‘এই হাত দিয়ে শেখ সাহেবরে ভোট দিয়েছি, এই হাত দিয়ে আপনারেও ভোট দেব’

 ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দিয়ে অভিনয় শুরু চিত্রনায়ক ফেরদৌসের। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবি তাঁকে দেশের আপামর মানুষের মনে জায়গা করে দেয়। বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে অভিনয়ে এরই মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছেন ২৫ বছর। কয়েক বছর ধরে অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় এই অভিনেতা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে সারা দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে জনসংযোগে বেশ সরব দেখা গেছে তাঁকে। অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকা–১০ আসনে নৌকা প্রতীকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচন শেষে গত মঙ্গলবার দুপুরে বিনোদনের সঙ্গে কথা হয় অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ ফেরদৌস আহমেদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের

প্রথম আলো:

প্রথমবার নির্বাচন করেই সংসদ সদস্য হলেন। নতুন এ যাত্রায় কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?

আমি শতভাগ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বিশ্বাস রেখেছেন, এ দেশের মানুষও আমার প্রতি আস্থা রাখবেন। সে অনুসারে সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমি মাঠে নেমেছিলাম। মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। তাই বলে এতটা ভালোবাসেন, এটা তাঁদের সঙ্গে দেখা না হলে বুঝতাম না।

প্রথম আলো:

একটা সময় শুধু পর্দায় আপনাকে দেখা যেত। আপনাকে দেখার জন্য মানুষ প্রেক্ষাগৃহে ছুটে যেতেন। নির্বাচন ঘিরে আপনি মানুষের কাছে ঘরে ঘরে ছুটে গেছেন...

এই যে কাছাকাছি যাওয়ার পর একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি, তাঁরা আমাদের শিল্পীদের অনেক খোঁজখবর রাখেন। আমাদের নিয়ে নানা ধরনের যেসব খবর প্রকাশিত হয়, এসব নিয়ে যে তাঁরা জাজ করেন একটা মানুষকে, এটা ভালোভাবে টের পেয়েছি। দেখলাম তাঁরা আমার সব খবর রাখেন। আমাকে একটা কথা বলেছেন, ‘আপনি যে এখন ভোট চাইতে এসেছেন, নির্বাচিত হলেও আসবেন।’ আমি কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পরদিনই গেছি। কাউকে না জানিয়ে, দলের কয়েকজনকে নিয়ে আমার মতো করে তাঁদের সবার সঙ্গে দেখা করেছি, যাঁদের আমি কথা দিয়েছি। তাঁরা পরে আমাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন। এই যে কথা দিয়ে এসেছি, কথা রাখার ব্যাপারটা—এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একেকজন আমাকে কথা দিয়েছেন যে তাঁরা ভোট দিতে যাবেন। হুইলচেয়ারে করে বেশ কয়েকজন ভোট দিতে গেছেন। দেখে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। আমি একজনকে বলেছিলাম, আপনি চলে যান। তিনি বলেছেন, ‘না, আমি জীবনের শেষ ভোটটা তোমাকে দিয়ে যাব।’ একজন তো বললেন, ‘এই হাত দিয়ে শেখ সাহেবরে ভোট দিছি, এই হাত দিয়ে আপনারেও ভোট দেব।’ আমি এমনিতে আবেগপ্রবণ মানুষ। এসব শুনে সত্যিই কান্না চলে এসেছে। নির্বাচনী প্রচারে আমি কিন্তু বেশির ভাগ সময় সানগ্লাস পরে থাকতাম।

ফেরদৌস আহমেদ
প্রথম আলো:

কারণ কী?

কারণ, মানুষ এমন এমন কথা বলতেন, যেগুলো সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। আমি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তাম। কান্না আসত। আমি কান্না লুকিয়ে রাখতে সানগ্লাস পরতাম। কল্পনাতীত ব্যাপার, মানুষজন কীভাবে আমাকে ভালোবাসেন। মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, ‘আপনাকে ভোট দেব।’ নতুন ভোটাররা বলছেন, ‘আমি নায়ককে ভোট দেব।’ এক ভদ্রমহিলা অনেক ভিড়ের মধ্যে এসে আমাকে বলছিলেন, ‘আমি আপনাকে ভোট দিতে চাই, কিন্তু আমি তো চুয়াডাঙ্গার ভোটার। আমাকে একটু বদলাইয়ে এখানে নিয়ে আসেন।’ কত ধরনের মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি এক অসুস্থ মানুষকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য একটু দোয়া করো, যেন আর কয়েকটা দিন বেঁচে থাকি। তোমারে ভোট দিতে পারি।’ সব ঘটনাই বাস্তব। আমার চোখের সামনে ঘটেছে প্রতিটি দিন। এসব আমাকে সত্যিই অনেক বেশি আবেগপ্রবণ করেছে।

প্রথম আলো:

দুই যুগের অভিনয়জীবনে আপনার জন্য এসব অভিজ্ঞতা একেবারে নতুন। নির্বাচনে না এলে কখনো এটা বুঝতেন না নিশ্চয়ই!

