এই কথাটা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ

চরকি প্রযোজিত ওয়েব গুটিতে অভিনয় করে আবারও আলোচনায় আজমেরী হক বাঁধন। বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়া এই সিরিজে অভিনয় করে সব বয়সীর কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছেন। শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত ওয়েব সিরিজে অভিনয়সহ নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন এই অভিনেত্রী।

আজমেরী হক বাঁধনছবি : সংগৃহীত
প্রশ্ন:

‘গুটি’ মুক্তির পর পাওয়া প্রশংসা আপনাকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করছে?

রেহানা মরিয়ম নূর ছবিতে আমার জার্নিটা একরকম আর সুলতানার জার্নিটা আরেক রকম। সাধারণত নাটক ও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে একধরনের প্রতিক্রিয়া পাই, এখন পাচ্ছি ভিন্ন রকম। এসব শুনলে ভয় লাগে, এ ভয়টা আগে ছিল না। এটা ঠিক চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে এখন অভিনয় করছি। এগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, কীভাবে দেখবেন, এসব নিয়েও চিন্তা ছিল। গুটি মুক্তির পর দেখছি আমার মায়ের বন্ধুরা যেমন বলছেন, তেমনি সাত-আট বছরের বড় কাজিনও বলছে। তারা বলেছে এক বসায় পুরো সিরিজ দেখেছে। আমার এক কাজিন তো অবাক, কীভাবে এ রকম অভিনয় করলাম! এভাবে হেঁটেছি কীভাবে? বুঝলাম সবাই বেশ ইনভলড হয়ে দেখেছেন। এটা নিয়ে আলোচনা করছেন। চরকি তো আসলে সাবস্ক্রাইব করে দেখতে হয়, এটা তো ইউটিউবের মতো ফ্রি দেখার বিষয় নয়। তাই আমার জন্য এটা নতুন অভিজ্ঞতা কিন্তু। আমি বেশ ভালো অনুভব করছি। যখন হইচইয়ের কাজ শুরু করেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি, তখন এই ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল। তবে নিঃসন্দেহে গুটির রেসপন্স অনেক বেশি। যেখানেই যাচ্ছি এটা নিয়ে গল্প করছে। কেউ বলছে সুলতানা চরিত্র তাদের ভালো লেগেছে। আমি অবাক হচ্ছি এই ভেবে, দর্শক খুঁটিনাটিসহ দেখছে। এটা অন্য রকমের নতুন ভালো লাগা। বলা যেতে পারে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করাও। হয়তো এটার জন্যই এ রকম আরেকটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র করতে অনুপ্রাণিত হব। আমার মনে হয় এই ধরনের এক্সাইটমেন্ট একটা দায়িত্বের মধ্যে ফেলে, নতুন সব চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।

প্রশ্ন:

মায়ের বান্ধবী আর কাজিনদের কথা বলছিলেন। আপনার মা কি দেখেছেন ‘গুটি’?

আম্মুর মোবাইলে চরকি ইনস্টল করা নেই। আম্মুর বান্ধবীরা ফোন করে প্রশংসা করায় তিনি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ভাবিকে বলেছিলাম, তাঁর ইনস্টল করা তো, দেখিয়ে দিতে। নাহলে আজ বাসায় ফিরে আম্মুর ফোনে চরকি ইনস্টল করে দেব।

‘গুটি’তে আজমেরী হক বাঁধন
প্রশ্ন:

সুলতানা চরিত্রের প্রশংসা প্রাপ্তির পর নিজের মধ্যে কী অনুভূতি হচ্ছে?

পরিচালকদের কাছে আমার অবদার আছে, আমাকে যাতে তাঁরা নতুন নতুন চরিত্রে ভাবেন। কারণ, গুটিতে শঙ্খ দাশগুপ্ত এভাবে না ভাবলে আমি চরিত্রটি করতে পারতাম না। এই ক্রেডিট কিন্তু আমার পরিচালকের। হয়তো মনে করেছে, আমি চরিত্রটা করতে পারব। রেহানা ছবিতে যখন সাদ আমাকে কাস্ট করে, তখন কিন্তু আমার মোস্ট গ্ল্যামারাস ইমেজ। ও তো দেখতে সুন্দর—এই ইমেজ আমার সব সময় ছিল। কিন্তু ওই মেয়েকে দিয়ে যে রেহানা কিংবা সুলতানার মতো চরিত্রও করানো যায়, এটা তো একজন ডিরেক্টরের দায়িত্ব। আমি অনেক কাজ করছি না, যে কয়টা করছি, খুব এনজয় করছি। যে চরিত্র করছি, সে চরিত্র আমাকে একধরনের এক্সাইটমেন্ট দিচ্ছে, নতুন আরেকটা চ্যালেঞ্জিং কাজ করার জন্য। গুটির যখন শুটিং শেষ করে আসছি, একরকম ভয়ও ছিল; কারণ নারীপ্রধান গল্পের কাজগুলো খুব একটা দেখে না।

