জীবনে কী কী হতে পারত? নিজের সঙ্গে নিজের যখন কথা হয়, তখন ভাবনায় কী আসে?
আমি চাইতাম, আমি এত ব্যস্ত থাকি যে প্রতিদিন যেন স্টেজ শো থাকে। সেটা তো আর হয় না। বছরে হয়; কারণ, আমাদের তো সিজনাল। শীতকালে হয় তো বর্ষাকালে হয় না। সব সময় যদি গান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারতাম। শ্রোতাদের সঙ্গে প্রতিদিন সরাসরি দেখা হওয়ার মধ্যে থাকতে পারতাম আরকি।
শ্রোতাদের সঙ্গে যখন কনসার্টে দেখা হয়, কেমন অনুভূতি হয়?
পুরোনো সব গান শ্রোতারা অনুরোধ করেন। গানের প্রতিটা লাইন তাঁদের মুখস্থ। সেই গানগুলো যখন আমার সঙ্গে শ্রোতারা গান, অনেক শক্তি, সাহস, অনুপ্রেরণা পাই। বাঁচার শক্তিটা বাড়িয়ে দেয়।
৪৫ বছরের সংগীতজীবনে গানের সংখ্যা কত?
নিজের লেখা ও সুর করা গান ৫০টির বেশি হবে। মিশ্র অ্যালবামে আরও ২০-২৫টি গান আছে। কনসার্টে ঘুরেফিরে ১০টির বেশি গান করা সম্ভব হয় না। কখনো আটটি। নিজের বেশি ভালো লাগার আরও অনেক গান কনসার্টে গাইতে পারি না। এটা নিয়ে একটা দুঃখবোধ রয়ে গেছে। তবে আজকের কনসার্টে অনুরোধ না আসা গানও শ্রোতাদের শোনাব। বলা যেতে পারে, কম প্রচলিত গানও গাইব।
আপনার কথামতো, ৪৫ বছরে গানের সংখ্যা ৭০-৭৫টি। এটা কি সংখ্যায় কম নয়?
আরও গাইতে হয়তো পারতাম। আমার কাছে অনুরোধও ছিল। কিন্তু করা হয়নি। অ্যালবামগুলো অনেক যত্ন নিয়ে করেছি। এই কয়টি অ্যালবাম একজন শিল্পীর ক্যারিয়ারের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে আমার অ্যালবামগুলো যেমন স্থায়িত্ব পেয়েছে, গানগুলোও পেয়েছে। সময় নিয়েছি বেশি এবং গান করেছি কম। একটা কথা আছে না, সৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, না হলে ভালো মানের সৃষ্টি হয় না; আমি সেটা মেনে চলেছি হয়তো। চাইলে হয়তো আরও বেশি সৃস্টি করা সম্ভব ছিল। এদিকে গেল ১৫ বছরে ভেবেছি, আমি গান করব কার জন্য? আমাদের কোনো পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান নেই। আগে যেমন গান করতাম, স্টুডিও প্রোডাকশন থেকে শুরু করে সবকিছু পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান করত, এখন তো সেই কোম্পানিগুলোই নেই। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে করব কেন? আবার ইউটিউব আছে, সেখানেও তো অনেক খরচ। আমি এমনিতে অনেক খুঁতখুঁতে স্বভাবের লোক। অনেক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই। পুরোনো স্টাইলে এখনো রেকর্ডিং করি। হয়তো প্রতিকূলতার কারণে গানের সংখ্যা বেশি করতে পারিনি। কিন্তু ইচ্ছা তো সব সময় ছিল।
নতুন গান, অ্যালবাম শ্রোতারা পাবেন কি?
আমাদের এই পুরো শো রেকর্ড করা হবে। পরে পোস্টপ্রোডাকশন করে ইউটিউবে ছাড়ব ভাবছি।
কিন্তু এটা তো প্রকাশিত গানের সংকলনের মতো...
এখানে এমন কয়েকটি গান থাকবে, যেগুলো শ্রোতারা কম শুনেছেন। সামনে যদি সবকিছু মিলে যায়, তাহলে নতুন গান প্রকাশ করতেও পারি।
কনসার্টের ব্যস্ততা কেমন?
এখন কনসার্ট আর দেশের বাইরের স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঘুরে এলাম। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে কলকাতায় যাচ্ছি। দীর্ঘ ২৬ বছর পর কলকাতায় যাওয়া হচ্ছে। দেরিতে হলেও আমন্ত্রণ এসেছে। আমরা গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে গাইব। কলকাতায় এর আগে ফিডব্যাকের সঙ্গে দুবার গিয়েছি আর ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ নিয়ে একবার।
বাংলাদেশের সংগীত এখন কোন পথে?
আমরা ৫০ বছরে অনেক এগিয়েছি। আগে যেখানে গিটারের একটা তার পর্যন্ত পাওয়া যেত না, সেখানে একটা ফোনকলই যথেষ্ট, সবকিছু হাজির। ইচ্ছা করলেই আমরা স্টেডিয়ামে কনসার্ট নামিয়ে ফেলতে পারি। অনলাইনে প্রচার–প্রসারও এগিয়ে অনেক। শিল্পীরা যৌথভাবে যেমন এগোচ্ছে, তেমনি এককভাবেও। যার যার মতো করে চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে বলেই ফলাফল আসছে, সামনে আরও আসবে। বাংলাদেশের গানের ক্ষেত্রে সুফল আসবেই।
এই জীবনে কি সংগীতশিল্পীই হতে চেয়েছিলেন?
গান গাইব, এটাই আমার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন যা দেখেছিলাম, তা–ই হয়েছি। ছোটবেলা থেকে আয়নার সামনে গান গাইতাম। বাথরুমে গান করতাম। চিন্তা করতাম, অনেক লোকের সামনে গাইছি—এটা আমার মধ্যে কাজ করত। মা–বাবাও গান পছন্দ করতেন, গাইতেন। দাদি-নানি সবাই গান খুব পছন্দ করতেন। এটা আমার মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। তবে আমার আগে পরিবারের কেউই পেশাদার সংগীত চর্চা করেননি।