গল্পে যা আছে, নাটকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়েছে

মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমে সমানতালে অভিনয় করছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। মাঝেমধ্যে পরিচালনায়ও দেখা যায় তাঁকে। আজ রাত আটটা ২০ মিনিটে এনটিভিতে প্রচারিত হবে এই অভিনয়শিল্পীর ধারাবাহিক নাটক ‘মা বাবা ভাই বোন’ এর শততম পর্ব। সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটির পরিচালক হাসান রেজাউল। নাটকটির সূত্রে রোববার সন্ধ্যায় কথা হয় শহীদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে

প্রশ্ন :

গাড়ির হর্ন শোনা যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন?

শিল্পকলা একডেমিতে, সেখানে আজ (রোববার) পঞ্চনারী আখ্যান নাটকের প্রদর্শনী। মার্চ মাসে সর্বশেষ শো হয়েছিল। এরপর আবার নাটকটি মঞ্চে আনা হয়েছে। আজ এ নাটকের ৭৬তম মঞ্চায়ন।

শহীদুজ্জামান সেলিম
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

দেশের বাইরেও তো এই নাটকের মঞ্চায়ন করেছেন। তো দেশ–বিদেশে দর্শকদের কাছ থেকে কতটা সাড়া পেয়েছেন?

৯ বছরে অনেকগুলো শো করেছি। এখন পর্যন্ত ফিডব্যাক দারুণ। এমনিতে তো মানুষ এখন নাটক কম দেখতে আসে। ছুটির দিনে দর্শক অনেক বেশি থাকে। ছুটির দিন ছাড়া দর্শক উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম থাকে। যারাই নাটকটি দেখেছে, মুগ্ধ হয়েই মিলনায়তন থেকে বের হয়েছে। নাটকটি অপছন্দের কোনো সুযোগও নেই।

শহীদুজ্জামান সেলিম
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

দীর্ঘ অভিনয়জীবন আপনার। অনেকের সঙ্গে কাজ করেছেন, অনেকে আপনার পরিচালনায় অভিনয় করেছেন। এ নাটকের নির্দেশক হিসেবে আপনি রোজী সিদ্দিকীকে কেন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বাছাই করেছেন?

এটা কাকতালীয়ভাবে ঘটেছে। ২০১২ সালের শেষ দিকে নাটকটি যখন তৈরি করি, তখন আমি মাসখানেক অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। ভাবলাম, এভাবে শুয়েবসে না থেকে প্রোডাকটিভ কাজ কী করা যায়। আমার বন্ধু হারুণ অর রশিদকে বাসায় ডেকে বললাম, একটা নাটক লিখে দাও। সে বলল, এটা তো ফোনেও বলা যায়, এভাবে ডাকার কী আছে। তারপর তিন–চার দিনের মধ্যে সে নাটকটি লিখে দেয়। দুই–তিন মাস পর নাটকটিও দাঁড়িয়ে গেল। মহড়া করেছি বসুন্ধরার বাসার কমিউনিটি সেন্টারে। ওই সময় একদিন বাচ্চু ভাই (নাসির উদ্দীন ইউসুফ) ও শিমূল আপা (শিমূল ইউসুফ) আমাকে দেখতে আসবেন। বললাম, একটা নাটক তৈরি করেছি, অসুস্থতার মধ্যে। নাটকটি দেখাই তাহলে আপনাদের। তাঁরা পুরো নাটকটি দেখলেন। এরপর শিমূল আপা বললেন, এটা ঢাকা থিয়েটারের নাটক হচ্ছে না কেন? আমি বললাম, ঢাকা থিয়েটার করলেই ঢাকা থিয়েটারের হবে। এরপরই নাটকটি নিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে গেলাম। ২০১৩ সালে ভার্জিনিয়াতে বঙ্গ সম্মেলেনে নাটকটি মঞ্চস্থ করি। ওখানে ভয়েজ অব আমেরিকায় আমাদের যত সিনিয়ররা ছিলেন কাফি খান, রোকেয়া আপা থেকে শুরু করে ভারতীয় অনেক দর্শক সেদিন নাটকটি দেখেন। সবার কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেলাম। বাচ্চু ভাইকে জানালাম বিষয়গুলো। তারপর ঢাকায় এসে নিয়মিত শো করার জন্য আরও গুছিয়ে নাটকটি তৈরি করলাম। আফজাল ভাইকে (আফজাল হোসেন) শিল্প নির্দেশনার দায়িত্ব দিলাম। পোশাক পরিকল্পনা করল নাসরীন নাহার, যা এর আগে আমি একাই করেছিলাম। শিমূল আপা ও চন্দন মিলে মিউজিকটা ঠিক করে। এরপর টানা ১৫ দিন মহড়া করা হয় শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে প্রতিদিন শিমূল আপা, বাচ্চু ভাই, আফজাল ভাই থাকতেন। আমরা ঠিকঠাক করে নিলাম। বাংলাদেশের নাট্যকর্মীদের সবাই নাটকটি দেখেছেন। রোজীকে সিলেক্ট করার বিষয়টি মোটেও এমন না, আমার স্ত্রী বলেই। আমরা যখন নাটকটি নিয়ে কাজ করছিলাম, রোজী চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছেন।

শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সিদ্দিকী
ছবি : শহীদুজ্জামান সেলিমের সৌজন্যে

প্রশ্ন :

মঞ্চনাটকের দর্শক উপস্থিতি নিয়ে একরকম অতৃপ্তির কথাও শোনা যায়...

ভালো মঞ্চনাটকে দর্শক উপস্থিতি সব সময় ভালো হয়। নতুন নাটকের ক্ষেত্রে হয়তো আনুপাতিক হারে কম থাকে। কাজের দিনগুলোতেও নাটকপ্রেমী যারা সময় পায়, শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক দেখতে আসে। এখন প্রচার–প্রচারণাও বেশি। এতে অনেকে নাটক দেখতেও উদ্বুদ্ধ হয়। তবে কিছুদিন আগে দর্শক উপস্থিতি একটু কম ছিল।

প্রশ্ন :

এনটিভিতে আপনার অভিনীত ‘মা বাবা ভাই বোন’ নাটকের শততম পর্ব প্রচারিত হচ্ছে। অনেককে এমনও বলতে শুনি, ইদানীং বড় ধারাবাহিকে গল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন না অনেক পরিচালক।

এখনকার ধারাবাহিক নাটকে টেনেটুনে গল্প লম্বা করার প্রবণতা থাকলেও এটাতে তা করা হয়নি। কারণ, মা বাবা ভাই বোন একটি সুলিখিত নাটক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দারুণ একটি উপন্যাস। গল্পে যা আছে, নাটকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। পরিচালক তরুণ হলেও প্রপার জাস্টিস করতে পেরেছে। না করতে পারারও কিছু নেই, কারণ, এই পরিচালক শুরুর দিকে সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হকের লেখা গল্প ও উপন্যাস নিয়ে নাটক করেছে। সাহিত্যনির্ভর নাটকে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা ভালো। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ওখানে আমরা যারা আছি, যাদের একটু পড়াশোনার অভ্যাস আছে—তারাও ভিন্ন কিছু হলে লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করি। সুযোগ পেলে নাটকের পর্বগুলো দেখি। আমি খুব কম পর্ব মিস করেছি। পরিচালক নিজেও তার কাজের ব্যাপারে খুব সচেতন।

শহীদুজ্জামান সেলিম

প্রশ্ন :

আপনার তো আরেকটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছে?

এটাও উপন্যাসনির্ভর, হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি উপন্যাস থেকে তৈরি। পারভেজ আমিন নাটকের পরিচালক। দুই বছর আগে শুটিং করেছি। দীপ্ত টেলিভিশনে চলছে নাটকটি।

প্রশ্ন :

কিছুদিন আগে একসঙ্গে আপনার দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে।

কাছাকাছি সময়ে আমি বেশ কয়েকটা ভালো ছবিতে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে ‘পরাণ’ একটি ভালো ছবি ছিল। এর বাইরে ‘সূবর্ণভূমি’, ‘সোনার চর’, ‘আনন্দ অশ্রু’ এর মতো সুপরিচালিত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমার অভিনীত ‘সাইকো’ ছবির দুর্বলতা হচ্ছে, মুক্তির সময়টা। যে সময়ে সাইকো মুক্তি পায়, ওই সময়ে ‘দিন, দ্য ডে’ ও ‘পরাণ’ মুক্তির কারণে খুব সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু এই ছবিটি যদি আলাদা সময়ে মুক্তি পেত, তাহলে কিন্তু দর্শকপ্রিয়তা ঠিকই পেত এবং ব্যবসাসফল ছবিও হতে পারত। পরাণ এত ভালো করেছে, অন্য ছবিগুলো এসবের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। দিন দ্য ডের মতো প্রোডাকশনও ম্লান।

প্রশ্ন :

ছবিতে নিয়মিত হচ্ছেন?

কোনো পরিচালক যখন মনে করে যে আমাকে তাঁর ছবিতে লাগবে, তখনই কাজ করি। এখন ‘জামদানি’ নামে একটি ছবি করছি। চরিত্র যদি পছন্দের হয় এবং সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো হয়, তবেই কাজ করি। যেহেতু অভিনয়ই করি, সুতরং যেকোনো মাধ্যমে কাজ করতে ভালো লাগে।