আমি চিরদিন কম চেয়েছি, সে কারণে সবচেয়ে বেশি পেয়েছি

আবুল হায়াতসংগৃহীত
৭৮ পেরিয়ে আজ ৭৯ বছরে পা দিলেন মঞ্চনাটক, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা আবুল হায়াত। জন্মদিন উপলক্ষে নিজের নতুন কাজসহ নানা বিষয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

দিনটি কেমন কাটছে?

খুব স্বাভাবিক কারণেই আনন্দে কাটছে। একটু হইচইয়ের মধ্যে কাটছে। আজ আমার নাতনি শ্রীষারও (নাতাশা হায়াতের সন্তান) জন্মদিন। রাত ১২টার দিকে দুজন কেক কেটেছি। মাথায় লাল-নীল টুপি পরে আনন্দ করেছি। পরে খাওয়াদাওয়া হয়েছে। সকালে উঠে একের পর এক ফোন ধরছি, বন্ধুবান্ধব ফোন করছে। মানুষের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ কম হয়, তারপরও কয়েকজন বাসায় এসেছিল। রাতে বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটা আয়োজন আছে।

আবুল হায়াত ও তাঁর স্ত্রী মাহফুজা খাতুন শিরিন।
ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

আপনার জন্মদিন উপলক্ষে ‘শোধ’ নামে একটি মঞ্চনাটক আসছে...

করোনার মধ্যেই নাটকটি লিখেছিলাম। আমার জন্মদিন উপলক্ষে নাটকটি আনছে স্টেজ ওয়ান ঢাকা। আমি সম্মানিত বোধ করছি।

প্রশ্ন :

আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?

মানুষের ভালোবাসা। জীবনে যত পুরস্কার পেয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পুরস্কার মানুষের ভালোবাসা। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই আমাকে ভালোবাসে। আমার জীবনের চাওয়াপাওয়ার হিসাবটা একদম পরিষ্কার। আমি চিরদিন কম চেয়েছি, সে কারণে সবচেয়ে বেশি পেয়েছি। সুতরাং এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।

প্রশ্ন :

এই প্রেরণা কোথায় পেলেন?

বাবার কাছে পেয়েছি। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। টানাটানির সংসারে জীবন কাটাতে হয়েছে। এর মধ্যেও দেখতাম বাবা হাসিমুখে, নিশ্চিন্তে সংসার চালাতেন। নিজের শখ পূরণ করতেন, আমাদের শখ পূরণ করতেন। বাবা খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। মাছ ধরা তাঁর শখ ছিল। বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে বিরিয়ানি রান্না করতেন। ক্লাব করতেন, স্কুলে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন। বাবা বলতেন, ‘আমরা যে পরিবার থেকে উঠে এসেছি, সেখানে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখে পারব না। এটার কোনো মানে হয় না, এটার কোনো প্রয়োজন নেই। বড় বড় স্বপ্ন দেখবে, কাজ করবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্নটাকে নিজের সীমার মধ্যে রাখবে। তাহলে তুমি স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে, চাওয়ার চেয়ে বেশি পাবে। আর যদি বড় বড় স্বপ্ন দেখলে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হতাশ হবে। বেশি হতাশ হলে জীবনে কোনো কিছু করতে পারবে না।’ বাবার কথাগুলো আমার কাছে ভালো লাগে। বাবার আদর্শকে এখনো অনুসরণ করি।

উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের ‘কিং লেয়ার’ করার ইচ্ছা আছে তাঁর।

প্রশ্ন :

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু চরিত্রে অভিনয় করেছেন আপনি, সেখান থেকে আপনার প্রিয় চরিত্র কোনগুলো?

প্রিয় চরিত্র অনেক আছে। মঞ্চে ‘বাকি ইতিহাস’-এর সীতানাথ চক্রবর্তী, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’র মাখন আমার অবিস্মরণীয় চরিত্র। আমি বলব, এগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। টেলিভিশনে ‘অয়োময়’-এর কাশেম, ‘আজ রবিবার’-এর মেজ ভাই, ‘বহুব্রীহি’র খোকন সাহেব, ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এর বাবা ও মিসির আলী।

প্রশ্ন :

এমন কোনো চরিত্র আছে, যেটা আপনি করতে চান?

উইলিয়াম শেক্‌সপিয়ারের ‘কিং লেয়ার’ করার ইচ্ছা আছে। আমার মনে হয়, কঠিন কিছু চরিত্র করা দরকার। এখন এমন অবস্থা হয়েছে, আমাদের দিয়ে কেউ কাজ করাতে চায় না। সহজ-সরল বাবা ছাড়া কেউ ভাবে না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসবে অভিনয় হয় না। শুধু বাবা সেজে বসে থাকা আর দুটো কথা বলা, এর বাইরে আর কিছু নেই। অভিনয় করার সুযোগটাই কেউ এখন দিচ্ছে না। বড়দের একধরনের বাতিলের খাতায় নিয়ে চলে এসেছে।

প্রশ্ন :

হলিউড, বলিউডসহ অন্যান্য দেশে জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের কথা মাথায় রেখে অনেক চরিত্র নির্মাণ করা হয়...

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। একটা লোক এত বছর ধরে কাজ করে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, আমরা তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করব না? মা–বাবার জন্য নাকি স্ক্রিনের চেহারা খারাপ হয়ে যায়! তারা বলছে, বুড়োরা স্ক্রিনে এলে স্ক্রিনের চেহারা নাকি নষ্ট হয়! একটা শিল্পী সারা জীবনের সাধনা দিয়ে নিজেকে পরিণত করে। তার অভিজ্ঞতা যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে না পারো, তাহলে তোমরা কিসের ক্রিয়েটর? অনেকেই অনেক ভালো কাজ করছে, কিন্তু এই অবহেলা সাংঘাতিক পীড়া দেয়।

নিজের জীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরে বই লিখছেন আবুল হায়াত।
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি আত্মজীবনী লিখছেন...

লিখছি। এবার বইমেলায় আসবে আশা করছি। অনেক দিন ধরে লেখা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। এবার লেখাটা শেষ করে ফেলব।