একদিন চুনসহ ৩০টি পান খেতে হয়েছে

ঈদের সিনেমা ‘টগর’ নিয়েই এ মুহূর্তে ব্যস্ত পূজা চেরী। গতকাল এসেছে সিনেমাটির টিজার। সিনেমাটির প্রচারে যাওয়ার সময় টগরসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো

প্রথম আলো:

শোনা যাচ্ছে, ঈদে বেশ কয়েকটি সিনেমা আসছে, আপনার চিন্তা হচ্ছে না?

একদমই চিন্তা করছি না। আমার ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা হলে হয়তো চিন্তা হতো। পোড়ামন ২ সিনেমার সময় যেমনটা হয়েছিল। চিন্তায় তখন ঘুমাতেও পারিনি। তবে এখন সিনেমাটি নিয়ে ওভার কনফিডেন্টও নই। আমি খুশি, একসঙ্গে অনেক সিনেমা মুক্তির তালিকায় রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে আছি। এই রোমাঞ্চ কাজ করছে।

প্রথম আলো:

একসঙ্গে একাধিক সিনেমার মুক্তিকে আপনি ইতিবাচকভাবে দেখছেন?

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এখন বদলে যাচ্ছে। এখানে যত বেশি সিনেমা মুক্তি পাবে, দর্শক তত নতুনত্ব পাবে। সিনেমার দর্শক বাড়বে। অন্য একটি সিনেমার দর্শক বাড়লে আমার সিনেমার দর্শকও বাড়বে। এখানে আমার কারও সঙ্গে কোনো তুলনা নেই। আমি চাই সবাই এগিয়ে যাক, ভালো করুক। বেশি বেশি সিনেমা হোক। তাহলে আমাদের পরিসর বড় হবে। তখন প্রযোজকেরা আরও নিয়মিতভাবে কাজ করবেন।

পূজা চেরী
কবির হোসেন
প্রথম আলো:

‘টগর’-এর টিজারে আপনার চরিত্র নিয়ে একটা রহস্য রাখা হয়েছে...

সিনেমার গল্পটি আমার পছন্দের। গল্পের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত হয়েছি, অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে, তারপরই আমরা কাজ করেছি। সেখানে আমার চরিত্রটি একদমই আলাদা। দর্শক হয়তো এটুকু বুঝতে পারবে, মেয়েটি বঞ্চিত হয়, লাঞ্ছিত হয়, কিন্তু মুখ বুজে সহ্য করে না, প্রতিবাদী একটি মেয়ে; এসব সত্ত্বেও আসল রহস্য দর্শক সিনেমা হলে গিয়েই দেখুক।

প্রথম আলো:

শুধু আপনার চরিত্রটিই কি দর্শকদের আগ্রহী করার জন্য যথেষ্ট?

এখানে কিন্তু দর্শক শুধু আমার চরিত্র দেখে আগ্রহী হবে না। সিনেমার গল্প দেখবে। সিনেমার গান, লোকেশন, অ্যাকশন, অন্যান্য চরিত্র, তাদের অভিনয়—ফুল প্যাকেজে দর্শক খুশি হলেই কিন্তু সিনেমাটি দেখবে। এটুকুই বলব, দর্শকদের খুশি করার সব উপকরণ আমাদের সিনেমায় রয়েছে। এটাই আমাদের আস্থার জায়গা।

প্রথম আলো:

সিনেমার জন্য আপনাকে নাকি অনেক পান খেতে হয়েছে?

সিনেমাটির চিত্রনাট্য পাওয়ার পর পরিচালকসহ আমরা বসে আরও কিছু পরিকল্পনা করেছি। না হলে হয়তো আমি এই সিনেমায় অভিনয় করতাম না। সিনেমার প্রয়োজনে আমার আলাদা কথা বলার ধরন, আলাদা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, মেয়েটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। সেগুলো মাথায় রেখে একসময় মনে হয়, আমার চরিত্রটি পান খেতে পারে। পুরো গল্পে মুখে পান থাকবে, ঠোঁট লাল হয়ে থাকবে—এমনটা দর্শক দেখবেন। পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শ করে এটা আমিই যুক্ত করেছি চরিত্রে। সব সময় ডজন ডজন পান এনে রাখা হতো। প্রথম দিকে পান খেতে পারছিলাম না, পিক ফেলতে পারছিলাম না। এগুলো শিখতে হয়েছে। পান খেয়ে ওই সময়ে আমি আর কিছুই খেতে পারিনি। পুরো মুখের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। একদিন চুনসহ ৩০টি পান খেতে হয়েছে। এখন পান খেতে আর ভয় পাই না।

প্রথম আলো:

সিনেমার টিমওয়ার্ককে কীভাবে দেখেন?

