এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং কাজই আমি খুঁজি

১০ ডিসেম্বর নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবির পাশাপাশি ‘পদ্ম’ চরিত্রটিতে আশনা হাবিব ভাবনার অভিনয় বেশ প্রশংসা পাচ্ছে। এদিকে ২৩ ডিসেম্বর থেকে ‘দামপাড়া’ নামে নতুন আরেকটি ছবির শুটিং শুরু করবেন ভাবনা। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ দর্শকমহলে প্রশংসা পাচ্ছে। কেমন লাগছে?

ছবিটির প্রায় পুরো অংশে দর্শকের একটা ক্ষোভ দেখা গেছে। কারণ, পাকিস্তানিরা মানুষকে মেরে ফেলছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে। শেষ দৃশ্যে গিয়ে দর্শকেরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। গত সপ্তাহের সোমবার মহাখালী স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে বের হচ্ছিলাম, একজন প্রবীণ নারী, তিনি সচিব ছিলেন, তাঁর স্বামীকে নিয়ে ছবি দেখে বের হচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে প্রায় আধা ঘণ্টা কেঁদেছেন। আমি তাঁকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলাম না। ছবি দেখে এই যে সাধারণ মানুষের কান্না, এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা।

প্রশ্ন :

নিজের চরিত্রটির প্রতিক্রিয়া কেমন?

‘পদ্ম’ই ছবির একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা। সেটি পরিচালকও সব জায়গায় বলেছেন। সে-ই আসলে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়। ‘পদ্ম’ চরিত্রটি করতে গিয়ে মনে হয়েছে, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রিমিয়ারের দিন শ্রদ্ধেয় পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম স্টেজে ডেকে নিয়ে সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে ‘পদ্ম’ চরিত্রটির প্রশংসা করেছেন। শেষ দৃশ্যে ‘পদ্ম’ যখন পাকিস্তানি অফিসারকে দা দিয়ে খুন করে, হলভর্তি দর্শক চিৎকার করে ‘জয় বাংলা’ বলে উঠেছেন। তালি দিচ্ছিলেন। এটি অসাধারণ অনুভূতি।

ছবির পাশাপাশি ‘পদ্ম’ চরিত্রটিতে আশনা হাবিব ভাবনার অভিনয় বেশ প্রশংসা পাচ্ছে
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

ছবিতে উত্তরবঙ্গের একটি গ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছেন আপনি। অভিনয়ের সময় ভাষার ওপরে আপনার বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়েছিল কি?

সেটে টিচার ছিলেন। আট দিন আগে যাওয়ার কারণে সুবিধা হয়েছে। ওই টিচার উত্তরবঙ্গের ভাষার সংলাপ ঠিকঠাক করে দিয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ভাষার টোনটা ধরা। শুটিংয়ের আগেই আমি তা ধরতে পেরেছিলাম। শুটিং শেষ হওয়ার ছয় মাস পরে ডাবিং করেছি। ওই সময়ও নতুন করে আবার ভাষার টোনটি ধরতে হয়েছে আমাকে। সব মিলিয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতেই হয়েছে।

প্রশ্ন :

বড় পর্দায় আপনার আগ্রহের কথা শোনা যায়। কিন্তু ‘ভয়ংকর সুন্দর’ ছবির প্রায় তিন বছর পর এই ছবি মুক্তি পেল। নিয়মিত না কেন?

