শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম শুটিং, নিশ্চয় তাঁকে কাছ থেকে জানার সুযোগ হচ্ছে?
জান্নাতুল ঐশী : শাকিব খান কেন দেশের এত বড় তারকা, দিনকে দিন কেন তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন, সোলজার–এর শুটিংয়ে গিয়ে নতুনভাবে উপলব্ধি হলো। আমার মনে হয়েছে, শাকিব খান অসম্ভব পেশাদার, পরিশ্রমী এবং নিষ্ঠাবান একজন শিল্পী। কাজের ব্যাপারে তিনি অনেক বেশি ফোকাসড। তাঁর একটা বিষয় খুবই ইতিবাচক, শুটিং সেটে অদ্ভুত রকম একটা নিশ্চয়তা নিয়ে তিনি ঢোকেন। তিনি জানেন তিনি কী চান। যেটা চেয়েছিলেন, সেটা আদায় করেই সেট ছাড়েন। আমার মনে হয়, এসব কারণেই তিনি আজকের শাকিব খান। এত বড় একজন তারকা, তারপরও দেখছি, যেকোনো দৃশ্যের আগে পরিচালক ও ডিওপির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে নেন। বারবার মহড়া করেন। খুব ঠান্ডা মাথার অভিনেতা। যতবার শট দেওয়ার দরকার দেবেন, যতক্ষণ না মনমতো হচ্ছে।
প্রথম আলো :
দর্শক এখানে কোন ধরনের ঐশীকে দেখতে পাবে?
জান্নাতুল ঐশী : এটা আপাতত সারপ্রাইজ থাকুক। যেহেতু সিনেমা উপভোগের বিষয়, তাই আগেভাগে বলে চমকটা নষ্ট করতে চাই না। আমি চাই ফার্স্টলুক, টিজার আসার পর তখন মানুষ দেখতে পাক। আমার মনে হয়, শোনা থেকেও তারাও দেখতে পছন্দ করবে।
প্রথম আলো :
এ সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে আপনার পাশাপাশি রয়েছেন আরেক নায়িকা তানজিন তিশা।
জান্নাতুল ঐশী : নায়িকার চেয়ে আমার কাছে অভিনেতা বা অভিনয়শিল্পী টার্মটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা এ ছবিতে কাজ করছেন, সবার চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। তানজিন তিশা যথেষ্ট সফল একজন অভিনয়শিল্পী, এত দিন নাটক করেছেন। আমাদের সবার জন্য এটা আনন্দের সংবাদ, তিনি সিনেমায় এলেন, বড় পর্দায় তাঁকে আমরা দেখতে পাব। পাশাপাশি অনেক লম্বা সময় ধরে দেখি না, যাঁদের অনুপস্থিতি আমরা অনুভব করি, এ সিনেমায় সে রকম কিছু অভিনয়শিল্পীও আছেন।
প্রথম আলো :
অনেক সময় বলা হয়, দুই-তিন নায়িকা মানেই তুলনা বা প্রতিযোগিতা—আপনার কাছে এটা কতটা সত্যি?
জান্নাতুল ঐশী : এটা আমি অস্বীকার করব না যে তুলনা হয়েছে, হয়, হচ্ছে এবং হবেও। আমি এ–ও বলব না, সব সময় এটা সঠিক। আমার পক্ষে এটা সম্ভব না, যারা তুলনা করছে তাদের গিয়ে থামাব। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, প্রত্যেকের হাতে স্মার্ট ফোন, ফেসবুক—তাই সবাই সবার মতামত দিতে বসে যায়। এখন তো আবার ফেসবুক মনিটাইজেশন এবং অন্যান্য কিছুর কারণে দুই নায়িকার মধ্যে একটু তুলনা করে অনেকেই একটা ভিডিও আপলোড করে। চটকদার শিরোনামে সেসব ভিডিওর কিছু ভিউজ, কনটেন্ট ক্রিয়েটররা একটু টাকাপয়সা পায়। তবে প্রতিযোগিতায় আমি বিশ্বাসী না, প্রতিযোগিতা আমি করে এসেছি সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে। ফিল্ম ইজ আ পিচ অব আর্ট, এখানে যারা যতটুকু অংশ, যার চরিত্রের দৈর্ঘ্য যতটুকু, তাঁকে ততটাই ফুটিয়ে তুলতে হয়। এখানে কেউ কারও প্রতিযোগী না, প্রত্যেকেরই নিজস্ব ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। প্রত্যেকের চরিত্রের নিজস্ব শক্তি আছে, যা দিয়ে তারা মানুষের মনে জায়গা করে নেয়।
‘নূর’ ছবির খবর কী?
জান্নাতুল ঐশী : এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। প্রযোজক-পরিচালকেরা ভালো বলতে পারবেন।
প্রথম আলো :
আপনি বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত করা সিনেমাগুলোর মধ্যে কোন চরিত্রটি আপনার সবচেয়ে প্রিয়?
