ওই ঘটনায় আমি বুঝেছি আতঙ্ক কী

পৃথিবীজুড়ে ইউএনএইচসিআরের ৩২ জন শুভেচ্ছাদূতের একজন হলেন তাহসানকোলাজ: আমিনুল ইসলাম
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) গত শনিবার সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খানকে বাংলাদেশে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পৃথিবীজুড়ে ইউএনএইচসিআরের ৩২ জন শুভেচ্ছাদূতের একজন হলেন তাহসান। তাহসান ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেছেন এবং বিশ্ব শরণার্থী দিবস ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকে সহায়তা করেছেন। এসব কাজের মাধ্যমে শরণার্থীদের জন্য মানবিক কার্যক্রম সামনাসামনি দেখেছেন। রোববার তাঁর সঙ্গে কথা হলো ব্যক্তিগত জীবন, অভিনয়, গান, লেখালিখি আর নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে।

প্রশ্ন :

অভিনন্দন। ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আপনি কী দায়িত্ব পালন করবেন?

বিশ্বের প্রতি ৯৭ জনে একজন বাস্তুহারা। আমার কাজ হবে বাংলাদেশের শরণার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে তাঁদের বক্তব্য সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। দুই ধরনের বাস্তুহারা আছেন। এক, যাঁদের কোনো রাষ্ট্র নেই। দুই, যাঁদের রাষ্ট্র আছে, কিন্তু সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে কোনো স্বীকৃতি নেই। এই মানুষগুলো প্রত্যেকে প্রতিদিন একটা অনুভূতির সঙ্গে দিন কাটান , তার নাম আতঙ্ক। আমিও জীবনে একবার সেই অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।

তাহসান খান
প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ঘটনাটি বলা যাবে?

হ্যাঁ, ২০০৩ সালের ঘটনা। আমরা তখন ব্ল্যাক ব্যান্ডের হয়ে চট্টগ্রামে কনসার্ট করতে গেছি। আমাদের ব্যান্ডে তখন আমি একটু পরিচিতি পাচ্ছি। মানুষ আমার নামে ব্যান্ডটাকে চিনতে শুরু করেছে। তো তখন কনসার্টের পর অনেক আয়োজক টাকা দিতে চায় না বা কম দেয়। সে রকমই একটা কিছু হচ্ছিল। আমাদের ব্যান্ডের ম্যানেজার টনি আবার ঠিকই টাকা আদায় করে নিল। আমি বাসে করে ঢাকা ফিরছি। হঠাৎ বাস থামিয়ে কিছু লোক আমাকে তুলে নিয়ে গেল সেই আয়োজকের কাছে। আমি তো আর জানতাম না যে আয়োজক নামকরা সন্ত্রাসী। ওরা আমাকে দুই–তিন ঘণ্টার মতো আটকে রেখেছিল। সে সময় ওরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। ওই ঘটনায় আমি বুঝেছি যে আতঙ্ক কী! ঘটনাটা আমার বইয়ে বিস্তারিত লিখেছি।

তাহসান খান
ছবি:সংগৃহীত

প্রশ্ন :

বই লিখছেন নাকি? আত্মজীবনী?

বই লেখার প্রস্তাব অনেক আগে থেকে পাচ্ছিলাম। প্রকাশকেরা যোগাযোগ করছিলেন। কিন্তু সময় মিলছিল না। ২০২০–এ তো অনেকটা সময় ঘরবন্দী ছিলাম। সেই সময় নতুন অনেক কিছু ট্রাই করছিলাম। ছবিও এঁকেছি। ভাবলাম, ভাবার সময় পাওয়া গেল। তাহলে লিখেই ফেলি। বইয়ের নাম ‘অনুভূতির অভিধান’। এখানে ৩০টি ছোটগল্প আছে। যেগুলোর প্রতিটি কোনো না কোনো অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। ‘শ্যাডেনফ্রুয়েডা’ বলে একটা জার্মান শব্দ আছে। যার বাংলা মানে করলে দাঁড়ায়, অন্যের দুঃখে সুখী হওয়া। এটা একটা জটিল অনুভব। আমাদের অনেকের ভেতর এই অনুভূতির বোধ প্রবল। এ রকম সব অনুভূতির কাব্য নিয়ে আমার বই। এগুলো সবই আমার নিজের ব্যক্তিগত জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। অভিমান, ভালোবাসা, বিস্ময়, প্রেম—এ রকম সব অনুভূতির গাঁথুনিতে বানানো এই বই। ক্লাসরুমে তো গণিত, বিজ্ঞান, ভূগোল—কতকিছুই শেখায়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটি বাদ দিয়ে যায়, তা হলো ‘হাউ টু ডিল উইথ ইমোশন’। আমি এখানে নানান ইমোশনের গল্প বলেছি। যাতে অনুভূতির আলাপ মানুষের আড্ডায় জায়গা করে নেয়। আশা করছি বইটি সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক একটা প্রভাব ফেলতে পারবে।