একদমই তা–ই। আমি তো জানতাম না, কোনো শিল্পীই এমনটা জানতেন না। লম্বা সময় ধরে তাঁরা আমাকে পর্দায় দেখেছেন। পর্দায় দেখে ভালোবেসেছেন। কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হলে সেলফি তুলেছেন, অটোগ্রাফ নিয়েছেন, এ–ই যা। কিন্তু তাঁদের মনের মধ্যে যে আমি বসবাস করি, এই বসবাসের ব্যাপারটা নির্বাচনে না এলে কখনোই জানা হতো না। এক মা অবলীলায় আমার মুখে হাত দিয়ে, গায়ে আদর করে দিয়েছেন। কেউ মনে করছেন, আমি তাঁর সন্তান, কেউ ভাই বলে এসে জড়িয়ে ধরেছেন। ছোট ছোট বাচ্চা এসে হাত ধরে টেনেছে, বাসায় নিয়ে যাবে বলে। কত মানুষ যে আমাকে দেখে টেনে একদম তাঁদের শোবার ঘরে নিয়ে বসিয়েছেন! আমি ফেরদৌস, তাঁদের নায়ক ফেরদৌস, এটাই তাঁদের কাছে অনেক বড় কিছু।

ফেরদৌস আহমেদ
প্রথম আলো:

এটা কার ক্ষমতা, রাজনীতিবিদ ফেরদৌসের নাকি শিল্পীর?

এত দিন তো শিল্পীর ক্ষমতা ছিল। শিল্পী হয়েই সবার সঙ্গে আমার পরিচয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মানুষ ফেরদৌসের ক্ষমতা। ব্যক্তি আমাকে নিয়ে তাঁরা অনেক খুশি। এমন একটা বাসায় গেছি, যাঁরা সবাই হিজাব করেন, কিন্তু আমাকে তাঁরা ঘরের ভেতরে নিয়ে গেছেন, বসিয়েছেন।

প্রথম আলো:

তার মানে এখানে আপনি শিল্পীদের চলন–বলনের ব্যাপারেও একটা বার্তা দিচ্ছেন?

শিল্পীদের সব সময় একটা আদর্শিক জায়গায় রাখেন সাধারণ মানুষেরা। তাই তো চলন–বলনে অনেক সাবধানী হতে হবে। একজন শিল্পীকে প্রকৃত অর্থে একজন ভালো মানুষ হতে হবে। এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু শিল্পী হলাম, কাজ করে চলে গেলাম, মানুষ বাহ্বা দিল, মনে রাখল; কিন্তু লম্বা সময় ধরে মানুষের হৃদয়ে বসবাস করতে হলে আপনাকে অনেক ভালো মানুষ হতে হবে। এটাই সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়িত হয় বলে মনে করছি। ভোটের মাঠে আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা ভীষণ ভীষণ কাজে দিয়েছে। যাঁরা শিল্পী, তাঁদের কথাবার্তা, চলন–বলনে অনেক সচেতন থাকতে হবে। আমরা শিল্পীরা যেহেতু মানুষের জন্য কাজ করি, সেই আমরা যদি আমাদের ওপর মানুষের বিশ্বাস আনতে না পারি, ভরসার জায়গা দিতে না পারি, তাহলে তো পরিপূর্ণ সফলতা এল না।

ফেরদৌস আহমেদ
প্রথম আলো:

সংসদ নির্বাচন করলেন। দুই যুগের বেশি অভিনয়জীবনে সক্রিয় রাজনীতির চিন্তাভাবনা আপনার প্রথম কবে মাথায় এসেছিল?

আমার কাছে রাজনীতি আবেগের জায়গা। রাজনীতিবিদ হওয়া মানে হলো, রাজার নীতি—যিনি নীতিনির্ধারক হবেন। আমি কিন্তু নীতিনির্ধারক হতে আসিনি। আমি এখানে এসেছি মানুষকে ভালোবাসার স্বার্থে, মানুষের সঙ্গে থাকতে। আমার কাছে মনে হয়েছে, নীতিনির্ধারক হওয়াটা কঠিন ব্যাপার, সময়সাপেক্ষ একটা ব্যাপার। কিন্তু মানুষের কাছে গিয়ে মানুষকে ভালোবাসা, বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করা, সেবক হওয়া, জনস্বার্থে কাজ করা, মানুষের কল্যাণে কাজ করার বিষয়গুলো আমার মধ্যে পারিবারিকভাবেই আছে। আমি কিছু নীতিতে বিশ্বাসী। আমার দ্বারা কারও কোনো ক্ষতি হোক, এটা আমি কোনো দিন চাইনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন কাজ শুরু করলাম, ২০০৮ সাল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে করতাম। ২০১৫ সাল থেকে গুরুত্ব দিয়ে করা শুরু করলাম। আমার শ্বশুরও দুইবারের সংসদ সদস্য ছিলেন; আওয়ামী লীগের। শ্বশুরকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, ভালো মানুষ, গণমানুষের নেতা।

