নজরুলের আরও দুই গান ‘হে নামাজী’ ও ‘রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ ঝিম্ ঘন দেয়া বরষে’ প্রকাশ করেছেন।
ঋতুরাজ বৈদ্য: দুই গানেরই মিউজিক করেছেন খন্দকার গালিব। ওনার সঙ্গেই আমি নিয়মিত গান করি। ট্র্যাডিশনাল (প্রথাগত) অ্যারেঞ্জমেন্টের (আয়োজন) বাইরে একটু আলাদাভাবে গানগুলো করার চেষ্টা করেছি। শুধু গানটা কভার করাই আমাদের কাজ নয়, গানটা মানুষের কাছে পৌঁছানোও আমাদের কাজ। এই প্রজন্মের শ্রোতারা যাতে গানগুলো শুনতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য ওইভাবে গানগুলো করা। ‘হে নামাজী’ গানটি রোজার সময় প্রকাশ করার পরিকল্পনা ছিল, বিভিন্ন কারণে রিলিজ হতে একটু দেরি হয়েছে। আশুরার দিন রিলিজ করেছিলাম। গানটা ভালোই রেসপন্স পাচ্ছি। খন্দকার গালিবের চ্যানেলে ২০ হাজারের মতো ভিউ হয়েছে। আমরা তো কেউই ইনফ্লুয়েন্সার নই, এগুলো সে ধরনের গানও নয়, যেগুলো তাড়াতাড়ি অনেক ভিউ পাবে। ‘রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ ঝিম্ ঘন দেয়া বরষে’ গানটা কয়েক দিন আগেই রিলিজ হয়েছে। ডুয়েট করেছি, আমার সঙ্গে গেয়েছেন অন্তরা রহমান। প্রথমবার অন্তরার সঙ্গে কাজ করলাম, খুব ভালো লেগেছে। নতুন আঙ্গিকে গানটা করার চেষ্টা ছিল।
নজরুলের প্রয়াণদিবসে কোনো গান প্রকাশ করছেন?
ঋতুরাজ বৈদ্য: নাহ্। কোনো গান রিলিজের পরিকল্পনা করছি না। কালকে (আজ) কোনো আয়োজনে গাইছি না।
হালের তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে নজরুল কতটা ছড়াচ্ছেন?
ঋতুরাজ বৈদ্য: গান দিয়েই তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়াটা তুলনামূলকভাবে সহজ। ওনার কয়েকটা জাগরণী গান তরুণদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। তরুণদের অনেকে গানগুলো শোনেন। তবে নিয়মিত শোনার মতো প্রোগ্রাম আয়োজন খুব একটা হয় না। সে জন্য তরুণদের কাছে পৌঁছানো একটু কঠিন। তারপরও কোক স্টুডিও বাংলায় আমার ‘বুলবুলি’ গানটি করার সৌভাগ্য হয়েছিল। ওটার মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছু মিলিয়ে তরুণদের কাছে অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। কাজী নজরুল ইসলাম তারুণ্যের কবি, ওনার গান অবশ্যই তরুণদের কাছে প্রাসঙ্গিক। তবে ওনার গান পৌঁছানোর দায়িত্ব আসলে আমাদের। যাঁরা কাজী নজরুল ইসলামকে ধারণ করেন, যাঁরা গবেষণা করেন, ওনাদের দায়িত্ব হলো ওনার গানের সুর ও কথা ঠিকঠাক রেখে, তরুণেরা যে ধরনের মিউজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট পছন্দ করেন, সে অ্যারেঞ্জমেন্ট করলে আরও বেশি প্রচার করা সম্ভব হবে।
নজরুলের গানের ফিউশন নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেন। ফিউশনকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ঋতুরাজ বৈদ্য: সমালোচনা করে খুব একটা লাভ হবে না। আমরা যারা কাজী নজরুল ইসলামকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই, তারা যদি বলি এভাবে না হলে গান কোনোভাবে করাই যাবে না, তখন আসলে আমরাই কাজী নজরুল ইসলামকে নতুন প্রজন্মের কাছে মেরে ফেলব। তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য যেভাবেই হোক, যে মাধ্যমেই হোক পৌঁছাতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটে, তাদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে। আগে যেভাবে অ্যারেঞ্জ করা হতো, সেভাবে করলে আসলে আর পৌঁছাবে না। ফলে অ্যারেঞ্জমেন্ট, ফিউশনের ক্ষেত্রে কথা ও সুর যদি অক্ষুণ্ন রাখা যায়, তারপর এই জেনারেশন যে ধরনের সংগীত আয়োজন চায়, সে অনুযায়ী করাই বেটার।
তরুণ শিল্পীদের মধ্যে নজরুলের গান নিয়ে আগ্রহ কেমন?
ঋতুরাজ বৈদ্য: নজরুলের গান ঠিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের ট্রেনিং প্রয়োজন। প্রশিক্ষিত ভোকালিস্ট না হলে নজরুলের গান করা কঠিন। সে জন্য মানুষজন করতে চায় না। আমি বলব, আমাদের ভোকালিস্টরা যেন প্রশিক্ষিত হন, গান গাওয়াটা শিখে আসেন। সে ক্ষেত্রে তরুণদের মধ্যে অটোমেটিক্যালি আরও বেশি নজরুলসংগীত গাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। গানগুলো গাইতে পারার মধ্যে একধরনের মজা আছে। গানের কথাগুলো চমৎকার, সুর ব্রিলিয়ান্ট। গাইতে পারলে বেশি আনন্দটা পাওয়া যায়।