এত মানুষের ভালোবাসা আমাকে আপ্লুত করেছে

রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগীত
রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগীত
>গতকাল ৯ আগস্ট ছিল নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের ৭৯তম জন্মবার্ষিকী। আশিতে পা রাখলেন বিদগ্ধ এই নাট্যব্যক্তিত্ব। স্ত্রী অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন তাঁরা সুস্থ। এ রকম সময়ে কেমন কাটল তাঁর জন্মদিন।

শুভেচ্ছা। কীভাবে কাটলেন জন্মদিন?
আমি জন্মদিন পালন করি না—এবার তো করার প্রশ্নই ওঠে না। আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই কেটেছে। ব্যতিক্রম শুধু অনেক ফোন রিসিভ করতে হয়েছে। সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এত মানুষের ভালোবাসা আমাকে আপ্লুত করেছে।

স্কুলজীবনের কথা মনে পড়ে? তখন জন্মদিন কেমন ছিল?
আমাদের ছোটবেলায় জন্মদিন পালনের রেওয়াজ ছিল না। শুধু দেখতাম মা পায়েস বানাতেন। তখন বুঝতাম, এটাই বুঝি জন্মদিন। আমাদের কিন্তু সেভাবে জামাকাপড়ও দেওয়া হতো না। নতুন জামা পেতাম বছরে দুবার। একবার নববর্ষে, আর একবার পূজায়। তাতেই আমরা খুশি থাকতাম। এসব নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ ছিল না। আমার ছোটবেলার জীবনটা ছিল পরিপূর্ণ জীবন। বাড়ির কাছে স্কুল। লাফ দিয়ে একটা নালা পার হয়ে আমি স্কুলে চলে যেতাম। স্কুল ছিল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা। বেলা পৌনে ১১টায় একটা ঘণ্টা পড়ত, তখন চট করে গিয়ে একটা খাতা রেখে জায়গা দখল করে আসতাম। এরপর বাড়িতে এসে স্নান করে খেয়ে স্কুলে যেতাম। আজকাল বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিতে মা-বাবার প্রাণান্ত অবস্থা দেখে খারাপই লাগে।

রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগীত
রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগীত

শৈশবে সুপারিগাছ কেটে মঞ্চ বানানোর কথা বলেছেন। সুপারিগাছ কেন?
আমার ছেলেবেলা কাটে লক্ষ্মীপুরে। সেখানে কোনো মঞ্চ ছিল না। সেখানে বাঁশ পাওয়া যেত না, কিন্তু প্রচুর সুপারিগাছ হতো। আমাদেরও সুপারিবাগান ছিল। আমরা সেসব গাছ কেটে মাঠের ভেতর মঞ্চ তৈরি করতাম। কোনো মাইক্রোফোন ছিল না, হ্যাজাক বাতির আলোয় আমরা নাটক করতাম। আমার সৌভাগ্য যে সেখান থেকে আমি বিশ্বের সর্ববৃহৎ নাট্যসংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।

খুব সাধারণ একটা জীবন কাটিয়ে আজ আপনারা অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। এখনকার প্রজন্মের জীবন আর সাধারণ নেই। তারা কি আপনাদের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পারবে?
সময় বদলে যাচ্ছে। ঢাকায় যখন ইলেকট্রিসিটি চলে যেত, আমার মেয়ে ত্রপা হাঁসফাঁস করত। আমি বলতাম, আমরা তো ইলেকট্রিসিটি ছাড়াই স্কুলজীবন পার করেছি। সে বলত, তোমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছ, আমরা হইনি। এই যে সময়ের ব্যবধান, একে মেনে নিতেই হবে। আমি মনে করি, আমি সৎভাবে জীবন যাপন করেছি। অর্থ-খ্যাতির পেছনে দৌড়াইনি, সে কারণে শান্তিতে ছিলাম। পুরস্কারের জন্য মানুষ যেভাবে তদবির করে, সেভাবে করিনি কখনো। আমি মনে করি, যেকোনো পুরস্কার আসবে অপ্রত্যাশিতভাবে, সেখানেই আনন্দ। এই জীবনে আমার অপ্রাপ্তি নেই। আমার যে মেধা, সেই তুলনায় আমার প্রাপ্তি বেশি। আমি বিধাতার কাছে কৃতজ্ঞ।

অনেক সাবধান থেকেও করোনায় আক্রান্ত হলেন। এখন কেমন আছেন আপনারা?
ভালো আছি। আমার স্ত্রীর (ফেরদৌসী মজুমদার) শরীর একটু দুর্বল, কিন্তু স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।

বাসায় আজ পায়েস রান্না হয়েছে?
(হা হা হা) আমাকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে, কিন্তু পায়েস রান্না হয়নি। ফেরদৌসীর পক্ষে এসব করা এখন সম্ভব নয়। অন্য বছরগুলোয় হতো। আটপৌরে রান্নাবান্না, সেসব করতেই ফেরদৌসীর কষ্ট হয়। তবু একজন সাহায্যকারীকে নিয়ে যেটুকু পারছে, করছে।