‘এন্ড কাউন্টার’ তো মুক্তি পেয়েছে। যাঁরা এখন পর্যন্ত দেখেছেন, তাঁদের কাছ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
সাদিয়া মাহি : গল্পটা ভালো। আমার অভিনয় নিয়েও কথা বলেছে। অনেক দিন পরপর একটা–দুটো করে আমার কাজ আসে। মুক্তির পর বুঝতে পারি, মানুষের প্রত্যাশা থাকে, আরও কাজ করব। পর্দায় আরও দেখা যাবে। আমারও দেখতে ভালো লাগে। এই রিভিউটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি সেটাই নিতে চাচ্ছি। কতটুকু ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে, সেটা নিয়েও ভাবছি।
সার্বিকভাবে চলচ্চিত্র মন্থর, নতুন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না, শুটিংও হচ্ছে না। শিল্পী হিসেবে এটা কতটা হতাশার?
সাদিয়া মাহি : শিল্পী হিসেবে হতাশা তো আছে। আবার আশাও করছি যে নতুন কিছু হবে হয়তো। ভালো কিছু হবে। অনেক ধরনের পরিবর্তন আসছে। তরুণ প্রজন্মের যারা আছে, তারাও সম্পৃক্ত হচ্ছে এই পরিবর্তনে। যেহেতু রাজনৈতিক একটা চাপ বা দেশের এই অবস্থা—অস্থিরতা প্রতিটা সেক্টরে থাকবে। অস্থিরতা আমাদের সবার মধ্যে আছে। এর মধ্যে আমরা সারভাইভ করার চেষ্টা করছি। একটু একুট করে গোছানোর চেষ্টা করছি। একেকজন একেক রকমভাবে তা করছে। আমি তো শুরু থেকে এমনিতে বেছে কাজ করি। যেকোনো প্রোডাকশনে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। তাই আমি বলব না, নিজে খুব এটা হতাশ সময় পার করছি। কিছুদিন আগেও এমন কিছু প্রজেক্টের কাজ করছি, প্রতিটাই ভিন্নধর্মী। ওই পরিচালক অ্যাকশন ঘরানার তিনটা শর্টফিল্ম বানিয়েছে। ‘গ্ল্যামার গার্ল’ নামের, সেটার ডাবিং শেষ করেছি। পরিচালক যিনি, সাব্বির মাহমুদ তিনটা স্টোরি বলার চেষ্টা করেছেন। তিনটাই অ্যাকশন ঘরানার। একটা ১৫ মিনিট, আরেকটা ৩০ মিনিট আর আমারটার দৈর্ঘ্য ৪৫ মিনিটের। এটাতে গল্পটা একজন উঠতি মডেল ও নায়িকার। নায়িকার চরিত্রে কাজ করেছে বহ্নি হাসান। সেন্টুও একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করেছে।
প্রথম আলো :
এ ধরনের কাজ আগে করেছেন?
সাদিয়া মাহি : নাহ, আমি সব সময় একটু আলাদা ধরনের কাজ করেছি। সব সময় অফ ট্র্যাকের চিন্তা করেছি। এবারেরটায় একটু কমার্শিয়াল ফিল আছে। আমাকে একটু গ্ল্যামারাসভাবে দেখা যাবে।
এটাতে কাজ করে মডেলিং সম্পর্কে নতুন কিছু জেনেছেন?
সাদিয়া মাহি : সচরাচর যা শুনি তা–ই। আমাদের যেসব গল্প চারপাশে ঘোরে, সেখান থেকে তুলে আনা হয়েছে। বলা যেতে পারে, আমার উপস্থাপনটা নতুন। আমি আসলে আগ্রহী হয়েছি, আমার ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল ফ্যাশন মডেল হিসেবে। ২০১৪ থেকে। বিভিন্ন পণ্যের ফটোশুট করছি। আমি জানি, একজন মডেলের অর্জন কী। আন্তর্জাতিক ফটোশুট আর বড় বড় আয়োজনের ফ্যাশন শো ছাড়া তাঁর জীবনে কিছুই থাকে না। একটা পর্যায়ে তাই মডেলদের হতাশার জায়গা তৈরি হয়। আর একজন হিরোইনের যে পরিমাণ কাজের সুযোগ থাকে এবং জনপ্রিয়তা পায়—তা কোনো দিন একজন মডেল পায় না। এসবই এই গল্পে উঠে এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে নতুনভাবে একটা গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রথম আলো :
সামনে নতুন কী কী কাজ আসছে?
