এমন একটি দিনের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম

গত পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া পরাণ ছবির গান ‘চল নিরালায়’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। জনি হকের লেখা, নাভেদ পারভেজের সুরে দ্বৈত গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন অয়ন চাকলাদার ও আতিয়া আনিসা। বলা যায়, এক গানেই বদলে গেছে আনিসার জীবন। গানটির সাফল্য ও তাঁর অন্যান্য কাজ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

আতিয়া আনিসা

প্রশ্ন :

‘চল নিরালায়’ নিয়ে এত আলোচনা চলছে, আপনার কেমন লাগছে?

অনেক ভালো লাগছে। ভালো গান গাইতে পারাটা শিল্পীর জন্য আনন্দের। কথা, সুর, গায়কি—সবকিছু ভালো থাকলে সে গান সফলতা পায়। যা এ গানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে, মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। সব শ্রেণির দর্শক-শ্রোতা গানটি পছন্দ করেছেন।

প্রশ্ন :

প্রকাশের আগে ভেবেছিলেন গানটি নিয়ে এত আলোচনা হবে?

গানটি নিয়ে অনেক ভয়ে ছিলাম। কারণ, ২০১৯ সালে গানটিতে কণ্ঠ দিই। এরপর নানা কারণে সিনেমাটির মুক্তি দেরি হয়। ভেবেছিলাম, অনেক দিন পর মুক্তি পেলে দর্শকেরা কীভাবে নেবেন। তবে আমরা যখন গাই, তখনই মনে হয়েছিল, গানটি আলোচনায় আসতে পারে। গাওয়ার পর প্রথমবার শুনেই ভালো লেগে যায়। মনে হয়েছিল, দর্শকের কাছে গানটি পৌঁছে যেতে পারে। সেটিই সত্যি হলো।

আতিয়া আনিসা

প্রশ্ন :

গানটি এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী?

কথা ও সুর খুব সহজ। শুনতে বসে যেকোনো শ্রোতাই গানটির সঙ্গে একাত্ম অনুভব করতে পারেন। তা ছাড়া গানের সঙ্গে সিনেমার দৃশ্যায়নটাও দুর্দান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে গানটি ম্যাজিকের মতোই দর্শককে নাড়া দিয়েছে।

প্রশ্ন :

হলে গিয়ে গানটি দেখেছেন কি?

আমি, অয়ন ভাইসহ ২০ জনের টিম মিলে সিনেমাটি দেখতে গিয়েছিলাম। গানটি শুরুর আগে যখন মিউজিক আসে, তখন অনেকেই শিস বাজাচ্ছিলেন, তালি দিচ্ছিলেন। এরপর গানটির সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছিলেন। আমি আর অয়ন ভাই তো একে অপরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। হলে বসা, আমার সামনেই দর্শক গানটি গাইছেন! তখন আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। ওই সময় কী যে ভালো লাগছিল, বলে বোঝাতে পারব না। এমন একটি দিনের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। গত ঈদে মুক্তি পাওয়া আরেক ছবি দিন দ্য ডে–তেও আমার ও ইমরান ভাইয়ের গাওয়া ‘তোকে রাখব খুব আদরে’ গানটিও হলে বসে দর্শককে গাইতে দেখেছি।

প্রশ্ন :

পেশাদার গানের জগতে যাত্রা শুরু হলো কীভাবে?

চলচ্চিত্রের গান দিয়েই আমার শুরু। ২০১৭ সালে ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ’ প্রতিযোগিতায় সেরা সাতে ছিলাম। ওই বছরের শেষের দিকে যদি একদিন সিনেমায় ইমরান ভাইয়ের সঙ্গে ‘চুপকথা’ শিরোনামের গানে কণ্ঠ দিই। এরপর ইমরান ভাইয়ের সঙ্গেই ‘মেঘেরই খামে’ গানের মিউজিক ভিডিওটিতে বেশ সাড়া পেয়েছিলাম। তা ছাড়া আসিফ আকবর ভাইয়ের সঙ্গে দুটি ডুয়েট, ইমন চৌধুরীর সঙ্গে একটি গান গেয়ে ভালো সাড়া পেয়েছি। এ ছাড়া শাহেনশাহ, পাপ পুণ্য, ৭ নাম্বার ফ্লোরসহ বেশ কয়েকটি সিনেমাতেও গান করেছি। সেরাকণ্ঠ প্রতিযোগিতার সময়ে ‘বেহায়া মন’ শিরোনামে একটি মৌলিক গান করেছিলাম। অনেক শ্রোতারই এখনো গানটি মনে আছে।

আতিয়া আনিসা

প্রশ্ন :

প্লেব্যাক নিয়ে কি আপনি বেশি আগ্রহী?

জি। সিনেমার গান করতে বেশ মজা লাগে। তা ছাড়া ভালো গান হলে দ্রুতই শ্রোতা-দর্শকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়, এটাই তো একজন সংগীতশিল্পীর সার্থকতা। ছোটবেলায় আমি যে ওস্তাদের কাছে গান শিখতাম, তিনি বলেছিলেন আমার কণ্ঠের টোন–গায়কি নাকি চলচ্চিত্রের গানের সঙ্গে যায়। তবে সব ধরনের ভালো গানই গাইতে চাই।

প্রশ্ন :

গানের চর্চা শুরু করেছিলেন কবে?

২০০৮ সালে, তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। প্রথমে শুনে শুনে শিখেছি। তখন আমার গান মা পছন্দ করলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা পছন্দ করতেন না। কিন্তু আমার গান শেখার প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। ২০০৮ সালে ‘খুদে গানরাজ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। গানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকার কারণে শুরুর দিকেই বাদ পড়ে যাই। ওই প্রতিযোগিতায় মীর বাকি নামের এক গানের শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমার কণ্ঠ শুনে খুব পছন্দ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি চর্চা করো, ভালো করবে, তোমার কণ্ঠ খুব সুন্দর।’ এরপর তাঁর কাছে শেখা শুরু করি। কিন্তু পরিবার থেকে বারণ থাকায় বাবা গানের শিক্ষকের বেতন দিতে চাননি। শুধু কণ্ঠের কারণে স্যার একটা সময় পর্যন্ত আমাকে বিনা বেতনে গান শিখিয়েছেন। সেই শিক্ষক এখন রাজশাহীতে থাকেন। ঢাকায় এলে তাঁর কাছে তালিম নিই।

আতিয়া আনিসা

প্রশ্ন :

এখন নতুন কী কাজ করছেন?

সম্প্রতি আরেফিন রুমি ভাইয়ের সঙ্গে ‘খুব আদরে’ শিরোনামে একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে মাহতিম সাকিবের সঙ্গে ‘আদরে আদরে সাজানো’ গানটির ভিডিও আসবে। এ ছাড়া দুটি সিনেমা ও একটি ওয়েব ফিল্মের গান করলাম।