নেমে আসি, মহানগর ২ বানাই’

ঈদে ভিডিও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইতে মুক্তি পাওয়া সিরিজ ‘মহানগর ২’ ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মহানগর ২–এর প্রশংসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন দর্শকেরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সিরিজের নির্মাণ ও নানা প্রসঙ্গে আশফাক নিপুন এর মুখোমুখি হয় বিনোদন
আশফাক নিপুন
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘মহানগর’ সিরিজের প্রথম কিস্তি বানিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। এত প্রশংসার পর দ্বিতীয় কিস্তি বানানো চাপ, নাকি স্বস্তির ছিল?

অবশ্যই চাপ ছিল। মোটেও স্বস্তি না। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, একজন নির্মাতার জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে মূল্যবান হচ্ছে দর্শকের সময়। দর্শকের সময় টাকার চেয়েও মূল্যবান। একজন দর্শক কোনো নির্মাতা বা নির্মাণকে বা কনটেন্টকে সময় দেবেন কি না, দিলেও কতটা—সেটা হচ্ছে আমাদের নির্মাতাদের জন্য সবচেয়ে দামি। তাই দর্শকের সময় নিয়ে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। মহানগর যখন বানিয়েছিলাম, একভাবে বানিয়ে ফেলেছি। কোনো চাপ ছিল না। জানতামও না দর্শকের প্রত্যাশা কী বা কী চাইবেন। যখন মহানগর ২ বানাতে এলাম, তখন দেখলাম—দুই বছর ধরে তাঁরা অপেক্ষা করছেন, এটা প্রতি মুহূর্তে ভাবাত। কেউ যখন জিজ্ঞেস করত, ভাই, মহানগর ২ কবে আসবে? ওসি হারুনের কী হলো? এটা ছিল আমার জন্য অসম্ভব চাপ। প্রত্যাশা মেটানো প্রায় অসম্ভব। প্রত্যাশা কীভাবে মেটাব—এ জন্য সময়ও নিচ্ছিলাম। আমার ওপর দর্শকের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মেরও দাবি ছিল, মহানগর ২ নিয়ে আসার। মহানগর-এর সাফল্য যখন চলছিল, ওই সময় যদি মহানগর ২-এর কাজে হাত দিতাম, তাহলে পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কারণ, তখন আকাশে উড়ছিলাম। এ জন্যই বলছিলাম, আমি একটু মাটিতে নেমে আসি, মহানগর ২ বানাই।

প্রশ্ন :

তাহলে চাপটাকে কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?

দর্শকের প্রত্যাশা, চাপ বা ভালো কাজের প্রেশার মোকাবিলার একটাই উপায়—সততা। আমি চেষ্টা করেছি গল্প বলা ও নির্মাণে সৎ থাকতে—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সততা যখন থাকে, তখন আর কোনো কিছুর ভয় থাকে না। আমরা চেষ্টা করেছি যেন গল্পে সৎ থাকতে পারি। এটা ভাবিনি, মহানগর তো হিট হয়ে গেল, দর্শক তো এমনিতেই মহানগর ২ দেখবেন। যা বানাব তা–ই দেখবেন—এই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চিন্তা করছি, গল্পে সৎ থাকি। সেটার জন্য যা করার দরকার, তা–ই করেছি। মহানগর ২-এর পরিসর কিন্তু প্রথমটার চেয়ে আরও বড়। পরিসর বড় করে চেষ্টা করলাম, দর্শক কীভাবে কানেক্ট করতে পারেন, সেভাবেই চিন্তা করে গল্পটাকে এগিয়ে নিলাম। এখানে কিন্তু সমান্তরালে তিনটি টাইমলাইনে গল্প চলেছে।

‘মহানগর-২’-এর গল্প এবারও নানা চমক ছিল
ভিডিও থেকে নেওয়া

প্রশ্ন :

‘মহানগর ২’–এর ব্যাপকতা প্রথমটার চেয়ে বেশি। এটাকে কীভাবে সামলেছেন এবং কত দিনের প্রচেষ্টা ছিল?

