শুনছি দর্শক কম, এ অবস্থায় নাটক মুক্তির সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন?
অহনা রহমান: এটা তো সম্পূর্ণভাবে প্রযোজকের সিদ্ধান্ত। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তাঁরা ভালো বুঝবেন। তবে আমি দর্শক হিসেবে এটুকু বুঝতে পারছি, নাটকের দর্শক কম। ভিউ আগের মতো নেই। যা আমাদের নাটক নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছে।
প্রথম আলো :
নাটক নির্মাণ কমলে তো শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে...
অহনা রহমান: দেখুন, আমরা যারা প্রধান চরিত্রে অভিনয় করি, তারা কিন্তু আরও দু–চার মাস চলতে পারব। আমাদের অনেকেই কিন্তু বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, এখনো দাঁড়াচ্ছে। আমাদের নিজেদের পরিবারের দিকেও নজর রাখতে হবে। নাটকে যাঁরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন, তাঁদের আয় সে অর্থে খুব বেশি নয়। এখন শুটিং না হলে পার্শ্বচরিত্রের শিল্পীদের ওপর প্রভাব পড়বে। শুটিং শুরু করতে যত দেরি হবে, অনেক শিল্পীর খেয়েপরে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হবে।
শিল্পী হিসেবে তাঁদের জন্য আপনি কী করতে পারেন?
অহনা রহমান: আমরা শিল্পীরা আগের চেয়ে বেশি কাজ করতে পারি। কিন্তু সেই কাজই তো হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের কাজের জায়গায় আগের মতো পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। ক্রাইসিস থেকে সবাই মিলে বের হতে হবে। এ জন্য দেশেও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে সহায়তা করতে হবে। একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে। এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন চলছে। এমন অবস্থায় প্রযোজকেরা লগ্নি করতে চাইবেন না। সবাই মিলে পরিবেশটা তৈরি করে দিতে হবে।
প্রথম আলো :
আপনার অভিনীত নাটকগুলোর বেশির ভাগই কমেডি ধাঁচের, এমন পরিস্থিতিতে গল্পে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন আছে?
অহনা রহমান: অবশ্যই গল্পে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন কিন্তু দর্শকের রুচি আগের মতো নেই। দর্শক গল্পে সমসাময়িক বিষয়গুলো দেখতে চাইবে। যে কারণে ইতিমধ্যে যে গল্পগুলোতে অভিনয় করেছি, সেখানে দেশের পরিবর্তনের একটা ছাপ আছে। যে গল্পগুলো হয়তো আগে করা যায়নি। দর্শক নিজেদের সম্পৃক্ত মনে করতে পারেন, এমন গল্প এখন বেশি হওয়া দরকার। তরুণ প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে।
আপনার তো এক যুগের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার; এই সময়ে মনের মতো গল্প, চরিত্র নিয়ে আক্ষেপ আছে?
অহনা রহমান: ভালো গল্পকেই সব সময় প্রাধান্য দিয়েছি। অনেক সময় হয়তো হয়নি। ভবিষ্যতে করব। অভিনয় দিয়েই কিন্তু এত বছর টিকে আছি। কিন্তু এটা কি সহজ ছিল? আমাকে অনেক বাধা পেরিয়ে ক্যারিয়ার ধরে রাখতে হয়েছে। আরেকটা কথা, আমাদের এখানে কিন্তু বড় একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। আমি কখনোই সিন্ডিকেটে নেই। মনে হয়েছে, সিন্ডিকেটে যাওয়ার যোগ্যতা নেই। দর্শক পছন্দ করেন বলেই টিকে আছি।
প্রথম আলো :
আপনি দীর্ঘ একটা বিরতি দিয়ে ফিরেছিলেন?
অহনা রহমান: আমি কিন্তু শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেছি। আমাকে হারানো এত সহজ নয়। তবে বিরতির পর ফিরতে ভয়ে ছিলাম। তখনো নিয়মিত অভিনয়ের প্রস্তাব পেতাম। ফেরার পর সিন্ডিকেট ভালো করে বুঝেছি। বুঝতে পেরেছি, আমাদের মিডিয়া আর আগের মতো নেই। সিন্ডিকেটে থাকলে হয়তো হারিয়ে যেতাম। আমি হারাইনি। বরং সিন্ডিকেটে না গিয়ে আমি নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করতে পেরেছি।
আর অভিনয় করব না, এমনটা মনে হয়েছে কখনো?
অহনা রহমান: এটা আমার পেশা। এমনটা কখনোই মনে হয় না। বড় কথা হচ্ছে, আমি সিন্ডিকেট মেইনটেইন করি না। আমি নিয়মিত কাজ করে যেতে চাই। যখন দেখব দর্শক আমার কাজ আর গ্রহণ করছেন না, তখন কাজ কমিয়ে দেব।
প্রথম আলো :
অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেকে বদলানোর প্রয়োজন মনে করেন?
অহনা রহমান: আমার কাজে যদি নতুনত্ব না থাকে, তাহলেই তো দর্শক আমাকে গ্রহণ করবে না। নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করি। আমাদের সময় থেকে তো অনেকেই ছিলেন, এর মধ্যেও তো টিকে আছি। দর্শক চেনেন। কাজগুলো পছন্দ করেন। যে নাটকগুলো মুক্তি পায়, সেখানে দেখি দর্শক মন্তব্যে চরিত্রের প্রশংসা করেছেন। তখন মনে হয়, তাঁরা আমাকে ভালোবাসেন। যেদিন এই ভালোবাসা পাব না, সেদিন নতুন কিছু ভাবব। হয়তো তখন কাজ কমিয়ে টিকে থাকতে হবে।