প্রথম আলো :
কয়েকবার ফোন করে পাওয়া গেল...
তানিয়া বৃষ্টি: শুটিং করছি। তখন ক্যামেরার সামনে ছিলাম। লাইট ক্যামেরা প্রস্তুত। তখন আর ফোন ধরার পরিবেশ ছিল না।
প্রথম আলো :
সহশিল্পী কে?
তানিয়া বৃষ্টি: মোশাররফ করিম ভাই, সামান্তাসহ অনেকেই আছে।
প্রথম আলো :
মোশাররফ করিমের সঙ্গে ‘জায়গায় খায় জায়গায় ব্রেক’ ‘অভিনেতা’সহ একাধিক জনপ্রিয় নাটকে জুটি হয়েছেন, তবু পর্দায় আপনাদের কম দেখা যায়...
তানিয়া বৃষ্টি: পুরোপুরি ঠিক নয়। আমাদের কাজ কম হয়ছে, এটা বলা যাবে না। মাঝে মোশাররফ ভাই ওটিটি ও সিনেমার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ ছাড়া দেশের বাইরে ছিলেন। নাটকে তিনি সময় দিতে পারছিলেন না। যে কারণে কাজ কিছুটা কম হয়েছে।
প্রথম আলো :
সহশিল্পী হিসেবে মোশাররফ করিম কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে?
তানিয়া বৃষ্টি: ভাইয়ের (মোশাররফ করিম) সঙ্গে শুটিং করতে সব সময় অপেক্ষা করি। কারণ, কোনো একটি চরিত্র কীভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, কীভাবে আলাদা করা যায়, এগুলো নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনি সেরা। তিনি ডায়ালগসহ ব্যতিক্রম অনেক ইনপুট দিয়ে থাকেন। অনস্ত্রিন, অফস্ক্রিন সব সময় ভাইয়ের কাছ থেকে শিখি। তিনি পুরোটাই একটা জ্ঞানের ভান্ডার, তাঁর সঙ্গে কাজ না হলেও শুধু বসে থেকে বহু কিছু শেখা যায়।
প্রথম আলো :
কাজের বাইরে আড্ডায় আপনাদের কী নিয়ে কথা হয়?
তানিয়া বৃষ্টি: মোশাররফ ভাই প্রচুর পড়েন। আমিও কিছুটা পড়াশোনা করি। যে কারণে কোন বইটি পড়লে আমার জন্য ভালো হবে, সেগুলো নিয়ে কথা হয়। আবার আমাদের পছন্দের কাজ কোনটি, কেন পছন্দ করেছি, কীভাবে অভিনয় করব, অভিনয় ক্যারিয়ারে কীভাবে কাজ করব, এমন নানা প্রসঙ্গে কথা হয়। ঘুরেফিরে মিডিয়াকেন্দ্রিক কথাবার্তাই বেশি হয়।
প্রথম আলো :
অভিনয় কখনো ছেড়ে দিতে চান?
তানিয়া বৃষ্টি: আমি অলরাউন্ডার না। আমার মনে হয় অভিনয় ও সংসার একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি না। এটা আমার কাছে মনে হয়। যে কারণে বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে। তবে এখনই যেহেতু বিয়ে করছি না, পরে কী হয়, সেটা সময়ই বলে দেবে। তখনকার সিদ্ধান্ত তখনই নিতে চাই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার কথা বলছি।
প্রথম আলো :
অনেক তারকাই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, আপনি কী ভাবছেন?
তানিয়া বৃষ্টি: আমি যখন মিডিয়া বা সবকিছু থেকে দূরে সরে যাব, তখন হয়তো দেশের বাইরে চলে যেতে পারি। দেশে থাকার ইচ্ছাটা আমার সেভাবে নেই, এটা সত্য কথা।
প্রথম আলো :
কাজের চেয়ে এখন ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ ভাইরাল হয় বেশি।
তানিয়া বৃষ্টি: এখানে তো ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ নিয়ে টানাটানি হয় বেশি। এই যে আমি নাকি বিয়ে করলেই কাজ-সংসার একসঙ্গে দুটি চালিয়ে যেতে পারব না। এটা নিয়ে অনেকেই মনগড়া খবর প্রকাশ করেছে। হয়তো অনেকেই বুঝতে পারেনি, কোন অর্থে বা কেন বলেছি। যে কারণে অনেকেই একই খবরের আলাদা আলাদা শিরোনাম দেন। তখন অনেক সময় মন খারাপ হয়। তারা হয়তো মানুষের কৌতূহল জাগানোর জন্য, ভাইরাল করার জন্য এটা করে থাকেন। বোঝাবুঝির জায়গাটা ক্লিয়ার থাকলে কারোরই কোনো ক্ষতি হবে না। তখন আর সামান্য একটা শব্দ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি হবে না।
প্রথম আলো :
অনেকে ভাইরাল হওয়ার জন্যও অনেক কথা বলেন।
তানিয়া বৃষ্টি: এমন অনেকেই আছে, কিন্তু এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। কোনো মানুষ ভাইরাল হওয়ার জন্য কিছু বলছে বা লিখছে, এটা বোঝা যায়। আর কে ভাইরাল হতে চায় না, সেটাও বোঝা যায়। এখানে যে যেটা চাচ্ছেন, সেটা বুঝে খবর প্রকাশ করলেই ভালো।
প্রথম আলো :
১৪ বছরের ক্যারিয়ারে কখনো ভাইরাল হতে চাননি?
