‘স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার, হয়ে গেলাম নায়ক’

জয় চৌধুরীছবি : নায়কের সৌজন্যে
গেল ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে জয় চৌধুরী অভিনীত সিনেমা ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’। শুরুতে প্রেক্ষাগৃহ বেশি না পেলেও পরে আস্তে আস্তে বেড়েছে তা। ক্রিকেটার হতে চাওয়া জয় এখন পুরোদস্তুর নায়ক। সিনেমা নিয়ে তাঁর রয়েছে অনেক স্বপ্ন। সবকিছু নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’।

প্রশ্ন :

‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ ছবিটি কেমন সাড়া ফেলেছে?

শুরুতে প্রেক্ষাগৃহ কম থাকলেও পরে বাড়তে থাকে। যাঁরাই ছবিটি দেখেছেন, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অল্প কথায় যদি বলতে হয়, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছি।

প্রশ্ন :

এক যুগ হলো চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

আমার অভিনয় করার শখ বা ইচ্ছা কোনোটাই ছিল না। একদিন মনোয়ার হোসেন ডিপজল এসে জানালেন, আমাকে নিয়ে তিনি একটি বাংলা সিনেমা করতে চান। তাঁর ইচ্ছাতেই সিনেমায় অভিনয় করা। তারপর ডিপজল আমাকে তাঁর ফুলবাড়িয়ার বাড়িতে এক বছর ধরে অভিনয়, নাচ, ফাইটের জন্য গ্রুমিং করিয়েছিলেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় ২০১২ সালে এফ আই মানিকের ‘এক জবান’ দিয়ে অভিনয়ের শুরু। তখন সিনেমায় অভিনয় নিয়ে আগ্রহ না থাকলেও এখন অভিনয়টা রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।

জয় চৌধুরী
ছবি : নায়কের সৌজন্যে

প্রশ্ন :

সিনেমায় অভিনয়ের স্বপ্নটা ঠিক কবে দেখেছেন?

স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার, হয়ে গেলাম নায়ক। তবে সিনেমায় অভিনয় করার স্বপ্ন আমার কখনোই ছিল না। কিন্তু বাংলা সিনেমার প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল অনেক আগে থেকেই। আমার সব সময় ভালো লাগত বাংলা সিনেমা। ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার সঙ্গে বাংলা সিনেমা দেখতাম। বাংলা সিনেমার যে হিরো হব, এ রকম কোনো স্বপ্ন, ধ্যান বা চিন্তাভাবনা আমার কখনোই ছিল না। দুই-তিনটি সিনেমা মুক্তির পর এখন এটাই আমার স্বপ্ন, ধ্যানজ্ঞান হয়ে গেছে।

প্রশ্ন :

এ পর্যন্ত কতটি ছবিতে কাজ করেছেন? এর মধ্যে নিজের কোন কাজটা বেশি ভালো লেগেছে?

এখন পর্যন্ত ১৭টি সিনেমার শুটিং শেষ করেছি। এর মধ্যে সাতটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সংখ্যার দিক দিয়ে ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ ৮ নম্বর। এর আগে মুক্তি পেয়েছে ‘এক জবান’, ‘ক্ষণিকের ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসলে দোষ কি তাতে’, ‘আজব প্রেম’, ‘হিটম্যান’, ‘চিনি বিবি’, ‘অন্তর জ্বালা’। এর মধ্যে ‘হিটম্যান’ সিনেমাতে আমি অনেক বেশি দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। এরপর ‘অন্তর জ্বালা’ ও ‘চিনি বিবি’তে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। এই সিনেমাগুলোয় আমার চরিত্রের জন্য প্রশংসা পেয়েছি। দর্শকের পছন্দের হিরো হওয়ার জন্য যে বিষয় আর উপাদান প্রয়োজন ছিল, তার সবকিছু এসব সিনেমায় ছিল। প্রত্যেক অভিনেতার জন্য তাঁর প্রতিটি সিনেমাই স্বপ্নের হয়ে থাকে। অনেক সময় আমাদের গল্প নির্বাচনে ভুল হয়। অনেক সময় আমরা অনেক বেশি এক্সাইটেড হয়ে যাই, যার জন্য হুটহাট করে অনেক ধরনের সিনেমার শুটিং শুরু করে দিই।

‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ চলচ্চিত্রে অপু বিশ্বাস ও জয় চৌধুরী
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

সামনে কী কী কাজ চূড়ান্ত হয়ে আছে?

আমার কয়েকটি কাজ চূড়ান্ত হয়ে আছে। নভেম্বরে বিগ বাজেটের নতুন একটা সিনেমা আছে। পুরো সিনেমাটির শুটিং লন্ডনে হবে। এ ছাড়া আরেকটা সিনেমার কথা চলছে। আগামী মাসে আমেরিকাতে আমার একটি শো আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমার নতুন কয়েকটি সিনেমার পরিকল্পনা চলছে। এ ছাড়া আমার প্রায় নয়টি সিনেমা সেন্সর ছাড়পত্র পেয়ে মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘অমানুষ হল মানুষ’, ‘আয়না’, ‘এক পশলা বৃষ্টি’, ‘কাকতাড়ুয়া’, ‘অবাস্তব ভালোবাসা’।

প্রশ্ন :

সিনেমা নিয়ে এখনকার স্বপ্ন কী?

আমি সব সময় কোনো না কোনো শিল্পীকে অনুসরণ করি। সালমান শাহর অভিনয় আমার কাছে দুর্দান্ত লাগে। তাঁর প্রতিটি সংলাপ ডেলিভারি, বিশেষ করে কমেডির দৃশ্যে তাঁর অভিনয় ভালো লাগত। তাই আমিও এমন কিছু কাজ করতে চাই, যাতে পরবর্তী সময়ে হিরো হিসেবে যারা আসবে, তারা যেন কোনো না কোনো দিক থেকে আমাকে মিস করে। আমাকে অনুসরণ করে। আমি এই বিষয় চিন্তা করে সিনেমা করি। আর আমি প্রতিবার মনে করি, যে সিনেমায় অভিনয় করছি, সেটি আমার জীবনের শেষ সিনেমা। এরপর নতুন কোনো সিনেমা না-ও করতে পারি। তাই এই সিনেমায় অভিনয়ে আমি এমন কিছু করতে চাই, যাতে মানুষ যত দিন সিনেমাটি দেখবে, তত দিন যেন আমাকে মিস করে।

প্রশ্ন :

অভিনয়ে নিজের কোন ক্ষেত্রটায় উন্নতি করতে চান?

একজন শিল্পীর শেখার কোনো শেষ নেই। মৃত্যু পর্যন্ত শিখতে পারেন, আসলে শেখা উচিত। কারণ, প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা সময়ে সবকিছু আরও আধুনিক হচ্ছে। সিনেমায় দর্শকদের টেস্টের পরিবর্তন হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে এবং দর্শকদের টেস্টের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে সব শিল্পীরই নিজেদের পরিবর্তন করে প্রতিটি কাজ করা উচিত। নাচ কিংবা অভিনয় অথবা ফাইট, সেটা যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক, আমি আমার এই জায়গাগুলোতে আরও পরিপক্ব হতে চাই। যাতে দর্শক যে আশা নিয়ে আমার সিনেমা দেখবেন, সে আশা পূরণ হয়। তাঁরা যেন আশাহত না হন। সব সময় যেন তাঁদের ভালোবাসায় আমি সিক্ত হতে পারি। এর জন্য প্রতিটি কাজেই আমি আমাকে নতুনভাবে আপডেট করি।