আমার কাছে সিনেমাকে সব সময় মনে হয় মা-বাবার মতো। তাঁদের যেমন সব সময় পাশে থাকা দরকার, তাঁদের কেউ অসুস্থ হলে সেবাযত্ন দিতে হয়, তাহলেই তাঁরা ভালো থাকেন। তাঁদের জন্য যেমন নিঃস্বার্থভাবে কিছু করা জরুরি, তেমনি আমার সিনেমার কাজের জন্য। আমি জানি কোন কাজটি টিমের করার কথা; কিন্তু আমি সেখানে নিজেই কখনো কখনো যুক্ত হই। এর কারণ, ভালো না হলে দিন শেষে দর্শক আমাকেই কথা শোনাবে। গালি দেবে। আবার ভালো করলে আমাকে নিয়েই তালি দেবে।

প্রথম আলো :

আদর আজাদের সঙ্গে জুটি হয়ে পরপর বেশ কয়েকটি কাজ করলেন। কারণ কী?

বিশেষ কোনো কারণ নেই। একসঙ্গে নাকফুল, লিপস্টিক সিনেমার করার পর পরিচালক, প্রযোজকেরা আমাদের নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। দর্শকও আমাদের দেখতে চায় সে কারণেই।

পূজা চেরী
কবির হোসেন
প্রথম আলো:

ঈদের ছবির প্রচারণায় একসঙ্গে সবাই নেমে পড়েছেন। এতে করে কোনো বাধা তৈরি হয় কি না?

আগে সব সিনেমার জন্য শুভকামনা। এখন প্রতিটি সিনেমার প্রমোশনের আলাদা শিডিউল রয়েছে। দেখা গেল, একসঙ্গে একেক সিনেমার টিজার, ট্রেলার, গান মুক্তি পাচ্ছে। এগুলোকে আমি সাংঘর্ষিক মনে করি না। চাই, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক। উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকুক।

প্রথম আলো:

সিনেমায় আপনার চরিত্রের নাম জয়িতা। চরিত্রটির সঙ্গে আপনার কোনো মিল আছে?

একটা মিল শতভাগ আছে। আমার আসল নামও জয়িতা। নামটা আমার মা রেখেছিলেন। শৈশবে আমাকে সবাই জয়িতা বলেই ডাকত। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত নাম ছিল, জয়িতা রায় পূজা। পরে বাবা নামটা পূজা চেরী রয় করে দেন। তবে বেশির ভাগই পূজা নামে ডাকে, এ ছাড়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা জয়িতা নামে ডাকে। কারও কাছে আমি পূজামণিও।

প্রথম আলো:

গত বছরের ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘লিপস্টিক’ থেকে এবারের ‘টগর’; এই জার্নির মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কী ছিল?

আমি মায়ের কথা বলব। দুটি সিনেমার সময়েই মাকে খুব করে কাছে চেয়েছি। লিপস্টিক-এর শুটিংয়ের শুরুতে মা ছিলেন। শেষে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। মনে হয়েছে, সিনেমাজুড়েই মা আমার পাশে ছিলেন।

পূজা চেরী
কবির হোসেন
প্রথম আলো:

ঈদের অন্য কোনো সিনেমা দেখার পরিকল্পনা আছে?

আমি আগে নিজের সিনেমার প্রচার করতে চাই। নিজের সিনেমাই আগে দেখব। এখন নিজের সিনেমা ছাড়া ভাবতে চাই না। তবে অবশ্যই সবার জন্য শুভকামনা।

প্রথম আলো:

ঈদে শাকিব খানের মুখোমুখি হচ্ছেন। ‘গলুই’ সিনেমার পর আপনাদের আবার কবে একসঙ্গে দেখা যাবে?

এটা নিয়ে এখন কিছুই বলতে চাই না। এখন আমি টগর সিনেমার প্রচার নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। যখন বলার মতো কিছু হবে, তখন বলব। এখন মাথায় শুধু নিজের সিনেমা।

আরও পড়ুন