আপনাকে সিনেমায় অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায় না। যা–ও দেখা গেছে, তার প্রায় সব কটি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায়। ‘৮৪০’–এ অভিনয়ের ক্ষেত্রে কতটা সম্পর্ক, কতটা গল্পের মুগ্ধতা কাজ করেছে?
মারজুক রাসেল : আমি তো সেই অর্থে একাডেমিক অভিনেতা নই, তাই অনিয়মিত। আসলে আমি যা যা করি, তার সবকিছুতেই অনিয়মিত, ২০২১ থেকে সেমি-নিয়মিত। কিশোরবেলার কৌতূহল আমারে ভিজ্যুয়াল মিডিয়ামে জড়াইতে উসকানি দিছে। পরে ২০০০ সালের দিকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ছবিয়াল’-এ যোগ দিলে টানা ১৫ বছর টেলিভিশন-সিনেমার পেছন-সামনের অ, আ, ক, খ শেখা হয়েছে। ফিলোসফিতে (দর্শনে) ভিন্নতা থাকলেও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে বন্ধু-বস-সম্পর্ক সব সময় অটুট, ৮৪০-এর ক্ষেত্রে গল্প ও ‘আমার সাম্প্রতিক পপুলারিটি’ কাজ করেছে,―কাজের সময় নিজেকে বহিরাগত মনে হয়নি।
চলচ্চিত্রে আপনার একটি সংলাপ ছিল, ‘রাজনীতিতে সব সময় অ্যাটাক চলে না...’
মারজুক রাসেল : ‘কিছুই রাজনীতির বাইরে না’—এই হিসাব খালি জীবনের নয়, মরণেরও; জীবন–মরণের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাজনীতি মানে ‘মনুষ্যগঠিত কয়েকটা স্থানীয় সংগঠনের কার্যক্রম’ নয়।
প্রথম আলো :
‘৮৪০’–এর প্রচারণায় আপনি প্রেক্ষাগৃহে গেছেন। দর্শকেরা ছবিটি দেখে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা বলেছেন, তা কী আপনার নজরে এসেছে?
মারজুক রাসেল : সরাসরি প্রতিক্রিয়া ছিল ‘ভালো হইছে’, ‘সমসাময়িক’, ‘ফানি’, ‘রিয়েলিস্টিক’—এ রকম আরও কিছু শব্দ ও শব্দের বাক্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইল/আইডি চালাই না, পেজ চালাই বইলা কিছু ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’ টাইপ আর মিশ্র প্রতিক্রিয়া নজরে এসেছে; এসে থাকতে পারে নাই, চইলাও গেছে।
প্রথম আলো :
এবার অন্য প্রসঙ্গ। একটা সময় আপনার লেখা গান নিয়মিতই আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, এরপর আসিফ আকবরসহ অন্যরাও গেয়েছেন। এখন গান লেখালেখিতে আপনাকে সেভাবে পাওয়া যায় না।
মারজুক রাসেল : শুরুতেই বলছিলাম, আমি যা যা করি, তার সবকিছুতেই অনিয়মিত, গানেও। ‘গানের কবিতা’ স্বেচ্ছায় এলে এখনো লিখি; অর্ডার বা ফরমাশে, বিষয় নির্বাচন করে দিলে লিখতে পারি না, অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে গেলে হাঁপাইয়া উঠি। গান হয়ে ওঠায় গীতিকবি, সুরকার, সংগীতশিল্পী, কণ্ঠশিল্পীদের সমন্বয় না হওয়ায় ‘কারও হয়ে’ বা ‘কারও জন্য’ আমার গান লেখার আগ্রহে ভাটা পড়ছে সত্যি; কিন্তু স্বেচ্ছায় আসা নানান লেখায় জোয়ার আর জোয়ার।
এখনো তো গান হচ্ছে, শোনা হয় কি? শোনা হলে গীতিকবিতা বা গায়কি ও সুরে মুগ্ধ হয়েছেন, এমন কেউ আছেন?
মারজুক রাসেল : জুনায়েদ ইভানের গান আর আলী হাসানের র্যাপে মুগ্ধ আছি দীর্ঘদিন। ‘তোরা বাতাস কর বাতাস কর’ গাওয়া সুমনের গায়কিতেও মুগ্ধ ছিলাম, যথাযথ পরিচর্যার অভাবে অকালপ্রয়াণ হইল তার!
প্রথম আলো :
যত দূর শুনেছি, আপনি যখন যা করতে চেয়েছেন, করেছেন। এরপরও এমন কিছু করতে চেয়েছেন কিন্তু করা হয়নি?
