প্রথম আলো :
নাটকের নাম ‘তেল ছাড়া পরোটা’ কেন?
কচি খন্দকার: তেল ছাড়া পরোটার কথা শুনলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে স্বাস্থ্যসচেতনতার কথা। দিন দিন শব্দগুলো রেস্টুরেন্টগুলোয় জনপ্রিয় হচ্ছে। আবার ‘তেল’ শব্দটা ভিন্ন অর্থ বহন করে। গল্পটি দিয়ে আমরা সমাজবাস্তবতার কিছু চিত্র দেখানোর চেষ্টা করছি। এখানে অযোগ্যরা তেল দেওয়া ছাড়া জায়গা তৈরি করতে পারে না। আবার যাঁরা যোগ্য তাঁরা কর্মক্ষেত্রে তেল দিতে অপছন্দ করেন। মেধা নিয়ে তাঁরা পিছিয়ে থাকেন। একটি তেল কোম্পানির মধ্য দিয়ে কমেডি আকারে গল্পটি তুলে ধরেছি। যেখানে কেউ তেলের আশপাশে থাকলেও তেলবিরোধী।
প্রথম আলো :
নাটকে আপনি একই সঙ্গে তিন ভূমিকায়, কাজে সমস্যা হয়নি?
কচি খন্দকার: আমি যেহেতু নাটকের রচয়িতা, সেহেতু এটা পরিচালনা করতে অনেক সুবিধা। কনসেপ্ট জানা থাকে। মনের মতো করে কাজটা আদায় করতে পারি। কিন্তু আমাদের এখানে তো একজন পরিচালককে সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। সেই কাজটা করতে গিয়ে, মন খুলে অভিনয় করতে পারি না। কখনো কখনো অভিনয় কঠিন মনে হয়।
প্রথম আলো :
আপনার প্রথম পরিচয় কী?
কচি খন্দকার: প্রথমত আমি একজন নাট্যকার। এই পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। দ্বিতীয়ত আমি পরিচালক। তিন নম্বরে আমি একজন অভিনেতা।
প্রথম আলো :
আগে ১০টি ধারাবাহিক পরিচালনা করেছেন, সবগুলোতেই মোশাররফ করিমকে দেখা গেছে। এবার মোশাররফ করিম নেই কেন?
কচি খন্দকার: আমার সর্বশেষ পরিচালিত ধারাবাহিক বাঙ্গিতেও মোশাররফ করিম ছিল। আমি কখনোই মোশাররফ করিমকে বাদ দিয়ে কাজ করিনি। এবার কিছু কারণে শুরু থেকে মোশাররফ আমাদের সঙ্গে নাই। তবে মোশাররফ করিম বিশেষ চরিত্র হয়ে আসবে আশা করি।
প্রথম আলো :
বর্তমান সময়ে ধারাবাহিক নাটকগুলোর মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন। আপনার কী মনে হয়?
কচি খন্দকার: ১০/১২ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলব, ধারাবাহিক নাটকের মান তলানিতে ঠেকেছে। নাটকগুলোর দর্শক হারানোর অনেক কারণ রয়েছে। এখন ধারাবাহিকে যেভাবেই হোক হাসাতে হবে টাইপ ব্যাপার হয়ে গেছে। এখানে জীবনবোধের গল্প নেই। বেশির ভাগ নাটকে দেখানো হয় ভাঁড়ামো, বিষয়বস্তু এক, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, অভিনয়, সংলাপ বলার ধরন আলাদা করা যায় না। একই জিনিস দর্শক কত দিন দেখবেন। সেখানে আমরা চেষ্টা করেছি বিনোদনের পাশাপাশি চরিত্রগুলো নিয়ে একটু গভীরে যাওয়ার।
প্রথম আলো :
কয়েক বছর ধরে সিনেমা বানানোর ঘোষণা দিয়ে পিছিয়ে আসছেন...
কচি খন্দকার: নানা পরিস্থিতির কারণে সিনেমা বানাতে পারছি না। চিত্রনাট্য শেষ করেও পিছিয়ে আসতে হয়েছে। এটা আমার বেদনা। কথা দিয়েও নানা পরিস্থিতির কারণে কথা রাখতে পারছি না। তবে আগামী নভেম্বর–ডিসেম্বরে নতুন করে উদ্যোগ নেব। নির্বাচন হয়ে গেলে আশা করি ভালো প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। অল্প সময়ের মধ্যে শুটিংয়ে যাব, এটা নিশ্চিত। এখানেও মোশাররফ করিম থাকবেন আশা করছি।
প্রথম আলো :
ক্যারিয়ার নিয়ে আফসোস আছে?
কচি খন্দকার: ২০০০ সাল থেকে নাটকে আমার ক্যারিয়ার শুরু। থিয়েটারে আরও আগে। সব মিলিয়ে ২৮ বছরের ক্যারিয়ার। আমি পরিচালক হিসেবে বহু কাজ করেছি। বহু চিত্রনাট্য লিখেছি। এটাই আমার আসল পরিচয়। অথচ এই দুটি জায়গায় আমার স্বীকৃতি কম। আমাকে সবাই শুধু অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। সেটা নিয়েই আমার আফসোস। সেখানে অনেকেই মনে করেন, আমি নাকি রসবোধের কমেডি অভিনেতা। মূলত কমেডি অভিনেতা হিসেবে আমাকে উপস্থাপন করতে চায়। হাসির পাত্র মনে করে অনেকেই। যে কারণে শিল্পীর যথাযথ মূল্যায়ন জরুরি।
প্রথম আলো :
আপনি নিজেই বলেছিলেন ৭০টির মতো নাটকে একই রকম চাচা চরিত্রে দেখা গেছে...
কচি খন্দকার: একসময় আমি শুধু চাচা ও ভাইয়ের মধ্য ঘুরপাক খেয়েছি। পরে বুঝতে পেরেছি কেউ কেউ আমাকে একই চরিত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার ডাকছে। হাসির পাত্র আমি আর হতে চাইনি। যে কারণে এখন বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে বেশি অভিনয় করছি। সম্প্রতি দুটি নাটকের কাজ করলাম অসাধারণ গল্প–চরিত্র। ভালো লাগবে দর্শকদের।
প্রথম আলো :
বেশির ভাগ সময়ই আপনাকে হেঁটে বা রিকশায় চলাফেরা করতে দেখা যায়...
কচি খন্দকার: ঢাকা শহরে আমার গাড়ি–বাড়ি কিছুই নাই। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হিসাব করে দেখেছি, শুধু অভিনয় করে আর সৎভাবে জীবন যাপন করে, পারিশ্রমিক দিয়ে আমাদের মতো শিল্পীদের গাড়ি–বাড়ি করা দুঃস্বপ্ন। যে কারণে কখনো রিকশায়, কখনো হেঁটে যাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি দর্শকদের সরাসরি ভালোবাসা। এটাই আমার বড় অর্জন। মিডিয়ায় কোনো প্রতিযোগিতার মধ্যে আমি যাইনি। ৫ বছর ধরে কোনো পারিশ্রমিক বাড়াই না। এ ছাড়া আমার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নাই। আমার জীবনযাপন নিয়ে আমি খুশি।