আমাকে নিয়ে এর আগেও নানা বিতর্ক হয়েছে: মিথিলা

তানজিয়া মিথিলাইনস্টাগ্রাম
সীমিত পরিসরে ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের এবারের আসরের চূড়ান্ত পর্ব। বিজয়ীর মুকুট উঠেছে তানজিয়া মিথিলার মাথায়। এদিকে এই প্রতিযোগিতায় তাঁর বিজয় আর বয়স লুকানো নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। প্রথম আলোকে নিজের পেশাগত জীবন নিয়ে পরিকল্পনা আর ব্যক্তিগত জীবনের কথা শোনান তিনি।

প্রশ্ন :

অভিনন্দন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। কেমন লাগছে সেরার মুকুট জয় করে?

ধন্যবাদ। নিঃসন্দেহে এ এক অসাধারণ অনুভূতি। ক্যারিয়ারে অল্প সময়ে অনেক কিছুই অর্জন করেছি। কিন্তু মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ অর্জনের ব্যাপারটাই অন্য রকম। একমাত্র যিনি এটা অর্জন করেন, তিনিই জানেন এই অনুভূতি। এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।

প্রশ্ন :

সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যাঁরা অংশ নেন, তাঁরা অনেকেই সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বা পরে যুক্ত হন। আপনার ক্ষেত্রে কোনটা ঘটেছে?

আমি কখনোই ভাবিনি যে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ হব। এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার আগে থেকেই আমি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আছি। একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত আছি। এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে কোভিড–১৯ পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। আমার কাছে মনে হয়, একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। সামনের দিকে আমি নারী, শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখি। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে তারপর যেন মেয়েরা বিয়ে করে—এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে চাই।

তানজিয়া মিথিলা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

আপনি কেন নিজেকে অন্য প্রতিযোগীদের চেয়ে অনন্য বলে মনে করছেন?

আমি কখনোই কাউকে হিংসা করি না। গিবত করা আর বাজে কথা বলা একদমই পছন্দ করি না। বিজয়ী হওয়ার পেছনে এগুলো সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া বিচারকেরা হয়তো চেয়েছেন, এমন একজন নির্বাচিত হোক, যে প্রতিযোগিতায় আসার আগে থেকেই অনেক কিছু জানে। আমি অনেক বছর ধরে মডেলিং করছি, আমার একটা অভিজ্ঞতা আছে। আমি পরিশ্রমী। সাত বছর মডেলিং করে তবেই স্বপ্ন দেখেছি, মিস ইউনিভার্স হব। একদিনে এসে, এক মাসের একটা গ্রুমিং সেশনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হইনি। তা ছাড়া বুদ্ধিমত্তার একটা ব্যাপারও আছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বডি ল্যাঙ্গুয়েজও একটা বড় ফ্যাক্টর। সবকিছু মিলিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন তাঁরা। এ আয়োজনের সেরা দশে যাঁরাই ছিলেন, সবাই কিন্তু গুণবতী। এটা যেহেতু প্রতিযোগিতা, তাই একজনকেই বেছে নিতে হবে। হয়তো এসব ভেবেই বিচারকেরা আমাকে বাছাই করেছেন।

তানজিয়া মিথিলা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

শুরু থেকে অনেকে বলছিল, আপনাকে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন করা হবে। শেষ পর্যন্ত তা–ই হলো। এটা কি আগে থেকেই ঠিকঠাক ছিল?

আমি বাংলাদেশের প্রথম সারির মডেল। নিয়মিত কাজ করছি। সবাই আমাকে চেনে। তাই লোকের মুখে আমার নাম বেশি ছড়িয়েছে। একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় আমাকেই যদি চ্যাম্পিয়ন করবে, তাহলে এক মাসের গ্রুমিং করিয়ে, পাঁচতারা হোটেলে রেখে, ভারত থেকে গ্রুমার এনে সবাইকে নিয়ে এত বড় অনুষ্ঠান আয়োজনের দরকারই ছিল না। আমাদের সেরা দশের সবাইকে মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ বলেছে, তোমরা দশজনই কিন্তু মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। যেহেতু এটা প্রতিযোগিতা, তাই একজনকে নির্বাচিত করতে হবে। নম্বরের পার্থক্য খুবই কম, এক বা দুই হবে।

আমি কোনো তথ্য গোপন করিনি। বয়সের প্রমাণ দিয়েই আমাকে নাম নিবন্ধন করতে হয়েছে। এসব না দিলে আমাকে নিবন্ধন করতে দিত না। আর সার্টিফিকেট কে বা কারা বের করেছে, তা আমি জানি না।
তানজিয়া মিথিলা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

আপনার বিরুদ্ধে বয়স লুকানোর অভিযোগও উঠেছে, কী বলবেন?

সবাই গুগল করে বলছেন আমার বয়স ২৮ বা ২৯, জন্ম ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯২। এটা মিথ্যা কথা। বয়সের কোনো তথ্য আমি গোপন করিনি। আমার পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন ও ভোটার আইডি মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ আয়োজকদের কাছে জমা আছে।

প্রশ্ন :

আপনার এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্র বলছে ভিন্ন কথা...

আবারও বলছি, আমি কোনো তথ্য গোপন করিনি। বয়সের প্রমাণ দিয়েই আমাকে নাম নিবন্ধন করতে হয়েছে। এসব না দিলে আমাকে নিবন্ধন করতে দিত না। আর সার্টিফিকেট কে বা কারা বের করেছে, তা আমি জানি না। এসব নিয়ে ভাবিও না। আমাদের সময়ে সাটিফিকেটে অনেক ভুল থাকত। এই যেমন বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখ। আমার এসএসসির সনদে যে জন্ম তারিখ ও সাল লেখা আছে, সেটা সত্য নয়।

তানজিয়া মিথিলা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

আপনি যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে ২০০৭ সালে এসএসএসি পাস করেছেন। এটা সত্য, নাকি মিথ্যা?

দিস ইজ রাইট। কিন্তু আমার জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট—সবকিছুতে লেখা আছে, ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে আমার জন্ম।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার যেমন বাংলাদেশের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে এসেছেন, আমি অভিনয়শিল্পী হয়ে বাংলাদেশের জন্য অস্কার আনতে চাই।

প্রশ্ন :

এই প্রতিযোগিতা ঘিরে আপনাকে নিয়েই কেন এত অভিযোগ উঠছে?

আমাকে নিয়ে কেন এত অভিযোগ, আমি তা বলতে পারব না। যেহেতু এটা প্রতিযোগিতা, আমার সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন প্রতিযোগী ছিলেন। তাঁরা মনে করতে পারেন, তাঁরা আরও বেশি যোগ্য। সেই ঈর্ষা থেকে হয়তো এমনটা হচ্ছে। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, এখানে ভালো করলেও লোকে কথা বলবে, খারাপ করলে তো বলবেই। আমাকে নিয়ে এর আগেও নানা বিতর্ক হয়েছে। শুধু যে মিস ইউনিভার্স নিয়ে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। আমার জীবনের অনেক কিছু নিয়েই কনট্রোভার্সি।

তানজিয়া মিথিলা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

এসব কনট্রোভার্সিকে কীভাবে দেখেন?

এটা আমাকে আরও বেশি সামনে এগিয়ে যেতে হেল্প করে। কনট্রোভার্সিকে কখনোই নেতিবাচকভাবে দেখি না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, মিস ইউনিভার্সের মূল আসরে যদি যেতে পারি, আজ যাঁরা উল্টাপাল্টা কথা বলছে, তারাই আমাকে নিয়ে ভালো কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করবে। কেউ আমাকে নিয়ে নেগেটিভ কথা বললে আমার মধ্যে জিদ চলে আসে। কনফিডেন্স বাড়ে।

প্রশ্ন :

শোনা যাচ্ছে, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আপনার বয়স লুকানোর অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়েছে। যাছাই–বাছাই চলছে। এটা যদি প্রমাণিত হয় আর মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যদি কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য আপনি কি প্রস্তুত?

আমি পুরোপুরি প্রস্তুত। আমার পাসপোর্ট, ভোটার আইডি, জন্মনিবন্ধন তো আর কেউ বদলাতে পারবে না। তাঁরা চাইলেও উল্টাপাল্টা কিছু বের করতে পারবে না। এটা সম্ভবও নয়। এরপর যদি তারা খতিয়ে দেখে প্রমাণ পায়, তাহলে যে ব্যবস্থা নেবে আমি তা–ই মাথা পেতে নেব।

তানজিয়া মিথিলা
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

র‌্যাম্প মডেল হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। এখন হলেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। এরপর আর কী কী করতে চান?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার যেমন বাংলাদেশের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে এসেছেন, আমি অভিনয়শিল্পী হয়ে বাংলাদেশের জন্য অস্কার আনতে চাই।

তানজিয়া মিথিলা
ইনস্টাগ্রাম