‘জুঁই ফুল’–এ আপনার কোন জীবনটা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে—গানের জীবন নাকি ব্যক্তিগত জীবন?
সাবিনা ইয়াসমীন : আমার পুরো জীবনটাই তো গানের। পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন বলতে আলাদা কিছুই নেই—সব একাকার হয়ে গেছে। এই ডকুফিল্মে আমার লেখাপড়া, বেড়ে ওঠা, গান শেখা, গানের জগতে আসা—সবই আছে। দুই ঘণ্টা ৪৮ মিনিটের একটা অনুষ্ঠানে যেভাবে দীর্ঘ জীবনের যতটা তুলে আনা যায় আরকি।
প্রথম আলো :
ফিল্মটি কি আপনার দেখা হয়েছে?
সাবিনা ইয়াসমীন : পুরোটা দেখতে পারিনি। ১০ মিনিট দেখেছি। শাইখ সিরাজ খুব গবেষণা করে কাজ করেন, এই ডকুফিল্মের কিছুটা দেখে তাই মনে হয়েছে। বোঝা গেছে, তিনি খুব পরিশ্রম করেছেন। এর বাইরে তিনি জন্মদিন উপলক্ষে তারকাকথন নামে একটি অনুষ্ঠানও করেছেন, সেটাও এত সুন্দরভাবে, পুরো ব্যাপারটা করেছেন, যা একেবারে আলাদা—খুবই উপভোগ্য, অসাধারণ।
জনপ্রিয়তার আড়ালে মানুষ হিসেবে আপনি কতটা ভিন্ন?
সাবিনা ইয়াসমীন : মানুষ এবং শিল্পী হিসেবে কোনো ভিন্ন বোধ করি না। আমি সাধারণ মানুষের মতোই একজন মানুষ। আগেই বলছি, আমার দুটো জীবনই গানে গানে একাকার হয়ে গেছে।
প্রথম আলো :
এই জীবনে এমন কোনো সম্পর্ক বা মানুষ আছে, যিনি আপনার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী?
সাবিনা ইয়াসমীন : আলাদাভাবে তেমন কিছু বা কেউ কখনো ছিল না। আমার জীবনের সঙ্গে অনেকে ছিলেন—এই যেমন আমার ওস্তাদেরা, আমার পরিবার, যাঁরা সব সময় আমাকে গানের জীবন এগিয়ে নিতে শক্তি–সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। এত কিছু শিখলাম, এত দূর আসলাম—সবই তাঁদের সবার কাছ থেকে।
প্রথম আলো :
জীবনের কোন মুহূর্তগুলো আপনাকে সবচেয়ে বেশি শিখিয়েছে?
সাবিনা ইয়াসমীন : সত্যি বলতে আমার সংগীতজীবনে কঠিন মুহূর্ত আসেনি। আল্লাহর রহমতে খুব ভালোভাবে এত দূর পর্যন্ত এসেছি, এতটা পথ কাটিয়েছি। তবে মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কঠিন মুহূর্ত যে আসেনি, তা নয়। ওই সময়টায় গানই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। গান আমার আনন্দ, দুঃখ, জীবন—সব।
কখনো কখনো জীবনে আসে একাকিত্ব বা সংকট। জীবনের এমন মুহূর্তে কোন জিনিসে ভরসা করেছেন—গান, পরিবার নাকি অন্য কিছু?
সাবিনা ইয়াসমীন : ও রকমভাবে আমাকে কখনো একাকিত্ব পেয়ে বসেনি। গান আমাকে কখনো একা হতে দেয়নি। গানই আমাকে সব সময় সঙ্গ দিয়েছে। গানকে সঙ্গী করে জীবনের সব পর্যায়ে ভালোই ছিলাম। সবাই আমার আশপাশে ছিল—গান, পরিবার, আমার সমস্ত মানুষ, দর্শক–শ্রোতা। দর্শক–শ্রোতার ভালোবাসা তো সবচেয়ে বিশাল শক্তি, সাহস ও প্রেরণা। আশা করি আগামী দিনগুলোতে তাঁরা সবাই থাকবেন।
প্রথম আলো :
বছর ঘুরে জন্মদিন আসে, চলে যায়। কেমন লাগে?
সাবিনা ইয়াসমীন : ভালোই তো। বেশ লাগে এই দিনে। আজও (জন্মদিনের আগের দিন শিল্পকলায়) মহড়ায় এসে কেউ ফুল দিচ্ছে, কেক কাটছে—এসব তো সুন্দর। আরেক দিকে মনে হয়, আসল গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সত্যি বলতে, মিশ্র একটা অনুভূতি। একদিকে খুশি, আরেক দিকে চিন্তা। এখন তো মনে হয়, যতটা পেরিয়ে এলাম, তার অর্ধেকের অর্ধেকও তো থাকব না—যদিও এটাই দুনিয়ার নিয়ম।
ফেলে আসা জীবন বা শৈশবের জন্মদিনের কথা মনে পড়ে?
সাবিনা ইয়াসমীন : ফেলে আসা দিনের জন্মদিন তো খুব মধুর। বিশেষ করে একদম ছোটবেলার এবং স্টুডেন্ট লাইফের, এর কিছুদিন পরেও বড়সড় আয়োজনে জন্মদিন উদ্যাপন করতাম। বাসায় অনেক লোকজনও আসতেন। খুব ভালো লাগত।
প্রথম আলো :
গানে আপনার দুই সন্তানের কাউকে সেভাবে পাওয়া যায়নি।
সাবিনা ইয়াসমীন : এটা ওদেরই পছন্দ। আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কিছুই ছিল না। ছেলেমেয়েদের ওদের ইচ্ছার ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। মেয়ে (ইয়াসমীন ফাইরুজ বাঁধন) এখন ব্যাংকে ভালো চাকরি করছে। এটাতে সে-ও খুশি, আমিও খুশি। আর ছেলে (রাফি হোসেন) তো লন্ডনে পড়াশোনা শেষে চাকরি করছে। আমি বেশির ভাগ সময় দেখেছি, বাবা-মায়েরা যে পেশায় থাকেন, ছেলেমেয়েরা সেই পেশায় খুব একটা আসে না। এলেও মা-বাবার মতো অতটা সাফল্য সাধারণত খুব একটা পায় না।