এখন তো ঈদের প্রায় সব সিনেমার গানই আলোচিত হচ্ছে। এটা কতটা চাপ তৈরি করে?
ইমরান মাহমুদুল : এটা ইতিবাচক দিক। সিনেমার গান যত বেশি আলোচিত হবে, তা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো। এটা বাড়তি কোনো চাপ তৈরি করে না। একেকজন শিল্পীর শ্রোতা একেক রকম। যার যার গান, যার যার শ্রোতা—যোগ্যতাও একেবারে ভিন্ন রকম। বরং এতে আরও বৈচিত্র্য বাড়ে। মানুষ সব ধরনের গানই শুনতে পারে। চ্যালেঞ্জের চেয়ে আনন্দই হয়। সবাই কাজ করছে, সবাই ভালো কাজ করছে। আমার ভালো কাজগুলো মানুষ পছন্দ করছে।
প্রথম আলো :
পাঁচ-ছয়টি সিনেমার গান যখন টানা হিট হয়, পরের কাজ কতটা চ্যালেঞ্জিং?
ইমরান মাহমুদুল : গান বানানোর আগে আমি কখনোই ভাবি না যে গানটা হিট করাতে হবে। আমি সব সময় গানের গুণগত মান ভালো করার চেষ্টা করি, শ্রোতা হিসেবে আমি যতক্ষণ না পর্যন্ত সন্তুষ্ট হই। সবচেয়ে বড় কথা, গান হিট কিংবা ফ্লপ হওয়ার বিষয়টা মোটেও আমাদের হাতে নেই। এটা পুরোপুরি শ্রোতার ওপরে। এ রকম অনেক হয়েছে, আমার কাছে একটা গান ভালো লেগেছে, কিন্তু মানুষের কাছে লাগেনি। আবার আমার কাছে যেটা মাঝারি মানের লেগেছে, সেটায় আবার দর্শকের কাছ থেকে দুর্দান্ত সাড়া পেয়েছি। তাই হিট-ফ্লপ চিন্তা করে গানও করি না। আমার সন্তুষ্টি পর্যন্ত গানের পেছনে সময় দিই। দর্শকেরা ওটাকে টেনে নিয়ে যান।
অনেক কাজ যখন হয় তখন এর মধ্য থেকে কতটা বৈচিত্র্য উপহার দেওয়া সম্ভব?
ইমরান মাহমুদুল : সত্যি বলতে, আমি কিন্তু অডিও এবং সিনেমায় অত বেশি কাজ করি না। আমাদের তো সবকিছু এখন ঈদকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, ঈদে মোটামুটি যে কয়টা সিনেমা মুক্তি পায়, সেখানে একটা, দুটো কখনো তিনটা সিনেমায় আমার গান থাকে। পাঁচটা সিনেমা মুক্তি পেলে সব সময় সব কটায় তো গান থাকে না। সিনেমার গানে কিন্তু দারুণ বৈচিত্র্য থাকে। একেক গানের প্লট ভিন্ন থাকে। পরিচালকদের ভাবনাচিন্তা আলাদা থাকে। যেমন গত রোজার ঈদে আমার তিন রকম তিনটি গান মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে ‘কন্যা’ রিদমিক, ‘মায়াবী’ সিনেমাটিক, ‘বন্ধু গো শোনো’ রোমান্টিক। এসবে মনে হয় সিনেমায় বরং অনেক বৈচিত্র্য থাকে। অডিওতে তো আমি তেমন কাজ করি না, বছরে চারটার মতো গান করা হয়। সে ক্ষেত্রে আমার মতো করে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করি।
প্রথম আলো :
সিনেমার গানের নিজের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কতটা সুযোগ থাকে?
ইমরান মাহমুদুল : সিনেমার গানে পরিচালক, প্রযোজক, নায়ক-নায়িকা—সবার মতামত থাকে। সবার মতামত যখন একটা জায়গা মিলিত হয়, তখনই তৈরি হয় সিনেমার গান। বিষয়টা এমন না যে আমি একটা গান বানালাম, এটাই হতে হবে, এটাই ফাইনাল। কারণ, সিনেমার গান চিত্রায়ণের পরও বদলে যায়। অনেক কিছু নায়ক-নায়িকার পরামর্শেও বদল করতে হয়। সিনেমার কাজ বরাবরই এ রকম। পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ থাকে, তবে সবাইকে নিয়ে বসে, আলোচনা সাপেক্ষে।
প্লেব্যাকে প্রতিষ্ঠিতদের বাইরে নতুনদের নিয়ে কাজ করতে চান কি না? যদি করেন তাহলে নতুন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সময় আপনি কী বিষয়গুলো দেখেন?
