গানে যদি সারভাইভ করা না যায়, তাহলে অল্টারনেটিভ কিছু করতে হবে

মিনার রহমান
ছবি: প্রথম আলো
‘আবার হারিয়ে যাই’ নামে সংগীতশিল্পী মিনার রহমানের একটি গানের মিউজিক ভিডিও নির্মিত হলো। এটি পরিচালনা করেছেন তানিম রহমান অংশু। গানের কথা, সুর ও কণ্ঠ মিনারের। সংগীতায়োজনে ছিলেন সাজিদ সরকার। এ ছাড়া অনেক দিন পরে তাহসান খানের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে একটি গান করতে যাচ্ছেন এই সংগীতশিল্পী। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মিনার

প্রশ্ন :

‘আবার হারিয়ে যাই’ গানটি কী ধরনের?

একটু রোমান্টিক ঘরানার গান। সঙ্গে একটু আশাজাগানিয়া ব্যাপার আছে। ভিডিওতে ভিন্নতা আনতে সাধারণত গানের ভিডিওগুলোর শুটিং আউটডোরে হয়। কিন্তু এ গানের পুরোটাই সেট তৈরি করে ইনডোরে করা হয়েছে। অংশু ভাই একটু ভিন্নভাবে, মজা করে কাজটি করেছেন। ভিডিও দেখে দর্শক আনন্দ পাবে।

প্রশ্ন :

এর আগে অংশুর পরিচালনায় আপনার ‘ঝুম’ গানটির মিউজিক ভিডিও বেশ আলোচিত হয়েছিল। এ গান দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?

করোনার কারণে গত দেড় বছর সময়টা ভালো যায়নি। সেই দুর্যোগ কাটিয়ে আমরা সামনে এগোতে পারি, তেমন একটা আশাজাগানিয়া ব্যাপার আছে গানের মধ্যে। সেই বিষয়টি মিউজিক ভিডিওতেও ধারণ করার চেষ্টা ছিল। অংশু ভাই সব সময় দর্শকের পালস ধরে কাজ করার চেষ্টা করেন। ‘ঝুম’ গানটিতে তাঁর নির্মাণের যে কৌশল ছিল, এখানেও তা দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

মিনার রহমান

প্রশ্ন :

গান–সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলেন, এখনকার সময় গানের বাজারটা অতটা ভালো নয়। আপনার কী মনে হয়?

আপাতত এটাই মনে হয়। মাঝে স্টেজ শো শুরু হয়েছিল, সেটাও এখন কমেছে। তবে গানের বাজার নিয়ে এখনই পুরোপুরি মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কারণ, করোনার কারণে শুধু গান নয়, বিনোদনের সব মাধ্যমই পিছিয়েছে। করোনাকাল কাটিয়ে ২০২২ সাল শুরু হলো। আরও কিছুদিন না গেলে বলা মুশকিল।

প্রশ্ন :

গান নিয়ে আপনার মধ্যে কোনো হতাশা কাজ করে?

না, আমি হতাশ নই। গান আমার কাছে পেশা ও শখ দুটোই। ভালোবাসা থেকেই মিউজিকটা করি। প্রতিকূলতা এলেও তা কাটিয়ে গান করে যেতে হবে। গান করে যাব। এটা ছাড়া চলতে পারব না।

মিনার রহমান

প্রশ্ন :

আপনিই বলেছিলেন, আগে উৎসবগুলোতে গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে শিল্পীদের গান তৈরির অনেক প্রস্তাব আসত। এখন কমে গেছে। কারণ কী? নাকি নাটক নির্মাণের দিকে বেশি ঝুঁকেছে প্রতিষ্ঠানগুলো?

কোভিডের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িকভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। সে কারণে হয়তো তাদের গানেও বাজেট কমেছে। গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অনেক নাটক নির্মাণ করছে। সিনেমার কনটেন্টও কিনছে। এতে বিনিয়োগ অন্যদিকে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য কনটেন্ট তৈরি করুক, সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো আরেকটু গানের সংখ্যা বাড়াতে পারে। এখানেও বড় বাজেট রাখতে পারে। যাতে আমরা শিল্পীরা একটু দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারি। কারণ, একটি রেকর্ড লেভেল গানের জন্য যে পরিমাণ বাজেট দিতে পারে, একজন শিল্পীর পক্ষে নিজের সেই পরিমাণ অর্থ খরচ করে নিয়মিত গান তৈরি করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন :

অনেক দিন পর আপনি ও তাহসান খান একসঙ্গে কাজ করছেন?

২০০৮ সালে আমার প্রথম অ্যালবাম ডানপিটে বের হয়। অ্যালবামটির সব গানেরই সংগীতায়োজন ছিল তাহসান ভাইয়ের। এর পরে ২০১১ সালে আড়ি নামে আরেকটি অ্যালবামের সংগীতায়োজন করেন তাহসান ভাই। এরপর ‘ঘুম’ ও ‘দূর বহুদূর’ নামে দুটি গানে ডুয়েট করেছি আমরা। অনেক দিন পরে তাহসান ভাইয়ের সঙ্গে ডুয়েট গান হবে। গানটির লেখাও তাহসান ভাইয়ের। সুর করছি আমি। সংগীতায়োজন করছেন সাজিদ সরকার। গানটির নাম এখনো ঠিক হয়নি। এ গান ছাড়াও তাহসান ভাইয়ের সঙ্গে আরেকটি প্রজেক্ট হবে। কথাবার্তা চলছে।

প্রশ্ন :

তাহসান খানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

তাহসান ভাইয়ের সঙ্গে যখন প্রথম অ্যালবামের কাজ করি, তখন অনেক ছোট ছিলাম। তবে তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। আমার মনে হয়, তাহসান ভাইয়ের সঙ্গে যিনিই কাজ করেন, তাঁরই চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়।

মিনার রহমান

প্রশ্ন :

আপনি আঁকাআঁকিতে বেশ পারদর্শী। এর আগে বলছিলেন গানের পাশাপাশি আঁকাআঁকি পেশায় চাকরিতে যোগ দিতে পারেন। এর খবর কী?

প্রথম আলো, কিশোর আলো, ডেইলি স্টার–এ একসময় অনেক কার্টুন এঁকেছি। এখন উন্মাদ–এ এই কাজ করি। তবে এখনো কোথাও নিয়মিত চাকরি শুরু করিনি। এখন গান দিয়ে যদি সারভাইভ করা না যায়, তাহলে অল্টারনেটিভ কিছু একটা করতেই হবে। তবে ইন্ডাস্ট্রি যদি আবার ঘুরে দাঁড়ায়, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি লগ্নি করে, পাশাপাশি বড় বড় ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান যদি আমাদের গানের স্পনসরশিপে আসে, তাহলে ভিন্ন কথা। গানে থেকেই সারভাইভ করা যাবে। আমি গানের মিনার হয়ে যদি চাকরি–বাকরির কথা ভাবি, তাহলে বোঝেন গানের অবস্থাটা কোথায়।

প্রশ্ন :

বিয়ে নিয়ে কী ভাবছেন?

বয়স এখন ২৯ বছর। তবে এ মুহূর্তে আমার মা বেশ অসুস্থ। মাকে নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ, মা আমার কাছে থাকেন। মাকে ছাড়া আমিও থাকতে পারি না। আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছি না। জানি না ভাগ্যে কী আছে। হলে জানতে পারবেন।