এত মানুষের ভালোবাসা পাবে, ভাবিনি: তবীব মাহমুদ

১২ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রের প্রথম গান ‘কথা আছে’। শুভ্র রাহার সংগীত পরিচালনায় গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন তবীব মাহমুদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল এ গানসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’।
‘কথা আছে’ গানের গায়ক ও গীতিকার তবীব মাহমুদ। এবারই প্রথম চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক হলো তাঁর
ছবি : তবীব মাহমুদের সৌজন্যে

প্রশ্ন :

দুপুর থেকে অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও আপনাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না।

নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার খবর শুনে সকালে ছুটে গিয়েছিলাম। কয়েকজন ভাই–ব্রাদার ছাড়া রানাও (গাল্লি বয়) আসছিল। ওখানে আমাদের পরিচিত অনেকের দোকানপাট ছিল। বেশির ভাগ দোকান পুড়ে গেছে। এই সংকটে তাদের পাশে থাকার চিন্তা থেকে গেলাম। সকাল ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছিলাম। বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তাই ফোনকলটা খেয়াল করিনি।

প্রশ্ন :

আগুন লাগার খবর কীভাবে পেলেন?

আমি সাহ্‌রি শেষ করে ঘুমাতে যাব, এমন সময় আফনান নামের এক ছোট ভাই জানাল, আগুন লাগছে। বললাম, চলো যাই। গিয়ে দেখি, আমাদের কামরাঙ্গীরচরের অনেক ভাই–ব্রাদার। সংকটের খবর শুনলে সশরীর যাওয়ার চেষ্টা করি। আমার তো অতটা সামর্থ্য নেই, ফকির মানুষ, তারপরও গিয়ে যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে কোনো কাজে আসতে পারি আরকি।

‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার ‘কথা আছে’ গানের পোস্টারে শাকিব খান
পোস্টার : পরিচালকের সৌজন্যে

প্রশ্ন :

‘কথা আছে’ প্রকাশের পর তো দারুণ সাড়া ফেলেছে। ‘কথা আছে’ গানটি কীভাবে জন্ম নিল?

এটা আসলে ছবির পরিচালক তপু খান ভাইয়ের ভাবনা। এই গান পুরো ছবির গল্পের কাব্যিক রূপ। গল্পটা শোনার পর শুভ্র রাহা ভাই মিউজিক করে। এরপর আমি নিরিবিলি কোনো এক জায়গায় গিয়ে বসি। তারপর গানটা লিখি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি বসলে যেকোনো বিষয়ে লিখে ফেলতে পারি। সময় লাগে না আরকি।

প্রশ্ন :

গানটি কোথায় বসে লিখেছিলেন?

শুভ্র রাহা ভাইয়ের স্টুডিও থেকে বের হয়ে হাঁটছিলাম, ধানমন্ডির রাস্তাঘাট ধরে। ওই সময় রাস্তার আশপাশে বসে লিখে ফেলেছিলাম।

‘কথা আছে’ গান প্রকাশের পরদিন সংগীত পরিচালক শুভ্র রাহা, পরিচালক তপু খান ও তবীব মাহমুদ চিত্রনায়কক শাকিব খানের সঙ্গে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে দেখা করেন
ছবি : পরিচালকের ফেসবুক পেজ থেকে

প্রশ্ন :

শুরুতে কি ভেবেছিলেন, গানটি এত মানুষের ভালোবাসা পাবে?

এত মানুষের ভালোবাসা পাবে, ভাবিনি। কিন্তু মনে একটা আশাও রাখছিলাম, না, অনেক মানুষ দেখতেও পারে। এখন অবশ্য সচেতন হয়ে গেছি। কিছু একটা তৈরি করলে আশা বাদ দিয়ে দিই। কোনো প্রত্যাশা রাখি না। আমি মনে করি, একটা সুন্দর জার্নির মধ্যে ছিলাম, লেখাটা হয়েছে সুন্দর, মনটাও খুব ভালো লাগছে—এটুকুই অনেক। আমি সব সময় চেষ্টা করি, যে মুহূর্তে লিখি, মুহূর্তটা উপভোগ করতে। প্রত্যাশা বাদ দিয়ে দিই। কারণ, প্রকাশের পর যদি কেউ না–ও দেখে, তা–ও এটা ভেবে শান্তি পাব যে একটা জার্নির মধ্যে ছিলাম।

প্রশ্ন :

আপনার গানগুলোতে সব সময় সমাজের নানা অসংগতি ও বৈষম্যের কথা থাকে...

সংগ্রামের কথা, সমাজের কথা নিয়ে গান খুব বেশি হচ্ছে না। শুরুতে আমি যখন পথশিশুদের ইস্যু নিয়ে আলোচনা করলাম, দেখলাম, সারা দেশের মানুষ পথশিশুদের নিয়ে বলা কথাকে ভ্যালু দিল। পথশিশুদের ব্যাপারে সবার ভেতরকার পরিবর্তন চোখে দেখলাম। সত্যি বলতে, আমি মনে মনে স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশে যে সমস্যাগুলো আছে, একদিন সেগুলো একটাও থাকবে না। তবে প্রতিবাদ, অসংগতি ও বৈষম্যের ইস্যুগুলো আমার ভেতরে কীভাবে ঢুকেছে, বলতে পারব না। উঠতে–বসতে, চলতে–ফিরতে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হয়তো এটা হয়ে গেছে। আশপাশ দেখতে দেখতেও হতে পারে। এমনও হতে পারে, চারপাশটা ভাবিয়েছে।

প্রশ্ন :

গানটি প্রকাশের পরদিনই ফেসবুকে আপনার সঙ্গে শাকিব খানের ছবি দেখলাম...

‘কথা আছে’ শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম প্লেব্যাক। সেদিনই তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি দেখা। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন জানি মিরাকল মিরাকল লাগে। শাকিব ভাইয়ের অফিসে আমরা আড্ডা দিলাম। আনন্দ করলাম। শাকিব ভাইয়ের মধ্যে একটা বিষয় দেখলাম, বিনোদনের মাধ্যমেও যে পরিবর্তন আনা সম্ভব, এটা তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি এটাও বিশ্বাস করেন, বিনোদন সমাজ সংস্কারে গোপনে কাজ করে, সবাই তা খালি চোখে দেখতে পায় না। বিনোদনের মাধ্যমে অনেক ইতিবাচক কিছু করার কথাও বলেছেন। গানটির মধ্যে যেমন প্রতিবাদ আছে, এ রকম আরও অনেক কিছু ভবিষ্যতে করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন।

প্রশ্ন :

নতুন কাজের খবর বলুন...

আমি তিন ভাষায় ফিউশন করে একটা গান বানিয়েছি। মনে হচ্ছে, অডিওটা খুব ভালো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানের। ভিডিওটা নিয়ে ভাবছি। ভালো বাজেট দিয়ে একটা সুন্দর ভিজ্যুয়াল বানাব। আমি মনে করি, নতুন এই গানের মাধ্যমে বাংলা র‌্যাপ আন্তর্জাতিকভাবে আগাবে। আমার এই গানের মধ্যে প্রেম আছে, আছে বেদনাও।