‘ইজ্জত’, ‘মান’ শব্দগুলো নিয়েই ঝামেলা আছে

পরীমনিফেসবুক থেকে
হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টায় করা মামলায় প্রধান আসামিসহ পাঁচজন দ্রুতই গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে অনেকটাই স্বস্তিতে পরীমনি। সোমবার রাতে নিজের বনানীর ফ্ল্যাটে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। বাড়ির সামনে গণমাধ্যম কর্মীদের আনাগোনা। পরীমনিকে নিরাপত্তা দিতে মূল ফটকের বাইরে–ভেতরে পুলিশের কড়া পাহারা। তাঁর বাসায় যখন উঠি তখন রাত ১০টা। মিনিট পাঁচেক পর ড্রয়িংরুমে আসেন পরীমনি। চেহারায় অনেকটাই স্বস্তির ছাপ।
সোমবার রাতে নিজের বাসায় পরীমনি
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এখন কেমন আছেন?

ভালো। তবে শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ আছি। ঘটনার পর থেকে চার দিন পথে পথে ঘুরেছি। মানসিকভাবে অনেকটাই বিধ্বস্ত ছিলাম। কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমার ওপর দিয়ে বেশ ধকল গেছে। তারপরও এখন আমি মানসিকভাবে বেশ শক্ত, সুস্থ আছি।

প্রশ্ন :

কখন জানতে পারলেন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে?

দুপুরের পরপরই এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছ থেকে খবরটি প্রথম জানতে পারি। এরপর দ্রুতই টেলিভিশন খুলে খবরটি দেখতে পাই। তখন মনে হচ্ছিল যেন আমার দুটি পা আছে। আমি দাঁড়াতে পারছি।

পরীমনি
ছবি: শফিক আল মামুন

প্রশ্ন :

এত দ্রুত গ্রেপ্তার আশা করেছিলেন?

না, আমি আশা করিনি। রাতে সবাইকে বিষয়টি জানানোর পর, দুপুর না গড়াতেই আসামি গ্রেপ্তার! আমি এতটাও আশা করিনি। ঘটনাটি সবাইকে জানানোর আগের চার দিন পথে পথে ঘুরেছি। থানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। সবাই আমাকে দমিয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার জীবনে এমন ঘটনা কখনো আসেনি। সাহায্য পাইনি। কিন্তু হঠাৎ করেই চিত্র পাল্টে গেল। এটি আমাকে আরও সাহসী করে তুলেছে। তবে এ জন্য গণমাধ্যমকর্মী ও প্রশাসনের মানুষের ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ, আমি গণমাধ্যমকে ঘটনাটি খুলে বলি। তাঁরা সেটা দেশের মানুষকে জানিয়েছেন। পরপরই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। আমার মনে হয়েছে আমাদের আইন এত শক্ত, প্রশাসন চাইলে যেকোনো বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নিতে পারে।

পরীমনি

প্রশ্ন :

এখন আসামিদের কী শাস্তি চান?

এমন অপরাধের আইনে যে শাস্তির বিধান আছে, সেই শাস্তিই আমি চাইব। আমাকে অনেকবার লাথি মারা হয়েছে, থাপ্পড় মারা হয়েছে, শরীরে আঘাত করা হয়েছে। আমি নিজ হাতে প্রতিশোধ নিতে পারি না। আইনই তাঁদের বিচার করবে।

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার হাতে পরীমনি
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এ ঘটনায় সহশিল্পীদের সহযোগিতা কতটুকু পেয়েছেন?

সহশিল্পীদের সহযোগিতা নিতেই প্রথমে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে গিয়েছিলাম। বিষয়টি খুলে বলেছিলাম তাঁদের । কিন্তু আশ্বাস পেয়েও সহযোগিতা পাইনি। আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি।

পরীমনি

প্রশ্ন :

কিন্তু সমিতির নেতারা বিবৃতি দিচ্ছেন...

হ্যাঁ, এখন দিচ্ছেন। এটি ভালো। কারণ, তাঁরা আমার পাশে থাকলে আমি আরও শক্ত থাকব, সুস্থ থাকব। তবে যাঁদের কোনো কিছু হলেই আমি সব সময়ই তাঁদের বাসা পর্যন্ত চলে যেতাম, এই বিপদে তাঁদের পাশে পাইনি।

প্রশ্ন :

মামলা হয়েছে। আদালতে প্রমাণ লাগবে।

যা যা প্রমাণ আমার কাছে ছিল, পুলিশকে দিয়েছি। ওই রাতের পুরো ঘটনা সিসিটিভে আছে। প্রশাসনকে অনুরোধ করব তারা যেন দ্রুতই ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে। না হলে আসামিপক্ষ থেকে ওই ফুটেজ, আলামত সরিয়ে ফেলতে পারে। তা ছাড়া ওখানকার ওয়েটাররাও বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবেন। তাঁরা আমাকে সাহায্য করেছেন।

পরীমনি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

কী ধরনের সাহায্য করেছেন ওয়েটাররা?

ওয়েটাররা সাহায্য না করলে হয়তো আমাকে মেরেই ফেলত ওরা। আমার ওপর কীভাবে তাঁরা অত্যাচার করেছেন, ওয়েটাররা দেখেছেন। একটা সময় ওয়েটারদের ঘরের আলো বন্ধ করতে বলেছিলেন আসামিরা। সুইচ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা, বন্ধ করেননি। তাঁরাও তো মানুষ। একটা পর্যায়ে আসামিরা কেটে পড়েন। আমি অজ্ঞান ছিলাম। শুনেছি, ওয়েটাররা দোতলা থেকে আমাকে ধরে নামিয়েছেন। গাড়িতে তুলে দিয়েছেন। আমি ওয়েটারদের প্রতি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।

প্রশ্ন :

এই মামলা নিয়ে কি আপনার কোনো শঙ্কা আছে?

না, আমার কোনো শঙ্কা নেই। আর শঙ্কা থাকলে তো হবে না। অনেক দিন ধরেই এই সমাজে এমন সমস্যা রয়ে গেছে। কিন্তু কাউকে কে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। এ ঘটনায় সবাই আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করছেন, তাঁরা যদি ঠিকঠাক পাশে থাকেন, তাহলে সমাজে এমন সমস্যা আর বাড়বে না।

প্রশ্ন :

এ ধরনের ঘটনার শিকার সাধারণ মেয়েদের প্রতি আপনার বার্তা কী?

এ ঘটনায় আমি বুঝেছি, ভুক্তভোগীরা কেন সুইসাইড করেন। আমি এটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আমি যদি পরীমনি না হতাম তাহলে আমাকেও আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিতে হতো। আমার মাথায় বারবার চাড়া দিয়েছে আমার কিসের ভয়? মনে হয়েছে ইজ্জত, মান নিয়ে সবার সামনে বলাটা যদি ইজ্জত–মানের ব্যাপার হয়ে যায়, তাহলে ইজ্জত–মান শব্দগুলো নিয়েই ঝামেলা আছে। সাধারণ মেয়েদের সাহসী হতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেলে সবাই মুখ বন্ধ রাখতে চান। আরে ভাই, যদি মরতেই হয় তাহলে সত্যটা বলেই মারা উচিত।

পরীমনি

প্রশ্ন :

কাজে কবে ফিরবেন?

কাজে তো ফিরতেই হবে। কারণ, আমি কাজের মধ্যেই বাঁচতে চাই। এখনো তো আমার ট্রমাটা পুরোপুরি কাটেনি। পুরোপুরি কেটে গেলেই শুটিংয়ে ফিরব।