ইমরান মাহমুদুল : আমি সব সময় নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। অনেক সময় আমি যখন দেখি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কেউ ভালো করছে, তখন পরিচালক ও প্রযোজককে বলি, এই শিল্পীকে দিয়ে কাজ করানো যায় কী? অনেক পরিচালক-প্রযোজক হয়তো নতুনদের নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না, প্রতিষ্ঠিতদের দিয়ে কাজ করাতে চান। আমি নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে সব সময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে সিনেমার পরিচালক-প্রযোজকের ওপর। সিনেমার গানের ক্ষেত্রে আমি সব সময় দেখি, অভিব্যক্তি। সিনেমার গান আর অডিওর গানে পার্থক্য অভিব্যক্তিতে, যা সিনেমার গানে অবশ্যই লাগে। সিনেমা মানেই হচ্ছে, পর্দার মানুষটার ব্যক্তিত্ব ও অভিব্যক্তি আমার কণ্ঠের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা। ওই ব্যাপারটা না থাকলে সিনেমার গান হয় না। তাই তো আমরা সিনেম্যাটিক ব্যাপার বলি। যাদের অভিব্যক্তি ভালো, তাদের কণ্ঠটাই আমাকে আকর্ষণ করে।
প্রথম আলো :
নিজের মনের খোরাকের জন্য কী ধরনের গান করতে চান?
ইমরান মাহমুদুল : নিজের মনের খোরাকের জন্য আমি সেমি ক্ল্যাসিক্যাল গান পছন্দ করি। ২০১৬ সালের দিকে যখন অডিওর মাধ্যমে নিয়মিত কাজ করতাম, তখন অডিও কোম্পানিগুলোর গান সেমি ক্ল্যাসিক্যাল ঢঙে করেছি। এর মধ্যে ‘সবাই চলে যাবে’, ‘ক্ষয়’, ‘শুধু তোমায় ঘিরে’, ‘আমার ইচ্ছে কোথায়’ গানগুলো গতানুগতিক ধাঁচের বাইরের। এই ধরনের গান সিনেমায় করার অনেক ইচ্ছা হয়। সিনেমায় এই ধরনের গানের যথাযথ উপস্থাপনের সুযোগ হচ্ছে না, যখন হয় তখন করব। যে ধরনের গল্প বা প্রেক্ষাপটে এখন সিনেমার গান হয়, সে ধরনের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে হয়তো এমন গান যায় না।
আপনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সহশিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন। কাদের সঙ্গে কাজ করে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং বোঝাপড়া ভালো?
ইমরান মাহমুদুল : যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, সবার সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো। একেকজনের অভিব্যক্তি, গায়কি একেক রকম। যে গানটার জন্য যাকে দরকার, তখন তাকে সাজেস্ট করি, হয়তোবা তার সঙ্গে গাওয়ার চেষ্টা করি। সুনির্দিষ্টভাবে কোনো শিল্পীর সঙ্গে গাইতে হবে বা গাইতে ভালো লাগে বিষয়টা মোটেও এমন না। তবে আমরা যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি—সবাই আমার কাছের, সবাই আমার বন্ধু, সবাই ভাই-বোন। যখন যার সঙ্গে ডিমান্ড করে, পরিস্থিতি অনুযায়ী তার সঙ্গে কাজ হয়। সে ক্ষেত্রে আমার সৃজনশীল অনুভব সবার সঙ্গে একই রকম থাকে। আমি একজন পেশাদার শিল্পী, তাই গানটা যাতে ভালো হয়, সে রকম কাজই করি। আমার মধ্যে এমন কোনো চিন্তা থাকে না যে তাকেই লাগবে। আমি শুধু বলতে পারি, এই কণ্ঠটা এই গানের জন্য হলে ভালো হয়, এই যা।
প্রথম আলো :
সহশিল্পীর কণ্ঠ বা গায়কির কোন দিকটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে?
ইমরান মাহমুদুল : আমরা যারা এখন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, সবার কণ্ঠ ভালো। পার্থক্য হচ্ছে অভিব্যক্তিতে। এই অভিব্যক্তির কারণে একটা গানের রং, সৌন্দর্য উঠে আসে। যে কণ্ঠ বৈচিত্র্যময়, সে কণ্ঠই আমাকে আকর্ষণ করে।
আপনার নতুন কাজের খবর বলুন?
ইমরান মাহমুদুল : নতুন কাজ বলতে, দুইটা সিনেমার গান আসছে। ‘টগর’ সিনেমায় নাচের গান ‘ও সুন্দরী’ আমি আর আতিয়া আনিসা গেয়েছি। ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ছবিতে পুরোপুরি রোমান্টিক ‘তোমাকে চাই’ আমি আর কোনাল গেয়েছি। দুটো গানের সুর-সংগীত আমার, কথা লিখেছেন রবিউল ইসলাম। নাটকেও বেশ কয়েকটা গান করেছি। কোন নাটক কখন মুক্তি পাবে জানি না। অডিও কোনো গান মুক্তি দিচ্ছি না। ঈদের পর তো স্টেজ শোর ব্যস্ততা শুরু হবে। বেশ কয়েকটি কনসার্ট এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে আছে।