এই উপহার আমার জন্য আশীর্বাদ

সিঁথি সাহাছবি: সিঁথি সাহার সৌজন্য
প্রায় এক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়েছেন। এরই মধ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের একটি হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহা। মা হওয়ার পর নানা প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার গায়িকার সঙ্গে কথা বলল বিনোদন

প্রশ্ন :

এখন কেমন আছেন?

সবার দোয়ায় দুজনই ভালো আছি। বাচ্চার বয়স আজ (গত বৃহস্পতিবার) ২২ দিন হয়ে গেল। মনে হচ্ছে, আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে ও। গান গাইলে আমার মুখে দিকে কী সুন্দর করে তাকিয়ে থাকে! নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই জয়ী পৃথিবীতে এসেছে। আমি নিয়মিত চেকআপ করার জন্যই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। গিয়েই ব্যথা ওঠে। চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। ওই দিনই সন্তানের জন্ম হয়েছে। এ কারণে দুজনই প্রথম দিকে শারীরিকভাবে ভালো ছিলাম না।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

শুনেছি, নিউজিল্যান্ডে সন্তান জন্মের সময় একাই ছিলেন...

আমি গত আগস্ট মাসে নিউজিল্যান্ডে আসি। তখন থেকেই একা ছিলাম। সন্তান জন্মের পর এখন আমার ছোট ভাই এসেছে। সন্তান জন্মের সময় একা একা ভয় পাচ্ছিলাম। পরে দেশের আপনজন, কাছের মানুষের সঙ্গে ঘন ঘন কথা বলছিলাম। ফোনে সবাই আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। তবে এখানে পরিচিত একজন খুবই সহযোগিতা করেছেন। বাচ্চা সুস্থ অবস্থায় পৃথিবীতে আসবে কি না, এটি নিয়ে খুব ভয়ে ছিলাম।

উষা উথুপের সঙ্গে সিঁথি সাহা
ছবি: সিঁথি সাহার সৌজন্য

প্রশ্ন :

কী কারণে ভয়ে ছিলেন?

যখন অন্তঃসত্ত্বা, ওই সময়ই আমার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। ওই অবস্থায় অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট হয়েছে। এ কারণে চিকিৎসক মনে করেছিলেন, বাচ্চা নেওয়ার বিষয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ক্যানসারের ওষুধও বন্ধ করতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। তবে অনেক যুদ্ধের পর একটা সময় চিকিৎসকের কাছ থেকে জানতে পারি, ক্যানসার থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। কিছুদিন ওষুধ খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

প্রশ্ন :

সব মিলিয়ে এখন কেমন লাগছে?

আমার কাছে মনে হয়েছে, মা হওয়া আমার জন্য আশীর্বাদ। কয়েক বছর মানসিকভাবে খারাপ অবস্থায় ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে অনেক কিছু হারিয়েছি, অনেক কিছু পেয়েছিও। তার মধ্যে আমার সন্তান শ্রেষ্ঠ উপহার। ক্যানসারের মতো এত বড় ঝুঁকি জয় করে এই উপহার আমার জন্য আশীর্বাদ।

সিঁথি সাহা
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কখন বুঝতে পেরেছিলেন আপনি ক্যানসারে আক্রান্ত?

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। আমি দুর্গাপূজা উপলক্ষে কলকাতায় উষা উত্থপের সঙ্গে গান করতে গিয়েছিলাম। শুটিং চলাকালে আমি বুঝতে পারি শরীরে টিউমারের উপস্থিতি। ঢাকায় এসে পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে। হাসপাতালে যখন বিষয়টি জানলাম, তখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছিল। হাত-পা আর চলছিল না। বাসার ফেরার পথে গাড়িতে বসে অঝোরে কেঁদেছি। ওই দিন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আমার ছোট ভাই ও দু-একজন কাছের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। মা–বাবাকে বলিনি। জানতাম, এমন রোগের খবরে মা–বাবা কেঁদেকেটে শেষ হয়ে যাবেন। তবে ক্যানসারমুক্ত হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে জানিয়েছিলাম। শুনে মা–বাবা দুজনই কেঁদেছিলেন।

প্রশ্ন :

সংগীতচর্চা চালিয়ে গেছেন?

হুম। তবে কখনো শক্ত থাকার চেষ্টা করেছি, আবার কখনো ভেঙে পড়েছি। সিঙ্গাপুরে যখন চিকিৎসা নিচ্ছিলাম, কখনো কখনো হতাশায় ভুগেছি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। ঢাকায় থাকার সময় কাজের মধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি। কারণ, বাসায় থাকলে হতাশ লাগত। অসুখের খবর বেশির ভাগ মানুষই তো জানতেন না। ওই অবস্থায় স্টেজ শো করতাম, গান রেকর্ডিং করতাম। যে দু-একজন জানতেন, তাঁরা বলতেন ক্যানসার নিয়ে আমি কীভাবে এসব করি! হাসিখুশি থেকে গান করে গেছি। কারণ, আমার হাসি আরও দশজনকে হাসায়।

সিঁথি সাহা
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

দেশে ফিরবেন কবে?

আমার শরীর, বাচ্চা ঠিকঠাক থাকলে নভেম্বরের শেষের দিকে দেশে ফেরার ইচ্ছা। ডিসেম্বরের শুরু থেকে নিয়মিত গানে ফিরতে পারব। আমার অসুখ, প্রেগন্যান্সি—এসবের মধ্যেও কিন্তু গান বন্ধ করিনি। শুনলে তো অনেকে অবাক হয়, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দুবাইয়ে গিয়ে গানের শুটিং করেছি।