কারণ, আমি নিজেকে যে ধরনের ছবিতে দেখতে চাই, সেই কাজ পাইনি। আবার সেই ধরনের কাজ যে সব সময়ই হচ্ছে, তা-ও নয়। এ সময়ের মধ্যে যে ছবিগুলোতে প্রস্তাব পেয়েছি, সেই ছবিতে আমি নিজেকে দেখি না। অমুক নায়ক না থাকলে হবে না বা নতুন পরিচালক হলে হবে না, তা-ও নয়। পরিচালকের কাজের প্রতি বলিষ্ঠতা না থাকলে, শুধু কাজের জন্য কাজ করা হবে, আমিও টাকার জন্য অভিনয় করলাম, এমন কাজ করব না। ‘দামপাড়া’ নামে নতুন ছবিতে যে চরিত্রে কাজ করতে যাচ্ছি, এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং কাজই আমি খুঁজি।

২৩ ডিসেম্বর থেকে ‘দামপাড়া’ নামে নতুন আরেকটি ছবির শুটিং শুরু করবেন ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনাকে এখন নাটকে আর নিয়মিত দেখা যায় না। কেন?

নাটক নিয়মিত করা হচ্ছে না। আগেও যে করতাম, তা-ও নয়। তবে অবশ্যই কাজ করতে চাই, যেখানে আমার অভিনয়ের জায়গা থাকতে হবে। কাজের ভিন্নতা থাকতে হবে। কাজটি নিয়ে দর্শক আলোচনা করবেন। কারণ, কম কাজ হলেও ভালো কাজ করে বেঁচে থাকাটা একজন শিল্পীর জন্য আনন্দের, শান্তির।

প্রশ্ন :

বেশ কিছুদিন ধরে নিজের করা পেইন্টিং নিয়ে ফেসবুকে সরব দেখা যায় আপনাকে। পেইন্টিংয়ের উৎসাহটা কোথা থেকে পেয়েছেন?

অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমার বড় বিশ্বাস ও সাহস হলো ম্যাজিক বা মিরাকল। আমার মনে হয়, মিরাকল মানুষের জীবনে ঘটে। ছবি আঁকাটা কিন্তু ‘ইটস মিরাকল ফর মি’। ফাইভে পড়ার সময় আমি লাস্ট পেনসিল ধরেছিলাম। এরপর আর পেনসিলই ধরিনি। পৃথিবীর যে দেশে গেছি, ছবির গ্যালারিতে ঢুঁ মেরেছি। ছবি সংগ্রহ করেছি, পছন্দের পেইন্টারের ছবি কিনেছি। দেশের বাইরে গেলে মূল টার্গেটই থাকে থিয়েটার দেখা ও পেইন্টিং গ্যালারিতে যাওয়া। ছবি আঁকা আমার পছন্দ। কিন্তু আমি কীভাবে ছবি আঁকি, নিজেও জানি না। এটি আমার জন্য মিরাকল, ম্যাজিক মনে হয়। করোনাকালে পাওয়া আমার সেরা মিরাকল গিফট এটি।

`আমি তো বলেছি, বিয়ে যখন করব, সবাইকে জানব’–ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘দামপাড়া’ ছবিতে আপনার চরিত্র কেমন?

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি তৈরি হচ্ছে। এতে আমি মাহমুদা হক চৌধুরী নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করব। ওই সত্য ঘটনার একটি বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে চরিত্রটি। আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র এটি। নায়িকা ইমেজ থেকে বেরিয়ে এটি অন্য রকমের কাজ হবে আমার। চরিত্রটি আমার অভিনয়জীবনে নতুন একটি মাত্রা দেবে।

প্রশ্ন :

এর আগে বলেছেন, সময় হলে বিয়ের খবর দেবেন। সেটি কবে?

আমি তো বলেছি, বিয়ে যখন করব, সবাইকে জানব। (হাসি) ক্যাটরিনা ও ভিকির বিয়ের ছবি দেখে দেখে মানুষ এখন মুগ্ধ হচ্ছে। এই বিয়ের ছবি নিয়ে মানুষ এক্সাইটেডের মধ্যে আছে। আরও পুরোনো হোক, তারপর আমার বিয়ের ছবি এভাবে প্রকাশ করে বিয়ের খবর দেব (আবার হাসি)।

‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ছবির একটি দৃশ্যে ভাবনা
ছবি: সংগৃহীত