জান্নাতুল ঐশী : আসলে সবগুলো চরিত্রই আমার পছন্দের। কোনোটার সঙ্গে কোনোটার তুলনা করতে পারব না। একেকটা চরিত্রে অভিনয় করে আমি একেক রকম আনন্দ পেয়েছি, অভিজ্ঞতা হয়েছে। একেক রকমের ব্রেইন স্ট্রর্মিংয়ের মধ্য দিয়ে গেছি। একটা চরিত্রের কথা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। এই মুহূর্ত যদি বলতে হয়, প্রভাবিত হয়ে আমি বলব, সোলজার ছবির চরিত্রের কথা। আমি বেশ উপভোগ করছি।
প্রথম আলো :
নতুন কাজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্ব দেন—গল্প, পরিচালক না সহ–অভিনেতা?
জান্নাতুল ঐশী : গল্প, পরিচালক, সহশিল্পী—একটা কাজের জন্য সবই গুরুত্বপূর্ণ। একটার ওপরে ভরসা করে আমি কোনো কাজ চূড়ান্ত করতে পারি না। আমার মনে হয়, এটা কোনো শিল্পীই পারে না। আমার কাজের তালিকা দেখলেও এটা বোঝা যায়।
প্রথম আলো :
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ থেকে বড় পর্দা—এ যাত্রায় সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?
জান্নাতুল ঐশী : মানুষের জীবনে সবই আশীর্বাদ। খারাপ সময়ও মানুষের জীবনে আশীর্বাদ, এটা মানুষকে অন্যভাবে তৈরি করে। খারাপ সময়ের অভিজ্ঞতার চেয়ে বড় শিক্ষক, বড় বন্ধু আর কিছু হয় না। দুনিয়াতে সবকিছুকে সম্মানের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। একই সঙ্গে সবকিছু মূল্যায়ন করা উচিত।
ভবিষ্যতে কেমন ধরনের চরিত্র বা গল্পে নিজেকে দেখতে চান?
জান্নাতুল ঐশী : সবাই আমাকে পাশের বাড়ির মেয়ের চরিত্রে ভাবে। কারণ, বাস্তবে আমি একটু সফট স্পোকেন। কিন্তু আমি এমন কোনো চরিত্রে কাজ করতে চাই, যেটা আমাকে চ্যালেঞ্জ করে, যে স্বভাবের মানুষ আমি না, যে চরিত্রের জন্য আমাকে শারীরিকভাবে ট্রান্সফর্ম করতে হবে, যেখানে মানসিকভাবে নিজেকে অন্যভাবে তৈরি করতে হবে। আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁদের বক্তব্য এ রকম, একটা মিষ্টি মেয়ে লাগবে, একটা শান্তশিষ্ট মেয়ে লাগবে, ঐশী আছে তো। তবে আমি চাই, আমাকে চ্যালেঞ্জ করে, এমন চরিত্র দেওয়া হোক।
সমালোচনা কীভাবে নেন?
জান্নাতুল ঐশী : গঠনমূলক সমালোচনা ইতিবাচকভাবে নিই। বোঝার চেষ্টা করি, আমার কী ভুল, কোথায় শিখতে হবে। আর অহেতুক সমালোচনা নিয়ে কিছুই ভাবি না। এর পেছনে এত শক্তি খরচ করাও সম্ভব নয়। সবকিছুর একটা সীমা যেমন থাকে, তেমনি শক্তিরও সীমা থাকে, যেটা ইতিবাচকভাবে খরচ করা উচিত।
প্রথম আলো :
অভিনয়ের জগতে আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
জান্নাতুল ঐশী : প্রত্যেক সফল অভিনেতা-অভিনেত্রী আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন, করেন সব সময়। কারণ, প্রত্যেকেরই সফলতার পেছনে একটা গল্প থাকে, জার্নি আলাদা থাকে এবং সফল যারা তারা প্রত্যেকে আলাদা বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছে। তাই সফল সবার জার্নি ও গল্প আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
প্রথম আলো :
সিনেমা আপনার কাছে কী—পেশা, ভালোবাসা না আত্মপ্রকাশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম?
জান্নাতুল ঐশী : শুরুতে যখন কাজ করেছিলাম, তখন সিনেমা ছিল আমার শখ। কাজ করতে গিয়ে এটা এখন আমার পেশায় পরিণত হয়েছে।
প্রথম আলো :
পাঁচ বছর পর ঐশীকে কোথায় দেখতে চান?
জান্নাতুল ঐশী : নিজেকে সুখী একজন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই, যার কোনো আফসোস থাকবে না, যার কোনো না-পাওয়ার গ্লানি থাকবে না। আমি চাই, আমার মনপ্রাণজুড়ে শুধু শান্তি থাকুক। দুশ্চিন্তামুক্ত একটা শান্তির জীবন চাই।