আমার তখন মনে হয়েছিল, এবার যদি আমাকে দায়িত্ব দেন, আমি নেব। কিন্তু সাহস করে বলিনি। তারপর ফারুক (চিত্রনায়ক ফারুক) ভাইকে যখন দিলেন, তখন সাহসটা বাড়ল। এরপর শূন্য আসনে উপনির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলাম। মনে হলো চাই। মনে হয়েছিল, ফারুক ভাই ছিলেন, আমাদের কেউ একজন হলে ভালো হয়। কিন্তু সেখানে আরাফাত এলেন। ভালো। আমি আরাফাতের জন্য প্রচারণা করলাম। কাজ করলাম। এবার গিয়ে মনে হলো যে এবার চাইব। সবকিছুরই আসলে একটা সঠিক সময় দরকার। এবারই সেই সঠিক সময় মনে হয়েছে। সে কারণেই হয়তো এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ আসনটা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক আসন।

প্রথম আলো:

 ঢাকা শহরের মধ্যে আপনি যে আসনে নির্বাচন করেছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। এই আসনের মানুষজনের সঙ্গে আপনার সেভাবে যোগসূত্র ছিল না। তারপরও কীভাবে এটা সম্ভব করলেন?

ধানমন্ডির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল সব সময়। আমি যেহেতু ঢাকা কলেজে পড়তাম, সিটি কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমার মেয়েরা সানবিমসে পড়ে। সে হিসেবে একটা যোগাযোগ আছে। বন্ধুবান্ধবও অনেকে আছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সারা বাংলাদেশের মানুষ আমাকে চেনেন। নতুন করে তো কোথাও পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। একজন প্রতিযোগীকে তো পরিচয় করিয়ে দিতে হয়, অমুক এলাকার প্রার্থী। তাই আমি যখন প্রচারে গিয়েছি, সবারই একটা কথা ছিল, ‘আপনি আবার আসবেন তো, থাকবেন তো আমাদের সঙ্গে?’ এই আস্থা যখন তাঁদের দিয়েছি, তাঁরাও আমাকে তাঁদের মতো করে গ্রহণ করে নিয়েছেন। এখানে শিল্পী ব্যাপারটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে। ওইটাই তো আমি, আমার পরিচয়। তারপরও এই যে নতুন পথে হাঁটছি, এটা তো শিল্পী হওয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

ভোট কেন্দ্রে ফেরদৌস আহমেদ
ছবি: ইউএনবি
প্রথম আলো:

আপনি সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশ ও ভারতে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রের ব্যস্ততার মধ্যেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কি আপনার যোগাযোগের সূত্রপাত ২০০৮ সালে?

হ্যাঁ, ২০০৮ সালে শুরু। ২০০১ সালে যখন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলাম, তখন পিএম বললেন, ‘তুমি কি মেইন হিরো হিসেবে পেলে?’ কারণ, দেখতে আমাকে ছোট লাগত। (হাসি) আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনাকে ছবিটা দেখতে পাঠাব।’ বড় একটা ক্যাসেট পাঠালাম। এরপর অল্প অল্প যোগাযোগ। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তো, আমিও জটিলতার মধ্যে পড়ে গেলাম। যা হোক, তখন আমি কলকাতায় বেশি কাজ করা শুরু করলাম। ও রকম করে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকত না। যেহেতু আমি ২০০১ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। একটু একপেশে করে রাখত। এরপর ২০০৮ সালে পিএমের সঙ্গে সম্পর্কটা ধারাবাহিক হলো আরকি। ছোট আপার সঙ্গেও আমার দারুণ সম্পর্ক। দুই বোনের সঙ্গে তো দারুণ বোঝাপড়া। তাঁদের দুজনকে বড় আপা, ছোট আপাই বলি। নেত্রী তো মায়ের মতোই আদর করেন। যেহেতু সম্পর্কের একটা নাম দিতে হয়, সেহেতু বড় আপা, ছোট আপা। বড় আপারা তো মায়ের মতোই হন। ছোটবেলায় আমি তো আমার বড় আপাকে মা–ই বলতাম। এই দুই আপাও তো সেই মমতার জায়গায় আছেন। জাতীয় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যখন বললাম, হয়েও যেতে পারে, দুজনই হাসলেন। তাঁদের দুজনের কাছ থেকেই যে ভালোবাসা, মায়া, আদর পাই, এটাতে আমি অসম্ভব রকম সৌভাগ্যবান। হাজার লোকের মধ্যেও যদি আমাকে দেখেন, একটু দাঁড়াবেন, এরপর একটা হাসি দেবেনই। আমার যখন ভারতের ভিসা নিয়ে সমস্যা হলো, তখনো দুই আপা পাশে ছিলেন। তাঁদের দুজনের খুনসুটি, ‘ভালোই হয়েছে, আমাদের নায়ক আমাদের এখানে থাকবে।’ তাঁরা গ্রেট হিউম্যান বিং। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, একজন প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বোন—এসবের ঊর্দ্ধে তাঁরা অসাধারণ ভালো মানুষ, যা আমাকে খুবই স্পর্শ করে।

