স্বাধীন ধারার নির্মাতাদের বদলে দিতে চান তাঁরা
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান ফিল্ম স্কুলসহ দেশ-বিদেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রযোজনা, চিত্রনাট্য লেখাসহ নানা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন তাঁরা। ফিরেছেন বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা নিয়ে। সেই অভিজ্ঞতা এবার দেশের স্বাধীন ঘরানার নির্মাতাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান। এ জন্য তিন তরুণ মিলে ‘ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম প্রডিউসার্স প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন শুরু করছেন। যেখানে যুক্ত রয়েছেন এশিয়ার নির্মাতা, প্রযোজক, পরিবেশকসহ কলাকুশলীরা।
তরুণ তিন উদ্যোক্তা হলেন ফজলে হাসান শিশির, সাজেদুল ইসলাম ও হাসিব শাকিল। উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন আরিফুর রহমান, তানভীর হোসেন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সম্প্রতি তাঁরা ‘টকিং আওয়ার শর্টফিল্মস বিয়ন্ড বর্ডারস’ শিরোনামে ভার্চ্যুয়াল আলোচনার আয়োজন করেন। সেখানে বাংলাদেশ থেকে আরিফুর রহমান, তানভীর হোসেনসহ দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের প্রযোজক ও পরিচালকেরা অংশ নেন। তাঁরা আন্তর্জাতিক পরিসরে চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রযোজনা, বিভিন্ন উৎসব ও ল্যাবে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
উদ্যোক্তাদের একজন শিশির। তিনি ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্টের ওপর পড়াশোনা করে বুসান ফিল্ম স্কুলে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যান। আলোচনায় কী হলো, জানতে চাইলে শিশির বলেন, ‘সরকারি পর্যায়ে সর্বজনীন তহবিল তৈরি, দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কলাকুশলী বিনিময়, সার্ক পর্যায়ের উৎসবগুলোকে তরুণ নির্মাতা ও দর্শকবান্ধব করাসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক সহপ্রযোজনা তহবিল কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে প্রসঙ্গে আলাপ হয়েছে।’ তিনি মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে সহপ্রযোজনার হার বাড়বে। দেশের স্বাধীন ধারার নির্মাতারা যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
শিশির এ সময় অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ‘দেশে এখনো কোনো ফিল্ম কমিশন নেই। এমনকি শুটিং করতে গেলে লব্ধ জ্ঞান কাজে লাগানো যায় না। এখানে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অসংগতি আমরা হঠাৎ পরিবর্তন করতে পারব না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই অনেক পেছানো। যে কারণে যথাযথভাবে সিনেমা নির্মাণ, পরিবেশনের ব্যবস্থা, স্বাধীন ঘরানার সিনেমার তহবিল—এসব বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই।’
বুসান ফিল্ম স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই দেশে একটি ফিল্ম কমিশনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন তরুণ প্রযোজক ও নির্মাতা হাসিব শাকিল। পরে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন। জানার চেষ্টা করেন, কীভাবে সমন্বয় বাড়িয়ে অসংগতিগুলো দূর করা যায়। তিনি বলেন, ‘এটা এমন নয় যে শুধু তরুণদের প্ল্যাটফর্ম। আমরা স্বাধীন ঘরানার নির্মাতাদের নিয়েই কাজ করতে চাই। আমাদের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন, তাঁদের সবারই আন্তর্জাতিক ফিল্ম বিপণন নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা। সেগুলোই আমরা একটা গাইডলাইনের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ পড়ার সময় থেকেই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সাজেদুল ইসলাম। পরে ২০১৯ সালে পটুয়া নামে একটি অনুদানের তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। পরে বুসান ফিল্ম স্কুলে পড়তে যান। সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডসে ফিল্ম প্রোডাকশন নিয়ে পড়াশোনা করতে। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার স্বাধীন ঘরানার নির্মাতাদের নিয়ে তৈরি করেন তথ্যচিত্র কালার অব ইনডিপেনডেন্টস। এটি লিডসে পুরস্কার পায়।
সাজেদুল অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে জানান, নেপাল চার বছর আগে ঠিক এমন একটি প্ল্যাটফর্মের কারণে আজ স্বাধীন ধারার সিনেমা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেভাবেই এই সংগঠন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এগিয়ে যেতে চান। সাজেদুল বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যে সিনেমা নিয়ে পড়াশোনার কারণে আমার কাছে মনে হয়, দেশের স্বাধীন ঘরানার নির্মাতাদের তহবিল জোগাড় নিয়ে অনেকেই সংগ্রাম করছেন, কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছেন না। তাঁদের গ্লোবাল নেটওয়ার্কিংয়ের জায়গার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আমাদের এই প্ল্যাটফর্মে পর্যায়ক্রমে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পরিচালক ও প্রযোজকেরা যুক্ত থাকবেন।’