চরিত্রটি হয়ে উঠতে ১৩ দিন উল্টো হয়ে ঝুলে থাকার মহড়া করতে হয়েছে

ইরানের ফজর চলচ্চিত্র উৎসবের ইস্টার্ন ভিস্তা বিভাগে পুরস্কার জেতা ধ্রুব হাসানের ‘ফাতিমা’ ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমিত সেনগুপ্ত। গত ২৪ মে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ছবিটি এখনো প্রদর্শিত হচ্ছে। এই সিনেমাসহ নানা প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
সুমিত সেনগুপ্ত
ছবি : সুমিতের সৌজন্যে

প্রথম আলো :

‘ফাতিমা’ ছবিটি এখনো প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে। ছবিটিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

অভিনয়ের দিক দিয়ে এটা আমার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। এই ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা যতটা রোমাঞ্চকর ছিল, তেমনি অন্য রকম একটা গর্বের ব্যাপারও ছিল। এই ছবিতে যে চরিত্রে অভিনয় করেছি, তাতে শহীদ রুমিকে উপস্থাপন করেছি। এই চরিত্র হয়ে উঠতে পরিচালকের সহযোগিতায় আমি অনেক পড়াশোনা করেছি। সব থেকে বড় যে কথা বলব, শুটিংয়ে গিয়ে আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়, সাত-আট দিন অত্যাচার করা হয়। এই ধরনের ক্যাম্পে যাঁদের রাখা হতো, তাঁদের খেতে দেওয়া হতো না। আমাকে চরিত্রটি হয়ে উঠতে ১৩ দিন উল্টো হয়ে ঝুলে থাকার মহড়া করতে হয়েছে। ছবিতে বেশির ভাগ দৃশ্যই ছিল উল্টো ঝুলে থাকার। এই চরিত্রের জন্য ১৯ দিন ভাত খাইনি। প্রোটিন-জাতীয় খাবারও খাইনি। শুধু এক পিস মাছ, ক্ষুধা লাগলে কোনো ফল খেতাম। আজ এসে আমি যে মানুষের যা-ই ভালোবাসা পাচ্ছি, তা আমার জীবনের সেই ১৯ দিনের কষ্ট ও সাধনার ফল। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, চরিত্রটা ২২-২৩ বছর বয়সে নিয়ে আসতে হবে। তিন মাস কঠোর পরিশ্রম করেছি। এক মাস পরপর ছবি তুলে দেখেছি, কেমন দেখাচ্ছে। আর অভিজ্ঞতা বলতে, ফারিণের (ছবির সহ-অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ) সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। মুক্তিযুদ্ধের যেটা আমাদের চেতনা ও অহংকার, সেটা নিয়ে কোনো একটা কাজ হবে, সেটার সঙ্গে থাকতে পারাটা আমার অনেক বড় পাওয়া। আমাকে এমন একটি কাজের অংশ করে নেওয়ার জন্য পরিচালককে ধন্যবাদ।

সুমিত সেনগুপ্ত
ছবি : সুমিতের সৌজন্যে

প্রথম আলো :

পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে শৈল্পিক ঘরানা—সব ক্ষেত্রেই আপনি আছেন। আপনি নিজে কোন ধরনের সিনেমায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য?

সব ধরনের চলচ্চিত্রে আমার কাজ করা হয়েছে। কিন্তু আমার সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা হচ্ছে, বাণিজ্যিক ঘরানার চলচ্চিত্রে কাজ করার।

প্রথম আলো :

চরিত্রের দৈর্ঘ্য নাকি সিনেমা বা সিরিজে গুরুত্ব—কোনটি বেশি প্রাধান্য পায়?