অনেক দিনের প্রচেষ্টা। মহানগর-এ ছোট পরিসরে গল্প বলেছি। থানার ভেতরে। ছয়টা চরিত্র ছিল শুধু। জানতাম, একই ফর্মুলায় যদি দ্বিতীয়টায় গল্প বলতাম, তাহলে দর্শক গ্রহণ করতেন না। সে জন্য ভাবলাম—দর্শক কী চান, তার চেয়ে বেশি দরকার দর্শককে কী দিতে পারি। নতুন কী দিতে পারি—এ ভাবনা থেকে বেশ কটি নতুন চরিত্রের ব্যাপ্তি। কোথাও যেন দর্শকের মনে না হয়, অল্পের ওপর দিয়ে নির্মাতা শেষ করে ফেলল। গল্পটাকে একটু বড় করলাম। চরিত্রটাকে বড় করলাম। চরিত্র সব নিলেই তো হলো না, প্রতিটি চরিত্রের একটি প্রপার ল্যান্ডিং লাগে। তা না হলে বেখাপ্পা লাগে। এটার পেছনে শুটিং শুরুর আগে ছয় মাস পড়েছিলাম আমি এবং টিমের সবাই। গত বছরের জুন থেকে কাজ শুরু হয়েছে। শুটিং শুরু করেছি জানুয়ারিতে। টানা ছয় মাসের প্রস্তুতি ছিল।

প্রশ্ন :

অভিনয়শিল্পীদেরও কি শুরু থেকে যুক্ত করেছিলেন?

মোশাররফ করিম আর শ্যামল মাওলা আগে থেকে অনবোর্ড ছিল। যত সময় গেছে, ততই অন্য সব চরিত্র এসেছে। আমি একটা বড় ঝুঁকি নিয়েছি কিন্তু, প্রথম সিজনে মেশাররফ করিম (ওসি হারুন) ছাড়া আর জনপ্রিয় যতগুলো চরিত্র ছিল, গল্পের প্রয়োজনে দ্বিতীয়টায় নিতে পারছিলাম না। তাদের মধ্যে এসআই মলয় (মোস্তাফিজুর নূর ইমরান), এসি শাহানা (মম), এমনকি নাসিরউদ্দিন খান—আমার ওপর দর্শকের একটা চাপ ছিল, যেন এদের নিই। টিম থেকেও ছিল। কারণ, এরা অলরেডি পপুলার হয়েছে। আমি ওটাকেই বলছি সততা। কারণ, এই গল্পে যেহেতু ওদের প্রয়োজন নেই, শুধু জনপ্রিয়তার খাতিরে বা দর্শকেরা চাইবেন—এটার খাতিরে ওদের নিলে গল্পের প্রতি অন্যায় করা হবে। এই ঝুঁকিটাও আমি নিয়েছি। নেওয়ার ফলে দর্শক গল্পটা নিয়ে কথা বলছেন। দর্শকেরা কিন্তু বলছেন না, যারা ছিল, ওরা কোথায়?

‘মহানগর ২’–এ মোশাররফ করিম
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

প্রশ্ন :

এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটা চর্চিত বাক্য—‘দর্শকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বানাচ্ছি বা বানিয়েছি’।

দর্শক কী চান, তা ভেবে নির্মাণ করলে হবে না। দর্শকের সময় যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য নির্মাতাকে নতুন নতুন কিছু নিয়ে হাজির হতে হবে। দর্শক যা চান, তাই যদি দিই, তাহলে নির্মাণের কোনো অর্থ থাকে না। দর্শক এটা চান বা খান দেখেই বানালাম—এগুলো হচ্ছে বাহুল্য কথা। দর্শকের চাহিদা হচ্ছে একটাই, যা দেখছেন, তাতে সময় যেন নষ্ট না হয়। দর্শক কিন্তু বলে দেন না, আমাকে এটা দাও, ওটা দাও। আমার কথা হচ্ছে, আমি এমন কিছু একটা তৈরি করে দেব, যেটা দেখে দর্শক আলোড়িত হবেন, তখনই নতুন নতুন রুচির বিস্তার ঘটবে। দর্শক কী চান, সেটা দেখা আমার দায়িত্ব না। দর্শকও আলাদা করে কোনো কিছু চান না। এটা যাঁরা বলেন, সেটা একটা অজুহাত। আমরা হয়তো বানাতে পারি না, সেই দায়টা দর্শকের ওপর চাপিয়ে দিই। এখানে আমাদের ব্যর্থতা, দর্শকের নয়।