আমি যেটা ভাবি, সেটা অন্য কেউ করে ফেলে

মডেলিং ও অভিনয় মিলিয়ে মামনুন ইমন–এর ২০ বছরের ক্যারিয়ার। অভিনয়ের জন্য বড় স্বীকৃতি মিলল অবশেষে। মেরিল-প্রথম পুরস্কারের ২৬তম আসরে সমালোচক বিভাগে রায়হান রাফীর ‘মায়া’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা হয়েছেন তিনি। এই পুরস্কারসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো

প্রথম আলো:

‘মায়া’তে অভিনয়ের জন্য সমালোচক পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তটা কেমন ছিল?

মামনুন ইমন : এটা আমার অভিনয়জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত। আমি ২০০৭ সালে ‘বেস্ট মডেল পপুলার চয়েজ পুরস্কার’ পেয়েছিলাম, এরপর অনেকবার অভিনয়ের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলাম; পুরস্কার পাইনি। এবার যে পুরস্কার পেয়েছি, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। পুরস্কার পাব একদমই ভাবিনি, একেবারে অপ্রত্যাশিত। যখন মায়া কাজটি করেছি, দর্শকের প্রশংসা তো পেয়েছি, সমালোচকেরাও আমার চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেছেন। অভিনয় অঙ্গনে আমার গুরুজনেরাও মায়া দেখে উৎসাহ দিয়েছেন, প্রশংসা করেছেন, যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রথম আলো :

এই পুরস্কার আপনার অভিনয়জীবনে কী প্রভাব ফেলবে?

মামনুন ইমন : আমি বিশ্বাস করি, ভালো কাজ করে তার ফলাফল ভালো হয়। এই জীবনে অনেক কাজ করে ফেলেছি—না বুঝে হোক, অনুরোধে হোক; এ রকমটা আর করব না। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার পাওয়া যায়, এ ধারণা আমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার মনে হয়, ভালো পরিচালক, ভালো গল্প যদি আমার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে আমিও ভালো কিছু করতে পারব।

মামনুন ইমন
ছবি : প্রথম আলো
প্রথম আলো:

সমালোচকদের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া নাকি দর্শকদের ভালোবাসা—কোনটি বেশি মূল্যবান আপনার কাছে?

মামনুন ইমন : দর্শকের ভালোবাসা তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি সমালোচকদের কাছ থেকে নম্বর বের করা সত্যিই কষ্টসাধ্য। দর্শকেরা তো অন্ধের মতো ভালোবাসেন, কিন্তু সমালোচকেরা খুশি হন একটা কাজের চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়ে। তাঁরা অভিনয় যেমন দেখেন, তেমনি প্রোডাকশনের গুণগত মান বোঝার চেষ্টা করেন। ছোটবেলায় যেমন পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হতো, তেমনি সমালোচকদের অভিনয় দিয়ে মন জয় করে নম্বর পেতে হয়। সমালোচক পুরস্কার পাওয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য।

প্রথম আলো :

‘মায়া’ ওয়েব ফিল্মের গল্পে আপনি মাদকাসক্ত একজন যুবক। এই গল্প বা চরিত্রটি কীভাবে আপনাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল?

মামনুন ইমন : একজন শিল্পী হিসেবে আমি অনেকগুলো চরিত্র করতে চেয়েছিলাম। ইদানীং আমার খেলাধুলা নিয়ে কোনো কাজের অংশ হতে মন চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকেও অভিনয় করতে চাই। মায়াতে মাদকাসক্ত যুবকের জীবন কতটা কষ্টের, তা পর্দায় দেখাতে চেয়েছিলাম। একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলাম। এ জন্য অনেক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

প্রথম আলো:

এই চরিত্রে অভিনয়ের সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

মামনুন ইমন : শুটিংয়ের আগে পরিচালকের সঙ্গে দুই মাসের মতো যোগাযোগ রেখেছি। ফোনে কথা বলেছি। কখনো একসঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিচালকের অফিসে সময় দিয়েছি। মাসকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রেও ছুটে গিয়েছি। মাদকাসক্ত মানুষের হাঁটাচলা, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমার পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন, যাঁরা একটা সময় মাদকাসক্ত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। সময় কাটিয়েছি। সত্যি বলতে, এতটা শ্রম আমি কবে, কোন চরিত্রের জন্য দিয়েছি, মনে নেই। এই চরিত্রের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, এ রকম ইমনকে আগে কেউ দেখেনি। আমাকে বলেছিল, অভিনয়ে বদল আনতে হবে। সেটা আমি এনেছি। ওটিটিতে প্রথম কাজ, সেই চ্যালেঞ্জও নিয়েছি।

প্রথম আলো :

‘মায়া’ থেকে আপনি একজন অভিনেতা হিসেবে কী শিখেছেন?

মামনুন ইমন : আপনি যদি হৃদয় নিংড়ে কোনো প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ করেন, সেটার জন্য পুরস্কার পাওয়া যায়, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়।

মামনুন ইমন
ছবি : প্রথম আলো
প্রথম আলো:

অভিনয়জগতে দুই দশকের পথচলা। এই পথচলায় কী ধরনের সংগ্রাম করতে হয়েছে, যা এখনো কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করেননি?

মামনুন ইমন : অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, হচ্ছেও। মনে হয়, এখনো পছন্দের পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। পছন্দের পরিচালকের তালিকাটাও দীর্ঘ, বলতে গেলে ১০ জন হবে, এর মধ্যে শুধু একজনের সঙ্গে কাজ করলাম, রায়হান রাফী। আমার কেন জানি মনে হয়, ভালো পরিচালকদের সঙ্গে যদি কাজ করতে পারি, ভালো কনটেন্টে যদি কাজ করতে পারি, মানুষ নতুন এক ইমনকে দেখতে পাবে। ভালো পরিচালকেরা নির্দিষ্ট কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে যদি আমি কাজ করতে পারি বা তাঁরা যদি আমাকে নিয়ে কাজ করেন, নিঃসন্দেহে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব।

প্রথম আলো :

আপনার সামনে এখন কোন ধরনের চরিত্র বা গল্প নিয়ে কাজ করার আগ্রহ বেশি?

মামনুন ইমন : অ্যাকশন সিনেমায় আগ্রহ বেশি। কাছাকাছি সময়ে ‘তুফান’ দেখলাম, এরপর ‘বরবাদ’—আমি তারও আগে ‘আকবর’ নামে একটা কাজ শুরু করেছিলাম। এখন যে অ্যাকশনের সংস্কৃতি চালু হয়েছে, এটা কিন্তু আমি আকবর দিয়ে শুরু করেছিলাম। দুর্ভাগ্য, করোনার কারণে তা থেমে যায়। আমার আফসোস, আমি যেটা ভাবি, সেটা অন্য কেউ করে ফেলে।

মামনুন ইমন
প্রথম আলো:

ওয়েব প্ল্যাটফর্মে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

মামনুন ইমন : অবশ্যই আরও করতে চাই। বিঞ্জ প্রথম তাদের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম আমাকে নিয়েছে। আমাকে তো ভালো প্ল্যাটফর্ম থেকে ডাকতে হবে। ভালো পরিচালক ডাকতে হবে, তাহলে ভালো কাজ উপহার দিতে পারব। ওটিটিতে যে আমি ভালো কাজ করতে পারব, মায়া মুক্তির আগে কেউ জানত না।

প্রথম আলো :

নতুন কাজের খবর বলুন

মামনুন ইমন : কয়েকটা ছবি তৈরি আছে। এর মধ্যে অঞ্জন আইচের একটা। আছে ‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’, ‘ময়নার চর’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনা পাওনা’ অবলম্বনেও ছবির কাজ শুরু করব।