মারজুক রাসেল : অর্গানিক ‘ক্রিয়া’ ছাড়া অনেক ‘হাইব্রিড ক্রিয়া’–ও করতে হইছে, হইতেছে, হবে। নিজের লেখা কিছু লিরিক গাওয়ার চাওয়া আছে আমার অসুরা-কণ্ঠে,―মেশিন ভরসা।
প্রথম আলো :
ব্যক্তিজীবন প্রসঙ্গে আসি। শুনেছি, জেরিন নামের এক তরুণীর সঙ্গে আপনার প্রেম ছিল। এরপর তিনি বিয়ে করে সংসারী হলেও আপনি হননি। এই প্রেমই কি আপনাকে সংসারবিবাগী করেছে? আপনার কি সংসারী হতে ইচ্ছা করে না?
মারজুক রাসেল : একটু আগেও যা বলে এলাম, তা–ও আমার ব্যক্তিজীবনের বাইরের প্রসঙ্গ নয়। যা–ই হোক, ওইটা একতরফা ছিল, আমার তরফে, ওয়ান-সাইডেড। কিশোরবেলায় প্রকৃতি আমারে দিয়া ওই পাগলামি করাইয়া নিছিল। দাম্পত্য জীবন আর সংসারজীবন এক নয়। একলাও সংসার করা যায়। কাজকর্মে, দূরে একলা থাকলেও আমি সংসারবিবাগী নই—নানু, মা, বোন, ভাইদের নিয়েই আমাদের সংসার। দাম্পত্যে জড়াইতে প্রথম চেষ্টা করছি ১৯৯৬ সালেই, ম্যাচ হয় নাই।―ম্যাচ না করলে, সামাজিক আইন মাইনা, জোর কইরা ম্যাচ করাইয়া আজীবন বা বিচ্ছেদের পূর্বাপর ‘ক্যাচক্যাচ, ঘ্যাচঘ্যাচ’ কইরা যাওয়ায় আমি আগ্রহী নই। ইংরেজি ‘ম্যাচমেকিং’ শব্দবন্ধটা এই ক্ষেত্রে স্মরণীয়। ‘ম্যাচ’ করে না!
আপনার লেখা গান, জিঙ্গেল, বই অনেককে মুগ্ধ করেছে। কার বই আপনাকে বেশি প্রভাবিত করেছে, মুগ্ধ করেছে?
মারজুক রাসেল : অসংখ্যের লেখা। তাঁদের নাম উল্লেখ করে কাউকে ছোট, বড়, মেজ বানানোর চর্চা আমার ইদানীং নাই।
প্রথম আলো :
সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে অনেকে প্রকৃতি কিংবা নির্জনতা পছন্দ করেন। আপনার ক্ষেত্রে কোনটা?
মারজুক রাসেল : সৃজনশীল কাজের পরিবেশ, স্থান–কাল–পাত্রের এই সব মিথের কারাগার থেকে অনেক আগেই মুক্তি পাইছি। এখন আমার যা কিছু লেখা হয়, সব অভ্যাসবশত অভিজ্ঞতা, রিয়েল ইভেন্ট, কল্পনা, আড্ডা, পাঠ, দর্শন, শ্রবণ, খাওন, ঘুম, গোসল, প্রেম প্রভৃতির অংশগ্রহণে।
প্রথম আলো :
আপনার পরিবারের খবর বলুন...
মারজুক রাসেল : পরিবারে নানু, মা, দুই বোন, এক ভাই জীবিত আছে; আব্বা প্রয়াত হয়েও আছেন আমাদের সঙ্গে, আমাদের জিনে, অবয়বে (আমার শরীরকাঠামোয়, বিশেষ করে নাকের গড়নে), রক্ত-মাংস-মজ্জায়, উপদেশে, কথাবার্তায়, স্মৃতিতে।
প্রথম আলো :
আপনার জীবনের দর্শন কী, যা আপনি সব সময় মেনে চলেন?
মারজুক রাসেল : দুনিয়ার কয়েকটা আলোচিত-সমালোচিত দর্শন কারও প্রেসক্রিপশনে বা নিজে বুইঝা না বুইঝা পাঠ ও অল্প অল্প যাপন শেষে এখন প্রাচ্য ও লালনের ‘আপন ঘরের খবর নে না’, ‘পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে’ প্রেজেন্ট মোমেন্টে থাকার প্র্যাকটিস চালু, মানে যখন গোসল করতেছি, তখন গোসলই করতেছি; ভাবনায় গোসলের আগে-পরের কিছু নাই, যেইটা বিদেশে ‘মাইন্ডফুলনেস’ নামে পরিচিত।