ইটস আ ভেরি ট্রেন্ডি স্টোরি

ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’তে আজ মুক্তি পাচ্ছে মিজানুর রহমান আরিয়ানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’। টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নাজিয়া হক অর্ষারও এটি প্রথম চলচ্চিত্র। ছবিটি নিয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় অর্ষার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, উত্তরায় তখন একটি নাটকের শুটিং করছিলেন তিনি।

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

দেড় বছর আগে বলেছিলেন, ভালো গল্প পেলে সিনেমায় কাজ করবেন। সেই গল্পের দেখা বুঝি পেলেন...

এটা ভালো গল্পের সিনেমা। বন্ধুদের নানা দিক এই ছবির গল্পে উঠে এসেছে। আমার উপস্থিতি যতক্ষণ ছিল, আরামদায়ক লেগেছে।

প্রশ্ন :

প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?

দুজন ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে আগে কাজ করা হয়নি। রাজ ও ইয়াশের সঙ্গে শুরু থেকেই পরিচয় ছিল, কিন্তু এবারই প্রথম স্ক্রিন শেয়ার। ঘুরেফিরে সব মিলিয়ে ওদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভীষণ মজার ছিল। আমরা খুব ফুর্তির মধ্যে কাজ করেছি। গল্পটা ভ্রমণকেন্দ্রিক। তবে আমাদের মাথায় কিছু প্রেশার ছিল। পরিচালক (মিজানুর রহমান) আরিয়ানের নির্মাণের একটা ওয়ে অব প্যাটার্ন আছে। সবকিছু মিলে দারুণ অভিজ্ঞতা। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, পরিচালক যা চাইছিল, আমি তা ডিল করতে পেরেছি। মেকার অ্যান্ড আর্টিস্ট সিঙ্কও ভালো ছিল। শুটিংয়ের চেয়ে ট্রিপ ফিলটাই বেশি ছিল।

প্রশ্ন :

ছবির শুটিং করলেন কোথায় কোথায়?

উত্তরা, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন। মোট ৯ দিন শুটিং করেছি।

‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ, নাজিফা তুষি, ইয়াশ রোহান, নাজিয়া হক অর্ষা, খায়রুল বাশার, তাসনিয়া ফারিন, জোনায়েদ বোগদাদী, তাসনুভা তিশা
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনি বলছিলেন, শুটিং ছিল ট্রিপের মতো...

একদমই তাই। মানুষ তো শুটিংয়ের মাঝে ঘুরতে যায়, আমি তো ঘোরার মাঝে শুটিং করে ফেলেছি।

প্রশ্ন :

গল্পটা তরুণদের বেশি টানবে নাকি...

বন্ধুত্ব তো ইউনিভার্সেল—সব বয়সী মানুষ বন্ধুত্ব উপভোগ করে। এটা এমন একটা বন্ডিং, সব প্রজন্মের মানুষ কোনো না কোনোভাবে কলেজ ও স্কুল লাইফকে রিলেট করতে পারবে। গল্পটা যেকোনো সময়ের জন্য উপযোগী। খুব ভারী কিছু নেই, ইটস অল অ্যাবাউট জার্নি, ফান, ইন্টারনাল বন্ডিং। এখানে একটি মিডল ক্লাস বন্ধু যেমন আছে, তেমনি আপার ক্লাসও আছে, আছে মিডিওকার ক্রাইসিসও। চার-পাঁচজনের একটা সার্কেল যেমন হয়, তেমনই। আমি তো নব্বই দশকের, আমরাও যেমন রিলেট করতে পারব, এখনকার প্রজন্মও পারবে। ইটস আ ভেরি ট্রেন্ডি স্টোরি।

প্রশ্ন :

‘নেটওয়ার্কের বাইরে’তে কাজ করার পর চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে?

আমি নুর ইমরান মিঠুর ‘পাতালঘর’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছি। পাতালঘর ছবির কাজ শেষ করেই নেটওয়ার্কের বাইরে ছবির কাজ শুরু। মিঠু ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে অনেক দিন পর আইস ব্রেক হয়েছে, যেখানে গল্পটাই হিরো। এ রকম সিনেমা হারিয়ে যাচ্ছিল, সাম হাউ ওটিটির কারণে আবার গল্প ফিরে আসছে। অদ্ভুত একটা ট্রানজিশন সময় পার করছি। কোনটি টিকে যাবে বুঝতে পারছি না। কিন্তু একটা আশার আলোও দেখছি। সব মিলিয়ে আমার আগ্রহও বাড়িয়েছে।

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি:সংগৃহীত

প্রশ্ন :

নতুন কাজের খবর বলেন।

আমি তো আজ রাতে পারিবারিক কাজে ১০ দিনের জন্য সাতক্ষীরায় যাচ্ছি। ফেরার পরই শুরু করব।

প্রশ্ন :

বিয়ে নিয়ে চিন্তাভাবনা কী?


(হাসি) এখনো না।

প্রশ্ন :

বন্ধুরা তো সবাই মনে হয় বিয়ে সেরে ফেলেছে।

এটা সত্যি। আমি তো বোহিমিয়ান টাইপ। ঘোরাঘুরি করতে বেশি ভালো লাগে। তাই এখন পর্যন্ত বৈষয়িক হয়ে উঠতে পারছি না। হয়ে যাব হয়তো। বছরখানেকের মধ্যে বিয়ে হতেও পারে।

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

বাসা থেকে কিছু বলে না?

এখন বলে না। আমি বোহিমিয়ান টাইপের, এটা বুঝতে মায়ের অনেক সময় লেগে গেছে। এদিকে আবার বিয়ে হচ্ছে, ডিভোর্স হচ্ছে—এটা এত র‌্যানডম হয়ে গেছে না, যা দেখে মা আবার ভয়ও পায়।

প্রশ্ন :


বিয়ে হচ্ছে, ডিভোর্স হচ্ছে—এটা কি আতঙ্কিত করে?

একদমই না। এটা হতেই পারে। জন্ম, মৃত্যু যেমন সত্য, বিয়ে, বন্ধন ভাঙাও সত্য। এসব সত্য যে যত সহজভাবে নিতে পারবে, তার জীবন তত সহজ।

প্রশ্ন :

বোহিমিয়ান জীবনের ব্যাপারটা কি বংশগত না...

আমার বাবার মতে, দাদা এমন ছিল। ছোট চাচা তো বোহিমিয়ান জীবনের কারণে আর্মির চাকরি শুরুর কিছু সময় পর ছেড়েই দিয়েছিলেন। এত ব্রাইট ক্যারিয়ার ছেড়ে তিনি গ্রামে থাকবেন, মাছ মারবেন, গাছ লাগাবেন—এমনই ছিলেন। আমি সেই দাদা-চাচারই বংশ। তবে বাবা-মায়ের বিশ্বাস আছে আমার ওপর। তাঁরা এটাও মনে করেন, আমাকে প্রেশার দিয়ে কিছু হবে না।

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি:সংগৃহীত

প্রশ্ন :

বোহিমিয়ান অর্ষার শখ কী?

আমার কিন্তু উইয়ার্ড কোনো শখ নেই। সবচেয়ে পছন্দের শখ হচ্ছে এক্সপ্লোর করা। আই লাভ টু এক্সপ্লোর নিউ প্লেসেস এবং মানুষ। নতুন জায়গায় গিয়ে সেই জায়গার মানুষের অ্যাটিচুড, লাইফস্টাইল, পরিবেশগত ব্যাপার জানার ব্যাপারটা খুব টানে। এসব করে আমি আরাম পাই। শুটিংয়ের সুবাদে আমি নতুন জায়গার সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। এই পেশায় আছিও মনে হয় এই কারণে। নইলে আমি হয়তো কবেই শুটিং ছেড়ে দিতাম।

প্রশ্ন :

শুটিংয়ের বাইরেও কি এই অভ্যাস আছে?

বছরে দু-একটা ট্রিপ দেওয়ার চেষ্টা করি। দেশের বাইরে হলে তো ভালো, না হলে দেশের মধ্যে। কখনো উত্তরবঙ্গে চলে যাই, কখনো দক্ষিণবঙ্গে, আবার কখনো পাহাড়ে। দেশের মধ্যে তিনটা প্রিয় জায়গা আছে। এগুলো হচ্ছে বান্দরবান, দিনাজপুর ও আমার জন্মস্থান বরিশাল।

প্রশ্ন :

সুযোগ পেলে দেশের বাইরে কোথায় যাওয়ার ইচ্ছে?

দেশের বাইরে খুব যাওয়ার ইচ্ছা হিমাচল প্রদেশে। পাহাড় আমায় খুব টানে। সবচেয়ে বেশি যেতে চাই, ইউরোপে। কারণ, মিউজিয়াম। আর্ট অ্যান্ড কালচার দিয়ে ভরা। সারা জীবন তো বইয়ে পড়ছি। তাই ইউরোপ এক্সপ্লোর করতে চাই।

নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি:সংগৃহীত

প্রশ্ন :

অনেকে বিয়ে নীরবে সেরে ফেলেন। আপনিও সেই পথে হাঁটবেন?

ধুমধাম করে বিয়ে করায় বিশ্বাসী না। বরাবরই মনে হয়, রেজিস্ট্রেশন করে এসে সবাইকে জানিয়ে দেব। আমি বিয়ে করে লুকিয়ে রাখার পক্ষেও না।