প্রথম আলো:

সংসদ সদস্য হিসেবে দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে আপনি কী কী কাজ করার স্বপ্ন দেখেন? একই সঙ্গে জানতে চাই, নির্বাচনী প্রচারণায় আপনি আপনার আসনের আনাচকানাচে গিয়েছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। অভিজাত এই এলাকার প্রধান সমস্যা কী কী বলে আপনার মনে হয়েছে? বা আপনাকে তাঁরা জানিয়েছেন কি না?

আমি যেকোনো পরিচালকের সিনেমায় কাজ করার সময়, আমার কথা আমি বলতাম। কেউ শুনতেন, কেউ শুনতেন না। সংসদেও আমি আমার হৃদয়ের কথাগুলো বলব। আমার নির্বাচনী আসনের মানুষের পক্ষ থেকে যা যা আমি দেখেছি, যা যা আমাকে তাঁরা বলেছেন, সবই সংসদে তুলে ধরার চেষ্টা করব। অনেক বড় সমস্যা হচ্ছে, ধানমন্ডি–নিউমার্কেটের সমস্যা এক রকম, ট্রাফিক জ্যাম। ধানমন্ডি লেকের সংস্কারের একটা ব্যাপার আছে। মাঠগুলো আরও আধুনিক করা, স্মার্ট মাঠ করে তোলা সম্ভব। প্রচুর রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট আছে, এগুলোর সঠিক ব্যবহার দরকার। আবার হাজারীবাগের ওদিকের কিছু কাজ, রাস্তাঘাটের সমস্যা, পানির সমস্যা, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি থেকে আপাতত যেগুলো সমাধান করা সম্ভব, তা করব। সুদূরপ্রসারী কাজের পরিকল্পনাও করতে হবে। এত দিন আমার ১৩–১৪ জনের একটা পরিবার ছিল। এখন প্রায় ২০ লাখ পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি। তাদের সবার কথাবার্তা শুনে, তারপর বুঝে–জেনেই তো সামনের দিকে যেতে হবে। আমার ওখানে অনেক নেতা–কর্মী আছেন, যাঁরা আমাকে খুব সুন্দরভাবে মেনে নিয়েছেন। ওখানে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস আছেন, তিনি আমার আরেক ভাই। তিনি ভাই ও বন্ধু—দুটোই। যেকোনো ভিড়ের মধ্যেও তিনি আমার হাতটা ধরে থাকতেন। আমি সব সময় চাই, তাঁর এই হাত যেন সব সময় আমার সঙ্গে থাকে। আমার ওখানে এমনও নেতা আছেন, যাঁরা ৪৫ বছর ধরে রাজনীতি করছেন, কেউ কেউ মনোনয়নপ্রাপ্য। তাঁদের সবাইকে বড় আপা যখন বলেছেন আমার জন্য কাজ করতে, তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁদের সবাইকে নিয়ে এগোতে চাই। আমার শিল্পী বন্ধুরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। অরুণা বিশ্বাস, রিয়াজ, তারিন, অপু বিশ্বাস, নিপুণ, সুইটি, সাবা, ভাবনা, সজল থেকে শুরু করে অনেকেই। ফেরদৌসী মজুমদার, রামেন্দু মজুমদার, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, হানিফ সংকেত, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, তুষার খান, আহসানুল হক মিনুসহ অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। ভোটের সময় তাঁদের এই সমর্থন আমাকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। আগামীর পথটাও সবাই মিলে চলব ইনশা আল্লাহ।

রিয়াজ ও ফেরদৌস সঞ্চালক হিসেবে ২০০৭ সালে জুটি বাঁধেন
ছবি : প্রথম আলো
প্রথম আলো:

চলচ্চিত্র অভিনেতা আপনার প্রধান পরিচয়। অভিনয় কি চলবে?

অবশ্যই চলবে। মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের একটা ছবির গল্প ভালো লেগেছে। খুব ভালো লেগেছে। হয়তো আমি আর মাহিয়া মাহি সেই ছবিতে অভিনয় করব।