‘সাত ভাই চম্পা’ শুরুতে ছিল ধারাবাহিক, পরে হলো ওয়েব সিনেমা, এখন সিনেমা হিসেবে হলে মুক্তি পেল। গল্পটা কি সিনেমা হয়ে ওঠার মতো?
শানারৈই দেবী শানু : ২০১৮ সালে আমরা শুটিং করেছি। তখন ধারাবাহিক নাটক হিসেবে শুটিং করলেও এটা আসলে সিনেমারই গল্প। বিশাল আয়োজন, সেট, গল্পের পরিসর সিনেম্যাটিক। অবশেষে হঠাৎ করেই সেই ‘সাত ভাই চম্পা’ মুক্তি পেল। আসলে বড় পর্দায় নিজেকে দেখার ইচ্ছা সবারই থাকে। সে কারণে আলাদা একটা রোমাঞ্চ কাজ করছে।
প্রথম আলো :
২০১৮ সালে ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ মুক্তি পায়, সাত বছর পর দ্বিতীয় সিনেমা। সেই সময়ের সঙ্গে বর্তমান সিনেমার কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে?
শানারৈই দেবী শানু : এখন আলাদা করে বলব, চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়। মানসিকভাবে এখন দর্শক স্থির নয়। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার পরিবেশ কতটা আছে, সেটাও বিবেচ্য। তা ছাড়া সাত বছর আগে হলসংখ্যা ছিল অনেক। এখন হল কম। দর্শক পরিস্থিতি অনুযায়ী কতটা হলে যাবেন, সেটাও ভাবছি। বিভিন্ন মাধ্যমে সিনেমা দেখে দর্শকদের রুচিও বদলেছে। পার্থক্য অনেক।
ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সিনেমাটি আপনার কাছে আবেগ–অনুভূতির নাম...’
শানারৈই দেবী শানু : আমাদের গল্পেও প্রচুর অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে শুটিং করেছি। আমাদের পুরো সেটের সবার মধ্যে বোঝাপড়া অনেক ভালো ছিল। তখনই সিনেমার মতো ফিল নিয়ে কাজ করা। যেভাবে বড় পরিসরে সিনেমাতে হয়। ছোট শিল্পীজীবনে এমন অভিজ্ঞতা খুবই কম হয়েছে।
প্রথম আলো :
আপনার শিল্পীজীবন তো এবার দুই দশকে পড়ল...
শানারৈই দেবী শানু : ক্যারিয়ারের ২০ বছর পার করে ফেললাম। এটা অবশ্য কম নয় (হাসি)। তবে আমি ক্যারিয়ারে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। সেটা কতটা পারছি, জানি না।
২০ বছর পর দ্বিতীয় সিনেমা নিয়ে পর্দায় যেভাবে এলেন, এ চিত্র তো ভিন্ন হতে পারত। আপনার কোনো ঘাটতি ছিল?
শানারৈই দেবী শানু : ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কর্মের জায়গায় সব সময় সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি যে ইন্ডাস্ট্রি আমাকে নিয়ে কাজ করবে। শুরুর দিকে হয়তো আমাকে নিয়ে সেভাবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো চিন্তা করেনি। বলব, সুযোগ দেয়নি। ব্যাটে–বলে না মেলার কারণেও অনেক কাজ হয়নি। এ জন্য কাউকে দায়ী করব না। আমাদের এখানে অভিনয়ের পাশাপাশি শিল্পীদের কাজের জন্য নিজের জায়গা থেকে একটা কোলাবরেশন বজায় রাখতে হয়। এখানে আমার কমতি ছিল। যে কারণে আরও ভালো কাজ করার সুযোগ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি।
প্রথম আলো :
কোনো অভিমান?
শানারৈই দেবী শানু : না, অভিমান নেই। তবে কিছু অতৃপ্তি তো রয়েছেই। আরও ভালো সুযোগ পেলে হয়তো নিজেকে প্রমাণ করতে পারতাম।
প্রথম আলো :
নাটকেও আপনাকে কম দেখা যায়...
শানারৈই দেবী শানু : সবার জীবনে একধরনের রূপান্তর বা পরিবর্তনের পর্ব আসে। সময় যাচ্ছে, ভাষা বদলে যাচ্ছে। নতুন নতুন মুখ এসেছে। এর মধ্যে এমন কাজ আমি শিল্পী হিসেবে করতে চাই না, যেখানে সমাজের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এখন অনেক হালকা মেজাজের কাজ হচ্ছে। নিজেকে এই হালকা কাজে ভাবতে পারি না। যে কারণে অনেক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। কাজ একদমই করছি না, তা নয়। আমি আড়ালে থাকা মানুষ। অন্তরালে থাকতেই পছন্দ করি।
কেন আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন?
শানারৈই দেবী শানু : আমরা যেহেতু একটু আগের প্রজন্মের মানুষ, যে কারণে আমাদের সঙ্গে এই সময়ের ভাষাগুলো খুব একটা খাপ খায় না। যে কারণে আগের চেয়ে কম কাজ করতে হচ্ছে। এখানে নতুন প্রজন্মের যাঁরা আসছেন, তাঁরা কাজ করছেন। আমাদের আগে যাঁরা জায়গাটা ছেড়ে দিয়ে গেছেন, তখনই তো আমরা জায়গাটা পেয়েছি। সময়টা তো একই রকম থাকে না। যে কারণে এখন অভিনয় থেকে আড়ালে থাকি। আবার লেখালেখিও করতে হয়। এটাও আমার বড় পরিচয়। সে কারণে বইমেলার আগে বা বছরের বিভিন্ন সময়ে আড়ালে থাকি। অভিনয়, লেখালেখি—দুটোর ভারসাম্য রাখতে হয়।
প্রথম আলো :
কাজের জায়গাটা কি কেউ ছেড়ে দেয়?
শানারৈই দেবী শানু : বিষয়টা প্রকৃতির পালাবদলের মতো। পুরনোদের জায়গা ছেড়ে দিয়েই নতুনদের স্থান দিতে হয়। এখানে নতুনেরা মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে যে যতটা এগিয়ে থাকবে, সে সেভাবেই জায়গাটা পাবে। আমি কতটা করতে পেরেছি, সেই বিচার দর্শক করবেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই কমার্শিয়ালাইজেশনের জায়গায় যাইনি। আমার ভাবনা ও বোধের বাইরে জোরপূর্বক কোনো কাজে যুক্ত হইনি।
ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধটা একার...’
শানারৈই দেবী শানু : আমি মণিপুরি সম্প্রদায়ের মেয়ে। সেখান থেকে এসে আমাকে একা জায়গা তৈরি করতে হয়েছে। একাই চেষ্টা করে যেতে হচ্ছে টিকে থাকতে। সেটাই লিখেছি, প্রত্যেকটি মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধটা তাঁর একার।
এখন ব্যস্ততা কী নিয়ে?
শানারৈই দেবী শানু : সোহেল আরমানের ‘জলজোছনা’ নামে একটি ধারাবাহিকে কাজ করছি। শিগগিরই আরেকটি ধারাবাহিকের শুটিং শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবার বইমেলায় বই বের করি। এবার একটু দোদুল্যমান অবস্থা তৈরি হয়েছে। এখন ভাবনায় ডুবে আছি। লেখক হিসেবে আমার কাজ করে যাচ্ছি।