আমরা বাড়তি কিছু করতে চাইনি, গল্পের মধ্যেই থাকতে চেয়েছি

মূলত রোমান্টিক গল্পের নায়িকা হিসেবে পরিচিত সাফা কবির। তবে ছোট পর্দার এই অভিনেত্রী চমকে দিয়েছেন ‘টিকিট’ ওয়েব সিরিজে। চরকিতে মুক্তি পাওয়া ভিকি জাহেদের সিরিজটিতে ‘সুবর্ণা’ চরিত্রটি আলোচনায় সাফার অভিনয় আর লুকের কারণে। এ কাজটিসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন

প্রথম আলো :

টিভি নাটকে আপনি যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেন, সে জায়গা থেকে ‘টিকিট’-এর ‘সুবর্ণা’ চরিত্রটি তো একেবারে আলাদা। প্রস্তাব পাওয়ার পর আপনি নিজে কতটা চমকে গিয়েছিলেন?

আমিও এ ধরনের চরিত্রের অপেক্ষায় ছিলাম। এটা ওটিটিতে আমার তৃতীয় কাজ, অপেক্ষায় ছিলাম ভিন্ন লুকে, ভিন্ন কিছুর। আমি তো ১০ বছর ধরে কাজ করছি; এমন কিছু করতে চাচ্ছিলাম, যা আমার অন্য কাজ থেকে সহজেই আলাদা করা যাবে। ভিকি ভাই (নির্মাতা ভিকি জাহেদ) যে চরিত্রটির জন্য আমাকে ভেবেছেন, সে জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।

সাফা কবির
ছবি : সাফা কবিরের সৌজন্যে

প্রথম আলো :

‘সুবর্ণা’ চরিত্রটি তো একজন যৌনকর্মীর। এই চরিত্রে অভিনয় করবেন—কোনো দ্বিধা কাজ করেনি?

না। শিল্পী হিসেবে বরং আনন্দিত হয়েছি—এ ধরনের চরিত্রে পরিচালক আমাকে ভেবেছেন। কারণ, ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয়ের পর মানুষকে বলা যায়, আমি এমন চরিত্রেও অভিনয় করতে পারি। এটা একজন যৌনকর্মীর চরিত্র; পর্দায় যা দেখানো হবে তা কেবল গল্পের প্রয়োজনেই দেখানো হবে—চিত্রনাট্য পাওয়ার পর এটাই ভেবেছি। কাজের সময়ও আমরা বাড়তি কিছু করতে চাইনি, গল্পের মধ্যেই থাকতে চেয়েছি। পরিচালকের সঙ্গে চরিত্রটি নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি, যা আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রথম আলো :

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে নিজেকে পরিশ্রমী অভিনেত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন...

অনেকেই আছেন জন্মগতভাবেই অভিনেত্রী, তাঁদের চরিত্র নিয়ে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। শুটিংয়ে দেখি, তাঁরা অনায়াসে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটা আমাকে করতে হলে অনেক শ্রম দিতে হয়। চেষ্টা করি বাড়তি শ্রম দিয়ে চরিত্রটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে। সে জন্যই হয়তো আমার আগের কাজগুলোর তুলনায় এখনকার কাজগুলো আলাদা হচ্ছে। আশা করি, আমার এ চেষ্টাটা নির্মাতাদের চোখে পড়বে।

সাফা কবির
ছবি : সাফা কবিরের সৌজন্যে

প্রথম আলো :

সিরিজটি দেখার পর নিজের অভিনয় কেমন লাগল?

নিজের কাজ দেখে কখনোই আমি সেভাবে খুশি হই না। মনে হয়, এর চেয়ে আরও ভালো হতে পারত। আমার চেয়ে বরং দর্শকেরা কী বলছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম আলো :

আপনাকে এ ধরনের চরিত্রে দেখাটা তো অন্য নির্মাতা-শিল্পীদেরও আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে...

একজন শিল্পীর সঠিক সুযোগ ও সঠিক নির্মাতার দরকার। সে সুযোগটা পেলে সে নিজের ভেতরের দক্ষতা মেলে ধরতে পারবে। অনেক শিল্পীই আছেন, যা সুযোগের অভাবে নিজের সেরা দেখাতে পারছেন না, একটা জায়গায় আটকে আছেন। আবার এটাও সত্যি, মানুষও একজন শিল্পীকে বিশেষ এক ধরনের চরিত্রেই বেশি পছন্দ করে। আমার যেমন পর্দায় ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ টাইপ একটা ইমেজ আছে। হয়তো আমি একদিন খল চরিত্রে অভিনয় করব। হয়তো আমি খল চরিত্রে খুব ভালো করতে পারব।

প্রথম আলো :

ভালোবাসা দিবসেও আপনার তো বেশ কয়েকটি নাটকও এসেছে।

খুব বেশি কাজ আসেনি। সবগুলো কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পেয়েছে। সে জন্য হয়তো মনে হচ্ছে অনেক কাজ করেছি। টিকিট-এর পর আমার দুটো নাটক এসেছে—‘১০০ বিঘা ফুলের বাগান’ ও ‘লাভ বাজ’। দ্বিতীয়টি মুক্তির পর এখন পর্যন্ত ভালো প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। অমি ভাইয়ের (নির্মাতা কাজ আরেফিন অমি) নাটকটির আগে আরও দুটি কিস্তি নির্মিত হয়েছিল। সিকুয়েল হওয়ার কারণে এটার নির্দিষ্ট কিছু দর্শক আগে থেকেই আছে।

সাফা কবির
ছবি : সাফা কবিরের সৌজন্যে

প্রথম আলো :

ঈদের কাজ কি শুরু করেছেন?

ঈদের কাজের প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যেই কয়েকটির শুটিং হয়ে গেছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অন্য কাজগুলো শুরু করব। এখন যেহেতু কাজ কম করছি, চেষ্টা করছি দর্শককে ভালো কিছু দেওয়ার।

‘টিকিট’–এ সাফা কবির। ছবি : চরকির সৌজন্যে

প্রথম আলো :

ক্যারিয়ারের এক দশক পার করে ফেললেন। এই পর্যায়ে এসে আপনার অভিনয়-দর্শন জানতে চাই।

১০ বছর অভিনয়শিল্পীর জন্য দীর্ঘ সময়। সামনে চেষ্টা থাকবে ভালো কাজ দিয়ে দর্শকের কাছাকাছি থাকা। ক্যারিয়ারের একেকটা পর্যায়ে শিল্পীর ভিন্ন ভিন্ন চাওয়া থাকে, সে আরও পরিণত হয়। একটা সময়ে আমি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীর চরিত্রে অভিনয় করতাম। তারপর প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেছি, এখন আবার একটু পরিণত গল্পের কাজের সুযোগ পাচ্ছি। এ রকম সুযোগ যদি আরও সামনে পাই, ভিন্নধর্মী চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরব।