আমি চাই, সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করুক

কোরিয়ার দেইগু শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ‘দেইগু কালারফুল ফেস্টিভ্যাল’। তিন বছর বিরতির পর এবার জুলাইয়ের ৮–১১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব। এটি ছিল ১৭তম আয়োজন। উৎসবে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দক্ষিণ কোরিয়ার এই উৎসবের পরিবেশনার অভিজ্ঞতা নিয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কথা হলো নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্তর সঙ্গে

প্রশ্ন :

কো‌রিয়ায় ড‌্যান্স প‌্যা‌রে‌ডে বাংলাদেশের বাঙালি সংস্কৃ‌তি‌কে উপস্থাপনের অনুভূতি কেমন?

আমরা জানি, কোরিয়া শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, গান সবকিছুতে অনেক সমৃদ্ধ। যেহেতু তাদের সংস্কৃতিকে তারা অনেক বেশি নিজেদের মধ্যে ধারণ করে, তাই আমরাও ভেবেছি, যে পারফরম্যান্সটা আমরা করব, তা দিয়ে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাহিত্য সবকিছু যে সমৃদ্ধ—সেই ব্যাপারটা তুলে ধরা জরুরি। আমার মনে হয়েছে, আমাদের যে লোকসংস্কৃতি, সেটা তুলে ধরতে পারলে অনেক ইন্টারেস্টিং হবে। প্যারেডে পরিবেশনার সময় আমরা যেটা অনুভব করেছি, ধূপচি নাচ দেখে আশপাশের সবাই চুপ হয়ে গেছে। চমৎকার একটা আবহ তৈরি হয়। সবার মধ্যে একধরনের মুগ্ধতাও কাজ করেছে। গানের তালে তালে সবাই তালি দিচ্ছিল। মানুষ আমাদের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছিল। আমাদের সঙ্গে ওখানকার ছোট বাচ্চা, ফটোগ্রাফার ও ড্যান্সাররা ছবি তুলছিলেন। টিভি চ্যানেল ধূপচি নাচ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিল। এটা ছিল বেশ মুগ্ধতার।

পূজা সেনগুপ্ত
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনাদের পরিবেশনা কতটা সময়ের ছিল?

আমরা দুটি প্রোডাকশন নিয়ে গিয়েছিলাম। ৮ জুলাই প্রথম দিন আমরা ‘পাঁচফোড়ন’ নামে ১০ মিনিটের একটা প্রোডাকশন করেছি। এই প্রোডাকশনে দেশের বিভিন্ন ধরনের সংগীত ও শ্রেণি–পেশার মানুষ দেখিয়েছি। পরদিন মেইন পারফরম্যান্সে আমরা নন্দিনী করলাম। এই পরিবেশনায় ধূপের ব্যবহার সবাইকে অবাক করেছে। অনেকে শিখতেও চেয়েছে। এই পরিবেশনা ছিল পাঁচ মিনিটের মতো।

প্রশ্ন :

আপনার ফেসবুক ওয়ালে কোরিয়ার ড্যান্স প্যারেড নিয়ে নানা রকমের অনুভূতি শেয়ার করেছেন। নৃত্যের সঙ্গে জড়িত কাউকে সেভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে দেখলাম না।

প্রত্যেক মানুষ তাঁর নিজের মতো করে ভাবেন। আমরা তো কারও ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমার মনে হয়, সবাই হয়তো ফেসবুকে অতটা এক্সপার্ট নন, তাই লেখেননি।

পূজা সেনগুপ্ত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

তাহলে কি ফোনে কিছু বলেছেন?

আসলে আমরা তো ছোট। আমরা যখন একটা কাজ করি, সবাই যখন সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করছেন, আমরাও প্রত্যাশা করি যে আমাদের যাঁরা অভিভাবক, আমাদের অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা আমাদের অ্যাপ্রিশিয়েট করবেন। এটার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। এখন কেউ না করলে কী করব। আমার কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। লায়লা হাসান, আমানুল হক, তাঁরা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন। এখন আমার কাজে কেউ অ্যাপ্রিশিয়েট না করলে ধরে নেব, আমাকে আরও বড় কিছু করতে হবে। যাতে পরবর্তী কাজে আমি অ্যাপ্রিসিয়েশন পাই।

প্রশ্ন :

আপনি নিজে নৃত্যে আপনার অগ্রজ ও অনুজদের যেকোনো সাফল্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা কতটা দিয়ে থাকেন?

আমি তো সব সময় চেষ্টা করি, ফেসবুকে গেলেও দেখা যাবে। বিশেষ করে নতুনদের কাজ আমার খুব ভালো লাগে। যখনই নতুনদের কোনো কাজের খবর পাই, মন্তব্য করে উৎসাহ ও অভিনন্দন জানাই। অনেক সময় ফোন করেও বলি, এই কাজ আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমার ইচ্ছাও আছে, তরুণ নৃত্যশিল্পী বা আমাদের সমসাময়িক বা আমাদের চেয়ে ছোট—তাদের সবাইকে নিয়ে যদি বড় আকারের একটা প্রোডাকশন করা যায়, সেটাও প্ল্যান করছি।

পূজা সেনগুপ্ত
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

অভিজ্ঞ সিনিয়রদের কি রাখা যায় না? তাঁদের রাখলে আরও ভালো হতো না?

হ্যাঁ, অবশ্যই ভালো হতো। আমি সব সময় বলি, আমাদের তুরঙ্গমী সব সময় সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি চাই, সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করুক।

পূজা সেনগুপ্ত

প্রশ্ন :

সামনে আপনাদের নাচের দলের আর কী খবর আছে?

এই মুহূর্তে আমাদের আরও কিছু ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালের ইনভাইটেশন আছে। করোনা কাটিয়ে, এ বছর তো ফেস্টিভ্যাল শুরু হলো, দুটিতে অংশ নিলাম। সামনে ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ইনভাইটেশন আছে, এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি যাওয়ার। তবে কোভিডের কারণে আমাদের যে প্রোডাকশনগুলোর মঞ্চায়ন করতে পারিনি, সেগুলো নিয়ে ভাবছি। এখন ওয়াটারনেস–এর রিহার্সেল চলছে। শিগগিরই এটি মঞ্চে আনব। এ বছর আমরা একটা নতুন প্রোডাকশনও মঞ্চে আনার পরিকল্পনা করেছি।