প্রশ্ন:

কেন মনে হলো?

আমি একদম উল্লেখ করেই বলতে চাই, আমাদের আশফাক নিপুণ একটা কাজ করেছিল ওটিটির জন্য, সাবরিনা, অসম্ভব ভালো একটা কাজ। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই ধরনের অসাধারণ একটা বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচালকের সাধুবাদ প্রাপ্য। কষ্টের কথা হচ্ছে, সাবরিনা ওই অর্থে মানুষ দেখেনি বা ওটা নিয়ে যেভাবে আলোচনা হওয়ার, হয়নি। একটা কাজের পেছনে সবার অনেক শ্রম থাকে। শ্রমটা সার্থক হয় যখন মানুষ দেখে, এরপর কথা বলে। শুধু প্রশংসা নয়, সমালোচনাও করবে।

আজমেরী হক বাঁধন
প্রশ্ন:

কিন্তু আজকাল তো বেশির ভাগই শুধু প্রশংসা শুনতে চায়।

শুধু প্রশংসা করার ক্ষেত্রে আমার দ্বিমত আছে। কাজ করার পর আলোচনা–সমালোচনা যখন হয়, তখন অভিনয়শিল্পী পরের কাজের সময় ভুলগুলো শুধরে নেয়। ভাবনাচিন্তা করে আগায়। দর্শক খুঁজে খুঁজে আমার কাজ দেখছেন। কেউ জিজ্ঞেস করছে, গুটির পরের সিজন কবে আসবে। এরপর সুলতানার কী হলো? আমার তো আসলেই ভালো লাগছে। কষ্ট করছি, এসব শুনে কষ্ট তো ভুলে গেছি। সুলতানা চরিত্রে নতুন এক বাঁধনকে পেয়েছে সবাই।

আজমেরী হক বাঁধন
প্রথম আলো
প্রশ্ন:

কী ভেবে ‘গুটি’তে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

শঙ্খ শুরুতে আমাকে চরিত্র এবং গল্প সম্পর্কে বলেছিল। তখন শঙ্খকে প্রশ্ন করেছিলাম, আমাকে কি সুলতানা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে? গ্রহণযোগ্য হবে? আরোপিত মনে হবে না তো? কেউ যখন কোনো চরিত্র নিয়ে কথা বলেন, এটা আমি সব সময় বলি। তবে আমি একদিকে ভাগ্যবান যে সাদ থেকে শুরু করে সৃজিত, বিশাল ভরদ্বাজ, শঙ্খ—আমাকে একটা কথা কমনলি বলেছে, আমি জানি তুমি পারবা। এই কথাটা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে তাঁরা আমাকে বিশ্বাস করছেন। এরপর আমি ওই চরিত্র হয়ে উঠতে কয়েক গুণ অ্যাফোর্ট দিই। এটা তো কম্বাইন্ড আর্টওয়ার্ক, কখনোই একা সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমি নারীপ্রধান গল্পে বেশি কাজ করতে চাই। বাংলাদেশে নারীপ্রধান গল্প সেভাবে হয় না। হলে নারীকে সুপার গ্ল্যামারাস দেখতে চায়, আবার কখনো ডাইনি টাইপ। মাঝামাঝি চরিত্র সুলতানার মতো; যে আমার আশপাশে আছে, এ রকম চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবা হয় না। ছেলেদের জন্য এই ধরনের চরিত্র অনেক আছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে এমনটা হয়, এখানে পুরুষদের হিরো হিসেবে দেখতে চায়। চরকিকে ধন্যবাদ ভিন্ন ধরনের গল্পের কথা ভেবেছে বলেই এমন অসাধারণ একটি কাজের অংশ হতে পেরেছি।