‘কাউকে বলিনি, বাঁচাও। নিজেই সবাইকে মাইরা ফেলছি’

দীর্ঘদিন পর আবার কোনো রিয়েলিটি শো উপস্থাপনা করছেন অভিনয়শিল্পী স্বাগতা। কদিন আগে প্রথমবারের মতো ওয়েব সিরিজেও তাঁর অভিষেক ঘটে গেছে। উপস্থাপনা, অভিনয়সহ নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি ঢাকার উত্তরায় একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং করছিলেন।

স্বাগতা
ছবি: নকশা

প্রশ্ন :

কোন নাটকের শুটিং?

‘নির্দোষ’। এ ধারাবাহিক নাটকে আমি ভিলেন, সবার জীবনে প্যাঁচ লাগিয়ে বেড়াই।

প্রশ্ন :

কাছাকাছি সময়ে বেশ কয়েকটি খলচরিত্র করলেন...

কাইজার-এ ভিলেন হিসেবে অভিনয় করেছি। শত্রু শত্রু খেলা ছবিতেও ভিলেন হয়েছিলাম। আমি চরিত্রনির্ভর নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয় করি। সব সময় তো প্রধান চরিত্রে কাজ করি না। তাই নেতিবাচক ও ইতিবাচক—সব কাজই করি।

প্রশ্ন :

নেতিবাচক ও ইতিবাচক, কোন চরিত্র করে প্রশংসা পান বেশি?

নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ে বৈচিত্র্য বেশি থাকে। ছোটবেলায় টু-লেট নামে একটি নাটকেও নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করি। আমার কাছে মনে হয়, নায়িকারা তো খালি কান্নাকাটি করে ভিলেনদের চাপে, তাই অভিনয়ের সুযোগ কম থাকে। হলিউড, বলিউড, এমনকি বাংলা সিনেমায় সাধারণত দেখি, ভিলেন হয় ছেলেরা। যখন মেয়েদের ভিলেন হওয়ার সুযোগ থাকে, আমি হই।

স্বাগতা
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

খলচরিত্রে অভিনয়ে কারও দ্বারা কি অনুপ্রাণিত?

আমার আসলে অভিনয় করতে ভালো লাগে। যেখানে অভিনয়ের সুযোগ বেশি, সেটা করতে আরও বেশি ভালো লাগে। শত্রু শত্রু খেলা ছবিতেও আমি ভিলেন। মান্না ভাই, মৌসুমী আপু, রাজ্জাক আঙ্কেল—সবাই আমার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এই সুযোগ তো নায়িকা হলে হতো না। নায়িকা হলে হয়তো নায়ককে বলতে হতো, বাঁচাওওওও। এখানে আমি কাউকে বলিনি, বাঁচাও। নিজেই সবাইকে মাইরা ফেলছি! কাউকে বাঁচাও বলতে হয় না। আমার অত্যাচারে অন্যরা বাঁচাও বলে (হাসি)। কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ কাইজার-এ তিনটা লুক দিয়েছি, সবাই পছন্দ করেছে।

সম্প্রতি স্বাগতা নাম লেখিয়েছেন নতুন সিনেমায়
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

খলচরিত্রে আপনার পছন্দের শিল্পী কারা?

আমার জন্মের পর থেকে যত সিনেমা দেখেছি, নাটক দেখেছি, যত পারফরম্যান্স দেখেছি, যত অ্যানিমেটেড ফিল্ম দেখেছি, গান শুনেছি, লিরিকস পড়েছি—সবকিছু কিন্তু আমার ভেতরে একটু একটু করে জমা হয়েছে। তখন আমি হয়তো জানতাম না, বড় হয়ে অভিনেত্রী হব। মনের অজান্তে অনেকের অনেক ধরনের অভিনয় আমার মধ্যে জমা হয়েছে। সেখান থেকে বের করে আমি এখন অভিনয় করি। এ মুহূর্তে আমার যতজন ভিলেনের কথা মনে পড়ছে, তাঁরা হচ্ছেন অনুপম খের, নাসিরউদ্দিন শাহ, আমজাদ খান, ড্যানি ডেনজংপা, অমরেশ পুরী, হিথ লেজার, হুমায়ুন ফরীদি। কেন জানি বাস্তব জীবনের মানুষের অভিনয় থেকে অ্যানিমেটেড মুভির অভিনয় ভালো লাগে। অনেক ডিটেইল থাকে বলে মনে হয়। দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস ছবির ভিলেনকেও ভালো লেগেছে। মিশা সওদাগরের অভিনয়ও ভালো লাগে। সব ধরনের অভিনয় আসলে প্রয়োজন হয় জীবনে। কঞ্জুস নাটকে লিয়াকত আলী লাকীর পারফরম্যান্স দেখেছি। আমার জীবনে সবই জমা হয়েছে।

প্রশ্ন :

নারী খলচরিত্রের কাউকে ভালো লাগেনি?

ফুল বানে অঙ্গারে ছবিতে পুলিশের চরিত্রে রেখাকে ভালো লেগেছিল। ছবিতে তিনি ঠিক ভিলেন হননি, তাঁর ওপর যারা অত্যাচার করেছিল, তাদের বদলা নিয়েছিলেন। শত্রু শত্রু খেলা ছবিতে আমি যখন পুলিশ হয়েছি, তখন মনে হচ্ছিল, আমাকে রেখার মতো লাগছে। আমি শ্রীদেবীকেও ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছি। আমি গুপ্ততে কাজল আর ফুল বানে অঙ্গারেতে রেখার পারফরম্যান্স মিলিয়ে শত্রু শত্রু খেলা ছবিতে অভিনয় করেছি।

প্রশ্ন :

‘কাইজার’-এর পর নতুন কাজের প্রস্তাব কেমন পাচ্ছেন?

কাইজার টু করব, এটা ফাইনাল। ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছি; কিন্তু ও রকমভাবে নয়। মাঝখানে তো আবার এক মাস রিয়েলিটি শো ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র উপস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।

স্বাগতা
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

রিয়েলিটি শো তো আগেও একবার করেছেন।

প্রথম ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’ উপস্থাপনা করেছিলাম। কারণ, সেটি ছিল চলচ্চিত্র নিয়ে। আর তখন আমি চিত্রনায়িকা ছিলাম। আর এবারেরটা গানের। কারণ, আমি সংগীতের মানুষও। তাই দ্বিতীয়বারের মতো উপস্থাপনা করছি।

স্বাগতা

প্রশ্ন :

গানবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে কেমন লাগছে?

আমার কাছে বেশি ইন্টারেস্টিং লেগেছে। আমার ভাই সন্ধি আর আমি ছোটবেলায় শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেছি। তারপর ২০০৪ সাল থেকে ৯ বছর মহাকাল নামে একটি ব্যান্ড করেছি। রক মিউজিক করেছি। যেহেতু আমরা শহরে বেড়ে উঠেছি, তাই মাটির সঙ্গে আমাদের সংযোগ কম ছিল। মাটির গান যে শিখিনি, তা নয়; কারণ, আমার বাসায় গানের স্কুল ছিল, বাবা সেই স্কুল চালাতেন। কিন্তু এত এত বাউল! আমি আর সন্ধি পাশে দাঁড়িয়ে তাদের গান শুনছি। জীবনযাপন দেখছি। মনে করছি, আমাদের দুজনের সংগীতের একটা ভ্রমণ হচ্ছে। এটা ভিন্নধর্মী একটা ফিলোসফিক্যাল জার্নি।