সিরিজের গুরুত্বের পাশাপাশি চরিত্রের গুরুত্ব কতখানি, তা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। বিষয়টা এমন না যে আমাকে পুরোটাতেই থাকতে হবে, তবে অল্প সময়ের উপস্থিতি হলেও চরিত্রটা যদি প্রভাব বিস্তার করে, গুরুত্ব পায় অনেকখানি, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

প্রথম আলো :

এ পর্যন্ত নিজের অভিনীত কোন চরিত্রটি বেশি প্রিয় এবং কেন?

আমি এখন পর্যন্ত যে কটি ছবিতে অভিনয় করেছি তার মধ্যে তিনটি চরিত্র সব থেকে পছন্দের। এর মধ্যে দামাল-এর ‘মুনির’; গোলরক্ষকের চরিত্র। ‘মিশন হান্টডাউন’-এর ‘জিল্লুর’, এরপর ‘পদ্মপুরাণ’-এর ‘কোবরা’ চরিত্রটা।

সুমিত সেনগুপ্ত
ছবি : সুমিতের সৌজন্যে

প্রথম আলো :

ইদানীং কোন সিনেমা বা সিরিজ দেখে মনে দাগ কাটল?

বিদেশি সিরিজ যেমন দেখি, দেশিও দেখি—কোনোটাই বাদ যায় না। যেখানেই কথা হোক, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ এখন পর্যন্ত আমার খুবই ভালো লেগেছে। এটা আমার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বিদেশি সিরিজ বলতে ‘ইন্সপেক্টর ঋষি’ ও ‘পঞ্চায়েত’।

প্রথম আলো :

ঈদের ছবি ‘ময়ূরাক্ষী’ ছাড়াও ‘এষা মার্ডার’-এ আপনি আছেন। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবিগুলো নিয়ে জানতে চাই?

এবার ঈদে আমার সিনেমা আসছে ‘ময়ূরাক্ষী’, তার পরপরই মুক্তি পাবে বসানি সানোয়ার পরিচালিত ‘এষা মার্ডার’। দুটি ছবিই দুই ধরনের। প্রথমটি খুবই বিনোদনধর্মী, এটাতে আমার চরিত্র একজন পরিচালকের। একজন পরিচালকের দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো গল্পটা দর্শক দেখবেন। অন্যটি খুনের রহস্য নিয়ে, কাজ করে খুব ভালো লাগছে। এখনো শুটিং চলছে। এর বাইরে আরেকটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ‘নিঃশব্দ’-এর কাজ করছি। এটি বানিয়েছেন শাহরিয়ার রহমান ও মিথুন। যেভাবে কাজ করছি, মনে হচ্ছে এটাও খুব ভালো হবে। এটা নিয়েও আমি বেশি আশাবাদী।

সুমিত সেনগুপ্ত
ছবি : সুমিতের সৌজন্যে

প্রথম আলো :

আপনার স্ত্রীও একজন অভিনয়শিল্পী। কোনো গল্পের প্রস্তাব পেলে নিজেদের মধ্যে কি আলোচনা হয়? একইভাবে তাঁর ক্ষেত্রেও কি এমনটা ঘটে?

আমার স্ত্রী নীলাঞ্জনা, ওর একটি কাজ দেখে খুবই ভালো লেগেছে। রায়হান রাফী পরিচালিত ওই ওয়েব ফিল্মের নাম ফ্রাইডে। সাধারণত আমার কাছে যখন কোনো কাজের প্রস্তাব আসে, প্রথম আলোচনাটা আমার স্ত্রীর সঙ্গে করি। এর বাইরে আমার দু-একজন মেন্টর আছে, তাদের সঙ্গেও আলাপ হয়। চরিত্রটা কেমন হবে, যখন আসলে কোনো কিছু খুঁজে পাই না, তখন সে আমাকে নানাভাবে পরামর্শ দেয়। এ-ও বলে, যদি এটার মতো করো, তাহলে ভালো হয়। একইভাবে সে-ও যখন তার কাজের প্রস্তাব পায়, আমার সঙ্গে আলোচনা করে। আমিও আমার সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।