তানিয়া বৃষ্টি: আমি কখনোই ভাইরাল হতে চাই না। আমার মাথায় ভাইরালের চিন্তা আসেই না। যদি কখনো দেখি ক্যারিয়ার নেই, তারপরও কথা বলে ভাইরাল হতে আসব না। তখন বলব না আমাকে ভাইরাল করেন, আমাকে নিয়ে লেখালেখি করেন। দেখেছি, বেশির ভাগ সময় মানুষ নেতিবাচক জিনিসই ভাইরাল করে। দেখা যায়, ভালো কিছু লিখলেও অনেক সময় সেটা নেগেটিভ অর্থে ভাইরাল করে। এমন অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা আমাকে আঘাত করেছে। এই জায়গা থেকে আমি চাই না ভাইরাল হতে। নেগেটিভ ও পজিটিভ যাই হোক না কেন, আমি কোনো ভাইরালের মধ্যেই থাকতে চাই না।
প্রথম আলো :
জয়িতা নামের নারীর সংগ্রাম নিয়ে ‘জয়িতার দিনরাত্রি’। নারী হিসেবে অভিনয় অঙ্গনে আপনাকে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে? জয়িতার সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পেয়েছেন?
তানিয়া বৃষ্টি: প্রতিটা নারীর জীবনেই কিছু না কিছু স্ট্রাগল রয়েছে। নারী হিসেবে নাটকের জয়িতার সঙ্গেও আমার কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে। আজ আমি অভিনয়শিল্পী হিসেবে যে জায়গায় রয়েছি, এখানে আসতেও আমাকে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এক লাফে তো আর আসিনি। গল্পের মতো আমাকেও ঢাকা শহরে এসে টিকে থাকতে হয়েছে। লাইফে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে কিন্তু একটা ধাক্কা খেতে হয়। ছেলের চেয়ে মেয়েদের স্ট্রাগল অনেক আলাদা। নারীকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয় বেশি। অনেক কিছু ফেস করতে হয়। মামা খালু না থাকলে এই সমস্যা আরও বেশি। জয়িতার কষ্টটা আমি রিলেট করতে পেরেছি, কষ্টটা আমাকে কাঁদিয়েছে। কারণ, আমারও শুরুতে স্ট্রাগল আছে।
প্রথম আলো :
শুরুর সেই সংগ্রামের গল্প একটু শেয়ার করবেন?
তানিয়া বৃষ্টি: খুব বেশি বলা যাবে না। সামন্যই বলি। প্যাশনের জায়গা থেকেই অভিনয়ে আসা। তখন আমার বয়স ছিল কম, ১৮ হয়নি। ইন্টার পরীক্ষা দিয়েই এসেছি। তখন ভালোমন্দ কম বুঝতাম, মানুষ চিনতাম না। কখনো কোনো গল্প শুনে মনোযোগ দিয়েই কাজটি করতে চেয়েছি, সময় দিয়েছি। হয়তো দেখা গেল নায়ক চাইছেন না, তখন আমাকে বাদ দেওয়া হলো। এই কষ্ট আমাকে বহুবার কাঁদিয়েছে। এগুলো আমার সঙ্গে অনেক হয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে বহুবার আমি ধাক্কা খেয়েছি। মন ভাঙলেও আশাহত হইনি। নিজের ওপর আস্থা ছিল। এর মধ্য দিয়ে অভিনয়টা একটু একটু করে শিখেছি। সবকিছু মিলিয়ে আমি তানিয়া বৃষ্টি।