সাদিয়া মাহি : একটা অ্যান্থলজি ফিল্মের কাজ করেছিলাম। পার্থ শেখ সহশিল্পী আর গিয়াসউদ্দিন সেলিম আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেটা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। গত বছর শুটিং করেছিলাম, এটার পরিচালক রাজীব সালেহীন। এর বাইরে কয়েকটা ফিকশন আসবে। একটা নতুন সিনেমার ব্যাপারেও কথা হচ্ছে। মোটামুটি চূড়ান্ত। কাজ শুরুর পর জানাতে পারব। গেল মাসে কয়েকটা ফিকশনের শুটিং শুরুর কথা ছিল। কিন্তু বন্যা ও নানান অস্থিরতায় শুরু করা আর হয়নি। অক্টোবরে কাজ শুরু করব। এটা একটা নাটক। একই পরিচালকের সঙ্গে আগেও একটা কাজ করেছি। টেলিছবি। মাছরাঙায় প্রচারিত ‘বিষণ্ন সন্ধ্যার ডায়েরি’ নামের সেই টেলিছবিতে সহশিল্পী মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। এবার ‘অন্তহীন’ নামের নাটকে সহশিল্পী ইমতিয়াজ বর্ষণ।
ফ্যাশন মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। অভিনয়ের আগ্রহ জন্মায় যে কারণে?
সাদিয়া মাহি : আমার জার্নিটা খুব অদ্ভুত। পরিবারের কেউ এ অঙ্গনে কাজ করত না। ছোটবেলা থেকে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে মডেল হবো, অভিনেত্রী হবো। আমার তেমন কিছুই ছিল না। এখনো ক্যামেরা দেখলে লজ্জা পাওয়া মানুষ আমি। একটু আড়ালে থাকতে পছন্দ করি। জিয়াউদ্দিন আলম ভাই ফটোগ্রাফার, তিনি আমার একটা নরমাল ফটো দেখে ফটোশুট করতে চান। তাঁর তোলা ছবিগুলো দেখার পর বিভিন্ন পণ্য প্রতিষ্ঠানের ফটোশুটের ডাক পাই। আমার আসলে অভিনয়ের জন্য খুব বেশি এফোর্ট দিতে হয়নি। তবে অনেককে ভালো লাগত। অনুসরণও করতাম। তবে ২০১৫ থেকে কাজ করতে করতে ভালো লাগা বাড়তে থাকে। অভিনয় যখন শুরু করি, যখন বুঝতে থাকি, কতটা এফোর্ট দিতে হয় বা চরিত্র নিয়ে কাজ দারুণ সুযোগ আছে—তখন আনন্দটা পেতে থাকি।
প্রথম আলো :
পরিবারের সমর্থন কতটা ছিল?
সাদিয়া মাহি : শুরুতে পরিবারের একটা পর্যবেক্ষণ ছিল। তারপর মা সাপোর্ট শুরু করেন। এখন পর্যন্ত মায়ের সমর্থনে আসতে পেরেছি। কোনো টেনশন নিতে হয় না। মা সব সময় আমার সঙ্গেই থাকেন।
আপনি তো সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ করেছেন। অভিনয়ে কি ক্যারিয়ার গড়তে চান?
সাদিয়া মাহি : আমি যমুনা টেলিভিশনের শোবিজ টুনাইট নামে একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম। দুই বছর করেছি। সিনেমায় অভিনয়ের পর তা আর করছি না। এখন শুধু অভিনয়টা করতে চাই। ক্যারিয়ার এখানে গড়তে চাই। যে কাজটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, যে কাজটা করে আনন্দ পাই, যে কাজটা করে কাজ করছি মনে হয় না, আয়ও করা যায়—সেটাই করা উচিত। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা আছে।