প্রশ্ন :

২০২০ সালটা কেমন গেল?

সবার যেমন গেল। খুব বাজে। আমি গানের মানুষ। কনসার্ট বন্ধ। ভালো থাকি কী করে? তবে ২০২০ সাল আমাদের একটা জিনিস শিখিয়েছে। আর তা হলো, ভালো থাকার জন্য আসলে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই। অল্পতেই মানুষ অনেক ভালো থাকতে পারে। আমরা তো অর্থ, ক্ষমতা, যশ, খ্যাতির পেছনে ছুটে খেই হারিয়ে ফেলি।

তাহসান খান

প্রশ্ন :

ভালো থাকার জন্য যে অল্প কিছু প্রয়োজন, সেটা কী?

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা আছে। সুখী থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেনুইন বন্ড।

প্রশ্ন :

আপনার জেনুইন বন্ডিং কাদের সঙ্গে? কারা আপনাকে সুখী রাখে?

আমার মা–বাবা, মেয়ে আর কাছের কিছু বন্ধু।

তাহসান খান

প্রশ্ন :

আপনার প্রথম পরিচয় কী? বাবা, সংগীতশিল্পী, অভিনেতা না শিক্ষক?

আমার প্রথম পরিচয় আমি মানুষ। তারপর আমি শিল্পী। সেটা অভিনয়শিল্পী না সংগীতশিল্পী, সেটা মুখ্য নয়। জীবন একটা আশীর্বাদ। আমার কাজ সেই আশীর্বাদকে উপভোগ করা। আর তা অন্যদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া।

গত শনিবার সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খানকে বাংলাদেশে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ঘোষণা করেছে
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

২০২১ সাল নিয়ে পরিকল্পনা কী?

আমি জীবনেও পরিকল্পনা করে কিছু করি না। এ বছরও কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে একটা অ্যালবাম বের করব। একসময় লোকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে অ্যালবাম কিনত! সেই দিনগুলো কোথায় চলে গেল! এখন গান একটা চটকদার ব্যাপার, হাস্যরসাত্মক। ভালো কথা, ভালো সুরের ভালো গান ‘হিট’ হচ্ছে না, এটা একটা সমষ্টিগত ব্যর্থতা। সারা বিশ্বেরই একই চিত্র। সেই দায় নিয়ে আমি অ্যালবাম বের করতে চাই। এখন তো আর আমাকে হিট ফ্লপের চিন্তা করতে হয় না। ফ্যান–ফলোয়ার আছে...আর বইটা বের করব এবারের বইমেলায়।

তাহসান খান
ফেসবুক

প্রশ্ন :

‘নো ল্যান্ডস ম্যান’–এর কী অবস্থা?

আমি যত দূর জানি, ফাইনাল এডিটও শেষ। তবে কবে কোথায় কীভাবে মুক্তি পাবে, তা ফারুকী ভাই (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’–এর পরিচালক) ভালো বলতে পারবেন।

প্রশ্ন :

নতুন কোন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলেন?

না। এখন তো বিনোদনের ভবিষ্যৎ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। নতুন কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হইনি। কয়েকটা নাটকের কাজ চলছে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ ছবির শুটিংয়ে তাহসান খান ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী
ইনস্টাগ্রাম